বর্ষা বিলাস – ২

বর্ষা বিলাস

রাতের হাজার তারাদের বুকে লুকিয়ে সারারাত বৃষ্টি রিমঝিম। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে শুনি তখনও বৃষ্টির টুপটাপ। বিছানায় শুয়েই তাকিয়ে আছি জানলার বাইরে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছি তোর সাথে। কাপাসিয়া মেঘের চোখে কাজলের ঘনঘটা। ঠিক তক্ষুনি শহরে দক্ষিণের হাওয়ায় গেয়ে উঠলো “আষাঢ় কোথা থেকে পেলি আজ ছাড়া”, গাইছেন দেবব্রত বিশ্বাস। ঠিক তক্ষুনি বেয়াক্কেলের মতো বেজে উঠলো এলার্ম। আর আমি সব ভুলে বন্ধ করে দিলাম ঘড়ির ঘন্টা।

এমন বৃষ্টি স্নাত স্নিগ্ধ সকালেও অস্থির লাগে কারো? উঠে পরলাম চটপট। মনে হয় যেন কতকিছু করার ছিলো, করা হয়নি কখনো, অনেক স্বপ্ন ছিলো যা অধরাই রয়ে গেছে, অনেক চাওয়া ছিলো যেগুলো অর্জনের জন্য প্রচেষ্টাও করতে পারা যায়নি! আয়নায় তাকিয়ে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মুখ দেখে আবিষ্কার করলাম গালের তিলটা একটু বেশি কালো মনে হচ্ছে। কি জানি কেন? মেক আপ তো ব্যবহার করিনা, তাহলে? ভোরের আলো সুন্দর, যেমনই তাতে আছে নতুন করে আশায় বুক বাঁধার স্বস্তি, তেমনি আছে অস্থির এক ভালোলাগা। পৃথিবীর এমন ভোরগুলো ভীষণ সুন্দর। এক অদ্ভুত সুন্দর, স্নিগ্ধ।

দুপুর নেমে আসে পাহাড়ে ঘোরানো পাকদণ্ডি বেয়ে বেয়ে। আমের-আচার, ডালের বড়ি, আলু পোস্ত, আর মাছের ঝোলে। পোস্ত আমার চিরকালের পছন্দের জিনিস। তারপর! তারপর কল্পনায় সেই গ্রাম আর মাটি লেপা দাওয়া থেকে অত্যন্ত ভালোলাগা মাটির গন্ধ। আর ঠিক তখনই এক ঝলকে তুলে নেবো চোখ ভর্তি আলো। অগোছালো কপালে সমুদ্র পরিয়ে দেবে চিকচিকে টিপ। সন্ধ্যের শুকতারা থেকে ঝিনুকের কোলে ঝরে পড়বে এক ফোঁটা মুক্তো। আর অনেক দূরের থেকে তুই তখন এক ঝটকায় ফিরিয়ে দিবি আমার উথাল পাথাল গান। আর ঠিক তখনই পাড়ের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যেতে যেতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে কোনো পাহাড়ি নদী। তুলসিতলায় জ্বলে উঠবে সাঁঝের প্রদীপ। হাওয়ায় হাওয়ায় জোনাকিরা সাজাবে আলপথ। বৃষ্টির ঝিম ধরা আলো ঘিরে নেবে উড়ে উড়ে ঘুরতে থাকা বাদল পোকারা। আর আমি তখন চুপচাপ বাতাস থেকে উপচে নেবো তোর মেহেক। মাঠে আনাচে কানাচে ঘাসেরা সব বিছিয়ে নেবে বৃষ্টি ধোয়া সবুজ গালিচা। আমি তখন রাত ঘুমে।

পরেরদিন আবার ভোরে জেগে ওঠা। পাখিরা ডানায় বয়ে আনবে এক পশমিনা সকাল। সূর্য্যের অফুরান আলো নিয়ে নিঃশ্বাসে, ঝরে পড়বে একটা একটা পাতা। স্নান সেরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠবো – ওঁ জবাকুসুম শঙ্কাশং। তখন ভোরের স্বপ্নে সত্যি করব তোকে। আর তুই তখন এক এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিবি ইচ্ছে-বেলুন। কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে পাহাড়ি নদীর উপরের সাঁকো। মোতির দানার মতো টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়বে বারিষ। জানলা খুলে দেব আমি। বুকে ভরে নেবো ভিজে বৃষ্টিমাখা সুখ।

একা একা কতকি যে ভাবি, এমন অনেক অর্থহীন লেখা, দিনলিপি, রোজনামচা, বিচ্ছিন্ন আবেগের টুকরো কথা, কত্তো কি!

___________
রিয়া চক্রবর্তী।

26 thoughts on “বর্ষা বিলাস – ২

  1. 'কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে পাহাড়ি নদীর উপরের সাঁকো। মোতির দানার মতো টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়বে বারিষ। জানলা খুলে দেব আমি। বুকে ভরে নেবো ভিজে বৃষ্টিমাখা সুখ।' ___ জীবন-ভাবনা আসলে আনন্দের বন্ধু রিয়া। :)

    1. ঠিকি বলেছেন বন্ধু। জীবন আসলে আনন্দের তবে আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif 

  2. "আমের-আচার, ডালের বড়ি, আলু পোস্ত আর মাছের ঝোলে" —- বড্ড খিদে পেয়ে বসেছে মনে হচ্ছে!!!!!https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. হাহাহাহা। আপনি দারুণ মানুষ ইলহাম দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Razz.gif.gif

  3. বৃষ্টি সকাল, পাকদণ্ডি বেয়ে দুপুর, তুলসিতলার সন্ধ্যা, ঘুমের রাত অতঃপর আবার সেই এক পশমিনা সকাল….সব মিলিয়ে বিলাসিতাটা নেশা ধরিয়ে দিলো।
    আরেকটি বর্ষা দিনের শুভকামনায়….https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

  4. ভোরের আলো সুন্দর, যেমনই তাতে আছে নতুন করে আশায় বুক বাঁধার স্বস্তি, তেমনি আছে অস্থির এক ভালোলাগা। পৃথিবীর এমন ভোরগুলো ভীষণ সুন্দর। এক অদ্ভুত সুন্দর, স্নিগ্ধ।

    অনেক সুন্দর প্রকাশ হয়েছে কবি রিয়া চক্রবর্তী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  5. "তারপর কল্পনায় সেই গ্রাম আর মাটি লেপা দাওয়া থেকে অত্যন্ত ভালোলাগা মাটির গন্ধ। আর ঠিক তখনই এক ঝলকে তুলে নেবো চোখ ভর্তি আলো। অগোছালো কপালে সমুদ্র পরিয়ে দেবে চিকচিকে টিপ। সন্ধ্যের শুকতারা থেকে ঝিনুকের কোলে ঝরে পড়বে এক ফোঁটা মুক্তো।"

     

    দুর্দান্ত কাব্য বটে  । শুভকামনা দিভাই 

  6. মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় প্রিয় কবি শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি আমার। শুভেচ্ছা জানবেন। পাঠে মুগ্ধ হলাম।        

  7. একক ভাবনার চিন্তাসূত্র কিন্তু একই অর্থ্যাৎ অনেকের সাথে মিলে যায় কবি রিয়া দি। :)

  8. একা একা কতকি যে ভাবি, এমন অনেক অর্থহীন লেখা, দিনলিপি, রোজনামচা, বিচ্ছিন্ন আবেগের টুকরো কথা, কত্তো কি!

     

    * বরাবরের মতো একটি শিল্পসমৃদ্ধ লেখা… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    শুভরাত্রি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।