পশ্চিমের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার ৭শ’ বছর আগে নালন্দা স্থাপিত হয়েছিল। নালন্দা একটি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় যেটি অবস্থিত ছিল বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যে। পাটনা শহর হতে ৫৫ মাইল দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪২৭ খ্রীঃ হতে ১১৯৭ খ্রীঃ পর্যন্ত বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিহাসের প্রাচীন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম গন্য করা হয়।
খ্রিষ্টীয় ৪২৭ অব্দ থেকে ১১৯৭ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নালন্দা ছিল একটি প্রসিদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র। এই মহাবিহারকে “ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্যতম” বলে মনে করা হয়। এখানকার কয়েকটি সৌধ মৌর্য সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন। গুপ্ত সম্রাটরাও এখানকার কয়েকটি মঠের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে, গুপ্ত সম্রাট শক্রাদিত্যের (অপর নাম কুমারগুপ্ত, রাজত্বকাল ৪১৫-৫৫) রাজত্বকালে নালন্দা মহাবিহারের বিকাশলাভ ঘটে। পরবর্তীকালে বৌদ্ধ সম্রাট হর্ষবর্ধন ওপাল সম্রাটগণও এই মহাবিহারের পৃষ্ঠপোষক হয়েছিলেন। ১৪ হেক্টর আয়তনের মহাবিহার চত্বরটি ছিল লাল ইঁটে নির্মিত। খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীন অবস্থায় চীন, গ্রিস ও পারস্য থেকেও শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসতেন বলে জানা যায়। ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি মুসলমান আক্রমণকারী বখতিয়ার খিলজি নালন্দা মহাবিহার লুণ্ঠন ও ধ্বংস করেন। এই ঘটনা ভারতে বৌদ্ধধর্মের পতনের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হয়। ২০০৬ সালে ভারত, চীন,সিঙ্গাপুর, জাপান ও অন্যান্য কয়েকটি রাষ্ট্র যৌথভাবে এই সুপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টির পুনরুজ্জীবনের প্রকল্প গ্রহণ করে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম স্থির হয়েছে নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি প্রাচীন নালন্দা মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষের নিকট নির্মিত হবে।
সংস্কৃত নালন্দা শব্দের অর্থ জ্ঞান দানকারী। সম্ভবত শব্দটি এসেছে নালম এবং দা শব্দ দুটি থেকে। নালম শব্দের অর্থ পদ্মফুল যা জ্ঞানের প্রতীক এবং দা শব্দের অর্থ দান করা।
কথিত আছে চীনা তীর্থযাত্রী সন্ন্যাসী হিউয়েন সাঙ নালন্দা নামের বিবিধ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তাঁর একটি মত হল, এই নামটি স্থানীয় আম্র কুঞ্জের মধ্যবর্তী পুষ্করিণীতে বসবাসকারী একটি নাগের নাম থেকে উদ্ভুত। কিন্তু যে মতটি তিনি গ্রহণ করেছেন, সেটি হল,শাক্যমুনি বুদ্ধ একদা এখানে অবস্থান করে “অবিরত ভিক্ষাপ্রদান” করতেন; সেই থেকেই এই নামের উদ্ভব।
সারিপুত্তর মৃত্যু হয়েছিল “নালক” নামে এক গ্রামে। কোনো কোনো গবেষক এই গ্রামটিকেই “নালন্দা” নামে অভিহিত করেন। নালন্দা পৃথিবীর প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি এবং এটি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও একটি। এর স্বর্ণযুগে ১০,০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ শিক্ষক এখানে জ্ঞান চর্চা করত। একটি প্রধান ফটক এবং সুউচ্চ দেয়াল ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপত্যের একটি মাস্টারপিস হিসেবে সুপরিচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি ভিন্ন ভিন্ন চত্বর (compound) এবং দশটি মন্দির ছিল; ছিল ধ্যান করার কক্ষ এবং শ্রেণীকক্ষ। প্রাঙ্গনে ছিল কতগুলো দীঘি ও উদ্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটি ছিল একটি নয়তলা ভবন যেখানে পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হত অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ধর্মের পাশাপাশি বেদ উপনিশদ, বিতর্ক, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতিষ বিদ্যা, শিল্প কলা, চিকিৎসাশাস্ত্র সহ তৎকালীন সর্বোচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার উপযোগী আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নিয়মিত পাঠ দান চলত এখানে। তৎকালীন জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই চর্চার সুযোগ থাকায় সুদূর কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য এবং তুরস্ক থেকে জ্ঞানী ও জ্ঞান পিপাসুরা এখানে ভীড় করতেন। চীনের ট্যাং রাজবংশের রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক জুয়ানঝাং ৭তম শতাব্দিতে নালন্দার বিস্তারিত বর্ণনা লিখে রেখে গেছেন।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার ধর্ম গুঞ্জ বা ধর্মগঞ্জ সেই সময়ে বৌদ্ধজ্ঞানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভান্ডার হিসাবে সুপরিচিত ছিল। পাঠাগারে ছিল শত শত হাজার হাজার পুঁথি, পাঠাগারের মূল ভবন ছিল তিনটি যার প্রত্যেকটি প্রায় নয়তলা ভবনের সমান উঁচু; ভবনগুলো রত্নসাগর, রত্নদধি ও রত্নরঞ্জক নামে পরিচিত ছিল।
আনুমানিক ৫০০ খ্রীঃপূঃ, বুদ্ধ কয়েক দফায় নালন্দায় ছিলেন এমন উল্লেখ পাওয়া যায়। বুদ্ধ শেষবার নালন্দায় আসেন মগধের মধ্য দিয়ে, এবং এটা সেই সময় যখন সারিপুত্র “সিংহ নিনাদে” বুদ্ধের প্রতি তার বিশ্বাসের কথা ঘোষনা করেন তার মৃত্যুর কিছু পূর্বে। বুদ্ধের সময়ই নালন্দা একটি প্রভাবশালী ও উন্নত শহর ছিল, কিন্তু এটি বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে প্রসিদ্ধ হয় আরো পরে।
নালন্দা জৈন ধর্মের কর্মকাণ্ডেরও কেন্দ্র ছিল এবং উল্লেখ পাওয়া যায় মহাবীরও কয়েকবার নালন্দায় অবস্থান করেছিলেন।
যেন একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পড়া হলো। শেয়ার করার জন্য অভিনন্দ প্রিয় কবি রিয়া।
আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানবেন বন্ধু
এক দমে ইতিহাস পড়ে সারা,,,


,,,,
ধন্যবাদ কবি,,,


,,,,
অশেষ কৃতজ্ঞতা কবি
অনেক কিছু জানালাম দিদি
অনেক শুভেচ্ছা রইল
ধন্যবাদ কবিবাবু।
পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ দাদা।
বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রকৃষ্ট নির্দশন হতে পারে এটি। প্রবন্ধটি পড়ে ঐতিহাসিক তথ্য পেলাম। ধন্যবাদ রইলো প্রিয় প্রবন্ধকার বন্ধু রিয়া রিয়।
আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে নিজের কাছেই ভালো লাগছে দাদা।