স্মৃতি

স্মৃতি _______

আমার দাদুর তিন ছেলে। কোনো মেয়ে নেই। জমিদারি সুত্রে আমাদের দুটো উপাধি আর পদবীতো একটাই হয়। বাবা একটা উপাধি ব্যাবহার করেন। আমিও “চক্রবর্তী” ব্যাবহার করি লেখালেখির ক্ষেত্রে। আর একমাত্র জেঠু তিনটেই ব্যাবহার করেন। জেঠুর থেকে বাবা দশ বছরের ছোট। বাবার থেকে কাকাই পাঁচ বছরের ছোট। তারও অনেক পরে বাড়িতে প্রথম মেয়ে হলাম আমি। বলাই বাহুল্য কাকা, দাদু, জেঠুর ভীষণ আদরের।

জেঠুর যখন বিয়ে হয় কাকাই তখন বেশ ছোট। বড়মা ভাত খাইয়ে দিতো কাকাইকে। সন্তানের মতো করে বড় করেছে। কাকাই আর আমার মা একেবারে বন্ধুর মতো ছিলো। আমাদের যৌথ পরিবার। বাড়ির প্রধান ব্যাক্তি আমার দাদু। সংসারের সব খুটিনাটি হিসেব দাদুর কাছেই থাকতো। তাছাড়া বড় দুই দাদা সংসারের চাপ কাকাইয়ের ওপর দিতো না, কাকাই এর বিয়ের পরেও না। কাকাই এর সাথে আমিও বড় হচ্ছি। ছোটবেলায় কাকাই ছিলো আমার চোখে শ্রেষ্ঠ। কাকাই ফুটবল খেলতো দুর্দান্ত। মাছ ধরা ছিলো নেশার মতো। যতদিন পড়াশোনা করেছি, কোনোদিন একটাও পেন কিনিনি। যদিও পেন আমার ভীষণ পছন্দের। কাকাই গোছা গোছা নানান ধরনের ফাউন্টেন পেন এনে আমার পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখতো।

আমাদের একটা রেকর্ড প্লেয়ার ছিলো। প্রতিদিন বিকেলে খেলে এসে কাকাই স্নান সেরে চা, জলখাবার খেতে খেতে ওই রেকর্ড প্লেয়ার চালিয়ে নাচানাচি করতো। কাকাই এর কাছেই প্রথম শুনি এলভিস প্রিসলি। কাকাই যা করে আমিও তাই করি। কাকাই নাচলে আমিও নাচি। কাকাই হাঁচলে আমিও হাঁচি। আসলে কাকাই এর কপিক্যাট ছিলাম আমি। কাকাই সাদা রঙের জামা পরলে আমিও সাদা পরি। পৈতের সময় কাকাই ন্যাড়া হলে আমিও ন্যাড়া হই। মোট কথা কাকাই তখন হিরো, সে যা করবে আমিও তাই করবো। আর অসম্ভব ভালোবাসতো আমার জেঠুর ছেলেকে।

বাবা, জেঠু, কাকাই এর মধ্যে অসম্ভব মিলমিশ। কাকাই এর যত দুষ্টুমি বাবা আর জেঠু সামলেছেন, দাদু পর্যন্ত যায় নি সেইসব কথা। যখন বাবা অসুস্থ হলো, জেঠু ভীষণ কান্নাকাটি করেছে,বাবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পরেই জেঠু অসুস্থ হয়ে বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হসপিটালে ভর্তি করা হলো। জেঠু সুস্থ হয়ে আসার চারদিনের মাথায় কাকাই এর সেরিব্রাল এটাক। যেখানে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে অপারেশন করতেই হবে। গতকাল অপারেশন হলো। অতো ছটফটে মানুষকে এইভাবে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখে মন কিছুতেই মানছে না। শত শত স্মৃতি ভীড় করে আসছে।

8 thoughts on “স্মৃতি

  1. কাকাই এর জন্য মন খারাপ হলো। জানিনা এখন তিনি কেমন আছেন। কাকাই যেখানে যেভাবে থাকেন আমাদের প্রাণঢালা প্রার্থনা তার জন্য থাকবে। ধন্যবাদ বন্ধু রিয়া রিয়া।

  2. মন্তব্যের ভাষা হারিয়েছি। শুভ কামনা কাকাই এর জন্য।

  3. রিয়াদি, 
    কাকাই তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠুক সেই কামনা রইলো। 
    আপনার লেখা পড়তে পড়তেই জানলাম আর বড় খালা ঢাকায় আজ সকালে মারা গেছেন । বড় খালার ছেলে মেয়েরা আমাদের সমান হওয়ায় খালার বাসায় কত যে স্মৃতি আমার ! সারা দিন ভাবছি সেগুলোও ! নিজের পেছনের অনেক সুখ স্মৃতির সাথে অনেক মিল পেলাম দেখে লেখাটা খুব ভালো লাগলো দিদি । 

    1. দুঃখ পেলাম খন্দকার দা। বড় খালা'কে ঈশ্বর স্বর্গবাসী করুন।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।