বুক রিভিউ উপন্যাসঃ বিজয়িনী
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
মূল্য: টাকা ১৫০.০০ মাত্র।
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বিষয়বস্তুঃ
রাতের আঁধারে সবুজ যেদিন রাতে শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে পালিয়ে এলো সেদিন শীতের রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার, শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে রাজিবপুর পৌঁছাতে পায়ে হাঁটার পথ তিন কিলোমিটার, উঁচু-নিচু রাস্তা, ধু ধু বালুচর আর কাশবন। তারপর সোনাভরি নদী। মনের ভিতরে আছে কেউ দেখে ফেলার আশঙ্কা। এতকিছুর মধ্যেও সবুজের মনে হলো একবার যদি রেণুর মুখটা দেখে যেতে পারতো…
সালিসের ভয়ে, সালিসে অপমানের ভয়ে সে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছে ঢাকায়। একটা চাকুরীও জুটেছে গার্মেন্টসে। কিন্তু গার্মেন্টসে চাকুরীতে তার মন নেই। তার মনের মধ্যে সবসময় রেণু, আর শুধু রেণু।
সেদিন সবুজ পালিয়ে যাওয়ার পর রেণুও চলে যায় নানার বাড়ি চিলমারী। ক’দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তার বিয়ের আয়োজন। রেণু নানার বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় রিয়াজের সঙ্গে। রিয়াজ বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। পাকা বাড়ি, অন্ন-বস্ত্রের অভাব নেই। ব্রহ্মপুত্রের চরে ক্ষুধা তৃষ্ণার সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া রেণু এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহ বঁধু। তারপরও রেণুর মনে সুখ নেই। তার মন শুধু সবুজের জন্য ছটফট করে। এর মধ্যে ঘটে আরেক ঘটনা। রিয়াজ রেণুকে নিয়ে বেড়াতে আসে শঙ্কর মাধবপুর গ্রামে, শ্বশুরবাড়িতে। আর বেড়াতে এসেই হয় যত বিপত্তি। সে রেণুর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারে রেণুর সঙ্গে সবুজের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের কথা। সে রেণুকে তার বাবার বাড়িতে রেখে পরদিনই পালিয়ে যায়। রেণুও পরের নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে চলে যায় পিছনে পিছনে রেণু চলে যায় তার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু সম্পর্কটা আর আগের মতো স্বাভাবিক হয় না। রেণুর ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে রেণু তার বাবার বাড়ি চলে আসে। ক’দিন পরেই চলে আসে বিচ্ছেদের চিঠি, তালাকনামা।
রেণুর বড় বোন বানু। কিশোরী বয়সে তারও বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সতীনের সংসারে টিকতে না পেরে সেও ফিরে এসেছিলো বাবার বাড়িতে সে অনেক আগের কথা। তারপর সে চলে যায় ঢাকা, সেখানে গার্মেন্টসে চাকুরী করে বাড়িতে মাসে মাসে টাকা পাঠায়, তাদের দুর্দিন কেটে যায়, সংসারে সুখ আসে। রেণু বাবার বাড়িতে ফিরে এলে সেও বানুর সঙ্গে ঢাকা গিয়ে বানুর সঙ্গে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। দু’মেয়ের চাকুরীর টাকায় সংসার আরো সচ্ছল হয়।
বানু, রেণু আর ইতি। নুরুর তিন মেয়ে আর একমাত্র ছেলে মানিক। ইতি মেধাবী ছাত্রী। সে যখন ক্লাস ফাইভ পাস করে হাই স্কুলে ভর্তি হবে তখনো বানুর চাকুরী হয় নি, রেণু শ্বশুরবাড়িতে। তখন তাদের টানাপোড়নের সংসার। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্গতির অভাবে নুরু তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু শঙ্কর মাধবপুর হাই স্কুলের হেড মাস্টারের পরামর্শ আর আশ্বাসের ফলে সে ইতিকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করে দেয়।
ইতি আর মানিক যমজ। নুরুর একমাত্র ছেলে, বানু, রেনু, ইতির একমাত্র ভাই হওয়ায় সে বড় হয়েছে অনেক আদর যত্নে। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর সে জিদ ধরলো রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি হবে। নুরু তাকে রাজিবপুর হাই স্কুলেই ভর্তি করে দিলো। কিন্তু রাজিবপুর ভর্তি হওয়ার পর সে লেখাপড়ায় আরো পিছিয়ে গেলো।
ছেলে সন্তানের জন্য নুরু আর ফুলির সংসারে একে একে তিন মেয়ে হয়েছে, মেধাবী হওয়ার পরও ইতির লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে মানিককে রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে অথচ সেই অবহেলার মেয়ে ইতি এ-প্লাস পেয়ে এস.এস.সি পাস করলো আর মানিক পাস করলো বি গ্রেডে।
সবুজ তার মামাতো ভাইয়ের কাছে সব খবর নিয়ে শেষ পর্যন্ত রেণুকে খুঁজে পেয়েছে। শুধু খুঁজে পাওয়াই নয়, সে রেণুকে বিয়ে করেছে। ইতি আর মানিকের রেজাল্ট এবং সবুজের সঙ্গে রেণুর বিয়ে সব মিলিয়ে নুরু আর ফুলির সংসারে আজ আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। বানু, রেণু আর সবুজ ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছে ডে কোচে। বটতলায় কোচ থেকে নেমে ভ্যানে চড়ে সবাই নদীর ঘাটে এলো। নদীর ঘাটে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো না। কিছুক্ষণ পরেই নৌকা ছেড়ে দিলো।
নৌকা যখন সোনাভরি পার হয়ে শঙ্কর মাধবপুর ঘাটে এসে ভিড়ল তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবাই নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলো। সোনাভরির পাড় থেকে রেণুদের বাড়ি কয়েক মিনিটের পথ। বাজারের পাশে একটা মসজিদ থেকে তখন ফজু মাতব্বর নামাজ পড়ে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো একসঙ্গে কয়েক জনকে পেছন থেকে আসতে দেখে সে দাঁড়ালো। সবাই কাছে যেতেই ফজু মাতব্বর জিজ্ঞেস করলো, কে? তোমরা কে?
শঙ্কর মাধবপুর গ্রামের শালিসের ধারক এবং বাহক ফজু মাতব্বরকে দেখে সবুজের রেগে ফেটে পড়লো। সে ফজু মাতব্বরের কাছে গিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বললো, স্লামুয়ালায়ক মাতব্বর সাহেব। ওয়ালেকুম আসসালাম। তুমি সবুজ না? সবুজ আরো কাছে গেলো, হ্যাঁ আমি সবুজ। তুমি না গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিলে?আবার এসেছে? হ্যাঁ, আবার এসেছি। শালিস বসাবেন নাকি? রেণুও এসেছে। রেণু সামনে এসে দাঁড়ালো। ফজু মাতব্বর একবার রেণুর আরেকবার সবুজের দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা বিয়ে করেছো? সবুজ রেণুর কাঁধের ওপর একটা হাত রেখে বললো, হ্যাঁ। রেণু এখন আমার বউ। ফজু মাতব্বর আর কোনো কথা বললো না। সে মাথা নত করে চলে গেলো।
বিজয়িনী বইটি ভালো লেগেছে তার সুবাদেই রিভিউ শেয়ার করলাম । আশা করছি পাঠক প্রিয়তা পাবে জিল্লুর রহমান ভাইয়ের এই উপন্যাসটি ।
অভিনন্দন কবি এবং প্রান্তিক লিখক রোদেলা নীলা এবং ঔপন্যাসিক মি. জিল্লুর রহমান।
ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান শব্দনীড় এর জন্মলগ্ন থেকে ছিলেন। তার উপন্যাসের বিভিন্ন পর্ব নিয়মিত ভাবে শব্দনীড়ে প্রকাশিত হতো। দ্বিতীয় সংস্করণের শব্দনীড়ে যদিও তিনি নেই; তারপরও এখানে অনেকেই আছেন যারা জিল্লুর রহমানের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন। অনেকদিন পর তাঁর লিখার রিভিউ উঠে এলো। আশা করবো তিনি ভালো আছেন।
জিল্লুর রহমান কেমন আছেন তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না,তবে তার পেইজ ভিজিট করার সুবাদে কিছু ভালো গল্প পেয়ে গেলাম ,আর সেখান থেকে রিভিউ করার উৎসাহ পাচ্ছি।ধন্যবাদ প্রিয় প্রকাশক ।
ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান এর প্রকাশনায় একরাশ শুভকামনা। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ সুমন ভাই।
জিল্লুর রহমান এর অনেক লেখা শব্দনীড়ে আমি পড়েছি। ভালো লিখেন তিনি।
রিভিউটি ভালো হয়েছে রোদেলা নীলা।
এ খুব কঠিন কাজ , সাহায্য নিতে হয়েছে লেখকের ।
বিজয়িনী'র জন্য ভালোবাসা বোন রোদেলা নীলা। শুভেচ্ছা জিল্লুর রহমান ভাই।
শুভেচ্ছা শতত ।
বুক রিভিউ উপন্যাসঃ বিজয়িনী পড়লাম প্রিয় দি। আপনাকে শুভেচ্ছা। রিভিউ লেখা ভীষণ কঠিন একটি কাজ।
অনেক অনেক অনেক কঠিন ।
বুক রিভিউটা পড়লাম। ধন্যবাদ এই রিভিউ'র মত কঠিক কাজটি করার জন্য।
জিল্লুর রহমানের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
জিল্লু ভাইয়ের হাতে উপন্যাস ভালো এগোয় ,তাই হয়তো রিভিউ ভালো হয়েছে ,ধন্যবাদ ।