বুক রিভিউ : ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)

বুক রিভিউ
ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
ওরা কোনো দিন গ্রাম দেখেনি। ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছে, ঢাকায় বড় হয়েছে, একক পরিবারে। ফলে ওদের জীবনের গণ্ডি বলতে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে সীমিত। তাই কিশোর বয়সে ওদের যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন ছিলো সেগুলো জানা হয়নি। রকির বাবা যখন বললো গ্রাম থেকে তার তাইতো ভাই আসবে তখন রকি আর রিতু দু’জনে হা করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

গ্রাম থেকে তুলি এলো মিউজিক কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে, তার কাছ থেকে গ্রামের গল্প শুনে রকি গ্রামে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হলো । কিন্তু একা যাবে কীভাবে ? বাবা-মা কেউ রাজি হলো না, তাদের সময় নেই। রকি তার গ্রামে যাওয়ার আগ্রহের কথা বললো তার ফ্রেন্ড টনি, জেমস আর তিথিকে। তিথিতো শুনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো, ওয়াও। আমিও যাচ্ছি তোদের সঙ্গে।

কিন্তু গ্রামে যেতে ওদের অনেক বাধা। জেমস বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান বলে তারা জেমসকে যেতে দিলো না। তিথির গ্রামে যাওয়ার পথে বাধা হলো সে মেয়ে বলে। শুরু হলো তিথির হ্যাঙ্গার স্ট্রাইক। অবশেষে তারও একটা যাওয়ার উপায় বের হলো। এমনিভাবে অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে ওরা গ্রামে গেলো। সেখানে গিয়ে পরিচিত হলো অনেক নতুন ঘটনার সাথে। মাইক্রোবাস থেকে নামতেই একটা পাঁঠা দেখে রকি আর টনির মধ্যে একজন বলতে শুরু করলো ভল্লুক, আরেকজন বললো। মাইক্রোবাস দেখে পাঁঠা জোরে দৌড়ে আসতেই রকি আর টনি দু’জনে দৌড় দিলো। ওদের এই কাণ্ড যেনো গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা হাসি-ঠাট্টার বিষয় হলো।

বিকেলে তুলি যখন রিতু আর তিথিকে মেহেদি পাতা তোলার জন্য ডাক দিলো তখন দু’জনে খুব খুশি হলো কিন্তু রিতু মেহেদি পাতা তোলার জন্য হাত বাড়াতেই তিথি জোরে চিৎকার করে বললো, হাত দিস্ না রিতু কাঁটা বিঁধবে। সখের বশে তিথি সন্ধ্যায় শাড়ি পরলো। আর শাড়ি পরে উঠান থেকে আঙিনায় নামতেই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো। পরদিন এই ছয় জনের একদল এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিশোর-কিশোরী গেলো ধর্মপুর ফরেস্টে, জঙ্গল দেখতে। জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা আর পশু-পাখির ছবি তুলতে তুলতে রকি আর তিথি পথ হারিয়ে ফেললো।

তিথি ভুলে মোবাইলফোন বাড়িতে ছেড়ে এসেছে আর ছবি তুলতে তুলতে রকির মোবাইল ফোনেও চার্জ শেষ হয়ে গেছে। দু’জনের শরীরও অনেক ক্লান্ত। এখন কীভাবে জঙ্গল থেকে বের হবে সে চিন্তায় দু’জনে অস্থির হয়ে পড়লো। রকির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, সে জোরে জোরে টনি, টনি বলে ডাকতে শুরু করলো কিন্তু জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে আসায় ওদের ডাক টনি, তরু, তুলি, রিতুর কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। ওরা নিরাশ হয়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে পথে পথে ঘুরছিলো। এমন সময় জঙ্গলের পথ দিয়ে একপাল শুয়োর দেখে দু’জনে ভয়ে কেঁপে উঠলো। ওরা একগুচ্ছ ঘন ছোট গাছের আড়ালে লুকালো। গভীর জঙ্গলের দু’জন অপরিচিত কিশোর-কিশোরীকে দেখে শুয়োরের পালকে তাড়া করে এগিয়ে এলো ফিলীপ মারন্ডী। সে রকি আর তিথিকে আশ্বস্ত করলো, অভয় দিলো এবং দু’জনকে পথ দেখিয়ে জঙ্গল থেকে বের করে মাইক্রোবাসের কাছে পৌঁছে দিলো।

পরদিন সন্ধ্যায় আড্ডা হলো তুলির দাদু লতিফ সাহেবের সঙ্গে। লতিফ সাহেব পঁচাত্তর বছর বয়সের একজন উচ্চশিক্ষিত, জ্ঞানপিপাসু এবং প্রযুক্তি চিন্তা জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ। শহুরে এই চার কিশোর-কিশোরী তার ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট, ট্রেন টু ভিলেজ গ্রুপ, ব্লগে লেখা দেখে অবাক হলো। ওরা যেনো খুঁজে পেলো পঁচাত্তর বছর বয়সের এক চিরসবুজ বালককে। লতিফ সাহেবও অবাক হলেন যখন তিনি জানতে পারলেন ওরা কোনোদিন গ্রাম দেখেনি, গ্রামে ওদের কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। এতদিন শেকড়ের টান, নাড়ির টান, মাটির টান বলে যে কথা তিনি বলতেন এই কিশোর-কিশোরীদের সে রকম কোনো টান নেই। ফুপা সম্পর্ক কাকে বলে ওরা জানেনা তখন তিনি শুধু অবাকই হলেন না কিছুটা হতবাক হলেন।

তিনি এই কিশোর-কিশোরীদের বোঝালেন এমনিভাবে গ্রামের সঙ্গে শহরের মানুষের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ছিন্ন হচ্ছে, গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহরের মানুষের বৈষম্য বাড়ছে। আর কয়েক প্রজন্ম পর হয়তো দেখা যাবে গ্রামের মানুষ আর শহরের মানুষ দু’টো আলাদা প্রজাতির মানুষে পরিণত হয়েছে। লতিফ সাহেব ওদের শোনালেন তার ইচ্ছার কথা, গ্রামের অপরূপ শোভা, গ্রামের মানুষের কৃষ্টি-কালচার বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, মানুষে মানুষে এই সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে সমাজকে স্থিতিশীল করার জন্য। তিনি তাদের শোনালেন, দেশপ্রেমিক কিশোর ক্ষুদিরামের দেশ্রপ্রেমের কথা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা।

ট্রেন টু ভিলেজ একটি চমৎকার কিশোর উপন্যাস, গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখতে পারেন।

10 thoughts on “বুক রিভিউ : ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)

  1. সম্মানিত লেখকঃ জিল্লুর রহমান এর হাতে কিশোর উপন্যাস অসাধারণ আসে। ভালো করেছেন তাঁর লিখা বুক রিভিউ করে। ধন্যবাদ কবি রোদেলা নীলা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. কিশোর উপন্যাস আমার পছন্দের একটি, তাই বইটি হাতের কাছে পেয়ে রিভিউ করে ফেললাম। ধন্যবাদ প্রকাশক।

  2. বুক রিভিউ অন্যতম একটি কঠিন কাজ। আপনি পেরেছেন। আমার দ্বারা হতো না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gif

    1.  আপনার দ্বারা হতো না, এটা মানতে পারছি না ।

  3. ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস) এর রিভিউ পড়ে রীতিমত আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ধন্যবাদ বোন রোদেলা নীলা। রকমারী'তে খোঁজ নেবো আশা করি। 

  4. রিভিউ আমার কাছে ভীষণ আকর্ষনীয় মনে হয়। আপনি সার্থক হয়েছেন দিদি ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  5. অভিনন্দন কবি রোদেলা নীলা। রিভিউটি ভালো হয়েছে। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।