যুদ্ধাহত বাবার চিঠি // রুকসানা হক

সেদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই বধির কাকেরা অন্ধ হয়,
বারুদের গন্ধে আচ্ছন্ন হয় নবজাত সূর্যালোক,
আমার ভয়ার্ত কচি শিরাগুলো বেয়ে উঠে আসে রক্তাক্ত জলপাই নদী,
ঠিক তখন মায়ের বুকে হায়েনার ঠেসে ধরা স্টেনগান খুঁজে ফেরে যুদ্ধাহত বাবার চিঠি।

আমি হাঁটু মুড়ে সরিসৃপের পদতলে বসে মায়ের জীবন ভিক্ষা চাই,
আমার সহোদর তখন ছুরির মতো তীক্ষ্ণ চোখে বাংলাদেশ সাজায়,
মায়ের নির্ভিক কন্ঠে তখন কি দীপ্ত সুরে ভেসে আসে স্বাধীনতার গান।

বাবা আসবে আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে,
হায়েনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র গর্জে উঠবে তার বলিষ্ঠ হাতে।
সেই অপেক্ষায় মায়ের বুকে ঠেসে ধরা স্টেনগানের নল বেয়ে উঠে আসে চিঠির দৃপ্ত বর্ণগুলো।
সহোদরের আগুনচোখে সোনার মোহরের মতো জ্বলজ্বল করে বাংলাদেশ।

আমাদের পুড়িয়ে মারার সকল আয়োজনে স্বাক্ষর করে লম্পট রাজাকার,
আমার কচি মুঠোয় তখনো একখন্ড বাংলাদেশ,
মায়ের বুকে মুক্তিযোদ্ধা বাবার তেজোদৃপ্ত অক্ষরে মোড়া স্বাধীনতা,
মুহূর্তেই আমরা নির্ভিক হয়ে উঠি অখন্ড বিশ্বাসে।

দেখতে পাই দরোজার ওপাশে স্বাধীন পতাকা শোভিত বর্নিল রাজপথ,
সেখানে লক্ষ শহীদের বুকের শ্লোগান।
আমাদের শরীর থেকে অঙ্কুরিত কষ্টের সকল বীজ মুহূর্তেই উড়ে যায় বিক্ষুব্ধ বাতাসে,
আমরা নির্ভিক হয়ে উঠি দৃপ্ত অহংকারে,
তখন বারুদের ধোঁয়ায় ঘেরা মধ্যরাত ভিজে যায় বিজয়ের বিনম্র বিশ্বাসে।।

ব্লগের সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ।

28 thoughts on “যুদ্ধাহত বাবার চিঠি // রুকসানা হক

  1. শব্দনীড় ব্লগের পক্ষ থেকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা আপনাকেও। ধন্যবাদ।

    1. আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ।    

  2. আমার ভয়ার্ত কচি শিরাগুলো বেয়ে উঠে আসে রক্তাক্ত জলপাই নদী,
    ঠিক তখন মায়ের বুকে হায়েনার ঠেসে ধরা স্টেনগান খুঁজে ফেরে যুদ্ধাহত বাবার চিঠি।

    রক্ত দিয়ে এনেছি বাঙলা কারো দয়ার দান নয়…. সংগ্রামী শুভেচ্ছা বোন।

    1. ""রক্ত দিয়ে এনেছি বাঙলা কারো দয়ার দান নয়…." আমরা এখন লক্ষ্যভ্রষ্ট দাদা। শুভেচ্ছা আপনাকে ।    

  3. চিঠি পড়ে তো গদ্যছন্দে লেখা কবিতা মনে হল!

    যা হেক, স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

    1. চিঠি নয় দাদা, কবিতাই । শুভেচ্ছা আপনাকেও ।     

  4. রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের দেশের স্বাধীনতা। শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। আসুন, দেশ ও জাতির মুক্তিকামী সৈনিকদের সাথে আমরা স্বাধীনতার বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে বলি জয় বাংলাদেশ, জয় বাঙালি। জয় বাংলা মা, জয় বাংলার মাটি আর বাংলার মানুষের জয়গান গাই। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
    জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

    1. স্বাধীনতার মূল বাণী উত্তর প্রজন্মর কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমাদেরই দাদা। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সুসংবদ্ধ হতে হবে ।

      আপনাকে ধন্যবাদ।           

  5. পিতা যুদ্ধ ক্ষেত্রে। তার পাঠানো চিঠির খোঁজে শত্রুসেনার বাড়িতে হানা দিয়েছে। পুড়িয়ে মারার সব আয়োজন সম্পন্ন। সেই মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, তার অবুঝ কন্যা এবং পুত্র- যার যার অবস্থান থেকে লড়ে গিয়েছিল; যা এখন আমাদেরকে (পাঠক) নাড়িয়ে দিল। বিস্ময়কর কাহিনি, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।

    এমন বিষয় নিয়ে ইতিহাস কিংবা সেই আদলে গদ্য রচনা সহজ। কিন্তু পদ্য রচনা ভীষণ কঠিন।ধারণা করি, ঈশ্বর প্রদত্ত কাব্যমেধা থাকলেই্ ”যুদ্ধাহত বাবার চিঠি”র মত কঠিন বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা যায়।

    “বধির কাকেরা অন্ধ হয়”, “বারুদের গন্ধে আচ্ছন্ন হয় নবজাত সূর্য”, “রক্তাক্ত জলপাই নদী”—এমন অনেক অসাধারণ শব্দালংকারে কাব্যকাহিনিটা যেমন ওজন পেয়েছে, পাঠকদের সম্মুখে সমভাবে জীবন্ত করে তুলেছে।

    বারুদের ধোঁয়ায় ঘেরা মধ্যরাত ভিজে যায় বিজয়ের বিনম্র বিশ্বাসে”—কী দারুণ! মন ভরে গেল!!

    1. চমৎকার বিশ্লেষণে কবিতাটি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এ কবিতায় প্রতিটি শব্দই বাস্তব অতীতের আলেখ্য। নিজেদের পারিবারিক দুঃসহ যন্ত্রণার কথা লিখতে চেয়েছি মাত্র। 

      আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি, একটি কবিতাকে ব্যবচ্ছেদ করে তার অন্তর্নিহিত ভাব কী দারুণ দক্ষতায় আলোচক উঠিয়ে আনতে সমর্থ হন । আমি লিখালিখি করলেও এ যোগ্যতা আমার নেই । সাধারণত অনেকেরই হয়না ।

      ধন্যবাদ দেবোনা—- স্বাধীনতার শুভেচ্ছা ।                         

  6. মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক।

  7. লিখাটি পড়ে বুকটা ভার হয়ে এলো কবি দি ভাই। ভাল প্রকাশ। 

    1. উল্লিখিত ঘটনাগুলো সত্যি দিদিভাই।   কবিতা নয় ,একটি উপন্যাস হবে লিখতে পারলে । শুভেচ্ছা  সতত ।     

  8. সহোদরের আগুনচোখে সোনার মোহরের মতো জ্বলজ্বল করে বাংলাদেশ। অসাধারণ।

    1. ""আমাদের পুড়িয়ে মারার সকল আয়োজনে স্বাক্ষর করে লম্পট রাজাকার, আমার কচি মুঠোয় তখনো একখন্ড বাংলাদেশ, মায়ের বুকে মুক্তিযোদ্ধা বাবার তেজোদৃপ্ত অক্ষরে মোড়া স্বাধীনতা, মুহূর্তেই আমরা নির্ভিক হয়ে উঠি অখন্ড বিশ্বাসে।"  

      শুভেচ্ছা আপনাকে।   

  9. এই কালরাত আমাদের বেঁচে থাকবার প্রেরণা। 

    1. আমাদের নতুন আলোর ঠিকানা খুঁজে দিয়েছিল ২৫শে মার্চ । শুভেচ্ছা আপু ।     

    1. ধন্যবাদ আপনাকে। উৎসাহিত হলাম । শুভেচ্ছা।      

  10. মহান স্বাধীনতা দিবসের বিনম্র শ্রদ্ধা ও

    শুভেচ্ছা রইল কবি আপু

  11. কবি আপু আপনার লেখাটা পড়লাম। চমৎকার উপস্থাপন। মহান স্বাধীনতার শুভেচ্ছা নিন।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. খুশি হলাম আপু ।আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা     

  12. শব্দ ও ভাষার অপূর্ব সমন্বয় পাঠকের হৃদয়বিদ্ধ করে। স্বাধীনতাকামী
    মানুযদের সংগ্রাম বিফল হয়নি। সবার অন্তরে গাঁথা আছে।
    কবিতা পাঠে মুগ্ধ হলাম। প্রিয়কবিকে আন্তরিক প্রীতি
    ও শুভেচ্ছা জানাই। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
    জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

    1. আপনার চমৎকার অনুভূতি কবিতাকে ধন্য করলো। পাশে থাকুন প্রিয় কবি ।    

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।