– তপু, তপু…
ডাকতে ডাকতে বাবা বাড়িতে ঢোকেন।
মা-ও তপুকে ডাকেন। বলেন- দেখ্, বাবা তোর জন্য কী নিয়ে এসেছেন! তপু—
কিন্তু তপুর কোনো সাড়া নেই।
গতকাল রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা কুকুরছানাটিকে নিয়েই সে ব্যস্ত। তার পড়ার ঘরের সামনের ছোট্ট বারান্দায় বসে ছানাটিকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছে তপু।
গতকাল বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল তপু। হঠাৎ রাস্তার পাশে কুকুরছানাটিকে কেঁউকেঁউ করতে দেখে খুব মায়া হয় তার। আদর করে কোলে তুলে নেয়। বাড়ি নিয়ে আসে।
কিন্তু বাড়িতে আসতেই বাবা-মা’র বাধার মুখে পড়তে হয়। কেউই রাস্তার কুকুরকে ঘরে তুলতে রাজি নয়।
– ওটা আবার এনেছিস কেন? যা আবার রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আয়।
বিরক্তির সাথে মা বলেন।
বাবা বলেন- ওসব দেশি কুকুর ঘরে তুলতে নেই বাবা। তোমার কুকুর পোষার শখ? তো ভাল দেখে একটা বিদেশি কুকুর এনে দেব। তুমি ওটাকে বাইরে রেখে এসো। যাও।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। তপু কুকুরছানাকে কোলে করে সোজা চলে গিয়েছিল তার পড়ার ঘরে। আদর করে বিস্কুট খাইয়েছিল। ভাতও দিয়েছিল খেতে। রাতে হার্ডবোর্ডের একটা বড় বাক্সে মধ্যে শুইয়ে রেখেছিল।
মা ছেলের পাগলামি দেখে বাবাকে বলেছিলেন- কালই তুমি ওর জন্য একটা বুলডগ এনে দিও। নয়তো ওই রাস্তার কুত্তাকে ও কিছুতেই ছাড়বে না।
আজ রবিবার। স্কুল নেই। তাই সকাল হতেই সে কুকুরছানাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
বাবা মা তপুকে ডাকতে ডাকতে দোতলায় তার পড়ার ঘরের দিকে এগিয়ে যান। বাবার হাতে গলায় শেকল পরানো ছোট্ট একটা বুলডগ।
মা বলেন- দেখ্ তপু, বাবা তোর জন্য কি সুন্দর একটা বুলডগ এনেছেন।
তপু দেখে। সত্যি তো খুব সুন্দর দেখতে। ধবধবে সাদা বড়বড় লোমে ভরা সারাশরীর। গায়ে হাত দেয়। বাহ্, কি নরম ওর শরীর।
বাবা বলেন- দাও ওটাকে। রাস্তায় ফেলে আসি। এটাই এখন তোমার।
তপু একবার রাস্তার কুকুরছানাটির দিকে তাকায়। দেখে- ভয়ে যেন কুঁকড়ে আছে ও। বারবার সভয়ে তাকিয়ে দেখছে বিদেশি ডগটির দিকে। আর ডগটিও সরোষে তাকাচ্ছে ছানাটির দিকে।
তপু বলে- এটাও থাক না বাবা।
মা বলেন- পাগল নাকি তুই? ওইসব দেশি কুকুর কেউ পোষে নাকি? ঘরে ওকে দেখলে লোকে খারাপ বলবে।
বাবাকে উদ্দেশ্য করে মা বলেন- যাও তো, কুত্তাটাকে বাইরে ফেলে এসো।
তপুুর বাবা কুকুরছানাটিকে ঘৃণাভরে হাতে তুলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
খারাপ লাগলেও বাঁধা দিতে পারলো না তপু। একবার বুলডগ, একবার কুকুরছানার দিকে তাকায়।
বুলডগটির শেকল হাতে ধরে। হঠাৎ তপুর কানে ভেসে আসে সেই কেঁউকেঁউ শব্দ।
তাকিয়ে দেখে – কুকুরছানাটি গেটের বাইরে রাস্তার পাশে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে অসহায় চোখে তপুদের বাড়ির দিকে চেয়ে আছে।
এমন অণুগল্প পড়লে জানি না কেন; মন আর চোখ আমার আর্দ্র হয়ে উঠে।
দাদা, ধন্যবাদ। শুভকামনা নিরন্তর।
অসাধারণ একটি অণুগল্প।
ধন্যবাদ
ভালো হয়েছে কবি শংকর দা।
শুভেচ্ছা
* অনেক সুন্দর একটি অনুগল্প…
শুভকামনা
খুব টাচি গল্প।
শুভেচ্ছা সতত।