পিঁপড়ের পাখা

এক.
মাছি আর পিঁপড়ে। দু’জনের মধ্যে ভারি ভাব। রাতে পাশাপাশি থাকে। বাবুদের বাড়ির ভেতরের কোনো এককোণে। আর যখনই সময় পায় গল্প করে। নানা সুখ-দুঃখের কথা বলে।

দুই.
-ও পিঁপড়ে- উড়তে উড়তে এসে মাছি বলে- বাবুদের বারান্দার কোণায় ক’দানা চিনি পড়ে আছে। খাবি তো চল্।
– চল্।
মাছি উড়ে উড়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। আস্তে আস্তে পিঁপড়ে পৌঁছে যায় খাবারের কাছে।
ওরা দু’জনে একসাথে খাবার ভাগ করে খায়।
পিঁপড়ে বলে- আমার যদি তোর মত ডানা থাকত, তাহলে কি সুবিধেই না হত।
– সে হতো ঠিকই। কিন্তু…
– এই দেখ না, আজ আমার এখানে আসতে কত সময় লেগে গেল। অথচ তুই-
– সে ইচ্ছে করলে একনিমেষেই চলে আসতে পারতাম। শুধু তোকে পথ দেখিয়ে আনার জন্যই ধীরে ধীরে এলাম।
– সে জানি। তাই তো বলছি, ভগবান ভারি একপেশে। তোকে পাখনা দিলেন আর আমাকে খুঁদে খুঁদে একগাদা পা। জানিস আমার মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে। যখন দেখি তুই কি সুন্দর উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।
– কি আর করা যাবে বল? ভগবান যাকে যা দেন, তাই নিয়েই খুশি থাকতে হয়।
-না আমি খুশি নই। ভগবানের কাছে নালিশ জানাব – মাছিকে ডানা দিলে। আমি কি দোষ করেছি? আমাকেও দিতে হবে।
-ভগবান যাকে যা দেন তাতেই তার মঙ্গল। অন্যরকম হলে বিপদ হয়।

তিন.
দু’দিন পিঁপড়ের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়নি মাছির। আজ তাই সকাল সকাল পিঁপড়ের কাছে উড়ে আসে মাছি।
ডাকে- ও পিঁপড়ে! পিঁপড়ে-!
পিঁপড়ে কোনো উত্তর দেয় না।
-ও পিঁপড়ে- কি হলো তোর? কথা বলছিস নে কেন ভাই?
সহসা পিঁপড়ে হো হো করে হেসে ওঠে।
– অমন করে হাসছিস কেন ভাই?
-এই দেখ মাছি। আমার পাখা উঠেছে।
মাছি অবাক হয়ে তাকায় পিঁপড়ের দিকে। সত্যি তো। পাতলা পাতলা দু’টো পাখনাই তো দেখা যাচ্ছে ওর গায়ে।
-কীভাবে, কখন হলো এসব ?
-তোর কি হিংসে হচ্ছে?
– কি যে বলিস? কিন্তু আমি ভাবছি…
-এই দেখ আমি কেমন উড়বো এখন…
বলেই পিঁপড়ে উড়তে শুরু করলো।
-হা হা হা- এই দেখ আমি কত উপরে উঠে গেলাম উড়তে উড়তে।
-আর যাস নে ভাই।
-কেন রে? আমি তোর চেয়ে ভাল উড়তে পারছি দেখ-
হঠাৎ মাছি দেখে – একটা ছোট পাখি পিঁপড়ের দিকে উড়ে আসছে।
-ও পিঁপড়ে। আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় চিৎকার করে ডেকে ওঠে মাছি- সরে যা , ওই পাখিটি তোকে-

কথা শেষ হবার আগেই মাছি দেখে পাখিটির দুই ঠোঁটের ফাঁকে আটকে তার প্রিয় বন্ধু ছটফট করছে।

শংকর দেবনাথ সম্পর্কে

শংকর দেবনাথ জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪ প্রকাশিত গ্রন্থ - কবিতার বইঃ ১) আত্মহনন অথবা মৈথুন ২) শিয়রে নীলাভ জ্বর ৩) পরকীয়া ঘুম ছড়ার বইঃ ১) দুধমাখা ভাত ২) টক ঝাল তেতো কড়া ৩) ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ৪) লাগ ভেল্কি লাগ ৫) রসে কষে ভরা প্রবাদের ছড়া গল্পগ্রন্থঃ ১) দুই শালিকের গল্প ২) গাছের জন্মদিন পিডিএফ ছড়ার বই: ১. ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ২. সুজন পাখির কূজন ৩. অথৈ প্রাণের ধারা ৪. ছন্দ মাতে বন্দনাতে ৫. কিম্ভুতকিমাকার ৬. অপ্রচলিত ছড়া ৭. আমার সুকুমার ৮. প্রাণের ঠাকুর ৯. গাছপাগলের পদ্য ১০. ছড়ায় পড়া ১১. শব্দ নিয়ে মজা ১২. ভূত আছে ভূত নেই ১৩) ঠাকুরদাদার বউ ১৪) তাই রে না না ১৫) খুশি মনে পুষি ছড়া ১৬) স্বরবর্ণের ঘর সম্পাদিত পত্রিকাঃ ছোটদের ভোরের পাখি ভেল্কি ছড়াপত্র ঠোঁটকাটা মাসিক ছড়াপত্রিকা পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ ১। নিখিলবঙ্গ শিশুসাহিত্য সংসদ প্রদত্ত " কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা" -২০১৮ ২। দীনবন্ধু রাখালদাস বিভূতি বিনয় একাডেমি প্রদত্ত " কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত্য সম্মান -২০১৯

4 thoughts on “পিঁপড়ের পাখা

  1. অসাধারণ তো বটেই তারপরও বলবো লিখাটি শিক্ষণীয়। অভিনন্দন মি. শংকর দেবনাথ।

  2. অনুগল্পের চরিত্র আর হালকা মেজাজের পরিবেশনা লিখাটিকে সম্মানিত করেছে। শুভেচ্ছা প্রিয় শংকর দা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।