দারিদ্রতা

ছোটবেলা দারিদ্র্যতা কি জিনিস বুঝতামনা!
ক্ষুদা ফেলেই থালাভরে পান্তাভাত লবণ মেখে বেশ পেটভরে খেতাম, খুব ভালো লাগতো।
মাঝে মাঝে পাঁচ থেকে ছয়বারও খেতাম।
এই জন্য আমাকে – আম্মা মাঝেমধ্যে রাক্ষস বলতো। ওমনি আব্বা তখন মায়ের প্রতি রেগে বলতো— তোমার বাপরে-টা খায়? আমার ছেলে যত ইচ্ছে খাবে, তোমার কি?

এই বেশি খাওয়া নিয়ে আম্মা ও আব্বা প্রায়সময় তর্কবিতর্ক করতো।
তবে এসব নিয়ে আমি কিছুই মনে করতাম না, অমি বেশি খাই তা আমিও যানি।
কারণ অন্যকিছু থাক-বা না থাক, পাতিল ভর্তি ভাতটুকু থাকতো, হয়তো তাই বেশি খেতাম।

আমার আব্বাও আমার মতো বেশি খেতেন।
একসাথে খেতে বসলে প্রায়সময় আব্বা আমার মুখের দিকে তাকাতেন এই ভেবে, তরিতরকারি ছাড়া শুধু ভাত খাওয়া নিয়ে আমি কিছু বলি কি-না ।
আমি কিছুই বলতাম না, কারণ আব্বা একা রোজগার করতেন, এ দিয়ে যা পারতেন টেনেটুনে সংসার চালাতেন।
তবে খাওয়ার কষ্ট হলেও সুখের অভাব ছিলোনা, ওই কষ্টের ভেতরেই কেমন যেন একটা সুখ ছিলো।

মনে আছে, একবার আব্বা যখন একজোড়া নতুন জুতো কিনে দিয়েছিলেন, কিযে আনন্দন হয়ে ছিলো আমার নতুন জুতো পেয়ে।
জুতো পড়ে সারাদিন হাটতাম, আর আমার সমবয়সী অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়ে বলতাম— দেখ দেখ, আমার আব্বা নতুন জুতো কিনে দিয়েছে।
এস বলে খুব আনন্দ পেতাম।

আমার আম্মা তখন বলতো — সারাদিন জুতো পড়ে থাকিস কেনো?
জুতো ক্ষয়ে যাবে, খুলে রাখ?
আম্মা কেনো বলেছে তা আমি বুঝিনি!
তবে তারপর থেকে জুতো খুলে রাখতাম, কেবল সন্ধ্যা হলেই পাও ধৌত করে ঘরে ঢুকতাম, সকাল হলে আবার খালি পায়ে হাটতাম।

সেই দারিদ্রতা এখন বুঝতে শিখেছি।
সেই দারিদ্রতা ছড়াতে ছড়াতে এখন অনেক বড় হয়েছি,
এখন দারিদ্রতার সাথে আমার যুদ্ধ হয়, রোজ যুদ্ধ করি।
আমার সঞ্চয় বলতে এখন আছে কুয়াশা, আরও আছে ধূসর মেঘ, আছে সহস্র শূন্যতা।
এসব নিয়েই যুদ্ধ করি, আর ভাঙাচোরা পথে মসৃণ পথ খুঁজি,
পথে পথে ঝরে যাই,
আমি ঝরাপাতা তাই,
হয়তো ঝরতে ঝরতে একদিন কুঁড়িয়ে নেবো আমার সমস্ত দারিদ্রতা।

8 thoughts on “দারিদ্রতা

  1. সেই দারিদ্রতা এখন বুঝতে শিখেছি।
    সেই দারিদ্রতা ছড়াতে ছড়াতে এখন অনেক বড় হয়েছি,
    এখন দারিদ্রতার সাথে আমার যুদ্ধ হয়, রোজ যুদ্ধ করি।
    আমার সঞ্চয় বলতে এখন আছে কুয়াশা, আরও আছে ধূসর মেঘ, আছে সহস্র শূন্যতা।
    এসব নিয়েই যুদ্ধ করি, আর ভাঙাচোরা পথে মসৃণ পথ খুঁজি,
    পথে পথে ঝরে যাই,
    আমি ঝরাপাতা তাই,
    হয়তো ঝরতে ঝরতে একদিন কুঁড়িয়ে নেবো আমার সমস্ত দারিদ্রতা।—-অসাধারণ অনেক শুভ কামনাhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. শুকরান।
      আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো।

  2. বেশ কিছুদিন পর আপনার জীবন স্মৃতিকথা পড়লাম। ভালো সংকলন।
    শুভেচ্ছা জানবেন কবি মোঃ সাহারাজ হোসেন। ধন্যবাদ।

    1. ভালোবাসা নিবেন প্রিয় মুরুব্বী ভাই।
      শুভ কামনা রইলো

  3. জীবনের স্মৃতিচারণের বিষয় উপস্থাপনায় একজন পরিপক্ক লেখকের ছাপ দেখতে পেলাম।

    শুভ কামনা।

    1. কৃতজ্ঞতা ভাই।
      শুভ কামনা আপনার জন্যও।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।