ককটেল কথা

ককটেল কথা

(ক কথা)
দু আঙুলে খাঁটি বাসমতীর ফুরফুরে জুঁই ফুল
আলতো মাখতে মাখতে সামান্য ফাঁক করা ঠোঁটের
ভেতরে দশ কিম্বা পনেরো পার্সেন্ট উপোসী দাঁতের সারিতে
ডেলিভারীর অস্সম সময়ে ন্যাংটা তোর্সার দু জঙ্ঘার মাঝে
আরব আমিরশাহীর হাইরাইজ বাগান জন্ম নিতে থাকে;
উষ্ণতার যে সীমায় পারদ বাস্প হয়ে মিশে যায় চতুর্ভুতে
এক চুমুক চায়ের কয়েকশো গুন চুমুর উত্তাপে মাউন্ট আবুর
মাথায় ঘন জঙ্গলমহলে আগুন ধরে যায়, দাবানল একে একে
গিলে খায় ফেলে রাখা অতীতের ইচ্ছেপূরণের গল্প।

(খ কথা)
টেলি পর্দার বীভৎস মিথ্যে চোখ আর কানের ভেতরে বাজ
ফেলে সাম্প্রতিক বিচারবুদ্ধির চোদ্দ পুরুষের নারী পুরুষ নির্বিশেষে
গণধর্ষণ শুরু করলে নদীর বুকে উথাল পাতাল, সামনে খোলা শিশুপাঠ্য
মাথায় কনডেমড সেলে নিউরনের ঠিক তক্ষুনি মেডিটেশন মোড,
ডাকতে ডাকতে গলা চিরে গেলে বস্তির কাছাকাছি বারো ঘর
এক উঠানে ভয়ঙ্কর খিস্তির কালবৈশাখী অন্যদিকে চিলেকোঠায়
একান্ত অন্ধকারে সদ্য ষোলোর ড্রপসিন খোলা বুকের গহণ অবগাহনে
পেটকাটি চাঁদিয়াল হুররর্ ভোকাট্টা; মাঝি নোঙর তোল্… দু আনার শরিক
গড়িয়ে নামছেন ঝাঁ চকচকে অস্টিনের অহঙ্কারী পাদানি বেয়ে পানরঙা সহেলীর খোঁজে।

(গ ঘ ঙ কথা)
পুলিশের মারের শেষ চিহ্ন কখনো সখনো এক দুই তিন বছর জ্বালায়
শুদ্ধ ভরদ্বাজ স্নান সেরে এলে পাতা আসন খাগড়াই কাঁসা আর ঘোমটায়
খাওনপর্বের পরে সোনমুগলি শিকারের আমন্ত্রণ খেলা করে নথে, রেসকোর্সে
জ্যাকপট ঘোড়া সবে দৌড় শুরু করে সবুজ ঘাসের সাইডলাইন সাক্ষী রেখে
হোওওও…চিৎকৃত শব্দবাজী উঠে যায় ওজোন স্তর ভেদ করে মহাশূন্যের নরম
ত্বকের আনাচে কানাচে; দিন দুই কথা বন্ধ থাকার পরে স্টিলকাঠামোর চল্লিশ
তলা অ্যাপার্টমেন্টের আশি নাম্বার ফ্ল্যাটে টম অ্যান্ড জেরি মুখ, কালাশনিকভ মুখ,
বেহতর্ কামুক ভাদুরে কুত্তার মুখ মিলেমিশে ককটেল, বন্ধ দরজার বিশাল আঙ্কিক
ইয়েল লকে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে প্রথম বৈশাখের শিৎকার অশক্ত পিচ্ছিল।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “ককটেল কথা

  1. লিখার কনসেপ্ট অসাধারণ হয়েছে প্রিয় কবি প্রিয় সৌমিত্র।
    লিখার বক্তব্য পাশাপাশি পরিচ্ছেদের নামকরণ লিখায় স্বতন্ত্রতা এনেছে। :)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।