শীতসন্ধ্যে ও একপাত্তর ভোদকা

এই কনকনে পাথরের দেশে, যেখানে আসার আগেই পালাও নৃশংস ভয়ে, ঝুপ করে সন্ধ্যে লাফালেই অশরীরী হাতে রামগরুরের বাপ ট্রে হাতে সামনে দাঁড়ায়।

ভোদকার গ্লাসে সাঁতার কাটে চেরা লঙ্কা, এককুচি পাতিলেবু আর তোমার মেহেন্দীরঙ ঠোঁট। ভোদকার গল্পে মিশে থাকে তোমার স্পেশাল রসগোল্লা মিশিয়ে হরপ্পান। ওতে নাকি নেশা জমে খুব!

আধঘন্টা জারিয়ে অমৃতরসের ফোঁটা জিভে ঝনাত্ঝন আওয়াজে টপ্পা ধরলেই তুমি গওহর জান, আমি সূক্ষ্ম গোঁফে তা দেওয়া রসিক প্রেমিক।

মাঝে মাঝে বড় বকে দাও তুমি, অথচ সেই বেসামাল রাতে আমার রুক্ষ ঠোঁট জিভের তলায় নিয়ে দুগালের লাল ছড়িয়ে দিয়েছিলে আমার উচ্ছৃত পুরুষাঙ্গে। তুমিও তখন ভিজে একশা।

ভোদকারা বড় বেশী সাবালক হয়। ভোদকারা রাত্রি এলেই বড় কামুক হয়ে ওঠে। নির্বিকল্প দেহসাধনের দিকে এক পা এক পা এগোতে এগোতে একসময় পানাপুকুরে ঝপাং…

তিন তিরিক্কে ন’য়ের নামতা পড়া মামুলি বাংলা স্কুলের সুবোধ বালক আমি, এক দুই তিন পেগের পরে আমাকে কামশাস্ত্র শেখাও। একে একে চিনি তোমার শরীর বিভঙ্গ, বাদামি দ্বীপের সফেদ স্তন, তোমার একলা সমুদ্রসৈকত।

আস্তে আস্তে মাথার ভেতরে ফরাসী বিপ্লব মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসে। একের পর এক উদ্ধত মাথা গিলোটিনে যায়, বিলাসী দরবারে কবিতা লেখে চার্চের উপোসী পুরোহিত।

ভোদকার বোতলের শেষ বিন্দু জ্বলন্ত লাভার মহাস্রোতে থৈ থৈ করে নাচে। জঙ্গলপ্রান্তের শুড়িপথ ধরে টগবগিয়ে অহঙ্কারী কেশর শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে ছুটে যায় একপাল বুনো ঘোড়া। সাদা ধবধবে প্যাঁচা নিঃশব্দে উড়ে যায় মাথার লোম ছুঁয়ে।

রোবটের গতিতে এগিয়ে আসে হুকোমুখোহ্যাংলার বাপ, ‘আউর এক লাগা দুঁ সাব?’ ছিটকে সরে গিয়ে মেমসাহেবা তুমি…তুমি…তুমি বল, ‘এসব নয়, অসভ্য প্রেমিক! ‘

সোমরস মত্ত রাত্রি মুখ থুবড়ে পড়ে।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

5 thoughts on “শীতসন্ধ্যে ও একপাত্তর ভোদকা

  1. জীবন কথায় লিখাটি পড়ে বেশ অনন্য স্বাদ পেলাম প্রিয় কবি সৌমিত্র। শুভ সকাল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. শীতসন্ধ্যা ও একপাত্তর ভোদকা ……

    সুন্দর প্রকাশ সৌমিত্র দাদা। শুভ কামনা।

  3. শুদ্ধ শব্দের গাঁথুনিতে সুগভীর ভাবনা প্রকাশ করেছেন কবি দাদা। শুভকামনা থাকলো। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।