সমাজমনস্ক সুকুমার রায় – বহুমুখী প্রতিভার সমন্বয় ৩
সুকুমার জানেন, সমাজ দুটি শ্রেনীতে বিভক্ত। ধনী ও দরিদ্র। এক শ্রেনীর অঢেল সম্পদ, অন্য শ্রেনী অনাহারে মরে। মানুষকে সচেতন করতে তিনি গল্প লিখলেন, “দানের হিসাব”। রাজ্যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে অথচ রাজভান্ডারে সম্পদ অতিরিক্ত। প্রজারা মরছে অনাহারে। – “রাজা জাঁকজমকে পোষাক পরিচ্ছদে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন, কিন্তু দানের বেলায় তাঁর হাত খোলে না”। প্রজাদের প্রতিভূ এসে ত্রাণের জন্য দশ হাজার টাকা দাবী করলেন। জবাবে – “ রাজা বললেন, দেদার থাকলেই কি দেদার খরচ করতে হবে? দূত বললেন, প্রতিদিন আহারে, সুগন্ধে, পোষাকে আমোদে আর প্রাসাদের সাজসজ্জায় যত টাকা ব্যয় হয়, তারই খানিকটা পেলে লোকগুলো প্রাণে বাঁচে”।
ঈর্ষা, হিংসা, দ্বন্দ্বমুখীনতা প্রমুখ কুৎসিত প্রবণতাগুলি তিনি দেখিয়েছে “হিংসুটি” নাটিকায়। এইভাবে অবিরল সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর যে তীক্ষ্ণ নজর ছিল তার প্রমাণ তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে ছড়ানো। “শব্দকল্পদ্রুম” নাটিকায় গুরুজী বলছেন, “শব্দকে যে অর্থ দিয়ে বিলায় সে অর্থপিশাচ। শব্দকে আটকাতে গিয়ে সে নিজেই আটকা পড়ে”। এ কথা যে কতখানি সত্যি আমরা তা অনুভব করি। অর্থ শব্দটি এখানে দ্ব্যর্থক। সাহিত্য বিচারে বৈয়াকরণিকের বল্গাহীন সংযমের ভান অথবা বুদ্ধিজীবির আত্মবিক্রয় তখনও ছিল এখনো আছে। কিন্তু শব্দকে আপন অভিরুচি মোতাবেক গ্রন্থবন্দী করে বিক্রয়ের ফলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় সমস্ত কালেই।
অর্থহীন, লক্ষ্যহীন সাহিত্যচর্চা করে যারা সাহিত্যকে দিতে চায় গোল্লায় তাদের সম্পর্কে বিবরণ দিয়ে সুকুমার জনমানসকে সাবধান করেছেন “ভাবুক সভা” নাটকে। শোষকের শোষননীতির উল্লেখ দেখি “উকিলের বুদ্ধি” গল্পে। “বেচারা কবে তাঁর কাছে পঁচিশ টাকা নিয়েছিল, সুদে আসলে তাই এখন পাঁচশ টাকায় দাঁড়িয়েছে”। ক্ষমতা যার বেশি সে সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপরে নামায় অত্যাচারের করাল ছায়া। সুকুমারের তা জানা ছিল এবং অত্যাচারিতের প্রতি দায়বদ্ধ সাহিত্যিকের মতোই তিনি “ব্যাঙের রাজা” গল্পে তার প্রতিফলন ঘটান।
(চলবে)
* বেশ তথ্য সমৃদ্ধ রচনা …
ভালো থাকুন প্রতিনিয়ত।
"ক্ষমতা যার বেশি সে সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপরে নামায় অত্যাচারের করাল ছায়া। সুকুমারের তা জানা ছিল এবং অত্যাচারিতের প্রতি দায়বদ্ধ সাহিত্যিকের মতোই তিনি “ব্যাঙের রাজা” গল্পে তার প্রতিফলন ঘটান।"
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস এই আপ্তবাক্যকে আজীবন মনে রাখবে। শুভসকাল কবি।
ভালো ব্যবচ্ছেদ বা আলোচনা করেছেন ভাই।