ছায়া ৩

ছায়া ৩

বেরিয়ে অবাক। মা শুয়ে আছে মেঝেতে। বউ রাখী আরেকদিকে। কি হলো? মা’র শরীর খারাপ? কিন্তু একি সিঁড়ি দিয়ে পিলপিল করে এত লোক উঠে আসছে কেন? মুহূর্তে বারান্দাটা ভর্তি হয়ে সুজনের চোখের আড়ালে চলে গেল মা আর রাখী। ব্যস্ত হয়ে সামনে এগিয়ে গেল সে। ভীড় ঠেলে এগোতে গিয়ে আরও বিরক্ত হলো সে। লোকগুলো সবই তার পাড়ার। সবাই চেনা। কিন্তু এখন ওকে কেউ সামনে এগোতে দিচ্ছে না কেন? এমন শক্ত এঁটুলির মত দাঁড়িয়ে আছে সবাই যে কাউকে সরিয়ে এগোতেও পারছে না সে।

তার দিকে তাকাচ্ছে না কেউ। সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। হঠাৎ কে যেন জোরে কেঁদে উঠলো। কি হয়েছে বোঝার জন্যে মরীয়া হয়ে সামনের দিকে উঁকি দিল ও। আরে! মেঝেতে স্ট্রেচারের মত কিসে কে যেন শুয়ে আছে না? কে রে বাবা! তার বাড়ীতে তো আর কেউ নেই। রাখীর বাচ্চাকাচ্চাও হয় নি। তাহলে! কার কি হলো!

লোকগুলো কলকল করছে নিজেদের মধ্যেই। কে কার কথা শুনছে কে জানে!
– কি করে হলো?
– আরে বাস থেকে নামতে গিয়ে।
– পেছনের টায়ারে…
– এত তাড়াহুড়ো করে কেউ…
– ইস্ ফ্যামিলিটা ভেসে…

বারান্দার রেলিং এর পাশে একফালি জায়গা দিয়ে কোনোরকমে সামনে এগিয়ে এল সে। ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে তাকাল। আর তাকিয়েই মাথা ঝনঝন করে উঠলো তার। স্ট্রেচারের মত একটা কিছুতে ও কে শুয়ে আছে! চোখ বোজা। মাথার ডানদিকে একটা কাপড় দিয়ে ঢাকা, যেটা রক্তে ভেজা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু… কিন্তু…

বজ্রাহত হয়ে সে দেখলো যে শুয়ে আছে সে সুজনের মতই হুবহু দেখতে।

অবাক হয়ে খেয়াল করল নিজেকে তুলোর চেয়েও হালকা লাগছে তার।

(শেষ)

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “ছায়া ৩

  1. ধন্যবাদ প্রিয় কবি সৌমিত্র। তোমার লিখন অনেক ভালো নিঃসন্দেহে। ছায়া অণুগল্পটি পাঠক মনে ঠাঁই পেতে না পেতেই সমাপ্ত হয়ে গেলো … এটা তোমাকে মানতে হবে। :)

  2. * চমৎকার পরিসমাপ্তি…

    ধন্যবাদ প্রিয়।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।