পার্কে সূর্যোদয়

পার্কে সূর্যোদয়

ভ্যাপসা গরম তুরতুর করে ভেসে বেড়াচ্ছিল,
স্নানের অঝোর আরামের পরমুহূর্তেই
ঘাম ফের জাঁকিয়ে বসছিল হাতেমখানায়,
আর সলজ্জ চোখে তাকিয়ে সচকিত সূর্য
গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছিল নিষিদ্ধসীমার দিকে।

পার্কের শুঁড়িপথে-অন্দরে-গাছের,বেঞ্চের
লাল সাদা সুরকির আঁচলের নিচে
অজস্র রঙ বেরঙ পায়ের আনাগোনা;
সুগারের পা, অচল হৃদয় পা
ছলছলে ঝলমলে কিশোরী ছমছমে পা
মোবাইলে ঝর্ণায় উছলানো জলপ্রপাত পা,
পায়ে পায়ে পার্কের তুমুল দোলন।

অথচ সব হট্টগোল এসে থেমে যাচ্ছিল
দক্ষিণ দুয়ারী বেঞ্চের গোপন বলয়ে;
তীক্ষ্ণ গোলাপী শাড়ী, সবুজ ব্লাউজ
রঙচটা থলিগর্ভ সেঁচে বের করে তোবড়ানো টিফিনবক্স,
দোমড়ানো অফ হোয়াইট শার্টের
কুচকুচে রঙে ব্রহ্মান্ডের স্নেহ কুন্ডলী পাকায়,
সূর্য সেখানে এসে থমকে দাঁড়ায়।

কোথাও মিছিল আসে, তীব্র জোয়ার-
কোথাও বা রিমঝিম রবীন্দ্রগান-
নিষেধের চিড়িয়াখানায় কিছু পল ছাড় পাওয়া
বিলিতি স্কুলের ছটপটে শৈশব
কোজাগরী আলোয় সীমন্ত ভাঙে,
একে একে বিচিত্র বর্ণদল
এ ওর গায়ে ঢলে পড়ে, খিলখিল।

দক্ষিণদুয়ারে তখন মন্দার গন্ধ,
ক্যাটক্যাটে গোলাপী শাড়ী ভাত মেখে তুলে দেয়
অফ হোয়াইটের কুচকুচে মুখে নিবিড় যত্নে;
ঘাসবালিকার চোখে আনন্দজল ছলকায়
সূর্যাস্তের সময় তখন পার্কে সূর্যোদয়।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

15 thoughts on “পার্কে সূর্যোদয়

  1. একটি কবিতার গড়ন বা আদল যেমনটা হয়; এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। স্বাচ্ছন্দে পড়া গেলো। অভিনন্দন প্রিয় কবি সৌমিত্র। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. তীক্ষ্ণ গোলাপী শাড়ী, সবুজ ব্লাউজ
    রঙচটা থলিগর্ভ সেঁচে বের করে তোবড়ানো টিফিনবক্স,
    দোমড়ানো অফ হোয়াইট শার্টের
    কুচকুচে রঙে ব্রহ্মান্ডের স্নেহ কুন্ডলী পাকায়,
    সূর্য সেখানে এসে থমকে দাঁড়ায়।————-বেশ অনবদ্য প্রকাশ

  3. অসাধারণ লিখেছেন। মনকাড়া চিত্রকল্প; মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। কিছু কিছু শব্দের ব্যাবহার কবিটাকে দারুণ ব্যঞ্জনাময় করে তুলেছে !

  4. পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই।

    দক্ষিণ দুয়ারী বেঞ্চের গোপন বলয়ে;
    তীক্ষ্ণ গোলাপী শাড়ী, সবুজ ব্লাউজ
    রঙচটা থলিগর্ভ সেঁচে বের করে তোবড়ানো টিফিনবক্স,
    দোমড়ানো অফ হোয়াইট শার্টের
    কুচকুচে রঙে ব্রহ্মান্ডের স্নেহ কুন্ডলী পাকায়,
    সূর্য সেখানে এসে থমকে দাঁড়ায়।

  5. আর সলজ্জ চোখে তাকিয়ে সচকিত সূর্য
    গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছিল নিষিদ্ধসীমার দিকে।

     

    * ভাব ভাষা দু-ই অপূর্ব… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।