(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে একটি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ সপ্তদশ পর্ব।)
“After giving careful and serious consideration to all the materials that are on record,the Commission is of the view that the RSS with its extensive organisation in jamshedpur and which had close links with the Bharatiya Janata Party and the Bharatiya Mazdoor Sangh had a positive hand in creating a climate which was most propitious for the outbreak of communal disturbances.
In the first instance, the speech of Shri Deoras (delivered just five days before the Ram Navami festival) tended to encourage the Hindu extremists to be unyielding in their demands regarding Road No. 14. Secondly, his speech amounted to communal propaganda. Thirdly, the shakhas and the camps that were held during the divisional conference presented a militant atmosphere to the Hindu public. In the circumstances, the commission cannot but hold the RSS responsible for creating a climate for the disturbances that took place on the 11th of April, 1979
— Jitendra Narayan in a report on Jamshedpur riots of 1979”
সভ্যতা এগিয়ে চলার গর্ব করেছে, আর পাশাপাশি সভ্যতাকে নগ্ন করার চেষ্টা হয়েছে বারবার। ওপরে উদ্ধৃত ১৯৭৯ সালে জামশেদপুরে ঘটিত দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত কমিশনের রিপোর্টের একটি অংশ। বারবার দেখা গেছে উস্কানি কখনো দেওয়া হয়েছে, আবার কখনো উস্কানি দেবার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ভারতের প্রধান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সাধারণত মিলেমিশেই থাকেন। বহু জায়গায় মুসলমানেরা দুর্গাপুজো করেন যেহেতু এটা একটা অন্যতম বৃহৎ উৎসব। আবার মুসলিমদের বিভিন্ন পরবে অন্য ধর্মের মানুষ দাওয়াত রক্ষার জন্য যান। রাষ্ট্র শাসনের তাগিদে ইংরেজের ডিভাইড এন্ড রুলের শিকার হয়ে প্রাক স্বাধীণতা যুগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই দুই সম্প্রদায় প্রথম বিবাদে জড়িয়ে গেছিল। অথচ এর জন্য সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না। স্বাধীণতার হাত ধরেই এসেছিল সাম্প্রয়ায়িকতা। এসেই সে পাকাপাকি মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসল।
বিহারে জামশেদপুর রায়ট, ভাগলপুর রায়ট, ২০০২ এ গুজরাত রায়ট, একের পর এক সন্দেহ, অবিশ্বাস, নরমেধযজ্ঞ। আর বারবার প্রমাণিত হয়েছে এর পেছনে আছে মৌলবাদী আর এস এস এর পাকা মাথারা। অসংখ্য শিকড় ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের। মুখ্য রাজনৈতিক মুখ হলো ভারতীয় জনতা পার্টি। এছাড়া, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ, ভারতীয় রেলওয়ে সঙ্ঘ, ফিশারম্যানস কো অপারেটিভ সোসাইটি, সংস্কার ভারতী, অধিভক্তা পরিষদ, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, অখিল ভারতীয় শৈক্ষিক মহাসংঘ, ন্যাশনাল মেডিকোস অর্গানাইজেশন, অখিল ভারতীয় পূর্ব সৈনিক পরিষদ, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ, ভিত সলাহকার পরিষদ, লঘু উদ্যোগ ভারতী, সহকার ভারতী, দীনদয়াল শোধ সংস্থান, ভারতীয় বিকাশ পরিষদ, বিবেকানন্দ মেডিক্যাল মিশন, সেবা ভারতী, সক্ষম, নীলে, হিন্দু সেবা প্রতিষ্ঠান, লোক ভারতী, সীমা সুরক্ষা পরিষদ, রাষ্ট্রীয় সেবা সমিতি, শিক্ষা ভারতী, বজরং দল, ধর্ম জাগরণ সমিতি, মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ, হিন্দু মুন্নানি, হিন্দু রাষ্ট্র সেনা, একাল বিদ্যালয়, সরস্বতী শিশু মন্দির, বিদ্যা ভারতী, বিজ্ঞান ভারতী, বারানসী কল্যান আশ্রম, অনুসূচিত জাতি জমাটি আরক্ষণ বাঁচাও পরিষদ, ভারত-তিব্বত মৈত্রী সঙ্ঘ, বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্র, হিন্দুস্তান সমাচার, ভারতীয় বিচার কেব্দ্র, হিন্দু বিবেক কেন্দ্র, বিবেকানন্দ কেন্দ্র, ইন্ডিয়া পলিসি ফাউন্ডেশন, ভারতীয় শিক্ষণ মন্ডল, অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনা ইত্যাদি শাখা সংগঠন মাটির তলায় শিকড়ের মত ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। একযোগে যখন গোয়েবলসীয় কায়দায় এই এতগুলি সংগঠন কোনো প্রচার চালায়, তখন আম অশিক্ষিত আদমির মাথায় তার গ্রহনযোগ্যতা বিচারের কথা মাথায় আসেনা। ফলে দাঙ্গার আগুন জ্বালানো এখানে খুবই সহজ কাজ, যা উপমহাদেশের সব দেশেই বারবার দেখা গেছে।
২০০২ এর গুজরাত দাঙ্গা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য কখনোই বাইরে আসেনি। শুধু সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই যা জানা যায় তাতে মেরুদন্ডে বরফের স্রোত বইয়ে দিতে যথেষ্ট। ২৭শে ফেব্রুয়ারী অযোধ্যা থেকে আগত করসেবক ভর্তি ট্রেনে আগুন লাগায় পুড়ে মারা যান ৫৮ জন নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা করসেবক। আগুন জ্বলে ওঠে সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ইন্ধন যোগানে। দাঙ্গা লাগে, মারা যান দুই সম্প্রদায়ের ১০৩৪ জন, আহত ২৫০০, নিখোঁজ ২২৩। অন্যান্য সূত্রের খবর শুধু মারাই গেছিলেন প্রায় ২৫০০ মানুষ। জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল শিশুদের, হয়েছিল অসংখ্য ধর্ষণ। এই রায়টের পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য মামলা হয়েছিল। যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মামলা হল, বেস্ট বেকারি মামলা, বিলকিস বানু মামলা, অবধূতনগর মামলা, দানিলিমদা মামলা, এরাল মামলা, প্রভাগড় ও ধিকভা মামলা, গোধরা ট্রেন মামলা, দীপদা দরওয়াজা মামলা, নারোদা পাটিয়া মামলা, পেরজুরি মামলা, কৌশরবানু গণ ধর্ষণ মামলা ইত্যাদি।
(আবার আগামী কাল)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই দুই সম্প্রদায় প্রথম বিবাদে জড়িয়ে গেছিল। অথচ এর জন্য সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না। স্বাধীণতার হাত ধরেই এসেছিল সাম্প্রয়ায়িকতা।