আর নয় নাগাসাকি আর নয় হিরোসিমা

শোনো-
ঘরের কোণে নির্জীব
চতুঃস্পার্শে তৈরী করা
আপাত ভঙ্গুর শান্তি ভাঙতে না চাওয়া
মানুষের দল-
শোনো এক গল্প বলি-
রক্তাক্ত সে কলঙ্ক শুনে যদি ক্ষুব্ধ হও
দুঃখ আসে,ক্রোধে ফেটে পড়তে চায় মন
জানিও তা পরে।

সে দিনটা ছিল টাকা রং সূর্যের
স্নেহাশীষে ধোয়া,
অগনিত ফুটফুটে শিশু
সোনালী গমের ক্ষেতে
বিকিরণ করে সুখ খেলায় খেলায়-
তরুণী গৃহিনী জল সন্ধানে-
চাষীরা এসেছে মাঠে-
মজুর গিয়েছে কলে-
শিক্ষিকা একাগ্র অধ্যাপনায়-
কে জানতো এত সুখ
প্রকৃতির ভালবাসা এ সৌন্দর্য
কেড়ে নিতে মানুষই পাঠাবে দূত
জীবন্ত শয়তান…!!

হঠাৎ বিস্ফোরণে
চারিদিক কালো হয়ে আসে,
মাটির গভীরে ফাটল,
ধোঁয়ার কুণ্ডলী, আগুনের লেলিহান শিখা,
আকাশ এসেছে নেমে
সমতলের মাংস ছিঁড়ে নিতে।

সময় চলে তার আপন গতিতে
ধোঁয়ামেঘ সরে.আগুনের ধিকিধিকি,
অনেকেই বেঁচে নেই।

দগ্ধ গলিত সেই শবস্তুপ মাঝে
কোনো মানবসন্তান হেঁটে আসে
জীবন্ত কংকাল হয়ে-
হাড় আছে, মাংস নেই-
তলপেটে ঝুলন্ত থলথলে নাড়ী-
নাক নেই, ঠোঁট নেই-
চোখে তার পাতা নেই-
গায়ে পোড়া চামড়া কোথাও বা ঝুলছে-
দু কদম হেঁটে এসে
বিস্মিত ঘৃণা ছুঁড়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে
আর ওঠে না।

এই হলো নাগাসাকি
এই হলো হিরোসিমা
এই হলো পরমাণু
যুদ্ধের বিভীষিকা।
শোনো বিশ্বের আপামর মানুষ-
তোমরা কি চাও, এভাবে ধ্বংস হোক
গর্বের সভ্যতা?

পাঁচশো কোটি প্রাণ ধ্বংসে মেতে উঠুক
পাঁচশত খামখেয়ালী শয়তান?
বন্ধু,আজকের এ রণাঙ্গনে
সজোরে একযোগে হাঁক দাও-
আমরা চাই না যুদ্ধ
বন্ধ হোক রণদামামা
বন্ধ হোক মারণবোমা
আকাশযুদ্ধ-মিসাইল দৌড়!
আমরা অন্ন চাই, বস্ত্র চাই
মাথার ওপরে চাই একখণ্ড আচ্ছাদন,
আমরা বাঁচতে চাই,
বন্ধ হোক এ তাণ্ডবের বীভৎস লীলা…!

সে তূর্যনিনাদে কেঁপে উঠবে
ঔপনিবেশিক ভিত,
সাম্রাজ্যবাদী প্রভুরা চুরমার হবে
শব্দের অমোঘ আঘাতে,
যুদ্ধলিপ্সার শিকড়
উপড়ে বিলীন হবে
মহাকাশের অন্ধকারাচ্ছন্ন গর্ভে।

তারপর!-
সোনালী গমের ক্ষেতে
আবার খেলবে শিশু,
তরুণীর ঠোঁটে হাসি
ফিরে এসে হবে বিদ্যুচ্চমক,
এ সুন্দর গোলকে ভাসবে
অপার শান্তির নীলিমতা,
মানুষ উঠবে বেঁচে
প্রকৃত মানুষ হয়ে।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “আর নয় নাগাসাকি আর নয় হিরোসিমা

  1. কে জানতো এত সুখ
    প্রকৃতির ভালবাসা এ সৌন্দর্য
    কেড়ে নিতে মানুষই পাঠাবে দূত
    জীবন্ত শয়তান…!! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।