প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি। নতুন চাকরি তে যোগদান তাই এই শনিবারের সকালে ছেলেটা যখন ঘুমে কাদা তখন আমি বের হয়ে আসলাম। আমি জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের মধ্যে সে আমাকে খুঁজবে, না পেলে কান্না করতে থাকবে। চাকুরীজীবী মায়েদের জীবনটা কষ্টের। না এগুতে পারে না পিছাতে। এই দোটানার মধ্যে থাকতে থাকতে এরা এক সময় কঠিন মনের অধিকারী হয়ে যায়। না হয়ে উপায়ও নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় এত পড়ালেখা না করলেও পারতাম। কোন রকম দায়বদ্ধতার বাইরে থেকে আরাম করে জীবনটা উপভোগ করতে পারতাম!। কিন্তু এখন দেশের মানুষের টাকায় পড়ালেখা করার পর ঘরে বসে থাকাটাকে রীতিমতো অন্যায় মনে হয়।
সে যাই হোক, ঢাকা শহরের রাস্তার কথাতো বলা যায় না তাই প্রায় ৪৫মিনিট আগে বাসা থেকে বের হলাম। কে জানতো ১৫মিনিট এর মাথায় পৌঁছে যাব। অফিস এর তালা খোলার আগেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয়না। তাই পথের পাশে একটা পার্ক পেলাম আর নেমে পড়লাম।ব্যস্ত রাস্তার পাশে পার্কের ভেতর অন্য জগত। আমিই সবচেয়ে অলস বসে আছি এখানে। আমার বয়সী মানুষ খুব একটা নেই।ভাবছি আমার বয়সী মানুষগুলো যখন সকালে আরেকটু আরাম করতে ব্যস্ত তখন মধ্যবয়সী মানুষগুলো কিভাবে নিজের যত্ন নিচ্ছে। অথচ যত্নটা আমার বয়স থেকেই হওয়া উচিত। পাশেই আন্টিরা বিশাম জটলা করে গল্প করছে, আর খাচ্ছে। গল্প শুনে আর খাওয়ার বহর দেখে হাসি আটকে রাখা মুশকিল। হাসবো কি হাসবো না করে হেসেই ফেললাম কারন একটু দূরে দাঁড়ানো আংকেলদের দল হাতে হাত রেখে হো হো করে হেসে উঠছেন কিছুক্ষণ পর পর। সে হাসি আমাকেও সংক্রমণ করেছে। মন খারাপ ভাবটা হালকা করে আবার অফিসের পথে বের হয়ে পড়লাম।
আসসালামু আলায়কুম। সহজ- সরল ভাষায় বেশ বর্ণনা।
ধন্যবাদ।
দীলখুশ মিঞারর পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।
হাই হ্যালো।
আপনি সকাল বেলার ব্যস্ততা অার আপনার কিছু পর্যবেক্ষন অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। বেশ গুছানো।
আপনি লিখেছেন,এখন দেশের মানুষের টাকায় পড়ালেখা করার পর ঘরে বসে থাকাটাকে রীতিমতো অন্যায় মনে হয়।
আমিতো এদেশের মানুষ। কখনও আপনার লেখাপড়া চালানোর জন্য টাকা পয়সা দিয়েছি মনেতো করতে পারছি না। যাক, বলেছেন যখন তখন কোন না কোনভাবে নিশ্চয়ই দিয়েছি। মনে রাখবেন, যেমন এখন মনে রেখেছেন।
পাবলিক বিশ্বববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা দেশের মানুষের টাকাতেই পড়ে। তা না হলে ২০টাকা মাসিক বেতনে পড়া বেসম্ভব ব্যাপার।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার জন্য শুভকামনা।
আমাদের দেশের কর্মজীবী চাকুরীজীবি ৱ মায়েদের এই এক কঠিন পরীক্ষা।
হুম
আপনার অফিসের পাশে দিয়েই আমাকে আমার অফিসে যেতে আসতে হয়। আপনি ৪৫ মিনিট আগে বের হন আর আমাকে বের হতে দুই ঘ্নটা আগে। আমার রাস্তার পুরোটাই থাকে জ্যামের দখলে বাস চলে না যেন পিপিলিকার পিঠে বসে যাচ্ছি।
হ্যা ফেরার পথে রাস্তায় বিশেষ করে বাংলা মটর, কারওয়ান বাজার আর ফার্ম গেটে দেখি অসহায়ের মত মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে কখন একটা বাসে একটু দাড়াবার ঠাই পাবে। বিশশেষ করে মহিলাদের দেখে আরও খারাপ লাগে এই জন্য যে ঘরে নইশ্চয় এদের কোন সন্তান মা এর পথ চেয়ে আছে, মা কখন এসে সারাদিনের শ্রান্তি ক্লান্তি ভুলে বুকে টেনে বলবে মা/বাবা কি করছ? আর অমনিঈ শুরু হবে দিনের ফিরিস্তি। কখন এরা বাড়ি নামের সাময়িক আস্তানায় ফিরবে। ফিরেই আবার রান্না কর, স্বামী সন্তানদের আবদার মেটাও। কখন করবে এগুলি?
একদিন এক বাসে বসে যাচ্ছি, কারওয়ান বাজারের এ পাড়ে অল্প বয়সের এক ভদ্র মহিলা বাসে ওঠার জন্য কন্ডাকটরকে কাকুতি মিনতি করছে কিন্তু কন্ডাকটর বলেই চলেসে সীট নেই নেয়া যাবে না। আমার আর সহ্য হলো না, উঠে ওই ব্যাটাকে দিলাম এক ধমক উনাকে উঠতে দাও উনি দাড়িয়েই যাবে নিয়ে নাও, তাকে বাড়ি যেতে হবে না? সেদিন ওই ছেলে তাকে নিয়ে নিল কিন্তু এমন করে কি আর সব পারা যায়?
খুবই কষ্ট হয়, কিন্তু কিছুই করার নেই।
অফিস বদলেছে আজ থেকে। দূরে গেলাম আগের চেয়ে।
আগের অফিসে ঢোকার আগে প্রায়ই দিন সকাল বেলা মনে হত আপনি কখন বাসের জানালার ফাঁক দিয়ে ডাক দেন!
দোয়া রাখবেন।
কয়েকদিন ধরে আমাকে অফিসের একটা কাজে কারওয়ান বাজারে আসতে হচ্ছে আরও কয়েকদিন লাগবে। ভাবছিলাম একদিন আপনার অফিসে বসে একটু চা এর বিরতি নেব, তার আগেই দূরে চলে গেলেন! যাক জানলাম না হলে ফিরে এসে মন খারাপ হতো!
আপনার এবং আপনার পরিবার বর্গের প্রতি ঐশ্বিক শান্তি এবং সহায়তা কামনা করি।
সম্ভবতঃ একজন চাকুরিজীবী রমনীর টুকরো জীবন চিত্র প্রদর্শিত হলো এমন আয়নায়- যেখানে শুধু মুখ-চোখ দেখা যায় নিত্য দিন সামনে এসে দাঁড়ালে, কিন্তু গোপন সৌন্দর্য- কেউ দেখতে পায় না; কেউ ক্ষত আবিষ্কার করে ঘৃণা করে- কেউ মলম দিতে চায় বিষাক্ত আঙুলে…
যাই হোক কিছু প্রশ্নের উদয় হলো- সময়, স্থান, কাল, পাত্র-পাত্রী ইত্যাদি বিবেচনা না করেই তার উদয় হয় আবার অস্ত যায়। প্রশ্ন হলোঃ তার স্বামী জীবিত কি না? যদি জীবিত এবং উপার্জন সক্ষম হয়, তবে তার স্বামীর একার অর্জনে পরিবার-সংসার এর ভরণ-পোষণ কি সম্ভব হচ্ছে না? যদি হয়, তবে তার ঘরকন্যা করাই সবচেয়ে উত্তম। (শিক্ষিত হলে সন্তানকে শিক্ষা দান করা, স্বামীকে শেখান- নিজে শেখার চেষ্টা করা; উচ্চ শিক্ষিত হলে সমগ্র মানুষের শিক্ষার ভার গ্রহণ করা অর্থাৎ লেখালেখি করা।)
উপরের কোনকিছু না মিলনে যুদ্ধ চলুক… (জীবন তো যুদ্ধের প্রান্তর; বাঁচো-মরো যুদ্ধ করো।)
আপনার এবং সেনানীদের কল্যাণ কামনায় আত্মিক প্রশান্তি প্রার্থনায় রইলো।
জীবন তো যুদ্ধের প্রান্তর; বাঁচো-মরো যুদ্ধ করো…যুদ্ধ চলছেই।
শুভকামনা রইল।