নিঃসঙ্গতা বাসা বাধে মধ্য বয়সে
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি ঝরছিল। হঠাৎ শিল পড়তে শুরু করল। আয়েশা খানম তখন সবে ম্যাগাজিনটার পাতা ওল্টাচ্ছেন। শিল পড়ার প্রচণ্ড শব্দে আয়েশা খানম দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌঁড়ে ছাদে গেলেন কিন্তু ছাদে পা রেখেই যেন সব উৎসাহ হারিয়ে ফেললেন। আমেরিকায় কি শিল পড়ে ?
বাবু এখন আমেরিকায়। গেছে এমবিএ পড়তে। ছোটবেলায় বাবু সারা বছরই বৃষ্টি হলে দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে যেত, শিল পড়ছে কিনা দেখতে। কোথায়, ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে বাবুর তৈরী সেইসব মজার জগৎ! সে এখন খুব বড় হয়ে গেছে। সবই বোঝেন আয়েশা খানম। বাবু তার ভবিষ্যৎ তৈরি করছে, তাকে ঘিরে থাকবে নিরাপত্তার সোনালী আশ্বাস। কিন্তু তাও মন মানে না, একলা দুপুরে খাঁ খাঁ করে বুক। স্বামীকে মিস করে কখনও কখনও , আবার যেন তাকে কাছে পেলেও নিজের মনে হয়না। যেন ভিনগ্রহের কেউ হঠাৎ করে এসে পড়েছে এই জগতে।
একাকিত্বের দীর্ঘনিঃশ্বাস সমানে পড়ে রায়না ইসলামেরও। তার দু’টি সন্তান ছেলেটি সম্প্রতি ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছে, মেয়ে ব্যস্ত এমফিল-এ। মাকে দেয়ার মতো সময় তাদের কারও নেই। বাড়িতে দু’টি কাজের লোক; তা সত্ত্বেও রায়না ইসলাম, সর্বদাই এটা করছেন, ওটা করছেন। তবু চব্বিশটা ঘন্টা যেন শেষই হতে চায় না। সময় যেন ‘থ‘মেরে গেছে। কিছুতেই কাটে না। ইদানীং বেশ হয়েছে নতুন একাকীত্ববোধ-নিজেকে অপাংক্তেয় বোধ করছেন তিনি। বাচ্চারা সবাই গড়ে নিয়েছে নিজেদের জগৎ, স্বামীর কাছেও আর তার যেন মেন প্রয়োজন নেই। পৃথিবীটা কেমন আলো-বাতাস শূন্য হয়ে গেছে রায়না ইসলামের কাছে। রায়না ইসলাম বা আয়েশা খানমের মহো মহিলার সংখ্যা এই শহরে অগণিত। প্রতিষ্ঠিত স্বামী তার কাজ ক্লাব বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে যাওয়ায় তাদের জন্য সময় দেয়ার প্রয়োজনটাই যায় মিটে। ফলে ফুলে ফেঁপে ওঠে বুক জুড়ে শূন্যতা।
একই সমস্যা শর্মি মাহবুবেরও। অথচ চমৎকারভাবে সে মানিয়ে নিয়েছে নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে। চিরকাল ছবি আঁকতে ভালবাসতেন তিনি কিন্তু গড়িমসিতে সেটা আর শিখে ওঠা হয়নি। অথচ ছবির প্রতি এক অমোঘ টানে তিনি ফাঁক পেলেই ঘুরে বেড়াতেন গ্যালারিগুলোতে। ক্রমশ তার চেনা হয়ে যায় সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গেও। ইদানীং ঝাড়া হাত-পা শর্মি এই গ্যারিগুলোর বিভিন্ন কাজে সাহয্যে করেন-তার মধ্যে প্রধান হল, নতুন শিল্পী খুঁজে বরে করা। অনেক তরুণ প্রতিভাই অকালে ঝরে যায় কেবল যথাযথ যোগযোগের অভাবে। শর্মি মাহবুব চেষ্টা করেন এইসব নতুন মুখকে একটা পরিচিতি দিতে।
সব সময় যে সফল হয় তা নয়, কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই তার বাছাই করা শিল্পীরা নিশ্চিতভাবে লোকের নজর কাড়ে। সম্প্রতি তো দু-একটি গ্যালারি তাদের ছবি বিক্রির পর শর্মি মাহবুবকে ভাল রকমের পারিশ্রমিকও দিয়েছে। অন্তত তার সময়টা তো সুন্দরভাবে কেটে গেল, আবার সময়ের মূল্যও পাওয়া গেল। নিজেকে শর্মি মাহবুবের আর বান্ধবহীন একা মনে হয় না; বেঁচে থাকার একটা জোরালো নেশা তিনি পেয়েছেন।
কিভাবে একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব সে বিষয়ে মনোচিকিৎসক অধ্যাপক ড. মোহিত কামাল বলেন, ‘মধ্য বয়সের এই একাকিত্বে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা দিশেহারা হয়ে যান, অবসাদ ঘিরে ধরে তাদের । মনে হয় জীবন বুঝি এখানে শেষ হয়ে গেল। তাছাড়া স্বামী-সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে চাওয়াটাতো খুবই স্বাভাবিকও। কিন্তু বাস্তবে যদি তা নাও ঘটে, তাতে হা-হুতাশ করে জীবনটা বিফলে দেওয়ার কোনও অর্থ নেই। অন্য দশটা জীবনের মতই আপনারটাও যথেষ্ট মূল্যবান।
আর তা একটাই। জীবন একটাই, তাই জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। এতদিন ঘর-সংসারের চাপে যে ভালো লাগাগুলোকে ধামা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন, সেগুলোকেই নতুন করে উজ্জীবিত করে তুলুন। যেমন হয় তো গানটা শিখে ওঠা হয়নি, হয়তোবা বিদেশী ভাষা শিখতে চেয়েছিলেন, হয়নি-সেসব নতুন করে প্রাত্যহিকীর অঙ্গ করে নিতেই পারেন আপনি। পড়াতে ভাল লাগলে কাজের লোকের বাচ্চাকে পড়াতে পারেন। আসল কথাটা হলো, না পাওয়ার হতাশার কাছে নিজেকে হারিয়ে না ফেলে জীবনটাকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা।
এটাই বাস্তবতা ——–
আমাদের সমকালীন এবং বৈশ্বিক বাস্তবতা।
সব বয়সেই এই কর্ম হতে পারে,,,,,,,,,


আমিও কখনও কখনও ভীষণ নিঃসঙ্গতায় ভুগি।
এটিই নির্মম বাস্তবতা্…
বেশ ইনিস্প্রিশনাল লেখা!
আসল কথাটা হলো, না পাওয়ার হতাশার কাছে নিজেকে হারিয়ে না ফেলে জীবনটাকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। চমৎকার আহ্বান