শিশুরা ডানপিটে হলে

শিশুরা ডানপিটে হলে

শিশু বাড়াবাড়ি রকমের চঞ্চল হলে বাবা-মায়ের চিন্তাটাও বেড়ে যায় স্বাভাবিকভাবে। দেখা যায় অতিরিক্ত ছটফটানি শিশুকে অমনোযোগী করে তুলছে পড়াশোনায় আবার অশান্ত আচরণ প্রভাব ফেলে তার স্বাভাবিক কাজকর্মেও। বাসায় ও স্কুলে এসব ডানপিটে শিশুকে সামলানো খুবই কষ্টকর। ক্লাসের পড়া ঠিকমতো না শোনা, সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি করা কিংবা অন্যের টিফিন কেড়ে নেয়ার মতো কাজগুলো করে চঞ্চল শিশু আবার বাসায় থাকলেও দু’দণ্ড স্থির হয়ে বসতে চায় না। খাবার খাওয়া কিংবা টিভি দেখার মতো বিষয়গুলো নিয়ে জেদ করতে থাকে অনবরত। অযথা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা, অকারণ বকবক করা, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে ফেলা, বারণ করলে ইচ্ছা করে অন্যায় করা, টেবিল-চেয়ার থেকে লাফিয়ে নামা, গালাগালি করা ডানপিটে শিশুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের শিশুরা মন দিয়ে শুনতে চায় না কোনো কথা। অনেক শিশু খেলাধুলা করতে গিয়েও মনোযোগ দিতে পারে না।

শিশুর ছটফটে আচরণের কারণ
সাধারণত পাঁচ বছরের আশপাশে যাদের বয়স তাদের মধ্যে এ প্রবণতাগুলো বেশি দেখা যায় আবার অনেক সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থাও শিশুর মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতার কারণ হতে পারে। দেখা যায় ডে কেয়ারে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থাকা শিশু অন্যের দেখাদেখি দুরন্তপনা বা বদঅভ্যাস রপ্ত করছে। অতিরিক্ত টিভি দেখা অথবা গেম খেলার কারণে কিছু শিশু আবার কার্টুন বা পছন্দের চরিত্রের অনুকরণে দুরন্ত আচরণ করতে চায়। মায়ের গর্ভকালীন ধূমপান বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের ফলে অনেক সময় শিশুর এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর ডানপিটে হওয়ার হার অনেক বেশি।

শিশুকে সামলান ধৈর্য ধরে
নির্দিষ্ট বয়সের দুরন্তপনা সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক হয়ে যায়। এর পরও ডানপিটে শিশুর রক্ষণাবেক্ষণে বাবা-মাকে নিতে হবে খানিকটা বাড়তি যত্ন। অনেক বাবা-মা শিশুর অস্থির আচরণে নিজেরাই অস্থির হয়ে পড়েন। রেগে গিয়ে বকাঝকা ও মারধর করেন শিশুকে। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এতে উল্টো ফল হতে পারেন। চঞ্চল শিশুকে সামলান ধৈর্য ধরে। শিশুর অকারণ দৌড়ঝাঁপে বিরক্তি প্রকাশ না করে কৌশলে অন্য কাজ করতে দিন। যে শিশু বেশি কথা বলে তার সামনে পছন্দের বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলুন। এতে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার অভ্যাস তৈরি হবে। অস্থির শিশুরা কোনো কিছুতেই ঠিকভাবে মনোযোগ দেয় না। ফলে কিছু বললে বুঝতে দেরি করে। এতে রেগে না গিয়ে প্রয়োজনে এক কথা বারবার করে বুঝিয়ে বলুন। গান গাওয়া বা ছবি আঁকায় শিশুর আগ্রহ থাকলে সেগুলো শেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এতে সে নতুন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবে।

শিশুর পড়াশোনাটা নিজেই দেখিয়ে দিন। যতটা সম্ভব আনন্দের সঙ্গে যেন সে পড়তে পারে সে ব্যবস্থা করুন। পড়াশোনার অবস্থা বা স্কুলে শিশুর আচরণ সম্পর্কে জানার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা জরুরি। শিশুর কাজকর্মের ক্ষেত্রে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাকে তিরস্কার করবেন না বরং ভালো কোনো কাজ করলে তাকে বাহবা দিন। প্রিয় কোনো জিনিসও উপহার হিসেবে দিতে পারেন। শিশুকে স্কুল বা অন্য কোথাও একা যেতে দেবেন না, সেটা যত কাছাকাছিই হোক না কেন। সম্ভব হলে শিশুর প্রতিটি কাজের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করুন। তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে শিশু নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। কোনো কিছু নিয়ে শিশু জেদ করলে প্রথমে বুঝিয়ে বলুন। কাজ না হলে কৌশলে অন্য কিছুতে ব্যস্ত করে দিন তাকে। তবে শিশু খুব বেশি দুরন্ত হলে বা জেদের বশে নিজেকে জখম করার মতো কাজ করতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

7 thoughts on “শিশুরা ডানপিটে হলে

  1. শিশুরা ডানপিটে হলে পরামর্শ গুলো নিশ্চয়ই গ্রহণ করা যেতে পারে। ধন্যবাদ দিদি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।