ট্যাগ আর্কাইভঃ এলেবেলে

এলেবেলে -২৭

প্রবাস জীবনের দুদশক পার হয়ে গেছে, কত দ্রুত সময় চলে যায়। যে কোন কারনেই হোক এই ২১ বছরে কম করে হলেও ১২ বার দেশে আসা হয়েছে … আসা যাওয়ার এই ব্যয় সঞ্চয়ের দিকে গেলে হয়তো অনেক বদলে যেত জীবন। যাক সে সব কথা এ নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই … আমি কখনো বড় লোক হতে চাইনি, এখনো না। জীবন চলে গেলেই হয়।

দেশে আসার সময় আমার একটা অভ্যাস হচ্ছে কাছের এবং এমন কি দূরের মানুষের জন্য কিছু নিয়ে আসা যাকে আমরা গিফট বলে থাকি। এই গিফট দেওয়া নিয়ে আমার কিছু মজার অভিজ্ঞতা আছে।

আমার সেই সব কাছের বা দূরের মানুষদের একজন একবার বললেন “এসব তো এ দেশেই পাওয়া যায়।”

কিন্তু আমি উনাকে কি করে বোঝাই টাকায় বাঘের চোখ কেনা গেলেও, কেনা যায় না এমন অনেক কিছু আছে ? আমার আন্তরিকতাটুকু উনার চোখে পড়ে না। আবার এমন কিছু প্রোডাক্ট আছে সেই গুলো এই বাংলাদেশে বিক্রী হবে না। যেমন জাপানের Sony/Toshiba/Hitachi কোম্পানী জাপানে যে TV বিক্রী করে তা বাংলাদেশে করে না। গ্রামীন UNIQLO যে সব কাপড় বাংলাদেশে বাজারজাত করে তা জাপানে পাওয়া যায় না।

পরের বার আবার উনার কাছে আমার গিফট নিয়ে গেলে উনি যে গল্পটা বললেন তা শুনে আমি থ …। উনার অন্য এক আত্নীয় নাকি বলেছেন বিদেশ থেকে যে সব গিফট নিয়ে আসে তা নাকি Bargain Sale এর সময় কেনা। হোক না ক্ষতি কি? কিছু কিছু কথা আছে যা কখনো বলতে নেই।

এবার আসি আবার অন্য ধরনের কাছে বা দূরের মানুষের কথা। উনারা গিফটটি হাতে পাওয়ার পর জানতে চাইবেন এর দাম …। আবার আর কেউ পরীক্ষা করবেন প্রোডাক্টটি কোন দেশের তৈরী। Made in China হলে তো উনাদের কাছে এটি খুব সস্তা বলে মনে হবে। (পৃথিবীর নামী দামী ব্রান্ড গুলোর ৮০ ভাগই তৈরী হয় চীনে, আমাদের দেশের EPZ এ উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশে কিনতে পাওয়া যায় না)। হয়তো এই কারনেই আমার এক ইউরোপ প্রবাসী আত্মীয় আমার মায়ের জন্য বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার থেকে গিফট কিনে বিদেশ থেকে পাঠানো বলে চালিয়ে দিলেন কদিন আগে … । মায়ের কাছে শুনে হাতে নিয়ে প্রোডাক্টিতে বাংলাদেশী দোকানীর হাতে লেখা বিক্রয় মুল্যের কোড দেখি আর নিশ্চিত হই প্রোডাক্টটি দেশ থেকেই কেনা এবং প্রোডাক্টটি কোন দেশের তৈরী লিখা নেই শুধু ইউরোপের এক কোম্পানীর নাম ঠিকানা লেখা, জানি না কেন এই মিথ্যাচার। হয়তো বা আমরা Made in… খুঁজি বলেই।

আমরা যখন বিদেশে কোন জিনিস কিনি তা কোন দেশের তৈরী তা দেখি না, আমরা ব্রান্ড দেখি …। আর উনারা Made in …দেখেন। কেনার পর কতো বার আবিস্কার করেছি সেটা বাংলাদেশে তৈরী। বেশ কয়েক বছর আগে জাপানের Sony কোম্পানীর এক নির্বাহীর ইন্টারভিউ তে বেশ মজার কথা শুনেছিলাম উনি যা বলেছিলেন তার বাংলা করলে দাঁড়ায় … “আমরা একই প্রোডাক্ট বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তৈরী করি, ইউরোপের অধিবাসীরা ডিজাইন দেখেন, মধ্য প্রাচ্যের লোকজনের এমন প্রোডাক্ট তৈরী করতে হবে তা যেন ওজনে ভারী হয়। আবার ভারতের জন্য হলে তাতে খুব জোরে শব্দ হয় ( ভারত, বাংলাদেশ সহ আফ্রিকার অনেক দেশেই যেখানে সেখানে অনেক শব্দে গান শোনার অভ্যাস আছে )।”

তারপরও আমি প্রতিবারই কিছু না কিছু নিয়ে আসি হাতে তুলে দেওয়ার সময় ভাবতে থাকি এবার তিনি কি বলবেন ?

জাপানীদের কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছি, উনারা তর্ক করেন না, বক্তৃতা বা বিতর্কে জাপানীরা খুবই কাঁচা। উনারা মাঝে মাঝে কারো কথা শুনে বিতর্কে না গিয়ে বলেন “তাই”। আর এই “তাই” শুনে আমার মত বাঙ্গালীদের ধারনা হতে পারে তিনি আমার কথার সায় দিচ্ছেন বা মেনে নিছেন। আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা। আমিও এখন উনাদের মত বিতর্কে না গিয়ে “তাই ” বলার চেষ্টা করি, যদিও তা মাঝে মাঝে সম্ভব হয় না (হয়তো বাংলাদেশী বলেই অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি )।

জীবনের কোন অভিজ্ঞতাই ফেলনা নয়।
এপ্রিল ২০১৫।

এলেবেলে -২৬

আমদের দেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তাদের চেয়ারে একটি টাওয়াল দেখা যায় … খুবই চোখে লাগে …। টাওয়ালের সঠিক ব্যবহার জানলে উনাদের নিজেদেরই হাসি পাবে। (গামছা আর টাওয়ালের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ,তবে আমাদের দেশের আবহাওয়াতে গামছাই উপযুক্ত)। টাওয়াল বাদ দিয়ে চেয়ারে গামছা ব্যবহার করুন …ওটা তাড়াতাড়ি শুকাবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। এতো দামী চেয়ারে টাওয়াল যে বড়ো বেমানান।

প্রায় ২১ বছর আগে চাকুরী ছেড়ে ছিলাম। আমি যখন চাকুরী করতাম তখনও দেখেছি। এই টাওয়াল কেনার জন্য খুব মজার কিছু নিয়ম আছে। অফিসের কর্তাদের অবস্থান (পজিশন) অনুসারে টাওয়ালের মুল্য নির্ধারিত হতো। অর্থাৎ ছোট কর্মকর্তার টাওয়ালের মুল্য বড় কর্তার চেয়ে কম হতে হবে।

শুধু কম হলেই চলবে না।একই রঙ বা ডিজাইনের হওয়া যাবে না। বছরে একবার টাওয়াল কেনা হতো, নতুন টাওয়াল আসার পর পুরনোটা কর্তা নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। নিয়মগুলো অলিখিত। এখনো চেয়ারে টাওয়াল রয়েই গেছে !

এলেবেলে -২৫

ফ্রেণ্ড লিস্ট আবারো কাট ছাঁট করলাম …। ছোট হয়ে আসছে লিস্ট। তারপরও ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাচ্ছি প্রতিদিন। রিকোয়েস্ট পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। আমার ষ্ট্যাটাসে মন্তব্যের দরজা সবার জন্য খোলা। বন্ধু না হয়েও আপনি বন্ধুর সব সুবিধা পাবেন।

বন্ধু হবার আগে একে অন্যকে জানা কি জরুরী নয় ?

রিকোয়েস্ট পাবার পর অন্তত একবার হলেও উনার সম্পর্কে জানার জন্য উনার পেইজে ঢুঁ দিয়ে আসি। আপনি না হয় আমার ষ্ট্যাটাস দেখে আমার সম্পর্কে জেনেছেন, আমি কি করে আপনাকে জানবো … !!

আলাপের আদিতে পরিচয়,তারপর সে সম্পর্ক বন্ধুত্বের দিকে গড়াতেও পারে, এমনকি আরো গভীরেও যেতে পারে। সম্ভাবনা তো থেকেই যায় ।

ফেসবুক, টুইটার এসব আসার অনেক আগে থেকেই আমি স্যোশাল মিডিয়াতে ছিলাম সেসব এস এন এসের অনেক বন্ধু আছেন। আমরা নিক নেমেই একে অন্যকে চিনি, জানি। এখনো মাঝে মাঝে তাঁদের সাথে কথা হয়। কয়েক জনের সাথে দেখাও হয়েছে। এখনো হয়। এই হচ্ছে বন্ধুত্ব।

ফেসবুক,টুইটার আগে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতাম সে গুলো হচ্ছে আই আর সি চ্যাট, ইয়াহু চ্যাট। আমি খুব একটা যেতাম না ভয়েস চ্যাট হলে এর বাংলা গ্রুপ গুলোর বেশীর ভাগই সমস্যা সংকুল ছিল), ইউনিভয়েস উইন্ডোজ এম ই, এক্স পি তে এটি ব্যবহার করা যেতো।

২০০০ সালের দিকে খুব কম সংখ্যক ব্লগিং সাইট ছিলো, বাংলায় ব্লগিং করেছি বলেও মনে পড়ছে না। তখন আমরা দেশী আড্ডা, দেশী চ্যাট নামক সাইটে ইউনিভয়েস ব্যবহার করে চ্যাটিং করতাম। আড্ডা গল্প গান কতো কিছু ছিলো। উইন্ডোজ ভিসতা আসার পর ইউনিভয়েস নির্ভর চ্যাট বন্ধ হয়ে যায় আর সেখানে স্থান করে নেয় “Visichat”। এটিও ভয়েস চ্যাট। এছাড়া Paltalk নামের ভয়েস চ্যাট ও করেছি সেখানে ফ্রীতে নিজের গ্রুপ খোলা যায়। Paltalk এ আমাদের সেতুবন্ধন নামের চ্যাট রুম ছিলো। নিজেদের মধ্যে এডমিন নিয়ে রুমের নিয়ন্ত্রনও বজায় রাখা যায়। উল্লেখিত সমস্ত এসএনএস এ টেক্সট এবং ভয়েস চ্যাট করা যায়।

এলেবেলে -২৪

দালালির একটা সীমা থাকা উচিত। চীন বাংলাদেশের সম্পর্ক নাকি ঐতিহাসিক, আমি তো বলি ঠিকই; তবে আপনারা কি প্রকৃত সত্য গোপন করতে চান !!

১৯৭৪ পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদের বিরোধিতা করেছে চীন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতার কথা সবার জানা। ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতিই দেয়নি।

চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৭৬ সালে।
এই হলো ইতিহাস।

এলেবেলে -২৩

যে সময় বাংলাদেশের ফুটবলের মর্মান্তিক পরিণতির সংবাদ দেখছি, ঠিক সে সময় ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের চুড়ান্ত বাছাই পর্বের লাইভ খেলা দেখছি।

ইরাক বলতে আমাদের চোখের সামনে যে চিত্র ভেসে উঠে অথচ ফুটবলে তার বিপরীত সম্ভাবনা দেখা যায়। সদ্য সমাপ্ত অলিম্পিকে ইরাক ব্রাজিলের সাথে ড্র করে সবার নজর কেড়েছে। এখন তারা বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে র বাছাইয়ে ব্যস্ত। গত সপ্তাহে তারা জাপানের সাথে প্রায় ড্র করে ফেলছিল।

উল্লেখ্য নিরাপত্তার কারনে অলিম্পিক থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ খেলার জন্য নিজের দেশের মাঠ ব্যবহার করতে পারে না। বিদেশে গিয়ে হোম ম্যাচ খেলতে হয়।

আর আমরা এত সুবিধা পেয়েও পিছিয়ে যাচ্ছি।
সবকিছুকে রাজনীতি করন ঠিক নয়।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভার সামলাতে প্রতিদিন হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দেশের ফুটবল মাঠ গুলোতে কৃষি কাজে ব্যবহার করা হোক (গরুর বাজারের মতো )। শহরের মধ্যে যে সব মাঠ আছে সেখানে বহুতল বাড়ি তুলে খোলাবাজারে বিক্রীর ব্যবস্থা করা হোক।

বছর খানেক আগের লিখা …।

এলেবেলে -২২

মন খারাপ করো না, এই আমার কথাই ধরো পড়ালেখা তেমন হয়নি। তাই বলে কি আমার ক্ষতি হয়েছে ? আমি নিজেও নিজেকে ছোট মনে করি না। আমি কারো সমস্যা হয়ে নেই, থাকবো না।

তোমার কাছে টাকা থাকলেই কেও তোমাকে নিয়ে প্রশ্ন করবে না। এমনকি তুমি কি ভাবে এত টাকা ওয়ালা হলে তা নিয়েও কেও প্রশ্ন করবে না। এই হচ্ছে আমাদের দেশের সমাজ। আমাদের দেশের অনেক বড় বড় পাশ দেওয়া বউ গুলো স্বামীর উপার্জন নিয়ে গর্ব করে দিনাতিপাত করতে দেখেছি। আবার কোন কোন মহিলাকে প্রতিটি ক্ষণ নিজের শ্রম দিয়ে উপার্জন করে জীবন পার করতে দেখছি। তুমি কাঁকে সন্মান করবে !!

আমাদের সমাজটাই এমন।
এ সমাজে আমার নিজের চেয়ে অন্যরা আমার সম্পর্কে বেশী জানে, আমি/তুমি এই সমাজকে অস্বীকার করতে পারবো বলো। তুমি যাই বলো না কেন আমি পারি, আমাকে পারতে হবে।

তোমার যদি কোন দিন সময় হয় কাহলিল জিবরান এর “দ্যা প্রফেট” কবিতাটা পড়ে দেখো।

এলেবেলে -২১

ইংরেজী ভাষাতে বেশ কিছু শব্দ আছে খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে “you” বাংলাতে আপনি, তুমি, তুই … কতো বিপদ। আপনি থেকে তুমি পৌঁছতে আমাদের অনেক সময় চলে যায়। আবার কোন সময় “তুমি”তে পৌঁছার আগেই সেই সম্পর্কের ইতি ঘটে।

হিসাব করে দেখলাম তুমি আমার অনেক ছোট হবে, সেটা কোন কারন নয়; বয়সে ছোট হলেই তুমি বলতে হবে এমনও নয় (বয়স এর হিসাবে কাউকে তুমি বলা আমার খুব অপছন্দ)।

এখন মনে হচ্ছে আমরা একে অন্যকে তুমি বলতে পারি, তুমি কি বলবে জানি না। একটা সময়ের মধ্যে আপনি থেকে তুমি তে আসতে না পারলে সেই সম্পর্ক আপনি তেই থেকে যায়।সকালে তুমি যখন “শুভ সকাল” বললে তখন কেন জানি উনিশে শোনা একটা গান মনের মধ্যে গুন গুন করে উঠলো “তুমি আমার প্রথম সকাল, একাকী বিকেল ক্লান্ত দুপুর বেলা … ”

আচ্ছা সে সময় তোমার বয়স কতো ? তোমার কথা যেমন কিছু জানা হয়নি, তেমনি তুমিও জান না আমাকে।

এভাবেই একটা গল্প শুরু হয়, তারপর কোন পরিণতি ছাড়াই শেষ হয়। তুমি যে আমার গল্পের নায়িকা তা তোমাকে বলাই হয়নি। কোন দিন বলা হবে কিনা তাও জানি না। স্বপ্ন দেখতে আমি ভয় করি, দেখাতেও তাই তো দূরে থাকি। সে কি তুমি বোঝও না, অবুঝ বালিকা আমার।

এলেবেলে -২০

ফেসবুকে বিতর্কিত ছবি ব্যবহার করে রামুতে হামলা হলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে হলো, এরপরো হবে না তার নিশ্চয়তা নেই। রামুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট কপি করে বিলি করার কথাও বিবিসি মারফত জেনেছি।

রামুর ঘটনার বিচার কি হচ্ছে তা তো জানাই।
বলি কি বাংলাদেশে ফেসবুক না থাকলে ক্ষতি কি ? যে প্রযুক্তি কে দেখভাল করার ক্ষমতা নেই, তা দিয়ে এভাবে বারবার ক্ষতিই ডেকে আনবে। কেউ ইউটিউব দেখেছেন !! ইউটিউবে বাংলাদেশের নোংরা ছবি আর ভিডিওতে ভরে গেছে। একজনের ছবিতে অন্য জনের ফোনালাপ।

এসব দেখার কেউ নেই ।
আমাদের নীতি নির্ধারকেরা বলে থাকেন তাঁদের মডেল নাকি চীন, যদি তাই হয়ে থাকে চীনের মতো ইউটিউব, গুগল,ফেসবুক বন্ধ রাখলেই হয় (যদি ক্ষমতা থাকে)।

সবচেয়ে ভালো হয় দেশীটিউব, দেশীবুক, দেশীগুল বানালে।
আমাদের দেশের প্রখ্যাত কেউ একজন দায়িত্ব নিলেই হয়।

এলেবেলে -১৯

আমার বাড়িতে তিনটি একুইরিয়াম আছে। একটিতে আছে তিন বছর আগে বর্শি দিয়ে ধরা রুই মাছ। সেই মাছের সাথে অন্য দুই প্রজাতির মাছ রেখেছিলাম। একটি হচ্ছে গোল্ড ফিশ অন্যটি হচ্ছে উগুই (এর ইংরেজী বা বাংলা নাম কি হবে জানি না)। এই উগুই মাছটিও লেক থেকে বর্শি দিয়ে ধরেছিলাম (ইদানিং আমাকে catch and release এর নেশায় ধরেছে)।

এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলাম একটি গোল্ড ফিশের দুটি চোখই নেই, চোখ উপড়ে ফেলেছে (আমি উগুইকে সন্দেহ করেছিলাম)। এর দুই দিন পর গোল্ড ফিশটি মারা যায়। আমি সাথে সাথেই গোল্ড ফিশকে অন্য একটি একুইরিয়ামে সরিয়ে নেই।

কিছু দিন পর প্রাকৃতিক ভাবেই উগুই মরে যায়।
একা হয়ে যায় রুই মাছটি। রুইয়ের একাকীত্ব দূর করতে আমি চারটি গোল্ড ফিস কিনে রুইয়ের একুইরিয়ামে দেই। আমার ধারনা ছিলো রুই মাছ তো গোল্ড ফিশ খাবে না। একসাথে রাখার ঘন্টা চারেক পর দেখি সেই মাছ গুলো রুইয়ের পেটে চলে গেছে।

সেই থেকে রুই একাই আছে।
গোল্ডফিসের জন্য অন্য একটা একুইরিয়াম।
বাকী একুইরিয়ামে খুব ছোট মাছ লেক থেকে ছোট নেট দিয়ে ধরে আনা।

এই মাছের গল্পের সাথে কোন কিছু মিলে গেলে তার দায় আমার নয়।

এলেবেলে-১৮

আমার কোম্পানীতে ১০ জন মহিলা এসেছেন চীন থেকে এরা ট্রেনিং এর নাম করে তিন বছর জাপানে কাজ (বিদেশী শ্রমিক হিসাবে ) করবেন। ওদের সাথে একজন চীনা কোম্পানীর অফিসিয়াল ছিলেন। আমিও বিদেশী দেখে আমার সাথে নিজ থেকেই কথা বলা শুরু করলেন।

তিনি আমাকে চীনের অনেক উন্নতির খবর শোনালেন। দশ বছর আগে যারা সাইকেলে চড়তো; তাদের এখন নিজস্ব গাড়ী আছে …

আমাদের কোম্পানীতে কর্মী সংকটের কারনেই জাপানের এই আইনী সুবিধা ব্যবহার করে ওদেরকে কর্মী হিসাবে আনা হয়েছে। তাই মুচকি হেসে চুপ রইলাম।
আমার খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো “চীনের এতো উন্নতির পরো আপনারা কামলা দিতে বিদেশে আসছেন কেন ?”

আমাদের দেশের মিডিয়া গুলোতে চীনের উন্নয়নের খবরই শুধু দেখতে পাবেন। ওদের গ্রাম গুলো বাংলাদেশের চেয়েও অনুন্নত।

এলেবেলে -১৭

একুশে ফেব্রুয়ারী চলে গেল। আমাদের জাতীয় জীবনে একুশ শুধু একটা সংখ্যাই নয়। একটা ইতিহাস। একুশকে উপলক্ষ করে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাঙলা একাডেমীর বই মেলাও একুশকে ঘিরে। জাতীয় পর্যায়ে “একুশে পদক” দেওয়া হয়।

আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক একুশে পদক পেয়েছেন, এরকম একটা সংবাদ দেখে খুশী হয়ে খবরটা পড়ে জানলাম বাংলাদেশের একটা সিটি কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে “একুশে পদক” দেওয়া হয়েছে। উনার পদক পাওয়া না পাওয়া বিষয় নয়।

বিষয় হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন একুশে পদক দেবে,স্বাধীনতা পদক দেবে। পত্রিকা প্রকাশনা থেকে একুশে পদক, টেলিভিশন থেকে একুশে পদক … এভাবেই চলতে থাকবে। এটা হতে পারে না।

জাতীয় পর্যায়ে যে “একুশে পদক” বা “স্বাধীনতা পদক” এর অনুকরণে যে কেউ পদক দিতে পারবে। এরকম লাগামহীনতা জাতীয় পর্যায়ের পদক কে ছোট বা বিতর্কিত করে তুলবে। কিছু কিছু বিষয়ে জাতীয় সিদ্ধান্ত থাকা উচিত। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক এরকম মুল্যবান পদক গুলো রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই শুধু দেওয়া যাবে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এরকম পদক প্রদান করতে পারবে না।

কেউ ইচ্ছা করলে “বাংলাদেশী নোবেল পুরস্কার” দিতে পারে না।

এলেবেলে -১৬

একটু আগে ৫০ কিমি স্পীডে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলাম … কিছুক্ষণ পর দেখি পিছনে একটি পুলিশের পেট্রোল কার যা খুবই স্বাভাবিক। পাশের সহযাত্রীর সাথে মজাও করলাম “পিছনে দেখি মামার গাড়ি” … কিছু দূর যাওয়ার পর শুনতে পেলাম আমার গাড়ির নাম্বার বলে পেছন থেকে আমাকে থামতে বলা হচ্ছে।

অবাক হলাম … স্পীড লিমিট মেনে চলছি ,সিট বেল্ট বাঁধা আছে।
( পাশের সহযাত্রীরও সিট বেল্ট বাঁধা আছে )
থামলাম।
একজন পুলিশ ড্রাইভিং সিটের পাশে এসে বললেন “নাম্বার প্লেটের উপরের লাইটটা জ্বলছে না একটু নিশ্চিত হবেন কি ?*
নেমে দেখলাম …
হয়তো খেয়াল করেন নাই অথবা অল্প আগেই লাইটটি নষ্ট হয়ে গেছে।

আমাকে একটা স্লিপ ধরিয়ে দিলেন যাতে লেখা আছে জাপানের ট্রাফিক আইনের … ধারা অনুসারে নাম্বার প্লেটের উপরের লাইট বিহীন গাড়ি চালানো অপরাধ। তবে প্রাথমিক নির্দেশনা অনুসারে এর পর গাড়ি ব্যবহারের আগেই লাইটটি চালু করতে হবে এবং তারপর স্থানীয় পুলিশ ষ্টেশানে রিপোর্ট করতে হবে।

এলেবেলে-১৪

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কয়েক দিন আগে একটা পোষ্ট দেখেছিলাম আমার এক ফেসবুকার বন্ধুর পোষ্টে। অবশ্য তিনি সেভাবে উল্লেখ না করলেও আমার কাছে উনার পোষ্টের বিষয়টি নারীর ক্ষমতায়নের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে। উনার পোষ্টটি ছিল একজন শিক্ষিকা নিজের হাতখরচের জন্য স্বামীর কাছে হাত পাততে হয়।

আমার জানামতে বাংলাদেশে এরকম অনেক দম্পতি আছেন ক্ষেত্রবিশেষে স্বামীর তুলনায় স্ত্রীর আয় বেশী হলেও স্বামী রত্নটি এক গ্লাস পানির জন্যও স্ত্রীর কাছে আদেশ করেন। উনার কাছে স্ত্রী আর বাড়ির কাজের লোকের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই …

আমি তাদের কজন কে বলেছি … কাজের লোক না হলেই কি হয় না ?
সবচেয়ে খারাপ লাগলো উনাদের বেশীর ভাগই কাজের লোক হয়েই থাকতে পছন্দ করেন।
এই হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন ।
যে দেশে উপার্জনক্ষম নারীদের এই অবস্থা, অন্যদের কি তা বলাই বাহুল্য …।

এলেবেলে-১৩

আজ অফিসে কাজের ফাঁকে বাবাকে মনে পড়লো, বাবা গত হয়েছেন পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। বাবা খুব সাধারন জীবন যাপন করতেন। আমার দাদার সম্পত্তি ও ছিল প্রচুর, তারপরো বাবা আরো কিছু সম্পত্তি যোগ করে গেছেন। দাদার অনেক সম্পত্তি সম্পর্কে আমিও তেমন জানি না। বাবাও আমাকে জানান নি। আমিও জানতে চাই না।

বাবার জন্য আমার খুব মন খারাপ হয়, কেন তিনি নিজের কথা না ভেবে সম্পত্তি যোগ করে গেছেন। বাবা আমার ওসবে লোভ নেই। যদি কোনদিন সময় আর সুযোগ পাই আমি সেসব এমন কাউকে দিয়ে যাব যাদের এসব প্রয়োজন। আমি চাই নিজের মতো করে বাঁচতে, বাবা হয়তো আমাদের কথা ভেবেছেন।

যতদিন বাঁচি নিজের জন্য বাঁচবো।
নিজের জন্য।
বিশ্বাস নেই কোন সম্পর্কেই ……….।

এলেবেলে-১২

একজন প্রশ্ন করল এসব করার সময় কই পাও তুমি ?
আমি বললাম “আমি তোমাদের মতো আকাশ ছুঁতে চাই না।

তোমার মনে আছে কিনা জানি না ২৪ বছর আগেও আমি তোমাকে তাই বলে ছিলাম। দুবেলা দুমুটো খেয়ে জ্যোৎস্না রাতে রবীন্দ্র সঙ্গীত হলেই আমার চলে যাবে।

আমি এখনো তাই ভাবি।
আমার অন্য কোন চাওয়া নেই” সে বলল “তুমি দেখছি আগামী জন্মে নির্বান প্রাপ্ত হবে।” নির্বান স্বর্গ এসবে আমার কোন আগ্রহ নেই !