ট্যাগ আর্কাইভঃ চা

চা-পাতার কাল্পনিক ইতিহাস

একদা এক রাজা সপরিবারে তাঁর মুল্লুক ভ্রমণে বের হলেন। রাজ ভ্রমণ বহনে ছিলো ঘোড়ার গাড়ি টমটম। ভ্রমণ সঙ্গী হলেন, সেনাপতি, উজির, নাজির, কোতোয়াল-সহ কয়েক দল সৈন্যসামন্ত। রাজা-রানি ছিলেন, টমটম গাড়িতে। উজির, নাজির, কোতোয়াল ছিলেন, তাদের পরিবহন করার মতো গাড়িতে। ভ্রমণ যাত্রাকালে রাজার গড়ি বহরের দুইপাশে ছিলো ঘোড়ারোহী বিশ্বস্ত সৈন্যদল। গাড়ি বহরের পেছনে ছিলো যুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ সৈন্যবাহিনী। ভ্রমণ যাত্রার সর্ব প্রথমে ছিলো, রাজার বিশ্বস্ত সেনাপতি ও বিশেষ ধরনের বাদ্য বিশারদ ব্যান্ডপার্টির দল। ব্যান্ডপার্টির দল ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রাস্তার আশেপাশের মানুষদের জানিয়ে দিচ্ছিল, ‘রাজা মহাশয় কোনোএক জায়গায় যাচ্ছে।’ বাজনার তালে-তালে হেলে-দুলে রাজার গাড়ি বহরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। একসময় গাড়ি বহর এগিয়ে যাচ্ছিল এক বনের ভেতর দিয়ে।

বনটি ছিলো খুবই সুন্দর পরিপাটি। সুন্দর গাছ-গাছালী আর নানাজাতের পাখ- পাখালিতে ছিলো বনটির অন্যরকম এক সৌন্দর্য আকর্ষণ। বনের সেই সৌন্দর্যে রাজাকে করেছিলো মুগ্ধ! রাজা সেই বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি করতে চাইলেন। ওমনি উজির, নাজির, কোতোয়াল সেনাপতিকে যাত্রাবিরতি করতে বললেন। সেনাপতি উজির নাজির কোতোয়াল সাহেবের হুকুম পেয়ে সেই বনের মাঝে যাত্রাবিরতি করলেন। রাজা-রানি টমটমগাড়ি থেকে নেমে বনের মাটিতে পা রাখলেন। সাথে যাওয়া সফরসঙ্গী দাস-দাসীরা রাজা-রানি বসার জন্য চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বিছিয়ে দিলেন। রাজা-রানি কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ঘুরেফিরে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলেন। এ-ই ফাঁকে সাথে যাওয়া দাস- সাসীরাও রাজাকে সন্তুষ্টি করার জন্য হালকা কিছু খাবারের আয়োজন করে ফেললেন। কিছুক্ষণ পর রাজা-রানি চেয়ারে এসে বসলেন, শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য। দাস-দাসীরা আয়োজন করা সেসব খাবার রাজা-রানির সামনে এনে দিলেন। সেসব খাবারের সাথে কিছু গরম পানিও ছিলো। কারণ রাজা তখন ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছিলেন, তাই গরম পানির সুব্যবস্থা করা হয়েছিলো।

সারি সারি সাজানো বিছানো চেয়ার-টেবিলের একপাশে বসা ছিলেন রাজা-রানি। অন্যপাশে বসা ছিলেন রাজার উজির, নাজির, কোতোয়াল, সেনাপতি। সবার সামনেই খাবার দেওয়া হয়েছিল। রানি-সহ সবাই মনের আনন্দে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিল আর খাবার খাচ্ছিলো। কিন্তু রাজা তখনো চেয়ে চেয়ে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো। একসময় বনের খোলা বাতাসে রাজার সামনে থাকা গরম পানিতে নাম না জানা গাছের একটা পাতা উড়ে এসে পড়লো। গরম পানিতে গাছের পাতাটি পড়ার সাথে সাথে পুরো পাত্রের পানি লালচে হয়ে গেলো। তা দেখে রাজা রীতিমতো অবাক হয়ে বিষ্ময় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে চেয়ে দেখলো। কিন্তু তা রাজার রানি-সহ সফরসঙ্গী কারোই দৃষ্টিগোচর হলো না। সবাই মনের আনন্দে হাউত-মাউত করে খাবার খেয়েই যাচ্ছিল।

এদিকে রাজা পানির পাত্রে থাকা গরম পানির এ অবস্থা দেখেই যাচ্ছিল। যতই সময় যাচ্ছিল, ততই গরম পানির রং আরও লাল হতে লাগলো। রাজাও ভাবতে লাগলো, ঘটনাটা কী? কিন্তু রাজা অনেক চিন্তাভাবনা করেও গরম পানির লাল রং হয়ে যাবার রহস্য উদঘাটন করতে পারলেন না। সামনে থাকা আরও আরও খাবারও খাচ্ছিলেন না। রাজা ওই পানি নিয়েই ভাবতে লাগলেন! রাজা ভাবতে ভাবতে একসময় লাল হয়ে যাওয়া গরম পানিতে ডানহাতের তর্জনী আঙুল ডুবিয়ে দিয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখতে লাগলেন। নেড়ে-চেড়ে দেখতে দেখতে একসময় রাজা পানিতে ভিজে যাওয়া হাতের তর্জনী আঙুলটা মুখে দিলেন। তর্জনী আঙুল মুখে দেওয়ার পর রাজা গাছের পাতা পড়ে লাল হয়ে যাওয়া পানি পরম তৃপ্তি পেলেন!

তৃপ্তি পাবার পর রাজা ভিজে যাওয়া আঙুলটা চুষতে লাগলেন। রাজা নিজের আঙুল চুষতে চুষতে মনে মনে বলতে লাগলেন, ‘বেশ তো! দারুণ স্বাদের পানি হয়েছে তো! এরকম পানি তো আমি জীবনেও পান করিনি?’ এ-ই বলেই পাত্রে থাকা সবটুকু পানিই রাজা পান করে ফেললেন। কিন্তু আর কোনও খাবারই খেলেন না। তখন সফরসঙ্গী উজির সাহেব রাজার না খাওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। রাজা বললেন, ‘আজ একমুহূর্তে এমন একধরনের পানি আমি পান করেছি, এতেই আমার আজকের খাবারের চাহিদা মিটে গেলো। আর কোনও কিছুরই দরকার হবে না। এই পানি পানেই আমার চলবে।’ এরপর সফরসঙ্গী সবাই কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘এখানে আয়োজন করা খাবারের মধ্যে কোনধরনের পানি ছিলো? যা খেয়ে আপনি পরম তৃপ্তি পেলেন?’ জবাবে রাজা বললেন, ‘আমার সামনে থাকা গরম পানি পান করেই আমি পরম তৃপ্তি পেয়েছি। তবে গরম পানি ছিলো স্বচ্ছ সাদা। আর আমি পানি করেছি লাল রঙের গরম পানি।

রাজার কথা শুনে সফরসঙ্গী দাস-দাসী ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। ভয়ের কারণ হলো, পানি দেওয়া হয়েছিলো সাধারণ গরম পানি। আর রাজা বলছে লাল গরম পানি! দাস-দাসীরা কাঁপতে কাঁপতে ভাবতে লাগলো, ‘লাল রঙের পানি এখানে আসলো কী করে?’ সফরসঙ্গী বিশ্বস্ত দাস-দাসীদের শারীরিক কাঁপুনি দেখে রাজা হাসতে হাসতে অভয় দিয়ে বললো, ‘তোমরা কেউ ভয় পেও না। আমার সামনে থাকা পানির রং লাল হওয়ার পেছনে একটা গাছের পাতার ভূমিকা আছে। ওই পাতা গরম পানিতে পড়ার সাথে সাথে পানির রং লালচে হয়ে গেছে। আর এই লালচে পানি পান করে আমি এতোটাই তৃপ্তি পেয়েছি যে, আমার ঠাণ্ডা লাগা ভাব দূর হয়েছে। আমার মানসিক অবস্থা চাঙা হয়েছে। শারীরিক ক্লান্তির অবসান ঘটেছে।’

তখন রাজার সফরসঙ্গী সবাই আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘কোন গাছের কোন পাতা? যে পাতায় গরম পানি লাল হয়ে গেলো এবং পানি পানে পরম তৃপ্তি অনুভব করছেন?’ তখন রাজা পানির পাত্র থেকে নাম না জানা গাছের পাতাটি উঠিয়ে সবাইকে দেখিয়ে বললো, ‘আজকে আমার ভ্রমণ এখানে এই বনেই শেষ করলাম। তবে যথাশীঘ্র বন থেকে রাজমহলে ফিরে যাচ্ছি না। সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে, এই পাতাটি কোন গাছের পাতা? যতক্ষণ না পর্যন্ত এই পাতার গাছটিকে খুঁজে বের করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই বনেই থাকতে হচ্ছে। কাজেই, আপনারা সবাই বনের ভেতরে ঘুরে-ফিরে এই বিশেষ ধরনের পাতার গাছটির সন্ধান করুন। যিনি প্রথমে খুঁজে বের করতে পারবেন, তাকে আমি উপযুক্ত বকসিস দিবো!’

রাজার এই ঘোষণায় সফরসঙ্গী উজির, নাজির, কোতোয়াল, সেনাপতি সৈন্যদলের সৈন্যরা, দাস-দাসীরা সবাই গরম পানিতে পড়া পাতার গাছটি খুঁজে বের করতে পুরো বনটা ওলট-পালট করে ফেলতে লাগলো। কিন্তু সন্ধান পাচ্ছিল না। একসময় এক দাসী গরম পানিতে পড়া পাতার গাছটি খুঁজে পেলো। রাজা নিজ হাতে থাকা পাতাটির সাথে অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মিলিয়ে নিশ্চিত হলেন, ঠিক এই গাছেরই পাতা। গাছটি ছিলো আকারে খুবই ছোট। তবে ঝাপটা। পুরো বনে এই একটা গাছই পাওয়া গিয়েছিল। তখন রাজা মনের আনন্দে ওই দাসীকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করলেন এবং খুঁজে পাওয়া গাছটিকে বন থেকে মাটি-সহ উঠিয়ে রাজার মহলের পাশে রোপণ করতে হুকুম দিলেন। রাজার হুকুম বলে কথা! হুকুম দিতে দেরি হয় ঠিক! কিন্তু কাজ হতে দেরি হয় না!

তারপর বন থেকে ছোট আকারের গাছটিকে মাটি সহকারে উঠিয়ে রাজার মহলের একপাশে রোপণ করে রাখা হলো। দিনে দিনে গাছটিও তাজা হতে লাগলো। গাছের ডাল-পালাও গজাতে শুরু করলো। রাজাও গাছের পরিচর্যা করার জন্য লোক নিয়োগ-সহ পাতা নিয়ে গবেষণা করতে গবেষকও নিয়োগ দিলো। গবেষকরা প্রথমে গাছের শুকনো পাতা শিলপাটায় বেটে গুড়ো করলো। তারপর পানি লাল হয় কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য গুড়ো গুলো গরম পানিতে ছেড়ে দেওয়া হলো। কিন্তু গরম পানি কিছুতেই লাল হলো না। তারপর আবার ওই গাছের কিছু কচিপাতা শিলপাটায় বেটে রোদে শুকানো হলো। সেই শুকনো গুড়ো গুলো গরম পানিতে ছেড়ে দেওয়া হলো। যখনই গরম পানিতে ছেড়ে দেওয়া হলো, তখনই পানি লাল রং ধারণ করতে লাগলো। একপর্যায়ে পাত্রে থাকা গরম পানি লালচে হয়ে গেলো। সেই পানিতে কিছু মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে গবেষকরা পান করে দেখলো।

গাছের কচিপাতার শুকনো গুড়ো মিশ্রিত লালচে গরম পানি করার পর সবাই তখন মহানন্দে দিশেহারা। সবাই জিভে তা মেরে বলতে লাগলো, “আহা্ কী মজা!” সেই মজার খবর মুহুর্তেই পৌঁছে গেলো রাজার কাছেও। সাথে গরম লালচে পানিও পৌঁছে গেলো। রাজা লালচে গরম পানি পানে সেদিনের বনের ভেতরের চেয়েও আরও বেশি তৃপ্তি পেলো। তারপর থেকে গাছটি নিয়ে শুরু হলো জোর গবেষণা আলোচনা-সহ গাছের বংশবৃদ্ধি করার জোর তৎপরতা। সেই থেকে আস্তে আস্তে দেশে দেশে শুরু হলো ওই গাছের বংশবৃদ্ধি-সহ সহজ উপায়ে গাছের পাতা গুড়ো করার কৌশল ও ব্যবহার। একসময় সেই গাছের সেই পাতার গুড়ো দেশে দেশে মানুষের হাতে হাতে ফ্রি বিতরণ করা হতো। সাথে দেওয়া হতো এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য কিছু মিষ্টিজাতীয় চিনিও। উদ্দেশ্য ওই গাছের পাতার গুড়োর চাহিদা বাড়ানো এবং মানুষকে এর নেশায় আসক্ত করানো। তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। দিনে দিনে তুলনামূলকহারে এর ব্যবহারও অনেক বেড়েছে! চাহিদাও বেড়েছে প্রচুর!

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, একসময়ের ফ্রি পাতার গুড়োর নেশায় আজ আমরা সবাই আসক্ত! আজ আমরা ঘরে বাইরে ছোট-বড়, ছেলে-বুড়ো সবাই সেই বিষ্ময়কর গাছের পাতার রসের নেশায় এতোটাই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, সকাল থেকে শুরু করে দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা আমাদের আরও অন্যান্য খাবারের সাথে ওই গাছের পাতার সুমধুর রস পান করতেই হচ্ছে। তা-ও আবার আমাদের দেশ-সহ বিশ্বের সব দেশের সব অঞ্চলে সমানতালেই চলছে ওই বিষ্ময়কর গাছের পাতার রস পান। যা সারাবিশ্বে আজ এটাকে একধরনের মহৌষধ বলেও গণ্য করা হয়। কেননা, ওই গাছের পাতার গরম পানি না হলে আমাদের আর হয়ই না। মোটকথা বিয়ে-সাদীতে, অতিথি আপ্যায়নে, রাজনৈতিক মঞ্চে, অফিস-আদালতে, দেশের অর্থনৈতিক চাঙা-সহ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণেও ওই বিষ্ময়কর গাছের পাতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেও বিশ্বাস। এখন সবার জানার কৌতুহল থাকতে পারে যে, তাহলে ওই বিষ্ময়কর গাছটির নাম কি? ওই বিষ্ময়কর গাছটির নাম, চা গাছ। আর পাতাটির নাম, চা-পাতা।

জানা যায় এই গাছটির আদি জন্মভূমি গণচীন। বর্তমানে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য উৎকৃষ্ট স্বচ্ছ গরিম পানীয় হিসেবেও গণ্য করা হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে আমাদের দেশের সিলেট অঞ্চলে ব্রিটিশরা সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চাষ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখার সর্বশেষ গুটিকয়েক লাইনের তথ্যটুকু উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ। আর পুরো লেখা নিজের ধারণা মতে সাজিয়ে লেখা।

ছবি সংগ্রহ গুগল থেকে।

এক কাপ চায়ের আত্মকাহিনী

আমি এক কাপ চা। তোমরা যে সকালে দুপুরে সময়ে অসময়ে পান করো আমি সেই চা। কখনো কি ভেবে দেখেছো… আমি ও যদি কথা বলতে পারতাম তবে কেমন হতো… আর কিই বা বলতাম ! আমার জীবনকাল তো মাত্র কয়েক মিনিট। কেউ আমায় খাও বেশী মিষ্টি দিয়ে… কেউ খাও কম দিয়ে। কেউ আমায় বিস্কুট ডুবিয়ে খাও। কেউ খাও বিড়ি সিগারেটের সাথে। তবে তাতে আমার অভিমান নেই। অভিমান এই যে আমার কথা কেউ ই বলে না। তাই আজ যখন বলার সুযোগ হলো একটু না হয় বলিই আমার গল্প।

আমার সম্পর্কে মানুষের মুখে প্রচলিত গল্প আছে চীনের নাকি এক রাজা ছিলেন। তিনি নাকি ছিলেন ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন। সবসময় ফুটিয়ে পানি পান করতেন। হঠাৎ এমনি এক সময় কোত্থেকে এক পাতা এসে পড়েছিল সেই পানির মধ্যে। সেই পাতাটাই নাকি ছিলাম আমি। সেই থেকেই নাকি আমার “চায়ের” জন্ম। সে গল্প সত্যি না মিথ্যা তা জিজ্ঞেস করো না বাপু…. সে ম্যালা দিন আগের কথা। বয়স ও হইলো অনেক সেই গল্প আমার মনে নেই।

তবে আমি গাছ হিসেবে ছিলাম অনেক আগে থেকেই। তবে ৫০০০ বছর মত আগে তোমরা গাছ থেকে পাতা পেড়ে প্রক্রিয়াজাত করে বানিয়েছিলে আমাকে। আমার নামটা আসে গ্রিক দেবী থিয়ার নাম থেকে। থিয়া থেকে চি… তারপর তোমাদের ‘চা’ তারপর থেকেই তোমাদের নিত্য সঙ্গী আমি ‘এক কাপ চা’। তখন ছিলাম একরুপে আস্তে আস্তে আমার বয়সটাও বাড়তে থাকে… রং বর্ণ ও বদলাতে থাকে এভাবেই আমার থেকে জন্ম নিয়েছে দুধ চা, লেবু চা, লবঙ্গ চা অপরাজিতা, মরিচ চা, মশলা চা, চকলেট চা, মাল্টা চা, সাত কালারের চা আরো কত কি… আমাদের বংশ এখন বিশাল বড় বুঝলে… কি কি প্রকারের চা পাওয়া যায় তা আমি বলেই শেষ করতে পারছিনে… যাকগে সে কথা। কিভাবে এলাম তোমাদের দেশে সেটা শুনতে ইচ্ছে হয় না তোমাদের? আমি ছিলাম সিলেটের জঙ্গলে। ১৯০ বছর ধরে শাসন করা ব্রিটিশরাই আমাকে উদ্ধার করে। সময়টাতেই আমায় খুঁজে পায় ওরা। আর তারপর থেকেই সকালে বিকালে সময়ে এসময়ের সঙ্গী আমি। আমার নাকি বেশ কিছু ঔষধী গুন ও আছে.. কি গুন তা আমি জানি না.. আমি তো বাপু ডাক্তার না। কি গুন তুমি তাদের থেকেই জেনে নিও।

জানো আমি রাজা, প্রজা, ভিখারি আমির সবারই। সারাদিনের ক্লান্ত শ্রমিক কিংবা ব্যস্ত কর্মকর্তা কর্মচারী কিংবা ছাত্র- শিক্ষক, বন্ধু সবার কাছের আমার আসা যাওয়া। রাজনৈতিক আলাপ আলোচনায় আমার আনাগোনা, অতিথি আপ্যায়নে আমি, কিংবা আড্ডাতে কোথায় আমি নেই বলো তো? মাঝে মাঝে তো আমার কাপে তোমরা ঝড় ও তুলে ফেলো! ঠান্ডা লেগেছে আমি আছে… তুমি ক্লান্ত আমি আছি.. তোমার মাথাব্যাথা আমি তো আছিই… রাত জাগা প্রয়োজন আমি আছি। রাজনৈতিক আড্ডা আরে আমি আছি না। আর কত থাকবো বলো তো.. সারাজীবন থাকতে থাকতে আমি তো আজ ক্লান্ত। আমায় নিয়ে অনেক সাহিত্যিক অনেক কবিতা গল্প লিখে ফেলেছে। এটা ভেবে বেশ গর্ববোধ হয় আমার। আমাকে খাওয়ার পর কাপে থাকা অংশটা তো ছুড়ে ফেলো মাটির বুকে.. আমার তখন অনেক কষ্ট হয়। আমি তো তোমাদেরই অংশ তারপরেও কেন? তোমাদের মনে একটুও দয়া হয়না বুঝি! যাক গে.. আমার আজ যাবার সময় হলো… আজ আসি যদি কখনো পারি অন্যদিন আরো কিছু বলবো….

শিক্ষার্থী–
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।