শামস আল গালিব এর সকল পোস্ট

শামস আল গালিব সম্পর্কে

একজন মানুষ!

ব্যর্থতা, জীবন এবং অন্যান্য!

FB_IMG_1687356295959

জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দেবার মত মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা যখন নিজেকে আর বিশ্বাস করতে পারে না, নিজের ভেতরে অবিশ্বাসের সুতো জাল বুনতে শুরু করে করে তখন এমন একজন মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা হতে পারেন আপনজন কেউ কিংবা অপরিচিত কেউও। বয়ঃসন্ধিকাল পার করে যৌবনে পদার্পণ করার সময়টা বড্ড খারাপ। ক্রমশঃ জীবনের সমস্যাগুলো ঘনীভূত হতে শুরু করে কিন্তু তখন আর বাবা-মাকে সেগুলো বলা যায় না।

সে সময়টাতে যখন আর কারো সাথে শেয়ার করবার মত উপায় থাকে না কিংবা শেয়ার করবার মত মানুষ পাওয়া যায় না তখনই মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে আত্মহননের পথ বেছে নেবার চিন্তা। যান্ত্রিকতা মানুষকে সামাজিকভাবে কাছে আনার চেষ্টা করলেও মানুষকে সেভাবে আপন করে তুলতে শেখাতে পারেনি।বিশ্বাস করতে শেখায়নি। অবিশ্বাসের জালে আবদ্ধ করে রেখেছে সবকিছু। এসময়ে এসে কারো মনের দুঃখ কিন্তু মনের আক্ষেপ শোনার মত মানুষ খুঁজে পাবার চেয়ে ডুমুরের ফুল খুঁজে বের করাটা বোধ হয় সহজ!

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দেবার প্রবণতা মানুষের নতুন কিছু নয়। খেই হারিয়ে ফেলা জীবনটাকে আবার নতুন করে তুলে ধরতে দরকার হয় তেমনই কিছু মানুষের। কাঁধে হাত রেখে আশ্বাসের দরকার হয়। নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা যোগাতে এমন কিছু মানুষের একটু কথা শোনা কিংবা তাকে কিছুটা সময় দেওয়াটাই অনেকটাই যথেষ্ট। প্রতিবার পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে কিংবা এডমিশন টেস্টের পর এভাবে নতুন করে চেষ্টার সাহস দেওয়া মানুষের অভাবে অনেক জীবন বিপথে চলে যায় কিংবা আত্মহননের পথেও এগিয়ে যায়।

সাফল্য ব্যর্থতা মিলিয়েই জীবন। সাফল্যের সময় পাশে থাকার চাইতে ব্যর্থতার সময় পাশে থাকাটা প্রেরণা যোগায় নতুন সফলতার পথে হাঁটতে! ব্যর্থতার জন্য তিরস্কার নয়, একটু পাশে দাঁড়ান মানুষটার। হাজার রাত জাগার রাতের চেষ্টার পরেও যখন মানুষটা ব্যর্থ,তখন তার কষ্টটা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগাবার মতো মানুষের অভাব নেই। কিন্তু ক্ষত সারিয়ে তোলার মানুষটার এ সমাজে বড্ড অভাব!

একটি গল্প লিখবো!

একটি গল্প লিখবো।
গল্পটি কালি ফুরিয়ে যাওয়া কলমের,
গল্পটি খাতার শেষ হয়ে যাওয়া পৃষ্ঠার!
গল্পটি মুমূর্ষু রোগীর শেষ নিঃশ্বাসের!
শুধু তা-ই নয়! গল্পটি মৃত্যুদন্ড দিয়ে নিব ভেঙে ফেলা কলমের!

কিন্তু কিছুতেই গল্পটি লেখা আর হয়ে ওঠে না। তবে কি সবগল্প লিখে প্রকাশ করা যায় না? গল্পগুলোই নিজে থেকে বলে আমাকে লিখতে যেও না? নাকি গল্পগুলো লিখতে গেলে সেই মুহুর্তে ফিরে যে হয়! যে মুহূর্ত থেকে কেউ কখনো আর ফিরে আসতে পারে না?সেটা কি মৃত্যু? কিংবা জীবনের শেষ পরিনতি? যখন নিত্য প্রয়োজনীয় মানুষটাকে আর কেউ মনেও রাখে না!

একটি গল্প লিখবো, যে গল্পটি এমন সব মানুষের কথা বলে, যাদের কথ আজ অবধি কেউ বলে না! সেটা কি সহস্রবছর পূর্বের শিকার করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গুহায় খাবারের অভাবে ক্ষুধায় কাতরাতে থাকা অসহায় প্রতিবন্ধীর! যার কথা কেউ বলে না? নাকি সদ্য লাশ হয়ে কবরে পড়ে থাকা কিংবা চিতার আগুনে পোড়া লাশের একবিন্দু ভস্মকণা!যার কথা আজ অবধি কেউ বলে না? কিংবা মায়ের গর্ভে জন্মের প্রতীক্ষায় থাকা অপরিণত ভ্রূণকণা! পরিণত হবার আগ দিয়েই যার মৃত্যু ঘটে!

একটি গল্প লিখবো, গল্পটি ধর্ষণের পর গলা টিপে ধরে থাকা প্রতিবন্ধী মেয়েটার শেষ নিঃশ্বাসের যা ফুসফুসের অন্তিমকর্ম, সেখান থেকে বের হয়ে আসা কার্বন কণা! এবং গল্পটা একজনের যে প্রতিটি আত্মাকে দেহ থেকে বের করে নিয়ে যায় এবং একদিন নিজের আত্মাও নিজে কবজ করে ফেলবে তার মনের দুঃখের!

এমন একটি গল্প লিখতে গিয়ে কতগুলো জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে হয়তো বা পৃথিবীর বুক থেকে শেষ লেখকটিও চলে যাবেন, কলমের শেষ কালিটুকুও ফুরিয়ে যাবে, কাগজে অলিখিত পৃষ্ঠাটিতেও শেষ লেখাটি শেষ হয়ে যাবে!

বিশ্ববিদ্যালয়: আকাঙ্ক্ষা বনাম বাস্তবতা

images-1

অনেক উচ্চ আকাঙ্খা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবার পর শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে আসা ছেলেটা কোথায় যেন গিয়ে একটু খেই হারিয়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে গিয়ে প্রথম দিকে প্রতিটা ক্লাস সিরিয়াসলি করা ছেলেটাও কোথাও গিয়ে যেন ভাবতে শুরু করে আমার পক্ষে এগুলো সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মানে স্বাধীন জায়গা। পুরো ক্যাম্পাসটাই আমার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করার পর একঘেয়ে লাগতে লাগতে একসময় পুরো ক্যাম্পাসটা নিজের করে নিতে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল জগতে এসে স্বাধীনতার সুখ পেতে নিজের ডানা মেলতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার আগ পর্যন্তও যেই ছেলেটা নিয়মিত লেখাপড়ার কাজে সময় দিতো, সেই ছেলেটা ও কেন যেন একটু এলোমেলো হয়ে পড়ে… বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বন্ধু, সিনিয়র ভাই -আপু এগুলো নিয়ে এক জগৎ গড়ে ওঠে। জগতটাতে নেই কোনো বাঁধা। দেখবার, বলবার মত কেউ নেই। সারাজীবনে একটা সিগারেটে টান না দেওয়া ছেলেটাও এখানে এসে হয়ে যায় চেইন স্মোকার!

মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রতিটি মানুষই চায় নিজেকে সুপিরিয়র পজিশনে নিয়ে আসতে; যখন সে অনুভব করতে থাকে পলিটিক্যাল পার্টির দিকে গেলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়, ক্ষমতা দেখানো যায়, তখন সে নিজেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হয়ে যায়। দেশপ্রেমের জায়গা থেকে রাজনীতি সেটি কিন্তু নয়। স্রেফ ক্যাম্পাসে নিজের অাধিপত্য বিস্তার, নিজের বন্ধুদের ওপর ফাঁপরবাজির জন্য!

আবার আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইদের সাথে যারা ঠিক একই পন্থায় জীবনের অর্ধেক অংশ হারিয়ে ফেলেছে কোন গন্তব্য ছাড়াই। চলতে থাকে আড্ডা,তাস ঘোরাঘুরি। পড়া বলে কিছু একটা জিনিস ছিলো সেটি মনে পড়ে পরীক্ষার আগের রাতে! কিছু ছেলে নিজেকে শাহরুখ খান, সালমান খান ভাবা শুরু করে… ঠিক এভাবেই কাটতে থাকে বছর… বছর পেরোলে তার জুনিয়র আসে জুনিয়রকে নিয়েও একই পথের দিকে এগুতে থাকে।

মুদ্রায় ওপিঠটাতেও ঘটে আরো অনেক কিছু। কোনরকমে ভর্তি পরীক্ষাতে পাশ করা ছেলেটাও ভালো করতে থাকে। অনেকক্ষেত্রে নিজ ধর্মের প্রতি অনেক বেশী মনোযোগী হয়ে যায়। নিজের পরিবারের দিকে তাকিয়ে দু তিনটে টিউশনি করিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকে। জীবন সংগ্রাম তো এদেরই।

আস্তে আস্তে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করতে করতে কাজের এক্সপেরিয়েন্সটা অর্জন করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করে দেশ, সমাজের জন্য। জীবনে বিতর্ক না করা ছেলেটি, জীবনে কোনদিন বক্তৃতা না দেওয়া ছেলেটিও নিজের জীবন গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু অর্জন করে নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে!

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। কেউ সেই জীবনটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন বদলে ফেলে। আবার কেউ কেউ আবার তার জীবনটাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনীতি চর্চা হওয়া চাই সুস্থ রাজনীতির চর্চা। নিজের দেশপ্রেমের জায়গা থেকে দেশকে ভালোবাসার জায়গা থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা আনাচে-কানাচেতে যে জ্ঞান ছড়ানো থাকে তা অন্বেষণ হওয়া উচিৎ একজন ভার্সিটির পড়ুয়া স্টুডেন্টের কাজ। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ি তাদের একটা বড় অংশই থাকি আমরা মধ্যবিত্তরা। যাদের পরিবার তাকিয়ে থাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সন্তানটির ওপর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষে আপনি কোথায় যাবেন সেটা নির্ভর করছে আপনার ওপর।কথায় বলে না, ছুরি দিয়ে ফল কেটেও খাওয়া যায় আবার মানুষ হত্যাও করা যায়!

রেলওয়ের একটি কামরার আত্মকথা

images (12)

আমি রেলওয়ের পরিত্যক্ত একটি কামরা। জীবনের প্রায় ৪০ টা বছর তোমাদের সঙ্গী হয়ে আজ আমি পরিত্যক্ত। শেষ ঠাঁই হয়েছে রেলওয়ের পুরোনো কলোনির বাম পাশটার অশ্বথের ছায়ায়। অবহেলায় অনাদরে পড়ে থাকতে থাকতে আমার পুরো শরীর জুড়ে নানান আগাছা জন্মেছে। শরীরটার বাদামী জং তো সেই কবেই ধরে গেছে। জীবনের ৪০ টা বছর শুধু দেখেই গেলাম কিছুই বলার ক্ষমতা হয়নি।

আমি তোমাদের মত মানুষ হলে কত কথাই না কইতাম! কিন্তু আমার কি আর সেই কপাল…জন্মেছি রেলের কামরা হয়ে। তখন থেকেই চলেছি তো চলছিই… তেপান্তের মাঠ ভেদ করে তোমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবার জন্যইু আমার এ যাত্রা। অনন্ত অসীমের পানে আমার যাত্রা নয়.. এ যাত্রা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে.. চাইলেও কখনো লোহার দু লাইনের বাইরে চলতে পারিনি.. যৌবনের প্রথম দিকে নিজেকে নিয়ে প্রচন্ড আত্ম অহংকারে বুক ফুলে উঠতো.. আমি লোহার তৈরী।আমি অবিনশ্বর! কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে অনুভব করলাম.. ধুলোর পৃথিবীর সবকিছুই নশ্বর। তাই সেই লোহার তৈরী আমিই জং ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছি….

রেলের ইঞ্জিনের সাথে সাথে হুংকার তুলে আমি চলেছি স্টেশনের পর স্টেশন মাঝে মধ্যে হয়তো ১০/১৫ মিনিটের জন্য ‍জিরোনোর সময় হয়েছে.. কিন্তু তারপর আবারো সেই ছুটে চলা… কি দিন কি রাত! আমি ছুটছি স্টেশনের পর স্টেশনে…জীবন থেকে জীবনে…. আমার সেই চল্লিশ বছরের যাত্রায় কত লক্ষ-কোটি মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি তার ইয়াত্তা নেই।

মানুষের জীবনটাকে আরো কাছ থেকে দেখবার সুযোগ হয়েছে আমার। কখনো বা বাবা মা সন্তানের ভালোবাসা ছোঁয়ার স্বর্গীয় অনুভূতি তে ভরে উঠেছিলো চারদিক, বা বৃদ্ধ মায়ের ছেলের সাথে প্রথম শহর দেখার গল্প টার রচনা আমারই বুকে.. শুধু কি তাই? সেই নবীন নবীনার গল্প যারা ঘর বাঁধার স্বপ্নে পাড়ি দিচ্ছিল অন্য কোন শহরে.. সেসব গল্পগুলোও খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি। অন্ধ ভিক্ষুককে আমার বুকে ভিক্ষা করতে দেখেছি … আবার হাজারো হকার/ ফেরিওয়ালাকে আমার মধ্যে দু’চার টাকার এটা সেটা বিক্রি করে দু মুঠো খাবার জোগাড় করতে দেখেছি.. অনাহারে পড়ে মরে যাবার স্মৃতিতে যখন চোখ পানিতে টইটম্বুর হওয়ার উপক্রম হয়েছে.. তখন আমি নিজের অশ্রুকে সামাল দিয়ে আবারো ছুটতে শুরু করেছি.. আমার কাজ তো কেবল ছুটে চলা.. আমি যে জড়.. আমার দুঃখ পেলে চলবে!

কখনো সখনো আমারই চাকার নিচে পড়ে জীবনের সমাপ্তিও আমাকে দেখতে হয়েছে, রেলের চাকায় কাটা লাশের রক্ত ছুটে পড়েছে আমার গায়ে, তবুও আমার থামার ক্ষমতা নেই.. আমাকে যে চলতেই হবে.. জীবনের সুচনা থেকে জীবনের অন্তিমযাত্রা.. সবকিছুই দেখবার সৌভাগ্য বলি কিংবা দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে আমার।

৪০ বছরের জীবনের সবথেকে বড় ট্রাজেডি কী তা জানো? বয়স যখন ১৬ তখন আমার শরীরে আগুন লেগে ভয়াবহভাবে পুড়ে যায় আমার শরীর সেই আগুনের লেলিহান শিখায় কতজন মানুষের পুড়ে যাওয়া দেখেছি.. সে আর মনেও করতে চাই না। বেঁচে থাকবার শেষ আকুতি যে কেমন হতে পারে সেটা দেখলে যেকউ বোবা হয়ে যেত..vকিন্তু আমি তো জন্মেছিই বোবা হয়ে..আর আবারো ছুটে চলেছি.. শহর থেকে শহরে মাঠ থেকে মাঠে..

আমার তো জীবনের পরিসমাপ্তির পথে.. জীবনের শেষ পর্যােয়ে এস আমার উপলব্ধি… মানুষ হয়ে না জন্মেই ভালো হয়েছে.. নয়তো হিংসে হানাহানি- খুনোখুনিতে জীবনের রঙটুকুও মলিন হয়ে যেত.. রেলের কামরা হয়ে জন্মেছি.. ভালোই তো আছি.. বাকি জীবনটুকুও এভাবেই কেটে যাবে…

–শামস আল গালিব
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মাথাপিছু আয় ও বিড়াল সম্প্রদায়ের বিভ্রাট!

1603275421634

আমার বাসার পাশে ধবধবে সাদা গাত্রবর্ণের একটি বিড়ালছানা এসে হাজির হয়েছিলো। দু’দিন ধরে একই জায়গায় রয়েছে। কে বা কারা হয়তো অন্ধকারের আড়ালে এখানে এসে রেখে গিয়েছে। হয়তো হতে পারে বিড়াল সম্প্রদায়ের কোন অনুপ্রবেশকারী এ ঘটনা ঘটিয়েছে।সে যায় হোক এখন সব থেকে বড় সমস্যা হলো এ সম্প্রদায়ের বিড়ালের মাথাপিছু আয় কত সেটা এখনো হিসেব করে ওঠা হয়নি!

যে বিড়াল কারো বাসায় শখের গৃহপালিত প্রাণী বলে ম্যালা যত্ন-আত্তি পায় তার মাথাপিছু আয় কি সারাদিন না খেতে পেয়ে এদিক ওদিক দাপিয়ে বেড়ানো বিড়ালের চেয়ে বেশী হবে নিশ্চয়!কিন্তু সব থেকে সমস্যা হলো বিড়াল সম্প্রদায়ের ভাই বেরাদর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অধিকাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত। এক টুকরো তেলাপিয়া মাছ দিলেই সব হিসেব উল্টোপাল্টা করে দেয়… ইলিশ, কাতল হলে তো কথাই নেই।

তো বেশ ক’দিন ধরে চলছে বিড়াল সম্প্রদায়ের মাথাপিছু আয় গণনার কাজ। তো প্রাথমিকভাবে এ নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। গৃহপালিত মোটাসোটা বিড়ালদের একাংশ পদাধিকার বলে দায়িত্ব পেলেন এই বিড়াল শুমারীর। কিন্তু আরেকটা বিপত্তি দেখা গেলো..বিড়ালদের মধ্যে কেউ একজন হঠাৎ বলে উঠলো:

মেউ, শুনেছি বড় কাজ করার আগে বিদেশে ট্রেনিং নিতে যেত হয়…তো সেটা ব্যবস্থা করলে ভালো হতো না? মেউ…

এ বড় চিন্তার বিষয়…এত বড় একটা কাজ হবে অথচ কোন বিড়ালের বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে না এটা কি করে সম্ভব! তো সেই মোতাবেক বিড়ালদের অভিজাত শ্রেণির একাংশ ৫০০ কোটি টাকা ব্যায়ে উগান্ডায় প্রশিক্ষণে গেলো। এদিকে বিড়ালদের মাথাপিছু আয় গণনার কাজ এখনো একটুও আগায়নি…

অভিজাত বিড়ালদের একটি শ্রেণি বিড়ালদের খবরের কাগজ ‘বিড়ালের আলো’ পত্রিকায় নিয়মিত বড়বড় কলাম লিখে চলছে… বিড়ালদের দ্রুত মাথাপিছু আয় গণনা করো। অন্যথায় আন্দোলন হবে ঈদের পরে। কিন্তু কি করে বিড়ালদের মাথাপিছু আয় গণনার করা হবে…?সেটা তো অত্যন্ত দূরূহ একটি কাজ…প্রথম সমস্যা হলো বিড়ালের মাথাপিছু আয় গণনায় কেন মূদ্রার হিসেবে করা হবে? দ্বিতীয় সমস্যা বিড়াল সমাজের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা নেই…আর কিছু বিড়াল একদল থেকে আরেকদলে অনুপ্রবেশকারী। সুতরাং সেই বিড়ালটির মাথা পিছুআয় হিসেব করা বড্ড গোলমেলে হয়ে যাবে। কিন্তু মাথাপিছু আয় হিসেবে না করলে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুলনায় কোথায় হবে?

বিড়ালদের মধ্যে একাংশ দাবি জানিয়েছেন, সকল বিড়ালের খাবার নিশ্চিত করো…ওসব মাথাপিছু আয় দিয়ে আমাগো লাভ নাই…কিন্তু সেসব পাত্তাই পায়নি…আগে মাথাপিছু আয় তারপর অন্যকিছু…যাহোক এসব করতে করতে আমার বাসার পাশের বিড়াল ছানাটি আবারো নিখোঁজ হয়ে গেলো…যাক নিখোঁজ হয়েও বাঁচা গেল.. নইলে মরলে মাটি দিতে হবে না পুড়িয়ে ফেলতে হবে সে নিয়েও বিড়ালপতিদের মাঝে বিরাট গ্যাঞ্জামের সৃষ্টি হতো। 😴

ইন আ ক্লোজড রিলেশনশিপ : পর্ব ০২

প্রথম পর্বের পর:

“ও আচ্ছা। এত লজ্জা পাস আমার সাথে ঘুরতে? তাইলে রিলেশনশিপে গেলি কেন, লজ্জা করবে না? নাহ করবে না।” “আগে কখনও কারো সাথে প্রেম করিনি তো তাই!” এই বেটা এই আমি কি এর আগে রিলেশনে ছিলাম নাকি? গাধা একটা আচ্ছা আজকে যে দেখা করতে এলি একটা ফুলতো আনতে পারতিস? তুই একটুও রোমান্টিক না” “তাতে কি তুই আমাকে রোমান্টিক বানিয়ে নিবি, কোথায় কি নিয়ে যেতে হয়, ক্যামনে যেতে হয় এগুলো তুই শিখিয়ে দিবি” আচ্ছা বাবা দিব” এবার বল কি খাবি?
ফুসকা খাওয়া।
ফুসকাওয়ালাকে ডাক দিয়ে রুদ্র বলে এই মামা দুই প্লেট ফুসকা দিয়েন।
আচ্ছা মামা বসেন।
তারপর বল, কেমন লাগছে আজ গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে এসে?
তেমন কিছু না তো!
গাধা, তুই আসলে আমাকে ভালোই বাসিস না!
ভালোবাসি তো তোকে অনেক ভালোবাসি।
আচ্ছা বাবা বুঝেছি।
এভাবেই চলতে থাকে গল্প-আড্ডা। দুজনের জীবনেরই প্রথম প্রেম। তবে বেস্টফ্রেন্ড থেকে পার্থক্য এমন কারো কাছেই লাগেনি।
অতঃপর ২ ঘন্টা ঘোরার পর নীলাকে বাসে তুলে দিয়ে বাসায় চলে আসে রুদ্র। আর তারপর রিকশা করে নিজের বাসায় ফিরে যেতে যেতে রুদ্র নিজেকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা গার্লফ্রেন্ড আর বেস্টফ্রেন্ডের মাঝে পার্থক্য কি? সেটা কি শুধুই একটা শব্দভেদ নাকি আরো অনেক বড় কিছু? রেসপন্সেবলিটি থাকে রিলেশনশিপে? তো রেসপন্সেবলিটি কি বেস্টফ্রেন্ডশিপে থাকে না। যে আমার উপর পুরোটা বিশ্বাস করে কাটিয়ে দিচ্ছে দিনেরপর দিন।তার জন্য কি রেসপন্সেবলিটি নেই? কি জানি? নীলাকে জিজ্ঞেস করবোনি.. ও আবার এগুলো ভালো বোঝে। খালি আমিই মনে হয় বুঝিনা।আচ্ছা ও তো আগে অন্য যেকোন মেয়ের সাথে মিশতে দিতো। তাইলে এখন কি দিবে না? এসব ভাবতে ভাবতেই সে তাকিয়ে দেখা রিকশা বাসা পর্যন্ত এসে গেছে! “মামা, নামবেন না, এইহানেই তো আসতে কইলেন!” ওহ হ্যাঁ এখানেই। ওইযে নীল বিল্ডিংটা ওখানে সাইড কর। এবার রিকশায় থেকে নেমে বাসায় চলে যায় রুদ্র। এভাবেই কেটে যায় তাদের সম্পর্কের প্রথম দিনটি।

চলবে…

ইন এ ক্লোজড রিলেশনশিপ: পর্ব -০১

নীলার সাথে আজ রুপকের প্রথম দেখা। প্রথম মানে জীবনে প্রথমবার তা নয়। রিলেশন হওয়ার পর প্রথম দেখা। মেসেঞ্জারে প্রপোজ, একসেপ্ট তারপর ফরমালি এটাই প্রথম দেখা তাদের; লোকে তাকে কি জানি বলে? ডেটিং! নাহ ডেটিং বোধহয় এটাকে বলে না। যাহোক প্রথম সামনাসামনি দেখা করতে যাওয়া আরকি! কোথায় যাওয়া যায় বোটানিক্যাল গার্ডেন? নাহ ওখানে নাকি কাপলরা অন্য কাজ করতে যায়। আমরা তো সামাজিক কাজই করব। জাস্ট দেখা করব আরকি।

আচ্ছা কি পরা যায়?
পাঞ্জাবি? কি কালার?
নীল পরি।

নীলার তো নীল পাঞ্জাবিই পছন্দ হওয়া উচিৎ। এমন ভাবতে ভাবতেই ফোনটাতে টুং করে উঠল। মেসেঞ্জারে মেসেজ আসল। মেসেজটা যে নীলার তা না দেখেই আন্দাজ করতে পারল রুপক। “অই, বের হবি কখন? আর কোথায় আসবি?” সংসদ ভবনের সামনে আয়, এইতো ৫/৭ মিনিট লাগবে” রুপকের রিপ্লাই। রিলেশন হয়ে যাওয়ার পরেও তুই থেকে তুমি পর্যন্ত এখনো যাওয়া হয়নি। আগে থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড তো। তাই পারলে তুই এর পরে কিছু থাকলে তাই বলতো। ভাগ্যিস এর নিচে আর কিছু নেই।

যাহোক তাদের পরিচয় টিএসসিতে। রুপক বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে। আর নীলা পড়ে ফার্মেসীতে। সেও সেকেন্ড ইয়ারের ই। আন্তঃ ডিপার্টমেন্ট ডিবেট করতে গিয়ে পরিচয় সেই একবছর আগে। তখন থেকেই বন্ধু। আস্তে আস্তে অনেক ক্লোজ। আজ তারা “ইন আ রিলেশনশিপ”! যাহোক সব কাজেই একটু দেরী করে বের হওয়াটা রূপকের স্বভাব। এর জন্য তো আগে কম বকা খেতে হয়নি নীলার কাছে। তবে এবার ব্যাপারটা ভিন্ন, এবার তো আর ফ্রেন্ড হিসেবে দেখা করতে যাচ্ছে না। এবার যাচ্ছে বয়ফ্রেন্ড – গার্লফ্রেন্ড হিসেবে। আচ্ছা বের হওয়ার কথা তো ৫/৭ মিনিটের মধ্যে এখনো বের ই হয়নি রুপক। থাকে সংসদ ভবন এলাকার পাশেই, শের-ই বাংলা নগরে। আবারো মেসেঞ্জার টুং করে শব্দ।
এইবার মেসেজ আসলো:

অই? ১৫ মিনিট হয়ে গেল তোর কোন খবর নাই কেন? একটা কাজেও যদি ঠিক সময়ে আসে!”

এইতো রিক্সায় উঠছি”
ওকে, তাড়াতাড়ি চলে আয়”।

“অ্যাই রিক্সা, সংসদভবন যাবা? কত নিবা?” “২০ টাকা দিয়েন মামা” আচ্ছা চলো। রিক্সায় উঠেই রুপক বলে : আচ্ছা একটা জিনিসতো খেয়াল করা হয়নি। প্রথম দেখা করতে যাওয়ার সময় কি সাথে কিছু নিয়ে যেতে হয়? কি জানি? হয়তো নিতে হয়। কার থেকে শোনা যায়। নাহ কাউকে বলা ঠিক হবে না। কোন ফ্রেন্ডকে বললে শালা আবার মাইকিং করে দিবে। থাক কিছু নিতে হবে না। ও যদি বলে কিছু আনিস কেন তাহলে সরি বলে দিব। তাতেই হবে। আবারো টুং “অই আসবি?” ততক্ষনে রিক্সা সংসদ ভবনের সামনেই এসে গেছে। “আসতে এত লেট করলি! আজকের দিনটাতে তো একটু টাইমলি আসতে পারতিস, আই বস এখানে, আচ্ছা আগে বলতো ক্যাম্পাস বাদ দিয়ে এত দুরে দেখা করতে আসলি কেন?” না মানে ক্যাম্পাসে সিনিয়র, জুনিয়র আছে তো তাই” তো তাতে কি? আগে কি একসাথে ঘুরিনি ক্যাম্পাসে? ঘুরেছি বাট তাও কেমন জানি লাগছিল। তাই বললাম এখানে আয়। এই জন্যই…….

(চলবে)

এ প্লাসের গল্প

রবিনের বয়স সতের হতে সামান্য বাকী। হয়তো কোনদিক দিয়ে আঠারো এসে যাবে সে টেরই পাবে না। কারন সে এই সব বিষয়ে উদাসীন। একগুচ্ছ বইয়ের পাতায় আবদ্ধ থাকতে চায় না। কিন্তু তাকে যে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ প্লাস পেতেই হবে। এ প্লাস না পেলে তাকে কেউ ছাত্র বলে গুনবে না। আরো আছে পাশের বাসার আন্টি, অমুকের ননদের ছেলে, এর ছেলে, তমুকের ছেলে আরো কত কি! তবে এ প্লাস পাওয়ার জন্য তীব্র ইচ্ছা তার মধ্যে নেই। সে জানতে চায় সবকিছু। অনেক বড় বড় মানুষের বই পড়তে চায়। কিন্তু সে হয়তো কোনদিন লেখক কবি বা সাহিত্যিক হতে পারবে না, কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরে সামান্য পত্রিকাটুকু ও পড়তে মানা তার। তার একমাত্র কাজ পাঠ্যবইতে মুখ গুঁজে থাকা। কারণটা এ প্লাস। সে জানেনা তার বাইরের জগতকে। বলতে পারবে না ধান গাছ কেমন হয়। অথচ সে বাঙালী। মাছে ভাতে বাঙালী! ছোটবেলা থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে আসছে সে। জানে না আমাদের বাংলাকে। আমাদের ঐতিহ্যকে। এতক্ষণ যার কথা বললাম তা ঢাকার চার দেয়ালের মাঝে বন্দী রবিনের জীবনাচরণ নিয়ে।

অন্যদিকে সমবয়সী মুনির পড়ে অজপাড়া গাঁয়ের এক কলেজে। তবে বাঙালী সাহিত্য নিয়ে তার ধারনা গগনচুম্বী। তবে সে জানে। তবে সে জানেনা ঢাকার পরিবেশ। কোনদিন যায়নি ঢাকাতে। আর তার হাতে ঢাকাকে জানার মত কোন মাধ্যম নেই। নেই স্মার্টফোন। সে তো প্রকৃত মাছে-ভাতে বাঙালী। তার মাথার উপর এ প্লাসের চাপ নেই। তার বাবা -মা অক্ষর জ্ঞানহীন। তারা শুধু জানেন পাশ ফেল কি!

১৭ বছর পরের ঘটনা। ঢাকার সেই রবিন এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে বেকার বসে আছে। আর গ্রামের সেই ছেলে মুনির আজ দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করে ঐ অবস্থানে সে। আজ ১৭ বছর পরে মুনির কোথায় আর রবিন কোথায়? রবিনের মত কত সম্ভাবনাময়ী ছাত্রের জীবন আজ অন্ধকারে তা সংখ্যায় অনেক। রবিনের শেষ পরিণতি কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে সে হতে পারত একজন কবি/সাহিত্যিক। তবে এটুকু জানি রবিন একজন পরাজিত সৈনিক। পরাজয়ের মুল সেই এ প্লাস…..

এক কাপ চায়ের আত্মকাহিনী

আমি এক কাপ চা। তোমরা যে সকালে দুপুরে সময়ে অসময়ে পান করো আমি সেই চা। কখনো কি ভেবে দেখেছো… আমি ও যদি কথা বলতে পারতাম তবে কেমন হতো… আর কিই বা বলতাম ! আমার জীবনকাল তো মাত্র কয়েক মিনিট। কেউ আমায় খাও বেশী মিষ্টি দিয়ে… কেউ খাও কম দিয়ে। কেউ আমায় বিস্কুট ডুবিয়ে খাও। কেউ খাও বিড়ি সিগারেটের সাথে। তবে তাতে আমার অভিমান নেই। অভিমান এই যে আমার কথা কেউ ই বলে না। তাই আজ যখন বলার সুযোগ হলো একটু না হয় বলিই আমার গল্প।

আমার সম্পর্কে মানুষের মুখে প্রচলিত গল্প আছে চীনের নাকি এক রাজা ছিলেন। তিনি নাকি ছিলেন ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন। সবসময় ফুটিয়ে পানি পান করতেন। হঠাৎ এমনি এক সময় কোত্থেকে এক পাতা এসে পড়েছিল সেই পানির মধ্যে। সেই পাতাটাই নাকি ছিলাম আমি। সেই থেকেই নাকি আমার “চায়ের” জন্ম। সে গল্প সত্যি না মিথ্যা তা জিজ্ঞেস করো না বাপু…. সে ম্যালা দিন আগের কথা। বয়স ও হইলো অনেক সেই গল্প আমার মনে নেই।

তবে আমি গাছ হিসেবে ছিলাম অনেক আগে থেকেই। তবে ৫০০০ বছর মত আগে তোমরা গাছ থেকে পাতা পেড়ে প্রক্রিয়াজাত করে বানিয়েছিলে আমাকে। আমার নামটা আসে গ্রিক দেবী থিয়ার নাম থেকে। থিয়া থেকে চি… তারপর তোমাদের ‘চা’ তারপর থেকেই তোমাদের নিত্য সঙ্গী আমি ‘এক কাপ চা’। তখন ছিলাম একরুপে আস্তে আস্তে আমার বয়সটাও বাড়তে থাকে… রং বর্ণ ও বদলাতে থাকে এভাবেই আমার থেকে জন্ম নিয়েছে দুধ চা, লেবু চা, লবঙ্গ চা অপরাজিতা, মরিচ চা, মশলা চা, চকলেট চা, মাল্টা চা, সাত কালারের চা আরো কত কি… আমাদের বংশ এখন বিশাল বড় বুঝলে… কি কি প্রকারের চা পাওয়া যায় তা আমি বলেই শেষ করতে পারছিনে… যাকগে সে কথা। কিভাবে এলাম তোমাদের দেশে সেটা শুনতে ইচ্ছে হয় না তোমাদের? আমি ছিলাম সিলেটের জঙ্গলে। ১৯০ বছর ধরে শাসন করা ব্রিটিশরাই আমাকে উদ্ধার করে। সময়টাতেই আমায় খুঁজে পায় ওরা। আর তারপর থেকেই সকালে বিকালে সময়ে এসময়ের সঙ্গী আমি। আমার নাকি বেশ কিছু ঔষধী গুন ও আছে.. কি গুন তা আমি জানি না.. আমি তো বাপু ডাক্তার না। কি গুন তুমি তাদের থেকেই জেনে নিও।

জানো আমি রাজা, প্রজা, ভিখারি আমির সবারই। সারাদিনের ক্লান্ত শ্রমিক কিংবা ব্যস্ত কর্মকর্তা কর্মচারী কিংবা ছাত্র- শিক্ষক, বন্ধু সবার কাছের আমার আসা যাওয়া। রাজনৈতিক আলাপ আলোচনায় আমার আনাগোনা, অতিথি আপ্যায়নে আমি, কিংবা আড্ডাতে কোথায় আমি নেই বলো তো? মাঝে মাঝে তো আমার কাপে তোমরা ঝড় ও তুলে ফেলো! ঠান্ডা লেগেছে আমি আছে… তুমি ক্লান্ত আমি আছি.. তোমার মাথাব্যাথা আমি তো আছিই… রাত জাগা প্রয়োজন আমি আছি। রাজনৈতিক আড্ডা আরে আমি আছি না। আর কত থাকবো বলো তো.. সারাজীবন থাকতে থাকতে আমি তো আজ ক্লান্ত। আমায় নিয়ে অনেক সাহিত্যিক অনেক কবিতা গল্প লিখে ফেলেছে। এটা ভেবে বেশ গর্ববোধ হয় আমার। আমাকে খাওয়ার পর কাপে থাকা অংশটা তো ছুড়ে ফেলো মাটির বুকে.. আমার তখন অনেক কষ্ট হয়। আমি তো তোমাদেরই অংশ তারপরেও কেন? তোমাদের মনে একটুও দয়া হয়না বুঝি! যাক গে.. আমার আজ যাবার সময় হলো… আজ আসি যদি কখনো পারি অন্যদিন আরো কিছু বলবো….

শিক্ষার্থী–
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

যোগাযোগ বৈকল্য

হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলেন আপনার ৭ বছর বয়সী সন্তান আপনার কোন কথা ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এতদিন সন্তানের অমনোযোগীতাকে দোষারোপ করে আসলেও আজকে আপনি হঠাৎই কেমন যেন বিচলিত হয়ে উঠলেন সন্তান কে নিয়ে। সন্তান কথা বলতে চায় না। বলতে গেলেও স্পষ্ট উচ্চারণ করে না। অাধ ভাঙ্গা টাইপের কথা বলে। অন্যকারো সাথে কথা বলতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনার সন্তান নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সন্তানকে যদি ইন্ট্রোভার্ট ভেবে থাকেন এবং বয়স বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে ভাবছেন। আপনি হয়তো অনেক বড় ভুল করে ফেলছেন। হয়তো আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত।

এবার সহজ কথায় আসি, যোগাযোগ বৈকল্য (communication disorder) আসলে কি? এটি আমাদের দেশে বেশ নতুন একটি কনসেপ্ট। প্রতিটি মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে শেয়ার করতে চায়, নিজের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণ করতে চায়, সমাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায়। কিন্তু মানুষ যখন কোন কারণে মৌখিক, অমৌখিক/ গ্রাফিকস চিত্রের মাধ্যমে কোন তথ্য প্রেরণ, গ্রহণ এবং অনুধাবনে সমস্যা হয় যার ফলে অন্যের সাথে যোগাযোগে অক্ষম হয়ে পড়ে তাকে বলে যোগাযোগ বৈকল্য। যোগাযোগ বৈকল্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন: ভাষিক বৈকল্য, বাচিক শব্দ বৈকল্য, শৈশবে তোতলানো বৈকল্য, উপলব্ধি বৈকল্য ইত্যাদি।

যোগাযোগ বৈকল্যের প্রধান কারনের মধ্যে পড়ে শ্রবণ – বাকযন্ত্রের সমস্যা, মস্তিষ্কের বিলম্বিত বিকাশ, স্নায়ু ইন্দ্রীয় বৈকল্য, মস্তিষ্ক প্রদাহ ইত্যাদি।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত:
১. একেবারেই কথা বলে না। কথা বলার সময় উচ্চারণে অনেক সমস্যা হয়। একই কথার বারবার পুনরাবৃত্তি করে।

২. কথা শুনতে সমস্যা হয়। সহজ কথা ও বুঝতে পারে না। কথা বলার সময় বাক্যের সঠিক ক্রম মনে রাখতে পারে না।

৩. নির্দেশনা বুঝতে অনেক সমস্যা হয়। সঠিক নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে পারে না।

৪. আই কনট্যাক্ট করতে চায় না। নিজের চুল নিয়ে বা আঙুল নিয়ে খেলা করে কোন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায়।

আপনার সন্তানের মধ্যে যদি লক্ষণগুলো দেখেন। তাহলে হয়তো আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্য আক্রান্ত হতে পারে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৪০ মিলিয়ন মানুষ যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত। প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিকভাবে শনাক্তকরণ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার জন্য চাইল্ড সাইকোলজিস্ট বা ভাষিক- বাচন (Speech- Language) বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে পারেন। তাতে হয়তো আপনার শিশুর যোগাযোগ বৈকল্য থেকে কিছুটা হলেও প্রতিকার মিলতে পারে।

—শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউট,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি ফুল নিয়ে আত্ম ভাবনা

ফুলের ছবিটি আমারই তোলা সেটা থেকে জুম করে এই অংশটুকু নেওয়া হয়েছে। ফুলটির সাথে আমাদের জীবনের বেশ কিছু সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছি। নিচে সেগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরছি।

১. ব্যক্তি স্বাতন্ত্র: লক্ষ্য করুন ফুলের প্রত্যেকটি পাপড়িই আলাদা রকমের। একটার সাথে আরেকটার মধ্যে কোন না কোন পার্থক্য আছেই। আমাদের সমাজেও প্রত্যেকটি মানুষ একে অন্যের থেকে আলাদা।

২.পারষ্পরিক সহযোগিতা: লক্ষ্য করুন নিচের দিকের একটি পাপড়ির মাথাটা ভেঙে গেছে। আর তাকে সাপোর্ট দিয়ে রেখেছে পাশের পাপড়ি। যার জন্য অন্যান্য পাপড়ির মতো সেটিও স্বাভাবিকের মতই দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে যদি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত কিংবা প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে তুলনা করা হয় তবে সমাজের সুস্থ, সাবলম্বী মানুষদের সাহায্য সহযোগিতায় অস্বাভাবিকরাও মূলধারায় আসতে পারে।

৩. একই সমাজে বিভিন্ন গোত্র: লক্ষ্য করুন ফুলগুলো মধ্যে ডানপাশে ৩টা, তার নিচে চারটা এবং তার উপরেই পাঁচটি ও শেষে একটা মিলে ফুলটি গঠিত। অর্থ্যাৎ মতাদর্শ কিংবা সমাজের অন্য কোন প্রভাবকের ফলে একই প্রজাতির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র দলের সৃষ্টি হয়।

৪. সমাজ নিয়ন্ত্রক: দেখুন ফুলগুলোর পাপড়ির থেকে উচ্চ স্থানে আছে ফুলের গর্ভধারণ প্রয়োজনীয় উপাদান। পাপড়িগুলো সরাসরি প্রজননে কাজ করে না। পরাগায়নের জন্য সাহায্য করে মাত্র। এটা এমন ভাবে হতে পারে যে, আমাদের সমাজের একটা উচ্চ শ্রেণি থাকে যারা সকল কাজ পরিচালনা করে। সাধারণ মানুষ সেখানে কেবল প্রভাবক মাত্র। নিজে থেকে কোন কাজ করতে পারে না। আবার এভাবে যদি ভাবা যায় ফুলের পাপড়িগুলোই গর্ভাশয় সহ প্রয়োজনীয় উপাদানকে নির্বাচিত করেছে প্রধান অংশ হিসেবে যারা সকল কাজ করবে। এটাকে গণতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত করা যেতে পারে যেখানে পাপড়িগুলো না থাকলে পরাগায়নই হবে না। অর্থাৎ মানুষ ছাড়া গনতন্ত্র সম্ভব নয়।

৫. ফুলের রং: দেখুন ছবির ফুলটির রং হলুদ। এই ঝোপের সব ফুলই হবে হলুদ। আবার অন্য ঝোপের সব ফুল হয়তো আবার অন্য রংয়ের। ফুলের ঝোপটিকে একটি দেশ/ মহাদেশ বা বৃহত্তর কোন অঞ্চল ভাবলে দেখা যাবে এক একটা অঞ্চলের মানুষের গায়ের রং আলাদা, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ মিশ্র।

৬. সমাজে মানুষ: দেখুন প্রতিটি পাপড়ি আলাদা আলাদাভাবে নিজে সুন্দর না। কেউ লম্বা কেউ বেঁটে, কেউ ভাঙা… অথচ সবাই মিলে একটি সুন্দর ফুল। অর্থাৎ সমাজের একত্রে সবাই মিলে গঠিত হয় একটি আদর্শ সমাজ। সামগ্রিকভাবে সবাই সুন্দর।

৭. প্রতিটি মানুষ সম্ভাবনাময়ী: এই ফুলটি নতুন বংশধর সৃষ্টির জন্য জন্মগতভাবে প্রস্তুত। অথচ বাহ্যিক প্রভাবক ঝড় বৃষ্টি, ফুল ছিড়ে ফেলা ইত্যাদি কারণে সকল সম্ভবনার সমাপ্তি ঘটতেই পারে। মানুষও তো একইভাবে সম্ভাবনাময়ী।

৮. জীবনে দাঁড়ানো: ফুলটি শক্তিশালীভাবে দাড়িয়ে থাকতে তার মজবুত ভিত্তি প্রয়োজন হয়েছে যা সেই নিজেই গড়ে তুলেছে। একটা মানুষকেও জীবনের দাঁড়িয়ে উঠতে হলে নিজেই জীবনকে গড়ে নিতে হয়; অন্য কেউ তা করে দেয় না।

৯. মানুষের ফোকাসড হওয়া: ফুলটি তার সমগ্র সৌন্দর্য, তার ক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যার লক্ষ্য সমাজে সবার সামনে ফোকাসড হওয়া। মানুষ ও সেই ভাবেই চাই সব জায়গায়তে ফোকাসড হতে।

এগুলো আমার নিছকই ভাবনা। কিন্তু আমার কাছে জিনিসগুলো বেশ অর্থপূর্ণ মনে হয়েছে।


শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

কখনো ভেবেছেন শিশুদের দৈত্য, ভূত-প্রেতের গল্প কেন পড়ানো হয়?


শিক্ষা বিজ্ঞানের একটি প্রত্যয় হচ্ছে Maxims of Learning. এই প্রত্যয়টিতে শিক্ষাটা কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে আলোচনা করে। অনেকগুলো নীতির সমন্বয়ে এটি গঠিত। যেমন: শিক্ষা হবে সহজ থেকে কঠিন, জানা থেকে অজানা ইত্যাদি। তো সেরকমই একটি নীতি।
হলো : মূর্ত থেকে বিমূর্ত। অর্থ্যাৎ ধরা ছোয়া স্পর্শ করা যায় এমন বস্তু থেকে শিশুকে ক্রমশঃ বিমূর্ত বস্তুর কল্পনার করার দিকে এগুতে হবে। অর্থ্যাৎ শিশুর কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে।

শিশুদের বইগুলোতে কৃষকের গল্প, রাখালের গল্পের পরে সম্ভবত সেই জায়গা থেকেই ভুত, রাক্ষস,দৈত্য, রূপকথার গল্প এসবের গল্প পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি। রাক্ষসের গল্প পড়তে গিয়ে শিশু কল্পনা করে নেয় তিন চোখওয়ালা অদ্ভুত এক প্রাণী, ধরে ধরে মানুষ খেয়ে নিচ্ছে, তার এক নিঃশ্বাসে চারিদিকে ধুলিবালিতে ঢেকে যায়, মেঘের মত কুণ্ডলী পাকাতে থাকে, হুংকার তোলে স্বর্গ মর্তে আমার মতো শক্তিশালী কেউ নাই, আয় আয় আয়…. সহ নানা রকমের গল্প। শিশু কল্পনা করতে থাকে দৈত্য, ভুত, রাক্ষস, শাকচুন্নীকে….

লক্ষ্য করবেন শিশুরা দু’একটা গল্প পড়ার পর নিজের মত করে গল্প সাজানো শুরু করে, রাজকন্যার জন্য পাখির পিঠে চেপে আসে রাজকুমার। রাস্তায় যুদ্ধ হয় এক চোখওয়ালা দৈত্যের সাথে। অর্থ্যাৎ তাদের কল্পনাশক্তি বিকশিত হতে থাকে। যা তার পরবর্তী জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

তাছাড়া গল্পগুলো অনেক বেশী আকর্ষনীয় হওয়া শিশুদের বই পড়তে উদ্ভুদ্ধকরণের জন্য, বই পড়ায় আনন্দ পাইয়ে দেওয়া, পাঠ্যাভ্যাসের বিকাশ ইত্যাদি তো থাকছেই……

শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আত্মকথা


পদ্মার বুকে এভাবেই দাড়িয়ে রই আমি: হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

আমি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। তোমাদের এই দেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু। তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি কতবড়? বলছি দাঁড়াও, আমি ১৭৯২.৮ মিটার ( প্রায় ১.৮কিমি) দীর্ঘ। এটা ভেবে মাঝে মধ্যে গর্ববোধ করি যে আমি তোমাদের দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। আমার আরও একটি গর্বের জায়গা কি জানো? আমি একটা শতবর্ষী ব্রিজ, ক’ বছর আগেই ১০০ বছরে পা দিলাম। আমার জন্ম কত সালে জানো, সেই তোমাদের দাদাদের জন্মের সময়ে। সেই ১৯১০ সালে! …আমি বাপু সেই ব্রিটিশ আমলের ব্রিজ। আমার নাম হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কি করে হলো জানো কি? তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ এর নামে। ভাইসরয় কি তা আবার আমায় জিজ্ঞেস করো না। কারন আমি লোহার ব্রিজ, তোমাদের মত পণ্ডিত নই, অতকিছু আমি জানিনা। আমাকে বানানোর কারণ আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তর বঙ্গের সাথে কলকাতার যোগাযোগ সহজ করার জন্য, কারণ মাঝখানে ছিলো পদ্মা। আমি সেই পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে তোমাদের যোগাযোগ সহজ করে দিচ্ছি।

আমাকে বানাতে কত শ্রমিক লেগেছিল জানো? ২৪,০০০ শ্রমিকের ৫ বছর। তাহলেই বোঝো, আমি কত বড়! কখনো কি ভেবে দেখেছো? প্রবল পদ্মার স্রোতেও আমি একশ বছর দাঁড়িয়ে আছি! যেখানে একবার নদীর পানি বাড়লেই তোমাদের বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়ে যায়, সেই পদ্মার বুকেই আমি একশ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও আমার কিছুই হয়নি… ও হ্যাঁ আমি একবার ভেঙে পড়েছিলাম তোমাদের স্বাধীনতার সময়ে.. আমাকে প্লেন থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বোমার আঘাত সহ্য করতে পারিনি; তখন একবার ভেঙে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই বুঝি আমি শেষ আমি আর কোনদিন দাঁড়াতে পারবো না তবে তোমার আমাকে মেরামত করে দিয়েছো… এ কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। কারণ আমি তো ইস্পাতের তৈরী ব্রিজ। আমি শত বছর ধরে দেখে যাচ্ছি তোমাদের এই দেশটাকে… তার আগে বলি একটা হাসির গল্প: গ্রামের নিরক্ষর একদল মানুষ আমাকে দেখতে এসেছে। একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে “ওটা কিসের? ” “লোহার? ” ওরে!! নয় মন নোয়াই( লোহাই) লাগছে!” ওদের কথা শুনে একগাল হেসেছিলাম। তোমরা এটাও ভাবো আমার ওজন কত? আচ্ছা আর কি ভাবো আমায় নিয়ে ? লালন শাহ সেতুর ( হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশের সড়ক সেতু) উপর দিয়ে গাড়িতে করে যাও, তখন আমার পানে একদৃষ্টিতে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকো! কিন্তু কি ভাবো আমায় নিয়ে? জানতে ইচ্ছে হয় খুব জানতে ইচ্ছে হয়!

আমি যদি তোমাদের মত কথা বলতে পারতাম তবে বলতামঃ দাঁড়াও হে পথিক, দুটো কথা বলি তোমার সাথে.. কিন্তু আমি তো আর তোমাদের মত মানুষ নই। কথা কইতে পারি না। জানো পদ্মার বুকে মাঝে মধ্যেই দেখি আমার নিচ দিয়ে লাশ ভেসে যাচ্ছে.. আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাকে একবার পদ্মা থেকে তুলে জড়িয়ে ধরতাম। কেউ নেই সেই লাশের। কোন খোঁজও থাকে না, এটা ভাবতে ভাবতে লাশটা পদ্মায় ভাসতে ভাসতে চলে যায়। জানো যেদিন অমনটা দেখি সেদিনটা খুব কষ্ট পাই। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কি করে কাঁদবো? আমি যে তোমাদের মত মানুষ নই। পরক্ষণেই ভাবি আমি মানুষ নই ভালোই হয়েছে, আমি তো আর কাউকে মেরে পানিতে ভাসিয়ে দেই না.. সেদিক থেকে বোধ হয় তোমাদের থেকে আমিই ভালো।

আমি কথা বলতে পারিনা বোবা, বোবার তো শত্রু নেই। তাই আমারও শত্রু নেই। আমি তোমাদের ব্রিটিশ আমল দেখেছি, পাকিস্তান দেখেছি, তোমাদের বাংলাদেশ ও দেখছি। বলার আছে অনেক কিন্তু কি করে বলবো? আমি তো বোবা। আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু তোমরা আর শোনো কই? তাই আর বললাম না। একটা কথা কি জানো? আমি বাঁচতে চাই আরও সহস্র বছর। কথা বলতে না পারি তোমাদের তো উপকারে আসতে পেরেছি। না হয় তোমাদের জন্যই আমি আমার জীবনটাকেই উৎসর্গ করে দিলাম….

.
শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়