ট্যাগ আর্কাইভঃ জাতীয় ক্রিকেট

মাঠে ময়দানে ক্রিকেট ঘরে বাইরে জুয়া

ছবিটি গতকাল ১২ মে চৌধুরী বাড়ি এলাকা থেকে রাত ১০টা সময় তোলা। ছবিতে দেখা যায় একটি ফার্নিচার দোকানে থাকা কালার টেলিভিশনে চলছে ক্রিকেট খেলা। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ক্রিকেট ভক্ত। আসলে এঁরা সবাই ক্রিকেট ভক্ত নয়! এঁরা ক্রিকেট জুয়াড়ি। খেলা শেষ হলেই এঁদের বাজি ধরার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে। অপেক্ষা শুধু খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

বর্তমানে হাতে হাতে স্মার্ট ফোন! ঘরে ঘরে কালার টেলিভিশনের ছড়াছড়ি। সাথে পাচ্ছে সীমিত মূল্যে নেটওয়ার্ক 4G ইন্টারনেট সেবা। আছে ওয়াইফাই নামের ইন্টারনেটও। আবার দেশের আনাচে-কানাচে, হাট-বাজারে, অলি-গলির দোকানে দোকানে চলতে থাকে টিভি চ্যানেলগুলোতে খেলা আর খেলা। সেসব খেলার মাঝে একটি খেলাই বেশি জনপ্রিয় খেলা দেখা যায়। তা হলো, বর্তমান যুগের ক্রিকেট খেলা। এই জনপ্রিয় খেলার ভেতরে চলছে অন্যরকম মরণঘাতী জুয়া খেলা। এই জুয়া খেলা ক্রিকেট খেলার উইকেটরা খেলে না। খেলোয়াড় বা প্লেয়ার বা উইকেটরা খেলে ক্রিকেট, আর ক্রিকেট খেলার ভক্তদের মধ্যে অনেক ভক্তই খেলছে মরণঘাতী জুয়া। এটা একরকম গুপ্ত জুয়া। যা চোখে দেখা যায় না, শুধু শোনা যায়, আর অনুভব করা যায়!

বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রাতদিন সরাসরি ক্রিকেট খেলা সম্প্রচার করা হয়। একই সাথে ক্রিকেট জুয়াড়িদের জুয়া খেলাও চলতে থাকে। তা সারাবিশ্বের অগণিত মানুষেই জানে। কিন্তু কেউ তা সরাসরি প্রকাশ করতে চায় না। তাই এই মরণঘাতী ক্রিকেট জুয়া প্রকাশ্য না হয়ে, গোপনেই থেকে গেলো। ক্রিকেট জুয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে, ক্রিকেট নিয়ে নিজের কিছু স্মৃতিচারণ করা যেতে পারে।

সময়টা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৪- ১৯৭৫ সাল। সেসময় আমরা রাবারের তৈরি টেনিস বল দিয়ে ব্যাটবল খেলতাম। টেনিস বল ফেটে গেলে বা হারিয়ে গেলে, ছেঁড়া-ফাঁড়া কাপড় মুড়িয়ে টেনিস বলের মতন বানিয়ে খেলতাম। যখন ব্যাটবল খেলা খেলতাম, স্টেন বানাতাম যেকোনো গাছের তিন চারটে শুকনো ডালা সারিবদ্ধভাবে গেঁথে। নাহয় চার পাঁচটি ইট উপরনিচ করে সাজিয়ে রেখে। ব্যাট বানাতাম দুইহাত আন্দাজ একটুকরো কাঠের তক্তা দিয়ে। হাতে পোক্ত করে ধরার জন্য তক্তার একাংশ দা দিয়ে কেটে চিকণ করে নিতাম। বল করতাম মাটিতে গড়িয়ে। খেলোয়াড় সংখ্যা বলতে সমবয়সী যারা খেলতে ইচ্ছুক হতো তাঁরা সবাই। এটাই ছিল আমাদের সময়ের ব্যাটবল খেলা।

মাটে ময়দানে যারা ব্যাটবল খেলতো, সবাই তাদের খেলোয়াড়ই বলেই জানতো। আগেকার সময়ে ব্যাটবল খেলার খেলোয়াড়দের কেউ উইকেট বলতো না। উইকেট যে কী, তা কেউ জানতামও না। শুধু জানতাম, যারা খেলে তাঁদের খেলোয়াড়ই বলে। সেই খেলোয়াড় বর্তমান যুগে হয়ে গেল উইকেট বা ব্যাটসম্যান। আর ব্যাটবল হয়ে গেলো জাতীয় ক্রিকেট খেলা। এটা জাতির জন্য একরকম সৌভাগ্যও বলা চলে।

ক্রিকেটের জন্মকাল ও আমাদের জাতীয় ক্রিকেট:
ক্রিকেট খেলার জন্ম কোথায় এবং কোন দেশ থেকে উৎপত্তি, তা নিয়ে এখনো অনেক মতভেদ দেখা যায়। তবে যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিলো ষোড়শ শতকের শেষদিকে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি সারাবিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৪৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলেও ইতিহাস স্বীকৃত টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলা শুরু হয় ১৮৭৭ সালে।

আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার(আইসিসি) সহযোগী সদস্যে পরিণত হয়। পরবর্তীতে রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করে। আর বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পায় ১৯৯৯ সালে। সেই থেকে আস্তে আস্তে মানুষের মনে ক্রিকেট ক্রিকেট সুর বাজতে থাকে। যা আজ অনেক মানুষের মনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ক্রিকেট। যা আমাদের জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃত। আবার অনেক জুয়াড়িগণ ক্রিকেটকে জুয়া হিসেবেও পুঁজি করে নিয়েছে।

ক্রিকেট জুয়া:
বর্তমানে দেশের জাতীয় খেলা ক্রিকেট খেলার সাথে যোগ হয়েছে একধরণের গুপ্ত জুয়া। কোনও টিভি চ্যানেলে এই খেলা চলাকালীন সময়ে এই গুপ্ত জুয়াকে বলা হয় বাজি। এটা কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জেতার বাজি নয়! এটা খেলা চলাকালীন সময়ে হাতে হাতে টাকার বাজি।

ক্রিকেট খেলোয়াড়রা যখন প্রাণপণ চেষ্টা করে অন্য দলকে হারিয়ে দেশের সুনাম অর্জন করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তাঁদের খেলা দেখে অনেকেই হেরে যাচ্ছি মরণঘাতী জুয়ার কাছে। কি ছেলে, কি বুড়ো, কি জোয়ান বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ মানুষেই এই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এমনও দেখা যায়, যারা জীবনে বাহান্ন কার্ডের তেপ্পান্ন খেলা নামে পরিচিত তাসখেলা জানে না বা কোনও দিন খেলেওনি, তাঁরাও আজ এই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পরেছে। বর্তমানে ধনী- গরিব থেকে শুরু করে অনেকেই গুপ্ত জুয়ায় সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই ক্ষণিকের জন্য কিছু-না-কিছু পাচ্ছে।

জুয়া নিয়ে লোকমুখে শোনা কথা:
এমনও দেখা যায় আর শোনা যায়, “লোকটি ব্যাটে বলে শেষ হয়ে গেল!”
যদি জানতে চাই, “তা কীভাবে?”
উত্তর আসে, “আরে মিয়া ক্রিকেটে শেষ করে দিচ্ছে! খেলা শুরুর আগে তো যেকোনো এক দলের পক্ষ নিয়ে বাজি ধরছেই, খেলা শুরু হলে বলার বল করার সময়ও বাজি ধরে! ব্যাটসম্যান ব্যাট করলে চার হবে, না- কি ছয় হবে? এই নিয়েও ধরে বাজি! এভাবেই অগণিত মানুষ ক্রিকেট জুয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।” এসব বলেন প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই।

পাড়া-মহল্লায় জুয়া:
অনেক পাড়া-মহল্লায়, হাট-বাজারে, অনেক দোকান দেখা যায়। দোকানে কোনও মালামাল নেই! দোকানে শুধু একটি কালার টেলিভিশন থাকে। সামনে থাকে লোক দেখানো চা বানানোর কেতলি। দোকানের ভেতরে বাইরে থাকে জুয়াড়িদের আড্ডার সাথে গোপনে চলতে থাকে জুয়ার আসর। এসব জুয়াড়িদের মধ্যে থাকে মহল্লার উঠতি বয়সের ছেলেপেলে, আর দোকানদার ও ব্যবসায়ী।বাজি ধরার টাকা কখন যে লেনদেন হয়ে যায়, তা জুয়াড়িরা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। তা কেবল জুয়াড়িরাই বলতে পারে। একদিকে চলছে খেলা, অন্যদিকে চলছে মুড়ি- চানাচুর সহ মাংস পোলাও- এর আয়োজন। খেলা শেষে বাজি বা জুয়ার টাকা টাকা থেকে দোকানদাদের কমিশন বুঝিয়ে দিয়ে মুহূর্তেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়! জুয়ার টাকা কখন যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়, তা কেউ বোঝতেও পারে না। কোথাও কোথাও বাজির টাকা জমা রাখার জন্য একজন বিশ্বস্ত লোকও রাখা হয়। যাকে বলে জমাদার। জমাদারের কমিশনও থাকে আলাদাভাবে। তা হলো, যারা জিতবে জমাদারের কমিশন বাবদ তাদেরকে শতকরা ৩০-৪০% হিসেবে দিতে হবে।

রিকশার ড্রাইভারদের জুয়া:
জানামতে বর্তমানে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মেইন সিটিতেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে পারে না। আবার কোনও কোনও শহরে চলাচল করেও। বর্তমানে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার ড্রাইভাররা প্রতিদিন কম করে হলেও ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করে থাকে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজার এই ৬-৭ শ টাকা রোজগার করতে তাঁদের শরীর থেকে একটু ঘামও ঝরে না। কারণ, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে দৈহিক কোনও খাটুনি নেই! হাতে চাপ দিলেই শোঁ শোঁ করে রিকশ চলতে থাকে। তা ছাড়া বর্তমানে রিকশায় চলাচলকারীরা রিকশাওয়ালাদের ন্যায্য পাওনা থেকেও একটুও কম দেয় না, বরং দুএক টাকা বেশিই দিয়ে থাকে। তাই ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বর্তমান সময়ের একজন সরকারি কর্মচারীর সমতুল্য বেতনের টাকাই রোজগার করতে পারছে। অনেক রিকশার ড্রাইভার টাকার গরম সহ্য করতে না পেরে ক্রিকেট জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পরছে। কেউ কেউ অতি কষ্টের কেনা নিজের রিকশা বিক্রি করেও ক্রিকেট জুয়া খেলে থাকে। পরবর্তীতে সংসারে বেঁধে যায় হট্টগোল!

রিকশার ড্রাইভাররা সারাদিন রিকশা চালায় নিজ এলাকায়। নিজ এলাকায় কোথায় এবং কোনখানে জুয়ার আসর বসে, তা যিনি জুয়া খেলে তিনি ঠিকই জানে। ওরা দিনের বেলা রিকশা চালিয়ে সময়মত আসন্ন ক্রিকেট খেলার পক্ষ নিয়ে বাজির টাকা জমাদারের কাছে জমা দিয়ে দেয়। জমাদার টাকা বুঝিয়ে পেয়ে খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করে রাখে। কোন সময় খেলা শুরু হবে, তাও ওদের মুখস্থ থাকে। প্যাসেঞ্জার বহন করার ফাঁকে-ফাঁকে ক্রিকেটের খবরও সংগ্রহ করে। খেলা শেষ হয়ে গেলে যার যার টাকা জমাদারের কাছ থেকে বুঝিয়ে নিচ্ছে। যারা জিতছে তাঁদের ভাদ্রমাস, যারা হেরে যাচ্ছে তাঁদের হয় সর্বনাশ!

সাধারণের জুয়া:
বর্ত্তমানে দেশের প্রতিটি হাট-বাজারে, মার্কেটের প্রতিটি দোকানে থাকে কালার টেলিভিশন। আবার জায়গায় জায়গায় থাকে বড়বড় টেলিভিশনের শো-রুম। শো-রুমে বড় পর্দার টেলিভিশনে চলতে থাকে ক্রিকেট খেলা। সানমে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে দর্শকবৃন্দ। এরা সবাই খেলা প্রিয় দর্শকবৃন্দ নয়! বেশিরভাগ দর্শকই জুয়াড়িবৃন্দ। এরা একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়াবে। ওদের কথা একমাত্র ওরাই বুঝবে। পাশে থাকা অন্য দর্শক জুয়াড়িদের কথা, ভাব, ভঙ্গি কিছুই বুঝবে না। চলছে বাজি ধরাধরি গুপ্ত জুয়া। এঁদের কোনও জমাদার ব্যক্তি নেই। কাউকে কোনও কমিশন দিতে হয় না।

ঘরে ঘরে জুয়া:
বলবেন, এ আবার কেমন জুয়া? এটা একপ্রকার ঘরোয়া জুয়া। যা নিজের আত্মীয়স্বজনদের মাঝেই হয়ে থাকে। যেমন– বড়ভাই বাজি ধরে ছোট ভাইয়ের সাথে। সাক্ষী থাকে আপন মা অথবা বড়বোন। নাহয় সংসারের একজন ঘনিষ্ঠ মুরুব্বি। খেলা শেষ হলে বাজি বা জুয়ার টাকা বিজয়ী ব্যক্তি বুঝে নিচ্ছে। আবার দুলাভাই বাজি ধরে শালার সাথে, নাহয় স্ত্রীর বড়ভাইয়ের সাথে। যিনি জিতবে তিনি হিরো। সময়সময় মহিলাও এই জুয়ায় শরিক হয়ে থাকে।

টোকাইদের জুয়া:
বর্তমানে চলছে টোকাইদের রমরমা ব্যবসা। তাঁদের এখন বিনা পুঁজিতে অনেক ব্যবসা। কাঁধে একটা ছেঁড়া-ফাঁড়া প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখে কেউ ঘৃণা করলেও, ওদের কিছু যায় আসে না। কারণ, ওদের ধান্ধায় ওরা থাকে। সময়সময় শহরের রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনের গভীরেও ওরা ডুব দিয়ে লোহালক্কড় উঠিয়ে নেয়। সেই লোহার অনেক মূল্য! সাথে থাকে আরও অনেকরকমের টোকানো সামগ্রী। এগুলো আড়তদারের কাছে বিক্রি করে একে অপরের সাথে ধরে বাজি। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার পাশে দোকানে থাকা টেলিভিশনের সামনেই ওরা বসা থাকবে। খেলা শেষে যার যার পাওনা গোপনে বুঝে নিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

এটিই হচ্ছে একমাত্র ক্রিকেট খেলার খবরাখবর জানার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

মোবাইল অ্যাপলিকেশনে জুয়া:
বর্তমানে হাতে হাতে এন্ড্রোয়েড মোবাইল। মোবাইলে থাকে ইন্টারনেট সংযোগ। কোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জানা যায় ক্রিকেটের নগদ ফলাফল, তা কেবল জুয়াড়িরাই জানে।। তাঁরা জুয়াড়িরা নিজের মোবাইলে ক্রিকেট খেলার অ্যাপলিকেশন বা অ্যাপস ডাউনলোডের পর ইনস্টল করে রাখে। হাঁটা-চলার মাঝেই খানকি পরপর মোবাইল অন করে খেলার খবর দেখছে। বুঝে নিচ্ছে আজকের ধরা বাজি হারবে না জিতবে!

অনলাইনে জুয়া:
বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারীর হাতে থাকে সারাবিশ্ব। এই এন্ড্রোয়েড মোবাইল এখন একজন টোকাইর হাতেও থাকে। যারা ক্রিকেট জুয়াড়ি, তাঁরা জানে কোন সাইটে থাকে ক্রিকেটের খবরাখবর। তাঁরা তাঁদের মোবাইলে সেই সাইটগুলো বুকমার্ক করে রাখে। এসব সাইটের মধ্যে সহজ সাইট পাওয়া যায় মোবাইল এ্যাপ অপেরা মিনিতে। সারাদিনের জন্য ২০ টাকার মেগাবাইট নামের ইন্টারনেট কিনে শুধু খেলার খবরই দেখে। ওরা জুয়াড়িরা মুহূর্তের মধ্যেই বলে দিতে পারছে কোন ম্যাচ কোন দেশে চলছে। আর কোন দলের খেলা কোন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে। সেভাবেই জুয়াড়িরা দক্ষ দেখে পক্ষ নিয়ে ধরছে বাজি! কেউ জিতছে, কেউ হারছে।

কথায় কথায় জুয়া:
চা-দোকানে বসে খেলা দেখার মাঝে কথায় কথায় চলছে বাজি! অনেকের জানতে ইচ্ছে হবে, এ আবার কেমন বাজি? তা হলো, বলার বল করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই একে অপরকে বলছে, “বাজি লাগা, চার হইবো না ছয় হইবো? কেউ চারের পক্ষে, কেউ ছয়ের পক্ষ নিয়ে ধরে বাজি। ছয়, চার কিছুই যদি না হয়, তো হয়ে যায় ড্র! তারপর থাকে পরবর্তী বলের অপেক্ষায়। এভাবেই চলে কথায় কথায় জুয়া।

পরিশেষে:
অনেক মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে ধারনা করা যায়, এভাবে চলতে থাকলে দেশের সব শ্রেণির মানুষই দিন দিন এই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়বে। এই জুয়ার কারণে বাংলাদেশের পুরো সমাজেই অপরাধ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছে অনেকেই। অনেকের ধারণা এতে করে বাড়বে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধও। জুয়ার প্রতিরোধে এখনই দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া গেলে ছাত্র-যুবকরা তো বটেই, কিশোররা পর্যন্ত এই জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়বে বলে মত দিয়েছে অনেকে।

অনেকে মনে করে, সরকারের উচিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রতিদিনের ক্রিকেট খেলা দেখানো বন্ধ করে দেওয়া সহ জুয়ার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠা। আর বিটিআরসির মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি পুলিশ ও গোয়েন্দাসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে এবিষয়ে সজাগ রাখা উচিৎ। একই সাথে সম্ভব হলে বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৎপর সকল জুয়াড়িকেও আইনের আওতায় আনা। আমরা দেশের জনগণ চাই, ক্রিকেট শুধু বিনোদনমূলক ক্রীড়া হিসেবেই এগিয়ে যাক! জনপ্রিয় হয়ে উঠুক! এর সঙ্গে যেন কোনোক্রমেই জুয়ার মতো অপরাধ যেন যুক্ত হতে না পারে।  স্বাধীন মুক্তভাব নিয়ে দেশ-বিদেশ জয় করতে থাকবে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের দামাল ছেলেরা। এটাই হোক আমাদের সকলের কামনা।