ট্যাগ আর্কাইভঃ দাউদের কাব্য

অনন্তের বিলাপ

ধড়পড় তো স্পন্দন নয়- দুর্মর সাগর
কস্তূরীর পাঁজরে মৃত্যুমদ আর্তনাদ,
গুমরে কাঁদা ইন্দ্রিয় স্রোত- রুদ্ধ গহ্বর
তর্জনে গর্জনে ভাঙ্গে ঘুমের আস্তরণ ;
অনন্তের বিলাপ
বাউলা মন ঘুরে অতন্দ্র পথে- প্রান্তর
অবিরাম হেঁটেছে শ্রমণ…

বন্ধু তোরা ভাল থাকিস

বন্ধু তোরা ভাল থাকিস

আমার সাথে তোরা আর দাঁড়াতে পারিস না এক কাতারে
একদম পারিস না!
অপরাগ হয়ে যদি কখনো বাধ্যগত দাঁড়িয়েও যাস-
আমি বুঝি, তোদের ভেতরে তখন খুব উসখুস করে!
অস্থির হয়ে যাস- কতক্ষণে কেটে পড়বি, সরে যাবি দূরে…

এখন তোরা বেশ অভ্যস্ত মাপ-ঝোপের জীবনে
সিঁড়ির উচ্চতা, গাড়ী, বাড়ি কত কি-
যোগ্যতার হিসেব মেনে চলতে হয় তোদের; দিনে দিনে
সূক্ষ্ম হয়েছে বন্ধুতার বাচ-বিচার!

জানিস?
এই সুবিশাল দূরত্বে যে টুকু দীর্ঘশ্বাস জমে থাকে
আমি তার সবটুকু বুকে ধারণ করে সুগম করে দিই তোদের অহংকারের পথ।
যদিও আমার সেই নির্বাক ভালোবাসা তেমন কোন গুরুত্ব বহন করেনা,
তবুও আমি তো জানি বন্ধুত্ব কা-কে বলে!

তোরা একেক জন পৌঁছে গেছিস আকাশ ছোঁয়া গিরিশৃঙ্গের শিখরে
আমি এতেই তৃপ্ত
তাই, তোদের যখন দেখতে ইচ্ছে করে আমি নিশ্চিন্তে আকাশের দিকে তাকাই
মেঘপুঞ্জের কানে কানে ফিসফিস করে সুধীয়ে নিই তোদের হালচাল,
পাখিদের কলতানে কান পেতে শুনে নিই তোদের না বলা গল্প; সাঁওতাল কবির মত
ঝর্ণা আর নদীর সঙ্গে ইতিমধ্যে আমার বেশ ভাব জমেছে-
জানিস? আমার আর ঝর্ণার মধ্যে খুব একটা তফাত নাই
আমিও ঝরি সেও ঝরে; আসলে দুজনেই কেঁদে মরি অহোরাত- নিরবধি…

আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে লাজুক ছেলেটা এখন সবার চেয়ে অধিক ধনী,
আমি যে টুকু জানি-
খুব বেশী ভালো আছে সে- যে ছিলো আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হাড় কিপটে;
হাহাহা হাহাহা
দিনের পর দিন প্রেমিক হয়ে ঘুরতো যে বন্ধু টা
প্রেমের বারোটা বাজিয়ে এখন দিব্যি মজে আছে সংসারে, অথচ দুঃখে আছে সেই মেয়েটা।
বাপ দাদার রমরমা ব্যবসা আর বিত্ত বৈভবের অভাব ছিলোনা যার
এখন নাকি সে-ও ছড়াচ্ছে জৌলুস, কাঁড়ি কাঁড়ি কামাচ্ছে ডলার।

যে বন্ধুটি মেয়ে পটানোয় ছিলো ওস্তাদ- অবাক হই!
এখন সে বৌ ছাড়া কারো দিকে চোখ তুলে তাকায় না আর।
সারা পৃথিবী জানতো, পাখির দলের মত এক ঝাঁক বন্ধু- মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে উড়তাম
মুহূর্তের জন্য কেউ একজন দৃষ্টির অগোচর হলে- মরিয়া হয়ে খুঁজতাম,
একজনের ঘাম ঝরলে, ঝরতে উদ্যত হতো অন্য সবার রক্ত; কি ঝড়- কি ঝঞ্ঝাট
সন্ধ্যা টা ঠিকই কাটাতাম একসঙ্গে ফেরিয়ে শত বাঁধা- বিভ্রাট।

এখন ব্যস্ত সবাই সবার মত,
ধনে দৌলতে – শাণে শওকতে আমি বিনে প্রায় সবাই হয়েছে মস্ত,
এক আমিই কেবল হামাগুড়ি দিচ্ছি দৈন্যগ্রস্থ অভাবের সংসারে
দু চার লাইন কবিতা আর মিথ্যে সান্ত্বনা পুঁজি করে কাটাচ্ছি আস্ত-জীবন;
লড়তে লড়তে হাঁপিয়ে উঠা ঊর্ধ্ব শ্বাস!
যন্ত্রণায় –ব্যঞ্জনায় আরক্ত চোখ উদাস হয়ে প্রতিদিন ঘুরে আসে বিস্মৃতির অতীত,
তোরা বিশ্বাস করিস বা নাই করিস; গভীর রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে –
একটি পরিব্রাজক আত্মা সোঁদা কণ্ঠে শুনিয়ে যায় আমারই কবিতার আবৃত্তি।

জানিস-?
রোজ সকালে উষালি দিগন্তের পাণে চেয়ে বলি- বন্ধু তোরা ভাল থাকিস!

_________________
দা উ দু ল ই স লা ম
২৯ জুন’১৭