ট্যাগ আর্কাইভঃ না_রম্য_না_রমনীয়

ফেসবুক সুখ-দুখ

আর সকলের মতই আমার বন্ধু-বান্ধব আছে। তাহাদের সাথে আড্ডা দিয়া, গল্পে গানে মাতিয়া উঠিয়া বেশ যাইতেছিল। হঠাৎ আমাকে ফেসবুকে পাইল। আমার আর আগের মত আড্ডা গল্প গানে মাতিয়া থাকিতে ভাল লাগে না। সারাক্ষণ ফেসবুকেই মজিয়া থাকি। বাইরের দুনিয়ার চেয়ে ফেসবুকে ঘুরিঘুরিই আমার নেশা হইয়া গেল। আগে ছেলেরা উলটা পালটা মোবাইল নম্বর টিপিয়া বান্ধবী পাতাইয়া প্রেম করিবার চেষ্টা করিত। রাত জাগিয়া আন্দা-গোন্দা নাম্বার টিপাটিপি করা ছেলেদের প্রধান নেশা ছিল। এখন আর সেই ঝামেলা নাই। ফেসবুকে মেয়ের অভাব নাই। তাহাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাইয়া চ্যাট করিয়া আমার ভালই যায়। মাঝে মাঝে দুই একটা মেয়ে রূপী ছেলের পাল্লায় পড়িয়া, শেষ-মেস তাহাদিগকে হিজড়া বলিয়া গালি দিয়া ব্লক মারিয়াছি।

মামুন ঠিক উলটা। ফেসবুক সে দুই চোখে দেখিতে পারে না। ফেসবুক ইউজ করিয়া ছেলেমেয়েরা যে উচ্ছন্নে যাইতেছে তার প্রধান নমুনা হিসেবে সে আমাকেই সাব্যস্ত করিত। এই জাতির অন্ধকার ভবিষ্যৎ নিয়া সে হর হামেশাই অতিশয় উদ্বিগ্ন থাকিত। আর জাতির অগ্রগতির পথে যে সমস্ত বাধা আছে তাহার মধ্যে প্রধানতম হইল এই ফেসবুক। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা না শিখিয়া ফেসবুকিং করিতেছে। সারারাত চ্যাট করিয়া সকালে ক্লাসে ঝিমাইতেছে। ভবিষ্যতের জন্য যে একটা নিতান্ত বন্ধ্যা প্রজন্ম আসিয়া উপস্থিত হইতেছে এই দুশ্চিন্তায় তার ঘুম আসিত না। ইদানিং বন্ধুবান্ধব ত্যাগ করিয়াছি। তাহাকে এখনো ত্যাগ করি নাই। সবাইকে তো আর ত্যাগ করা যায় না। কিন্তু তার অত্যাচার আর উপদ্রব দিন দিন বাড়িয়াই চলিতেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার ফেসবুকের পিছনে লাগিয়া থাকাকে সে নিজের মহান কর্তব্য করিয়া নিয়াছে। সকাল নাই, সন্ধ্যা নাই সারাক্ষণ আমার সাথে তর্ক জুড়িয়া দিতে পারিলেই সে বাঁচিয়া যায়। সারাক্ষণ ফেসবুকের বিরুদ্ধে লাগিয়া থাকিয়া হাতের কাছে আমাকে পাইয়া সে আমাকেই ফেসবুক মনে করিয়া আমার গুষ্ঠি উদ্ধার করিতেছে। আমি সারাক্ষণ নতুন বান্ধবী, নতুন গ্রুপ, নতুন পেজ এই সব লইয়া মজিয়া থাকি। সুতরাং তার সাথে অকারণ তর্ক করিয়া বাজে সময় খরচ করিবার মত, অত সময় আমার নাই। তাহাতে সে দমিয়া যাইবার পাত্র ছিল না। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে সে, কেন আমার ফেসবুকিং করা উচিত নহে, এই বিষয়ে বক্তৃতা দিতে শুরু করিত। অন্য কেউ হইলে হাতাহাতি হইয়া, বন্ধুত্বের ইতি ঘটিত। কিন্তু মামুনের বেলায় আমি বরাবরই ছাড় দিয়া আসিয়াছি। মামুনকে কেন এত পছন্দ করি সে কথা আমিও ঠিকভাবে বুঝিতে পারি না।

দিনের পর দিন এই ভাবে আমাকে উৎপাত করিয়া সে ক্ষান্ত হইল না। একদিন সে ঘোষনা করিল সে দেশ জাতির কল্যাণ কামনায় ফেসবুকে জয়েন করিবে। আমি বেশ তাজ্জব হওয়ার ভান করিলেও, মনে মনে বেশ খুশি হইলাম, তাহার এতদিনের লম্বা লম্বা কথার বেশ একটা যুতসই জবাব দিতে পারিব বলিয়া। বলিলাম দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাত হইতে দেখিয়াছি। কিন্তু ফেসবুকে একাউন্ট খোলা বোধ হয় এই প্রথম। এই দিক হইতে তুই বেশ একটা রেকর্ড করিলি। আমার উপহাস কে পাত্তা না দিয়া সে বলিল ফেসবুকের বিরুদ্ধে জাতিকে উদবুদ্ধ করিতেই সে ফেসবুকে জয়েন করিবে। আমার মত রংবাজি করিবার জন্য নহে। ফেসবুকে সে ফেসবুকের বিরুদ্ধেই প্রচারণা চালাইবে। জাতিকে সে বুঝাইবে কেন আমাদের ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত নহে। আমি মামুন কে চিনিতাম সুতরাং আগাগোড়াই বিশ্বাস করিলাম।

সত্যি সত্যি সে ফেসবুকে একাউন্ট খুলিল। দেশ জাতি রাষ্ট্র নিয়া লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিতে লাগিল। তর তর করিয়া তাহার ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল। এখন সে আর আমার পিছনে লাগে না সারাক্ষণ ফেসবুকেই পড়িয়া থাকে। আমি হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলাম। মাঝে মাঝে তার এই রকম ফেসবুকিং দেখিয়া মুখ টিপিয়া হাসিতাম। এই ভাবে আমাদের মামুন ফেসবুকে বেশ একটা সেলেব্রেটি তে রূপান্তরিত হইল। একদিন আমি বলিলাম ফেসবুকিং কেমন লাগিতেছে। আমার কথায় উত্তেজিত হইয়া সে বলিল তুমি ভাবিয়াছ তোমার মত উচ্ছন্নে যাওয়ার জন্যই আমি ফেসবুকিং করিতেছি। আমি মিশন লইয়া ফেসবুকে আসিয়াছি। এখন সময় হইয়াছে আমি আমার ফ্রেন্ড ও ফলোয়ারদের লইয়া ফেসবুক বিরোধি আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া পড়িব। আমি কৌতুক বোধ করিলাম। বলিলাম, তোমরা কি ফেসবুকের বিরুদ্ধে হরতাল, অবরোধের মত কর্মসূচী দিব। সে জানাইল, তাদের এই কর্মসুচী পুরোপুরি অহিংস। আমি বলিলাম, সাধু!

আমি আমার মতই চলিতে ছিলাম। আমার ফেসবুকে পরিচিতের চেয়ে অপরিচিতের সংখ্যাই বেশি ছিল। বলাবাহুল্য তাহাতে ছেলে অপেক্ষা মেয়ের সংখ্যা অধিক। জগতে আমার মতই অনেক মেয়ে রাত্রি জাগিয়া ফেসবুক লইয়া পড়িয়া না থাকিলে আমার পক্ষে দুনিয়ার জগত সংসার বাদ দিয়া ফেসবুকে ঘরসংসার পাতিয়া বসা নিতান্ত অবিবেচক এর কাজ বলিয়া মনে হইত। একাধিক মেয়ের সাথে আমার ঘনিষ্টতা রহিয়াছে। তাহাদের সাথে চ্যাট করিতে গিয়া আমার টাইপিং স্পিড নীলক্ষেতের টাইপিষ্টদের হারাইয়া দিবার সক্ষমতা অর্জন করিয়াছে। বিদ্যুৎগতিতে আমাদের যে আলাপ চলে তাহা সভ্য সমাজে স্বীকার করা আমার মত অর্বাচীনের পক্ষেও অসম্ভব ছিল। চোখের নীচে কালি করিয়া রাত জাগিয়া আমি যে রসাস্বাদন করিতেছিলাম তাহা আমার একলার আর আমার অপরিচিত বান্ধবীদের নিজস্ব। ফেসবুকের নির্জনতা আমাদের আলাপকে অল্পদিনেই এমন এক স্থানে উপনীত করিল যেখানে কোন রাখঢাক সভ্যতা সুশীলতাকে বাহুল্য বোধ হইতে লাগিল। ক্লাসে সুশীলা মেয়েদের দেখিলেই আমার মনে হইত এইরকম ভদ্রতার লেবাস পরিয়া রাতের বেলা তোমরা কি কর তাহা আমার ভালই জানা আছে। ভাগ্যিস মামুন আমার এই রূপটি জানে না। জানিলে তাহার মত শুচিগ্রস্তলোক আমার ছায়া মাড়াইত কিনা সন্দেহ। আর আজকাল অবশ্য আমার সম্পর্কে ভাবিবার সময় তাহার নাই। সে সত্যি সত্যি ফেসবুকে তোলপাড় শুরু করিয়া দিয়াছে। ফেসবুক যে জাতিকে ধ্বংস করিতেছে ইহা অকুণ্ঠে বলিতে লাগিল। আমাদের যে ফেসবুকের ভার্চুয়াল জগত ফেলিয়া বাস্তবে ফিরিয়া আসা উচিত আর দেশ জাতি ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা উচিত এই মন্ত্র সে মুহুর্মুহু জপিতে লাগিল। তাহার ফলোয়ার বন্ধুরা দুইভাগে বিভক্ত হইয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিল। কেহ বলিল বাঙালি টেকনোলজি ইউজ করিতে জানে না। তা দ্বারা এ জাতি নিজেদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করিয়া থাকে। আজকাল এমন হইয়াছে ছেলেরা পথে ঘাটে, ইস্কুল কলেজে ক্লাসে, বাথ্রুমে, অফিসে, আদালতে এমনকি মসজিদেও তাহারা ফেসবুক লইয়া পড়িয়া থাকে। ভার্চুয়াল জগতে পড়িয়া থাকিয়া তাহারা বাস্তবতা বিবর্জিত কাণ্ডজ্ঞানহীন দায়িত্বশূণ্য মাকালে রূপান্তরিত হইবে। কিভাবে ইহাদেরকে রক্ষা করা যায় এই নিয়েও ব্যাপক তর্ক বিতর্ক হইল। কেহ বলিল সকলের একযোগে ফেসবুক বন্ধ করিয়া দেওয়া উচিত কেহ বলিল তাহা একেবারেই ভাল হয় না, বরং সীমিত আকারে ব্যবহার করা উচিত, আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শও অনেকে দিল। তথ্য মন্ত্রনালয়ে স্মারকলিপি, মানববন্ধন , অনশন সকল রকমের প্রস্তাবই আসিল। রিরুদ্ধমতও জোরালো। তাহারা ইহাদের কে প্রাচীন জরাগ্রস্থ অন্ধকারের পেঁচা বলিয়া গালি দিল। কেহ কেহ কাণ্ডজ্ঞানহীন মূর্খ বলিতেও দ্বিধা করিল না। যুগের সাথে তাল মিলাইয়া না চলিলে যে কিরকম পিছাইয়া থাকিতে হয় সে বিষয়েও বিস্তর আলোচনা হইল। দেশ জাতির কথা উঠিলে মিশরের তাহরির স্কয়ারের দৃষ্টান্ত উত্থাপন করিয়া একেবারে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার চেষ্টা চলিল।

কিন্তু হঠাৎ যেন একটা ছন্দপতন লক্ষ করিলাম। মামুন কে ফেসবুকে পাওয়া যায় না। রুমে তাহাকে পাইনা। আমি কথা কম বলিলেও সে কম বলিয়া থাকিতে পারে না। অনর্গল না বকিলে তাহার ভাত হজম হইতে আমি কখনো দেখি নাই। তাহার ভক্তরা নিজেরা বাদানুবাদ করিতেছে কিন্তু তাহাকে আগের মত সরব দেখিতেছি না। সুতরাং সে আবার কি নিয়া পড়িল সেটা লইয়া আমি কিঞ্চিত চিন্তিত হইলাম।

সেইদিন বিকেলবেলা কাঁটাবন মোড়ে একটি রেস্তোঁরার দোতলায় বসিয়া খাবারের অর্ডার দিব এমন সময় কোনার টেবিলে চোখ আটকিয়া গেল। মামুন অপরিচিত এক মেয়েকে নিয়া বসিয়া আছে। আমাকে দেখিয়াছে কিনা বুঝি নাই। আমি আমার খাওয়া শেষ করিয়া আমার বিলটি হাতে লইয়া তাহাদের টেবিলের পাশে গিয়ে বলিলাম, স্যার বিল টা———। আমার দিকে তাকাইয়া মামুন হাসিল। বুঝিলাম সে আমাকে আগেই দেখিয়াছে।

বেশি পীড়াপিরি করিতে হইল না। সে ঝাড়িয় কাশিল। ঝাড়িয়া কাশিলে যাহা বুঝিলাম তাহা হইল এই ফেসবুক বিরোধী আন্দোলনে সে যখন ফেসবুকেই ঝড় তুলিতেছিল, তখন এই নিরতিশয় সুন্দরি তাহার বিরুদ্ধে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছিলেন। তবে আর সকলের মত তিনি প্রকাশ্যে কমেন্ট করিতেন না, তাহার কঠিন কঠিন সব যুক্তি মামুনের ইনবক্সে আসিয়া জমা হইত। অবশেষে ফেসবুক ফেসবুকের জায়গায় রহিল আর তাহারা দুইজন এই রেস্তোরাঁতে আসিয়া এক হইল।

মনে মনে ভাবিলাম সারাবছর ফেসবুকিং করিয়া একটা মেয়ের নাম্বার বাহির করিতে পারিলাম না, আর সে কিনা পুরো মেয়েটাকেই বাহির করিয়া আনিল। সেই দিনই ফেসবুক একাউন্টটা ডিএ্যাক্টিভেট করিয়া দিলাম।
-০-
[প্রিয় ব্লগার, অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ পেন্সিল পাবলিকেশনস থেকে আসছে আমার গল্পগ্রন্থ ‘প্রত্যুষের গল্প‘।

এক বোকা বাবার গল্প শোন

খুব তাড়াহুড়া করে বাসায় ফেরে রাশিদুল। দরজায় খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জারা। দুহাতে বাবাকে জড়িয়ে বুকে মাথা গেঁথে দেয়। মা এসে জিজ্ঞেস করে এত দেরী করেছ কেন? মেয়ে দুহাতে বাবার বুকে থাপ্পড় দিতে থাকে। বাবার চশমা ধরে টানাটানি করে। মেয়েকে নিয়ে রাশিদুল ফ্যানের নিচে বসে। বাসের ভীড়ের ধাক্কাধাক্কিতে গা ঘেমে নেয়ে একাকার। শুধু ঘামাঘামি হলে হত, তুমি দাঁড়িয়ে আছ শতেক ধাক্কা সহ্য কর। শতেক জন এসে পা মাড়িয়ে দিয়ে যাবে। কিছু বলাও যাবে না। কেউ কেউ বলে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। মাঝে মাঝে হাতাহাতিও হয়। আসলে কারোই দোষ নাই। সবার মেজাজ খারাপ থাকে। লেগে যায়। কন্ডাক্টর এসে বারবার ভাড়া চেয়ে বিরক্ত করে। আর বসে থাকলে দেখা যাবে আরেকজনের পশ্চাদ্দেশ তোমার মুখের উপর কিংবা তার দুই রানের মাঝামাঝি পয়েন্টটা তোমার গায়ে এমনভাবে সেট করে রেখেছে তোমার বমি পাচ্ছে কিন্তু তোমার কিছু করার নাই। ঐ লোকটারও দোষ নাই। তার পিছনে এমন ঠাসাঠাসি অবস্থা তার নিজের জান ত্রাহি ত্রাহি করছে। সারাদিনের অফিসের শেষে এই সমস্ত ধাক্কাধাক্কি ঘষাঘষি পার করে বাসায় এলে মেয়েটা যখন নাকের ফুটোয় দুই আঙুল ঢুকিয়ে দেয় কিংবা চুল ধরে টানা করে তখন রাশিদুলের আর কিছু মনে থাকে না। মেয়ের এখনো কথা ফোটেনি। বায়না ধরতে পারে না। রাগ করতে পারে না। অভিমান করে না। একটু উঁ আঁ আর নাচানাচিতেই রাশিদুলের মনে হয় কত সুখের জীবন। মেয়ের মা চা এনে দেয়। মেয়েকে সাবধানে ধরে চায়ে চুমুক দেয়। উড়ুৎ উড়ুৎ করে চা খায়। এই নিয়ে জারার মা কত হাসাহাসি করে, তবু এই অভ্যাস যায় না তার। কিন্তু আজকে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, রাশিদুলের খেয়াল থাকে না। উড়ুৎ উড়ুৎ করার দরকার পড়ে না। মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে, আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। বউ রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করে ‘কি হইছে তোমার? শরীর খারাপ?’

না শরীর খারাপ না। শরীর তার খারাপ করে না। কিন্তু আজকে জারাকে দেখলেই তার –, তার কি—-? কি, সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে না। কিছু একটা করা দরকার? কি করবে? তার কি করার আছে। এই শহরে দেড় কোটি মানুষের ভীড়ে সে কি? খড়কুটা; একটা ধূলিকণা মাত্র। জারা এখন বাবার গায়ে হিসু করে দিয়েছে। জারার হিসুতে ধূলিকণা ধুয়ে যায় না। জমাট বাঁধে। জারার হিসু পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না। বউ এসে জারাকে নিয়ে যায়। কিন্তু জারা রাশিদুলের মনের ভেতর বেড়ে উঠে বড় হয়ে যায়। জারার চারিদিকে কিলবিল করে ভাইরাস। দৈত্যের মত সে ভাইরাস শুঁড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে এগিয়ে আসে। অসহায় জারা আর্ত চিৎকার করে।বাবা! বাবা!! আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসে চিৎকারে। মেয়ের চিৎকারে রাশিদুল কি করে? রাশিদুলের হাতে কোন ভ্যাকসিন নাই। রাশিদুল হাতড়ায়, খালি হাতড়ায়, ভ্যাকসিনের খোঁজে। ভ্যাকসিন পায় না। পায় মোবাইল। মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। মেসেজ দেয় সবাইকে যে আছে যেখানে। সবাইকে সে রিকোয়েস্ট করে,

আগামি শুক্রবার (০৪/০৫/২০১৭) সকাল ৯ টা থেকে ৯.৩০ পর্যন্ত আমি একজন নাগরিক ও একজন পিতা হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাড়াতে চাই, হযরত আলি আর আয়শার হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে , যারা হযরত আলি আর আয়শা হত্যার বিচার চান আশা করি আপনাদের ও সাথে পাব”।

শুক্রবার সকালে, কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না।
শুধু রাশিদুল একা দাঁড়িয়ে থাকে, একা। হাতে তার মত একা একটা প্ল্যাকার্ড, বিষণ্ণ ও বিপ্লবী।

সহীহ আধুনিক রোজার সহজ তরিকা

রোজার ইতিহাস গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে মওলানা সাহেবদের দিনরাত সবক শুনতে শুনতে যারা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন অথবা বিরক্ত হওয়ার মত শোনার সময় যাদের নাই তাদের জন্য আমার সাড়া এই কিছু তরিকা আছে যাতে করে আপনি আধুনিক কায়দায় সহি রোজা রাখতে পারবেন।

সেহরির কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে উঠবেন। উঠেই ফেসবকে লগইন করুন। সেহরি বিষয়ক স্ট্যাটাস দিন। বিশেষ কোন বান্ধবী/ বান্ধব যদি থাকে তাকে জাগিয়ে দিন। জাগিয়ে দিয়ে ঘন্টা খানেক কথা বলুন। রোজা রেখে খালি পেটে দিনের বেলা কথা বলে আরাম নেই। তাই এই সময়টি কাজে লাগান। ফজরের আগে রোজা শুরু হয় না। সুতরাং এই সময় মনের দুয়ার, মুখের লাগাম সব খুলে কথা বলুন। সব থেকে ভাল হয় সারারাত না ঘুমালে। রাতের খাবার খেয়ি ফোনালাপ শুরু করুন। নতুন নতুন বান্ধবী খুঁজে বের করুন। তাদের ইফতারির দাওয়াত দিন। সেহরির দাওয়াতও দিতে পারেন। আধুনিক রোজা সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ সেহরি পার্টি। তাই সেহরি পার্টী আয়োজনে ভুলবেন না। ঘুমিয়ে পড়লে পার্টি মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই রাতে ফেসবুক, সিনেমা, পার্টি এসবে ব্যস্ত থাকলে সেহরি পার্টীতে অংশগ্রহন সুনিশ্চিত। আধুনিক সহীহ রোজার তরিকায় সেহরি পার্টির স্থান অনেক উঁচুতে। সেহরিতে চিকেন ফ্রাই, লবস্টার, ম্যাগি নুডলস, হরলিক্স মিশ্রিত দুধ, বিফকারি রাখতে পারেন। সেহরি পার্টিতে সেলফি তুলতে কোন ভাবেই ভুলবেন না। পার্টির ফাঁকে ফাঁকে সেহরি পার্টির সেলফি ফেসবুকে আফডেট করুন। খাবার কতটুকু ইয়াম্মি ছিল সে স্ট্যাটাস দিতে ভুলবেন না। সিগারেটের অভ্যাস থাকলে শেষবারের মত সিগারেট খেয়ে নিন।

সেহরি পার্টি শেষে ঘুমিয়ে নিন। রোজার অজুহাতে বেশ একটু দেরিতে অফিসে যেতে পারেন। অফিস না থাকলে বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠার দরকার নেই। বারোটায় ঘুম ভাঙলে সাথে উঠে পড়বেন না যেন, নিদেন পক্ষে একটা পর্যন্ত গড়াগড়ি দিন। উঠে গোসল সারুন। গোসল করে পাঞ্জাবি পরে মুখে রোজাদার রোজাদার ভাব নিয়ে বের হম। পকেটে একটা টুপি রাখতে ভুলবেন না। ইফতারির সময় কাজে লাগবে। বিভিন্ন মার্কেটে যান। বন্ধু বান্ধবিদের ফোন দিয়ে তাদেরকে আসতে বলুন। বিভিন্ন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে ক্ষুধা লেগে গেলে, কোন একটা ফুডকোর্টে বসে খেয়ে নিতে পারেন। আর সহ্য করতে পারলে ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

সেহরি পার্টি না থাকলে বাসায় জেগে থাকাই উত্তম। ছোট রাত, না ঘুমিয়ে একেবারে সেহরি খেয়ে ঘুমদিন। সেহরির সময় টিভি চ্যানেল গুলো একবার ঘুরে আসতে পারেন। বিরক্ত লাগলে দরকার নাই। ঘুমানোর আগে অবশ্যই বান্ধবী/ বান্ধবীদের সাথে ফোনালাপ সেরে নিবেন। এই সময় আলাপ না হলে বান্ধবী রাগ হতে পারে না। রোজা অবস্থায় কাউকে রাগানো বুদ্ধিমানের কাজ না। যাদের একাধিক বান্ধবী আছে তারা এই রাতকে কাজে লাগান। ইফতারের পরে, মাঝরাতে, সেহরির আগে-পরে এভাবে শিডিউল করে সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখুন। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মত সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নিয়ম মেনে চলুন। তবে আপনার বান্ধবীর তালিকায় ভারতের মত কেউ থাকলে আপনাকে বিশেষ সাবধানে থাকতে হবে। এই ঈদে কাকে কি গিফট দিবেন সেটা ভেবে রাখুন। আপনি যদি বিশেষ চালাক প্রকৃতির হোন তাহলে কোন কোন গার্ল ফ্রেন্ডের কাছ থেকে গিফট আদায় করতে পারবেন। এমনকি আপনার গার্লফ্রেন্ড অন্য বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পাওয়া উপহার আপনার হাতে তুলে দিয়ে বলবে, এটা আমি শুধু তোমার জন্য নিজের হাতে কিনেছি (নিজের হাতে বানিয়েছিও বলে ফেলতে পারেন)। সবই নির্ভর করে আপনি তাদের কিভাবে ম্যানেজ করতে পারেন তার উপর।

আধুনিক রোজায় ফেসবুকের গুরুত্ব অপরিসীম। সেহরি পার্টি ইফতার পার্টি এসবের খবরা-খবর, সেলফি তো আছেই তাছেড়া এই মুমিন বান্দার জন্য কয়টা লাইক? আমীন না বলে যাবেন না কেউ, মুমীন বান্দারা শেয়ার করুন মার্কা প্রচুর স্ট্যাটাস, ছবি আসে। এইগুলোতে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে পারেন। নিজেও এসব পোস্ট দিতে পারেন। না হলে আপনি প্রকৃত রোজাদার ফেসবুকার না।
বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ইফতারিতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। চেষ্টা করুন এর প্রত্যেকটী অফার গ্রহন করতে। ইফতারি বিষয়ক স্ট্যাটাসে অবশ্যই ইফতারির দাম লিখতে ভুলবেন না। কত দামী ইফতারি খেলেন তা জাতিকে জানানোর দরকার আছে। আর যেদিন ইফতার পার্টি থাকবেনা বাসায় জম্পেশ ইফতারির ব্যাবস্থা করুন। বিভিন্ন টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে দেখে ইফতারির আইটেম তৈরি করুন। ইফতারিতে গাজরের হালুয়া, ম্যাগি নুডলস, পুডিং, স্টার হালিম/মামা হালিম, ট্যাং/রুহ আফজা থাকা বাঞ্চনীয়। টিভি’র আজান শুনে ইফতার শুরু করুন। ইফতার এশার নামাজের আগে শেষ হওয়া সমীচীন নয়। ইফতারির সময় মাথায় টুপি থাকলে ভাল দেখাবে। মেয়েরা সারাদিন বেপর্দা ঘুরাঘুরি করলেও ইফতারির সময় মাথায় কাপড় দিন।

সারাদিনে শরীরে অনেক ধকল গেছে এবারে বিশ্রাম নিন, ফেসবুকে লগইন করুন।

কুপমণ্ডুক আখ্যা দিয়াছ যারে

আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ভণ্ডামী ও প্রতারনার বসবাস তা থেকে কোনভাবেই মুক্ত নয় বৈশাখের বর্ষবরণ। আমাদের শিক্ষিত ও সমাজের উপরের তলার মানুষেরাই ভান ও ভণ্ডামীতে আক্রান্ত সর্বাধিক। সেই ভান ও ভণ্ডামী এখন এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে সেটা পুরোপুরি ফ্যাসীবাদী রূপ পরিগ্রহ করেছে। আমরা দাবী করি বৈশাখের বর্ষবরণ আমাদের শেকড়ে ফেরার প্রচেষ্টা, আমাদের ঐতিহ্যকে ধারন করা। বাস্তবতা কিন্তু উলটো। বংশ পরম্পরায় আবহমানকাল ধরে পুরুষানুক্রমে যেটা আমাদের নিঃসংকোচ আচরিত সেটাই আমাদের ঐতিহ্য হওয়ার কথা। বিজাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আমাদের আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তখনি আমরা ফিরে যেতে চাই নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কারের কাছে। যুগ যুগ ধরে আচরিত এই আচরণ এই অভ্যাস এই প্রথা আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমরা যখন নিজেদের রক্ত নিজেদের আচরণ ভুলে যাই তখনি আসে শেকড়ে ফেরার কথা।

বাস্তবে শেকড়ে ফেরার চরিত্র বৈশাখে কতটুকু? শেকড়ে ফেরার কিংবা শেকড়ের কোন চরিত্রই এই বৈশাখী বর্ষবরণের উৎসবে আমরা রাখিনি। এখানে তৃণমূল মানুষের আচরিত চিরাচরিত আচারের পরিবর্তে আমরা করেছি একে পরিনত আরোপিত উৎসবের এক ভুল ঐতিহ্যের মহোৎসবে। বর্ষবরনের সবচেয়ে বড় আয়োজন তা হল মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রার শুরু ১৯৮৯ সালে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির চারুকলায়। এই শোভাযাত্রাকে আমরা দাবী করি অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। আমাদের গণমানুষের ঐতিহ্যে কখনোই এই ধরনের শোভাযাত্রার অস্তিত্ব ছিল না। এই শোভাযাত্রার মধ্যে যেমন ঐতিহ্যের কোন সম্পর্ক নাই তেমনি এর অণুষঙ্গের সাথে আমাদের দেশীয় চিরাচরিত কোন ঐতিহ্যের দূরতম সম্পর্ক নাই। এই শোভাযাত্রায় মুখোশ পরি আমরা। আমদের দেশের তৃণমূল মানুষ মুখোশ পরা তো দূরে থাকুক অনেকে মুখোশ দেখেছেন কিনা সে নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ আছে। আমরা কিসের মুখোশ পরি, পেঁচার, ময়ূরের। আরো আছে ভাল্লুক, হনুমান, পেঁচা, অসুর, রাক্ষস-খোক্কস, ডাইনি, পেত্নি। এইগুলার সাথে আমাদের তৃণমূল গণমানুষের কি সম্পর্ক? নিদেন পক্ষে যদি দোয়েলের মুখোশ দেখতাম তাও ভাবতাম ঐতিহ্য না হলেও জাতীয় পাখি তো।

এবার আসি আমাদের এই উৎসবের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়ে। এই চরিত্র পুরোই প্রশ্নবিদ্ধ। আমি যখন একটা বিষয়কে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দাবী করব তখন সব সম্প্রদায়ের ও ধর্মের মানুষের কাছে তথা দেশের সকল নাগরিকের কাছে সেটা অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ মনে হতে হবে। আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষ তো আমার বিবেচনায় কিন্তু দেশের আপামর জনসাধারনের কাছে যদি সেটার এরকম ধর্মনিপেক্ষ আবেদন না থাকে? এই দেশের নাগরিকদের একটা অংশ মোটেই অসাম্প্রদায়িক হিসেবে মানতে রাজি নন। এর মধ্যে তাঁরা একটা সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচরিত ধর্মীয় আচারের আচরনগুলি স্পষ্ট দেখতে পান। প্রকৃতই এগুলোর মাঝে এক সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় রীতিনীতি ও অর্চনার সম্পর্ক বিদ্যমান। যেমনঃ প্যাঁচা, ময়ূর, ভাল্লুক, হনুমান, পেঁচা, অসুর, রাক্ষস-খোক্কস, ডাইনি, পেত্নি।

আমি যাকে ধর্মনিরপেক্ষ মনে করি সেটা যদি অন্যের কাছে সাম্প্রদায়িক মনে হয় তাহলে তো এর অসাম্প্রদায়িক চরিত্রটাই থাকে না। ধরুন, আমি সবাইকে এক অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিলাম আর এসে সবাই দেখলেন সেটা ওয়াজের মাহফিল কিংবা কীর্তনের অনুষ্ঠান তাহলে একে কি আপনারা ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান বলবেন?
পহেলা বৈশাখের উৎসব মূলত শহুরে শিক্ষিত উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্তের অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান ধীরে ধীরে এই বলয়ের বাইরে বের হচ্ছে। রাজধানী থেকে ছড়িয়ে পড়ছে বিভাগীয় শহরে, জেলা-উপজেলায়। শেকড়ে চরিত্রটাতো এখানেই মার খায়। শেকড়ে ফেরার হলে তো প্রত্যন্ত অঞ্চলে, তৃণমূলে বছরের পর পর আচরিত হয়ে একটা পোক্ত আসন নিয়ে নিজেই ধাববান থাকার কথা। তৃণমূল থেকে বিত্তবানের ড্রইং রুমে আসার কথা। তাহলে এখানে আমরা কোন শেকড়ে ফিরছি। নাকি ধার করা সংস্কৃতি চাপিয়ে দিচ্ছি সাধারনের উপর। এই ধরনের বাস্তবতায় ইংরেজী নববর্ষ আর বাংলা নববর্ষের উৎসবের চরিত্রগত ও তাৎপর্যগত তফাত কোথায়? দুটোই ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। দুটোতেই সরকারকে নিরাপত্ত বিধানে গলদগর্ম হতে হয়। দুটোতে মেয়েদের শ্লীলতাহানির, যৌণ নিপীড়নের উদাহরণ আছে।

আমরা যখন একটা অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বজনীন উৎসবের শুরু করব তখন সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের মতামতের মূল্য আমাদের দিতে হবে। আমি আমার মত করে গায়ের জোরে বলে দিব এটা অসাম্প্রদায়িক, এটা ধর্মনিরপেক্ষ এবং সার্বজনীন, আর কেউ এটাকে যদি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বলে না মানে তো তাকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, বলে গালাগালি করব। তাদের মতপ্রকাশকে বলব অশনিসংকেত, অশুভশক্তি আর বৈশাখে তাদের নিপাত কামনা করব, তাহলে তো সেটা হবে একপেশে, প্রতিক্রিয়াশী এবং সভ্য নয় মোটেই বর্বর।

একটা সার্বজনীন উৎসব বা প্রথা সৃষ্টির জন্য সর্বজনের মতের মূল্য দিতে হবে। সে যদি আমার মতে বিরোধী হয় তার মূল্য দিতে হবে সর্বাধিক। তবেই না যুক্তি-তর্ক-বিতর্কের মাঝে সমাজের একটা প্রগতিশীল রূপ দাঁড় হবে। তা না হলে সেটা হবে একেবারেই ফ্যাসিবাদি। কেবল ফ্যাসিবাদই নিজের মত অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়।

আজকে মঙ্গল শোভাযাত্রা যাদের কাছে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নয় এবং যারা এই প্রোগ্রামে শামিল হতে চায় না তাদেরকে তো এটা চাপিয়ে দিতে পারি না। একটা সাম্প্রদয়িক অনুষ্ঠান শুধু মাত্র অসাম্প্রদায়িক বললেই সেটা অসাম্প্রদায়িক হয়ে যায় না। এই রাষ্ট্রে যারা মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশ্বাস করে আর যারা করে না, সকলেই এই রাষ্ট্রের নাগরিক এবং তাদের সবার টাকায় রাষ্ট্র চলে এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ও অন্যান্য সরকারী বৈশাখী অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ হয়। সুতরাং এই সব আয়োজনে তাই সকলের মতামত প্রতিফলনের দরকার আছে। আমার দেশে শুধু আমার মতই চলবে, আমার বিশ্বাস ও নীতে রাষ্ট্রকে মেনে নিতে হবে বাকিদের কথা মানা যাবে না, আমার মত ও পথের বাইরে গেলেই সে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদি এই ধরনের চিন্তা ভাবনা চরম প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যাসিবাদী ভাবনা।

অন্যের উপর আমার মত চাপিয়ে দেয়ার অধিকার সংবিধান আমাকে দেয়নি। তাই সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন উৎসব নির্মান করতে হলে প্রকৃত মুক্তমন নিয়ে যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়ে সকলের অংশগ্রহনমূলক বিনির্মান দরকার। নচেৎ এগুলো কেবলি ভান তৈরি করবে।

==============================
থার্ড আই ও ফকির আবদুল মালেক ভাইকে উৎসর্গীকৃত।