হতবাক!
গত কয়দিন যাবত ফেসবুকের পাতায় পাতায় ভাসছিলো একটি শিরোনাম, “১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরী”। শিরোনামটা চোখে পড়তেই বেশ অবাক হলাম! রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা পড়লাম আর তারপর জানতে পারলাম ঘটনাটা সত্য। এই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম, ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরী পাওয়া অত্যান্ত সৌভাগ্যের বিষয় যদি সেটা হয় বাংলাদেশে। আমি গাইবান্ধা পুলিশের নিকট সত্যিই কৃতজ্ঞ কারন এধরনের করুণা ইতিপূর্বে কোন বাহিনী করেনি আমাদের প্রতি। আমি এটাকে করুণাই বলবো। দেশে যখন চারকোটি ৮২ লক্ষ বেকার; তাদের চাকুরী দেয়ার মত কোন মামা চাচা খালু নেই; তাই এমতাবস্থায় এই ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গাইবান্ধার জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান প্রশংসার দাবীদার। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই অন্য সকল জেলার পুলিশরাও তাকে দেখে শিখুক। তারা আমাদের দিকে করুণাভরে তাকাবে। অন্ততপক্ষে দেশের বেকারদের সংখ্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
যে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করার লক্ষ্যে; নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সে দেশে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো তা কি কখনও ভেবে দেখেছিলাম? দেখিনি। কারন দুষ্টুলোকেদের দখলে চলে গিয়েছে দেশ। আজ জাগায় জাগায় দুর্নীতি। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান ,অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ মোটকথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শক্তির অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো কোন মানুষও নেই। আমার মনে পড়ে সেই ৫২’র কথা, ৭১’র কথা এবং ৮০’র দশকের কথা; যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনসমুদ্রে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সারাদেশ। তখন শকুনরা পারেনি আমাদের দমাতে। দমে গিয়েছিলো তাদের দম্ভ। এখন?
এখন আমাদের সাথে আব্দুল জব্বাররা নেই; নেই ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর; নেই নূর হোসেনরাও। মূলত এরা একবারের জন্যই আসে। তারা আসে। আসে আমাদের শিক্ষা দিতে। কিভাবে অধিকারের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো; কিভাবে শকুনের কন্ঠ রোধ করবো? কিন্তু আমরা তো অতিচালাক বাঙ্গালী। বুদ্ধিজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগেই। ফলশ্রুতিতে আমরা নিজেরাই আজ নিজেদের কন্ঠ রোধ করে ফেলেছি। এক সময়ের ঈগল আমরা আজ সর্পের বেশ ধরেছি। তাই তো দেশ আজ খুন-গুম-ধর্ষণে একাকার। বাংলাদেশ পুলিশ এর ক্রাইম পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ২২১৪১৯টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে মোট খুনের ঘটনা ৩৮৩০টি, ডাকাতি ৮২৪ টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৬২৫৩টি, অপহরণ ৪৪৪টি, চুরি ৭৬৯৮টি ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো মন্ত্রী মহোদয়গন বলেন দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তাহলে উন্নয়নের দেশে কেন এসব ঘটনা ঘটছে? দেশে এতো উন্নয়ন তাহলে মনুষ্যত্বের অবনতি কেন? কেন এক সময়ের ঈগলরা আজ শকুনের বেশে? আছে কি কোন উত্তর? গত ৬ মাসে প্রায় ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে সোনার দেশে। বিচার হয়েছিলো কি একটারও? সবগুলো প্রক্রিয়াধীন হয়তো নয়তো কোন কোনটি।
আসলে এদেশে যে সকল মানবাধিকার সংগঠ্নগুলো রয়েছে সেগুলো পুরুষ, শিশু ও নারীদের জন্যই অভিশাপ। নারীবাদ যদি শিশু ও নারীদের জন্যই হতো তাহলে দেশে শিশু ও নারীরা নির্যাতনের শিকার হতো না। মূলত সবস্থানে আজ দুষ্টলোকে ভরে গিয়েছে। কথায় মহানুভবতা কাজে হিংস্রতা। অথচ এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই মামলা-মোকাদ্দমায় ডুবিয়ে দিবে। এগুলো কে ঠিক করবে? নেই কোন মানুষ নেই। হে আল্লাহ, তোমার কাছে বিচার দিলাম।