ট্যাগ আর্কাইভঃ বাংলাদেশ

করোনা প্রতিরোধে ভুলভাল পদক্ষেপ

করোনায় বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ইতালী। দিনের পর দিন দেশটি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০৭৭ জনে। একেরপর এক স্বজন হারাতে হারাতে জনমনে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা যেন আরও কয়েকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দুই মিনিট অন্তর একজন করে মারা যাচ্ছেন সেখানে। এখন ইতালী যেন এক মৃত্যুপুরী। আর এই ইতালীর হাত ধরেই বাংলাদেশে আঘাত হানে করোনা।ওয়ার্ল্ডও মিটারস ডট ইনফোর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত …

করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন।
করোনায় আক্রান্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৪ জন।
সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ৫ জন।
চিকিৎসাধীন রোগী আছে ২৫ জন।

দিন দিন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অল্প অল্প করে বাড়ছে। ধারনা করা হচ্ছে এই রোগ আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। কারন বাংলাদেশে মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমান সচেতনতাবোধ এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পারে নি সরকার। তবে সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া;সব ধরনের অনুষ্ঠানাদি বন্ধ ঘোষণা; নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান পাট ছাড়া যাবতীয় সকল ধরনের দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা সহ আরও আছে। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে দ্রুতগতির কাজগুলো বাংলাদেশ সরকার ধীর গতিতে সম্পাদন করছে। যার ফলাফল ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম।

১-
তিনজন প্রবাসী ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধরা পড়ার পরবর্তীতে সরকার ধীরে ধীরে ফ্লাইটগুলো বাতিল করতে শুরু করেছে। উচিৎ ছিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত শুরুতেই সকল ফ্লাইট বাতিল করে দেয়া। ফলশ্রুতিতে মানুষ এখন আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করতো না।

২-
মিশ্র কথাবার্তার কারনে চিকিৎসা সেবা দিন দিন ভঙ্গুর হচ্ছে। মুখে হাজারবার “দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে বলা হলেও” বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হাজার গুনে পিছিয়ে আছে। বর্তমানে যে একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমান পিপিই যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ডাক্তারাও তাই এই সুযোগে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন।

৩-
করোনায় সরকারি হিসেব অনুযায়ী মোট মারা গিয়েছেন চার জন। আর এই চারজনের সবাই ছিলো বয়স্ক লোক। গবেষনায় জানা গেছে, করোনায় যারা মারা গিয়েছেন তাদের অধিকাংশই ছিলো বয়স্কলোক। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে তারা শুরু থেকেই কোন না কোন একটি রোগে ভুগছিলেন। ফলে করোনায় আক্রান্ত হবার পর তারা খুবই দুর্বল হয়ে যান। কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।যার ফলাফল হয় মৃত্যু।

৪-
বাংলাদেশ সরকার করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কোন কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যেমন ধামরাই উপজেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ইতালি ফেরত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জন হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন সেখান থেকে তাদের লক্ষাধিক টাকা চুরি হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল।

৫-
এনসিওভি-১৯ কিটের স্বল্পতা করোনা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। এই যন্ত্রের অভাবে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে।ফলে দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছেই।

৬-
সবার জন্য সমান চিকিৎসা সেবা এখনো গড়ে ওঠেনি। না হলে মিরপুরের টোলারবাগে প্রথমে যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। তার নমুনা সংগ্রহ করতে যখন আইইডিসিআরকে বলা হয় তখন তারা করেনি। তাদের পক্ষ থেকে নাকি বলা হয়েছি শুধুমাত্র প্রবাসীদেরকেই তারা চেকআপ করবেন অন্যদেরকে নয়।

৭-
প্রতিদিন একটি এলাকায় করোনা রোগী ধরা খাওয়ার দরুন একটি একটি করে এলাকা লকডাউন করার কোন মানে হয় না। লকডাউন করলে একসাথে সব এলাকা লক ডাউন করা উচিৎ। কারন আজ একটি এলাকায় করোনা রোগী ধরা খাওয়ার কারনে লক করা হলেও উক্ত ব্যক্তি যাদের সংস্পর্শে ছিলেন তারা আবার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এটাকে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন যা মোটেও শুভ লক্ষন হতে পারে না।

এভাবে অজস্র দোষত্রুটি ধরা যাবে। সরকারের উচিৎ করোনা প্রতিরোধে ছোটখাটো সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যেতে পারে আমার বিশ্বাস।

আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম

হতবাক!

গত কয়দিন যাবত ফেসবুকের পাতায় পাতায় ভাসছিলো একটি শিরোনাম, “১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরী”। শিরোনামটা চোখে পড়তেই বেশ অবাক হলাম! রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা পড়লাম আর তারপর জানতে পারলাম ঘটনাটা সত্য। এই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম, ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরী পাওয়া অত্যান্ত সৌভাগ্যের বিষয় যদি সেটা হয় বাংলাদেশে। আমি গাইবান্ধা পুলিশের নিকট সত্যিই কৃতজ্ঞ কারন এধরনের করুণা ইতিপূর্বে কোন বাহিনী করেনি আমাদের প্রতি। আমি এটাকে করুণাই বলবো। দেশে যখন চারকোটি ৮২ লক্ষ বেকার; তাদের চাকুরী দেয়ার মত কোন মামা চাচা খালু নেই; তাই এমতাবস্থায় এই ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গাইবান্ধার জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান প্রশংসার দাবীদার। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই অন্য সকল জেলার পুলিশরাও তাকে দেখে শিখুক। তারা আমাদের দিকে করুণাভরে তাকাবে। অন্ততপক্ষে দেশের বেকারদের সংখ্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

যে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করার লক্ষ্যে; নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সে দেশে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো তা কি কখনও ভেবে দেখেছিলাম? দেখিনি। কারন দুষ্টুলোকেদের দখলে চলে গিয়েছে দেশ। আজ জাগায় জাগায় দুর্নীতি। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান ,অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ মোটকথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শক্তির অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো কোন মানুষও নেই। আমার মনে পড়ে সেই ৫২’র কথা, ৭১’র কথা এবং ৮০’র দশকের কথা; যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনসমুদ্রে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সারাদেশ। তখন শকুনরা পারেনি আমাদের দমাতে। দমে গিয়েছিলো তাদের দম্ভ। এখন?

এখন আমাদের সাথে আব্দুল জব্বাররা নেই; নেই ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর; নেই নূর হোসেনরাও। মূলত এরা একবারের জন্যই আসে। তারা আসে। আসে আমাদের শিক্ষা দিতে। কিভাবে অধিকারের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো; কিভাবে শকুনের কন্ঠ রোধ করবো? কিন্তু আমরা তো অতিচালাক বাঙ্গালী। বুদ্ধিজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগেই। ফলশ্রুতিতে আমরা নিজেরাই আজ নিজেদের কন্ঠ রোধ করে ফেলেছি। এক সময়ের ঈগল আমরা আজ সর্পের বেশ ধরেছি। তাই তো দেশ আজ খুন-গুম-ধর্ষণে একাকার। বাংলাদেশ পুলিশ এর ক্রাইম পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ২২১৪১৯টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে মোট খুনের ঘটনা ৩৮৩০টি, ডাকাতি ৮২৪ টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৬২৫৩টি, অপহরণ ৪৪৪টি, চুরি ৭৬৯৮টি ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো মন্ত্রী মহোদয়গন বলেন দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তাহলে উন্নয়নের দেশে কেন এসব ঘটনা ঘটছে? দেশে এতো উন্নয়ন তাহলে মনুষ্যত্বের অবনতি কেন? কেন এক সময়ের ঈগলরা আজ শকুনের বেশে? আছে কি কোন উত্তর? গত ৬ মাসে প্রায় ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে সোনার দেশে। বিচার হয়েছিলো কি একটারও? সবগুলো প্রক্রিয়াধীন হয়তো নয়তো কোন কোনটি।

আসলে এদেশে যে সকল মানবাধিকার সংগঠ্নগুলো রয়েছে সেগুলো পুরুষ, শিশু ও নারীদের জন্যই অভিশাপ। নারীবাদ যদি শিশু ও নারীদের জন্যই হতো তাহলে দেশে শিশু ও নারীরা নির্যাতনের শিকার হতো না। মূলত সবস্থানে আজ দুষ্টলোকে ভরে গিয়েছে। কথায় মহানুভবতা কাজে হিংস্রতা। অথচ এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই মামলা-মোকাদ্দমায় ডুবিয়ে দিবে। এগুলো কে ঠিক করবে? নেই কোন মানুষ নেই। হে আল্লাহ, তোমার কাছে বিচার দিলাম।