ট্যাগ আর্কাইভঃ বাচন

যোগাযোগ বৈকল্য

হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলেন আপনার ৭ বছর বয়সী সন্তান আপনার কোন কথা ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এতদিন সন্তানের অমনোযোগীতাকে দোষারোপ করে আসলেও আজকে আপনি হঠাৎই কেমন যেন বিচলিত হয়ে উঠলেন সন্তান কে নিয়ে। সন্তান কথা বলতে চায় না। বলতে গেলেও স্পষ্ট উচ্চারণ করে না। অাধ ভাঙ্গা টাইপের কথা বলে। অন্যকারো সাথে কথা বলতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনার সন্তান নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সন্তানকে যদি ইন্ট্রোভার্ট ভেবে থাকেন এবং বয়স বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে ভাবছেন। আপনি হয়তো অনেক বড় ভুল করে ফেলছেন। হয়তো আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত।

এবার সহজ কথায় আসি, যোগাযোগ বৈকল্য (communication disorder) আসলে কি? এটি আমাদের দেশে বেশ নতুন একটি কনসেপ্ট। প্রতিটি মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে শেয়ার করতে চায়, নিজের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণ করতে চায়, সমাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায়। কিন্তু মানুষ যখন কোন কারণে মৌখিক, অমৌখিক/ গ্রাফিকস চিত্রের মাধ্যমে কোন তথ্য প্রেরণ, গ্রহণ এবং অনুধাবনে সমস্যা হয় যার ফলে অন্যের সাথে যোগাযোগে অক্ষম হয়ে পড়ে তাকে বলে যোগাযোগ বৈকল্য। যোগাযোগ বৈকল্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন: ভাষিক বৈকল্য, বাচিক শব্দ বৈকল্য, শৈশবে তোতলানো বৈকল্য, উপলব্ধি বৈকল্য ইত্যাদি।

যোগাযোগ বৈকল্যের প্রধান কারনের মধ্যে পড়ে শ্রবণ – বাকযন্ত্রের সমস্যা, মস্তিষ্কের বিলম্বিত বিকাশ, স্নায়ু ইন্দ্রীয় বৈকল্য, মস্তিষ্ক প্রদাহ ইত্যাদি।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত:
১. একেবারেই কথা বলে না। কথা বলার সময় উচ্চারণে অনেক সমস্যা হয়। একই কথার বারবার পুনরাবৃত্তি করে।

২. কথা শুনতে সমস্যা হয়। সহজ কথা ও বুঝতে পারে না। কথা বলার সময় বাক্যের সঠিক ক্রম মনে রাখতে পারে না।

৩. নির্দেশনা বুঝতে অনেক সমস্যা হয়। সঠিক নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে পারে না।

৪. আই কনট্যাক্ট করতে চায় না। নিজের চুল নিয়ে বা আঙুল নিয়ে খেলা করে কোন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায়।

আপনার সন্তানের মধ্যে যদি লক্ষণগুলো দেখেন। তাহলে হয়তো আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্য আক্রান্ত হতে পারে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৪০ মিলিয়ন মানুষ যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত। প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিকভাবে শনাক্তকরণ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার জন্য চাইল্ড সাইকোলজিস্ট বা ভাষিক- বাচন (Speech- Language) বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে পারেন। তাতে হয়তো আপনার শিশুর যোগাযোগ বৈকল্য থেকে কিছুটা হলেও প্রতিকার মিলতে পারে।

—শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউট,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।