বিভাগের আর্কাইভঃ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য

আর্কাইভ

আপনার ছোট্ট মণিটি যদি দুই থেকে তিন বছরে পা রেখে থাকে তবে লিখাটি আপনার জন্য। এই বয়সটাতে অন্যান্য প্রয়োজন গুলোর সাথে দাঁতের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনও অন্যতম। সাধারণত জন্মের পর শিশুর মুখে প্রথম দাঁত আসার পর থেকে শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই কামড়ে দিতে চায়। এ সময় থেকেই দাঁত ব্রাশ করে দিতে হবে। তবে এ সময়টাতে টুথপেস্ট ব্যবহার না করে দাঁত গুলো ভালভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

দুই বছর বয়সের মধ্যে একটি শিশুর ১৬ থেকে ২০ টি দাঁত বড় হবে। সাধারণত তিন বছর বয়সে শিশুর দাঁতগুলোর একটি সম্পূর্ণ সেট থাকে ২০ টুকরা। এ সময়টা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন আপনার ছোট্ট মণিকে দাঁতের যত্ন নিয়ে সচেতন হতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। যদি আপনি ভেবে থাকেন এ বয়সে শিশু তেমন খাদ্য গ্রহণ করছে না তাই দাঁত ব্রাশ করাটা জরুরী নয় তবে আপনি ভুল। কারণ এ বয়সটা থেকে যদি শিশু দাঁত ব্রাশ করার একটি রুটিনে অভ্যস্ত হয় তবে আপনি স্মরণ না করিয়ে দিলেও সে ভুলবে না।

গড়ে ৪০% শিশু দাঁতের ক্ষয় রোগে ভোগে। যার একমাত্র কারণ হলো দাঁত সঠিক ভাবে ব্রাশ না করা বা একেবারেই ব্রাশ না করা। এর অন্যতম পরিচালিত সমস্যার মধ্যে থাকে ব্যথা। যা শিশুকে চিবানোর সময় প্রচণ্ড অসুবিধা দেয় ফলে শিশুর খাদ্য হজম হয় না। বেশির ভাগ দেখা যায় এ বয়সের শিশুরা এই সমস্যা গুলো বুঝিয়ে তুলতে পারে না।

ডাঃ জিউলিয়ানো বলেন, “অপর্যাপ্ত ব্রাশিং শরীরে ব্যাকটেরিয়া বিকাশের কারণ হতে পারে, যা প্রদাহ এবং রোগের কারণ হতে পারে- শুধু মুখে নয়, শিশুর পুরো শরীর জুড়ে।”

টিনএজঃ চক্ষুর অন্তরালে নিঃশেষিত জীবন

টিনএজঃ চক্ষুর অন্তরালে নিঃশেষিত জীবন
FB_IMG_1645119692485

টিনএজ কীঃ
ইংরেজি থার্টিন থেকে নাইন্টিন অর্থাৎ তেরো থেকে উনিশ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের টিনএজার বা বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। যদিও টিনএজারদের কিছু বিষয় থাকে যা আরও দু চার বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এই তেরো থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের। বিশেষ করে একটি ছেলের জন্য।

টিনএজের চরিত্রঃ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার ছুটি গল্পে টিনএজারদের ব্যাপারে বলেছিলেন “তেরো চৌদ্দ বয়সের ছেলের বালাই আর নাই”। অর্থাৎ এই বয়সটি এতোই দুরন্ত উদ্দীপক উশৃঙ্খল যে তাদের চরিত্রের নির্দিষ্ট কোনো ছবি আঁকা যায়না। এই বয়সে কখন কার কেন মন খারাপ হবে কেউ জানেনা। কার কখন কী ভালো লাগে সেটা সে নিজেও ভাবতে পারেনা। এই সময়টাতে প্রতিটি ছেলে তাদের শারীরিক এবং মানসিক নিত্যনতুন পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সেসব পরিবর্তনের কথা সে কাউকে না বলতে পারে, না কেউ বুঝতে চেষ্টা করে। যার ফলে ছেলেরা যথেষ্ট সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।

সঠিক পরামর্শ এবং সিদ্ধান্তের কারণে এই বয়সের সিংহভাগ ছেলে ভুল পথে পরিচালিত হয়ে যায়। কেননা তারা তাদের প্রয়োজন সঠিকভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। এই চঞ্চল উদ্যমী বাঁধনহারা সময়টা হচ্ছে বয়ঃসন্ধীকাল। এটা হচ্ছে চরম অস্থির একটি সময়। এই সময়ের ছেলেদের মানসিক অবস্থা কেউ বুঝতে পারে না।

বয়ঃসন্ধিকালের যে দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে একটি ছেলের জৈবিক চরিত্র। এই জৈবিকতা একটি ছেলেকে হয় ধ্বংস করে দেয় নয়তো পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট পেয়ে নিজেকে সুদৃঢ় রাখে। কেননা এই বয়সটা হচ্ছে খুবই স্পর্শকাতর বিশেষকরে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। এই বয়সে জৈবিক চাহিদার যে ঝড়ের সূচনা হয় তা নিজের অনুকূলে নিতে অধিকাংশ ছেলেই ব্যর্থ হয়। তাই এই বয়সের চরিত্র বলতে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে জৈবিক চাহিদার নিয়ন্ত্রণের চরিত্র।

টিনএজ কীভাবে পথহারাঃ
এই বয়সটি যেকোনো ছেলেদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। এই ছেলেরা কখনোই নিজের প্রয়োজন কাউকে সঠিকভাবে বোঝাতে সমর্থ হয়না। একটি বালাক হঠাৎ করেই যখন পুরুষালি চরিত্রে চলে আসে তখন স্বাভাবিক ভাবেই তার আশেপাশের লোকজন তাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে না। তার আশেপাশের লোকজন তাকে বয়স্ক কাতারে ফেলে দেয় আর নিজে চিন্তা করে সেতো এখনো ছোট! পরিবেশ মনে করছে ছেলেটি বড় হয়ে গেছে। কিন্তু সে বুঝতে পারে না কীভাবে সে বড় হয়ে গেলো। এই দ্বিমুখী সংঘর্ষের কারণে ছেলেটির মানসিক অবস্থার চরম অবনতি হয়। এই অবনতির ধারা অব্যাহত হলে ছেলেটি পথ হারিয়ে ফেলে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে এই বয়সের পথহারা হওয়ার।

ক) বন্ধুমহলঃ
বয়ঃসন্ধির এই চরম মর্মান্তিক অবস্থায় তার পাশে দাঁড়ায় তার বন্ধুরা। সে বড়দের চরিত্রে ঢুকার সাথে সাথে শারীরিক যে কৌতূহল গুলো চোখে পড়ে, তা বিস্তারিত জানার একমাত্র উৎস হয়ে উঠে তার চেয়ে দু চার বছরের বড় বন্ধুমহল। যারা ইতিমধ্যে এই পর্বটি পার করেছে বা করছে। যেহেতু এই বয়সটি হলো চরম কৌতূহলী আকাঙ্ক্ষার সময়। প্রতিটি বিষয়ই এখন তার কাছে নতুন। যা দেখে যা করছে তার কাছে সবই নতুন। খুব কম সংখ্যক ছেলেরা এই শারিরীক সাংঘর্ষিক মনস্তাত্বিক সময়টাতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যার ফলে যারা কৌতূহলী তারা বন্ধুদের খপ্পরে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত জৈবিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নতুন শারিরীক যে পরিবর্তন তারা অনুভব করে, তার স্বাদ আস্বাদন করতে গিয়ে নিজেদের উপর অনৈতিক জৈবিক চর্চায় জড়িত হয়ে যায়। যা তাদের শারিরীক এবং মানসিক একটি বিরাট ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়।

খ) সহজ পর্নোগ্রাফীঃ
বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেদের ধ্বংসের মূল কারণ হচ্ছে সহজ পর্নোগ্রাফী। যেহেতু এই বয়সের ছেলেদের শারীরিক সঠিক জ্ঞান থাকে না। যার ফলে বন্ধুদের খপ্পরে পরে তারা প্রথম পর্নোগ্রাফীতে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে সমাজ এবং রাষ্ট্রের বদৌলতে সহজ পর্নোগ্রাফীতে তারা জড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সহজলভ্য তথ্যপ্রযুক্তির কারণে টিনএজারদের এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

গ) নিষিদ্ধ কৌতূহলঃ
মানবিক গুণাবলীর একটি একটি গুণ হচ্ছে সহজাত কৌতূহল। এই বয়সে নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি অতিমাত্রায় কৌতূহল কাজ করে। যেকারণে বড়রা যা করতে নিষেধ করে তার প্রতি তাদের কৌতূহল কাজ করে। নারীপুরুষের গোপন বিষয় গুলো নিয়ে এই বয়সে তুমুল আগ্রহ জন্ম নেয়। এই আগ্রহ থেকেই কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। সেই কৌতূহল নিবারণ করতে গিয়ে তারা ভয়ংকর এক ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। যে ফাঁদ থেকে সহজে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনা।

ঘ) পারিবারিক ছিন্ন বন্ধনঃ
আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সামাজিক শিক্ষিত লোক খুবই কম। পরিবার গুলোতে জীবন এবং জীবিকাই প্রাধান্য পায় বেশী। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাথা ঘানোর মতো সময় এখানে থাকে না। তাই বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে কোনো ছেলেই সঠিক স্নেহ ভালোবাসা পায় না। যেকারণে এই উন্মাদনার উদ্দাম সময়গুলোতে ছেলেরা পরিবার থেকে দূরে সরে যায় ধীরে ধীরে। পারিবারিক এই দূরত্ব একটি ছেলেকে তার পরিবার থেকে তাকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। যে দূরত্ব আর কখনোই হয়তো ঠিক হয় না।

পারিবারিক ভালোবাসা সহমর্মিতার অভাবে একটি ছেলে খারাপ পরিবেশে জড়িয়ে পড়ে। তার কাছে সুন্দর সম্পর্কের আর কোনো মূল্য থাকে না। নিষিদ্ধ জৈবিক আকৃষ্টতা তার মানবিক বোধ শক্তিকে নষ্ট করে ফেলে। সে উদ্দাম উত্তাল সময়ে ভুলে যায় সামাজিক সম্পর্ক গুলোর কথা। এই নিষিদ্ধ আকৃষ্টতা তাকে টেনে নিয়ে যায় পৈশাচিক জৈবিক তাড়নার দিকে। এবং এক সময় সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সমাজে নানান জায়গায় অপকর্মে পারদর্শী হয়ে উঠে। তাই পারিবারিক সুন্দর সামাজিক বন্ধন এই বয়সের ছেলেদের খুবই প্রয়োজন।

ঙ) সহজলভ্য পতিতাবৃত্তিঃ
সামাজিক বিভিন্ন কারণে নারীদের একটি শ্রেণী পতিতায় পরিনত হয়। জীবিকার জন্য তারা সস্তা পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। এই সস্তা পতিতাবৃত্তির কারণে বয়ঃসন্ধি ছেলেদের একটি বড় অংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তারা সহজে সেই পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।

চ) ধর্মীয় অনুশাসন না থাকাঃ
একটি ছেলে জৈবিক তাড়নায় ধ্বংসের মূলে রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসনহীন জীবন যাপন। যে পরিবার ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা করে সেই পরিবারের ছেলেরা সহজে এইসব অশ্লীল বিষয় মেনে নেয় না। তারা গোপন বিষয় গোপনে রাখতে শিক্ষা পায়। যার কারণে ধার্মিক পরিবারের সন্তানেরা নিজেদেরকে পাপ থেকে দূরে রাখতে সচেষ্ট হয়। কেননা তারা ছোট থেকেই একটি সুন্দর ধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বড় হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে অশ্লীলতা কম কাজ করে। যে পরিবারে সঠিক ইসলামী অনুশাসনের চর্চা হয় সেইসব পরিবারের ছেলেরা এইসব কর্মকাণ্ডকে পাপ মনে করে দূরে থাকার চেষ্টা করে। তাই যে পরিবারে ধর্মীয় অনুশাসন নেই সেইসব পরিবারের সদস্যরা এই বয়সে অনৈতিক কাজে বেশী জড়িয়ে পড়ে।

ছ) রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যঃ
বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যের কারণে বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেদের বিভিন্ন অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকার কারণে তাদের মধ্যে বেপরোয়া ভাব কাজ করে। এই বেপরোয়া ভাবের কারণে তারা বাঁধাহীনভাবে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে জড়িয়ে পড়ে। এই খারাপ সময়টিতে তারা অশ্লীলতার চরম শিখরে পৌঁছে যায়। যেহেতু পরিবার থেকে বন্ধনহীন এবং সামাজিক ভাবে শক্তি প্রাপ্ত, সেহেতু তারা নিষিদ্ধ জগতে নিঃসংকোচে দাপিয়ে বেড়ায়। এই নষ্ট জীবনযাপন তাদের এক ধ্বংসাত্মক জীবনের মুখোমুখী করে দেয়। যা তারা পরবর্তী জীবনে অনুধাবন করতে পারে।

জ) গুরুত্বহীন জৈবিকতাঃ
আমাদের সমাজে ছেলেরা বালেগ হলে যে, তাদের ভিতরে একটি জৈবিক চাহিদা কাজ করে সেটা সমাজ এবং পরিবার উপেক্ষা করে। সমাজ এবং পরিবার কখনোই এইসব বুঝতে চেষ্টা করে না। তাদের অজ্ঞতার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয় আমাদের দেশে। অথচ এই জৈবিক চাহিদা আর দশটি মানবিক চাহিদার মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি মানুষ প্রচন্ড রোদে হেটে গেলে যেমন পানির জন্য তৃষ্ণার্ত হয়। ঠিক তেমনি যৌবনের প্রথম দিকে ছেলেদের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। যা তাদের গোপন দরজার পাশে নয়তো ভাঙা বাড়ির অন্দরে নিজের নিকৃষ্ট যৌনাচারে লিপ্ত করে। সুতরাং এই জৈবিক চাহিদার কথা আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়।

পরিবারের করণীয়ঃ
একটি ছেলের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সেটি হচ্ছে পরিবার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুন্দর একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধন সবচেয়ে বেশী কাজ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে খুব কম পরিবারই এমন পাওয়া যায় যারা তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে। আমাদের সামাজিক কিছু সীমাবদ্ধতা এখনো রয়েছে। এখানে সন্তানের সাথে গোপন বিষয় গুলো খোলামেলা আলোচনা হয় না। এই সময়টিতে একটি মেয়ে পরিবারের অন্য মেয়ে সদস্য থেকে কিছু না কিছু সাপোর্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু সেই জায়গায় একটি ছেলে কখনোই সেই সাপোর্টটি পায় না। হতে পারে ধর্মীয় গোঁড়ামি অথবা অজ্ঞতা। তাই পরিবারের বিভিন্ন করণীয় রয়েছে ছেলেদের এই ধ্বংসাত্মক জীবন থেকে রক্ষা করার জন্য।

ক) বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কঃ
পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি ছেলেকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। একটি ছেলে যখন নিষিদ্ধ বিষয় গুলো সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পায়, তখন সে তার কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। যখন তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে কী ভালো আর কী খারাপ তখন সে নিজে নিজেই ভালো থাকতে চেষ্টা করবে যতটুকু পারা যায়। তাই সবসময়ের মতো প্রতিটি পরিবারকে আগে এগিয়ে আসতে হবে এইসব ছেলেদের রক্ষা করতে। যখন একটি ছেলেকে বুঝানো হবে কী করলে কী ক্ষতি হতে পারে এবং কখন কী করার সঠিক সময়। তখন এইসব বিষয়ে অজ্ঞ ছেলেরা সঠিক বিষয় গুলো বুঝার চেষ্টা করবে। তাই পরিবারের উচিত তাদের বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে তাদের বিষয়গুলো সহজভাবে উপস্থাপন করে সমাধান দেওয়া।

খ) ধর্মীয় চর্চাঃ
প্রতিটি পরিবারের উচিত সঠিক ধর্মীয় চর্চা গুলো নিয়মিত করা। প্রতিটি সন্তানকে সঠিক নৈতিক জ্ঞান দেওয়া। সেই সাথে ধর্মীয় বিষয় গুলো সামনে এনে অশ্লীল পাপাচার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা।

গ) সঠিক নজরদারিঃ
এই বয়সের ছেলেদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করলে ফলাফল খুবই খারাপ হয়। তাই পরিবারের উচিত সন্তানের প্রতি সঠিক নজরদারি। ছেলে কখন কোথায় যায়। কার কার সাথে মেলামেশা করছে। যাদের সাথে মিশছে তাদের পারিবারিক চরিত্র এবং ইতিহাস জানা জরুরী। যদি কোন খারাপ পরিবেশ বা বন্ধুর সংস্পর্শে চলে আসে তবে তাকে সাথে সাথে সাবধান করে দিতে হবে। তাও জোরপূর্বক নয়। সুন্দর এবং চমৎকার উপস্থাপনার মাধ্যমে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, সে যার সাথে মিশছে সে কেন খারাপ। তার সাথে মেশার ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে ভবিষ্যতে। যদি পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তাদের সাথে মিশে তাহলে ভবিষ্যতে সে কী কী সুবিধাবঞ্চিত হবে সে ব্যাপারে সঠিক ধারণা দেওয়া। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত তার সামনে তুলে ধরতে হবে।

বর্তমান সময়ে ছেলেরা অনেক এগিয়ে আছে। এই বয়স সম্পর্কিত তাদের বিভিন্ন বই পড়তে দেওয়া যেতে পারে। এই বয়সের ক্ষতিকর দিক গুলো তুলে ধরে বিভিন্ন ডকুমেন্টারী দেখানো যেতে পারে। সেই সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে। কখনোই তাদের একাকীত্বে থাকতে দেওয়া যাবে না। এই বয়সের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নারী ঘটিত সমস্যা।

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের প্রথম চার পাঁচ বছরে ছেলেরা প্রচন্ড রকম আবেগী হয়। এই সময়টিতে তাদেরকে সঠিক পরিচর্যা করা না গেলে অনেক সময় ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। আমাদের দেশে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেমের হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে। যা পরিবারের অজান্তে বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। পরে পরিবারের হস্তক্ষেপেও এইসব সম্পর্ক টিকিয়েও রাখা যায় না। কেননা চরম উত্তেজনার সময়ে তারা যে ভুল করে। কিছুদিন যাওয়ার পর তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তাই পরিবারের উচিত হবে তাদের সাথে সবসময় সার্বিক যোগাযোগ রাখা।

ঘ) কঠোর না হওয়াঃ
বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেদের সাথে কখনোই কঠোর আচরণ করা যাবেনা। প্রতিটি পরিবারের উচিত এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখা। অধিকাংশ ছেলেই বয়ঃসন্ধির মানসিক চাপ নিতে পারে না। কোনো ভুলের কারণে যদি ছেলেদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হিতে বিপরীত হয়। হঠাৎ কোনো শারিরীক ও মানসিক আঘাত পেলে ছেলেরা তা আজীবন মনে পুষিয়ে রাখে। পরিবারের যে সদস্য দ্বারা সে হেনস্তা হয় তাকে সে জীবনের তরে ভালো চোখে দেখে না। যারফলে একটি সুন্দর সম্পর্কের মৃত্যুর হয়। বয়ঃসন্ধিকালীন আঘাত ছেলেদের বিপথে যেতে ত্বরান্বিত করে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে কখনোই ছেলেদের সাথে কঠোর হওয়া যাবেনা। সুন্দর সুদীপ্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাকে এটা বোঝাতে হবে যে আপনি তার ভবিষ্যৎ ভালোর জন্যই পরামর্শ দিচ্ছেন। আপনি যে তার হিতাকাঙ্ক্ষী সেটা তাকে বুঝতে দিতে হবে।

ঙ) সঠিক সময়ে বিয়েঃ
আমাদের দেশে সঠিক সময়ে ছেলেদের বিয়ে দেওয়া হয়না। যার কারণে ছেলেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে খারাপ পথে জৈবিক প্রয়োজন মিটায়। সেটা হতে পারে নিজের শরীরের উপর অত্যাচার করে। অথবা অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক করে। তাই প্রতিটি পরিবারের উচিত ছেলেদের খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনে বিয়ে দিয়ে তাদের সঠিক পথে আনা।

চ) অবাধ তথ্যপ্রযুক্তি রোধঃ
বর্তমান সময়ের ছেলেরা যে উৎস থেকে সবচাইতে বেশী ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে, তা হচ্ছে অবাধ তথ্যপ্রযুক্তি। আমাদের বর্তমান পিতামাতারা ছেলেদের ১৩ /১৪ বছর হওয়ার আগেই হাতে হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছেন। এই বাধা সর্বোচ্চ এসএসসি পর্যন্ত। প্রতিটি ছেলে কলেজে যাওয়ার সাথে সাথে মোবাইল পেয়ে যাচ্ছে। আর বাবা মায়েরাও ছেলেদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে যান মোবাইল দেওয়ার। কিন্তু এটা খুবই মারাত্মক একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই মোবাইল প্রতিটি ছেলের চরম উন্মাদনার যৌবন জ্বালার দাহ্য বস্তুর মতো। ছেলেদের এই অস্থির মুহূর্তে মোবাইলটি জ্বলন্ত উনুনে কেরোসিনের মতো। যা তাদের জ্বলে পুড়ে শেষ করার জন্য যথেষ্ট। এই মোবাইলের দ্বারা আজ আমাদের সমাজে অপকর্মের ছাড়াছাড়ি। সহজ ইন্টারনেটের কারণে ঘরে দরজা বন্ধ করেই ছেলেরা ডুব দেই নষ্ট দুনিয়ার নীল পর্নোগ্রাফীতে। কোনো মা বাবাই জানতে পারে না তাদের সোনার টুকরো ছেলের তারা কী ক্ষতি করে ফেলেছে। তাই ভার্সিটির আগে কখনোই ছেলেদের এনড্রয়েড ফোন দেওয়া যাবে না। যদি দিতেই হয় তবে স্কুল জীবনে নয়। আর তখনই দিতে পারবেন যখন আপনি নিজেই এই মোবাইলে পারদর্শী হবেন। কেননা আপনাকে অবশ্যই তার উপর নজরদারি রাখতে হবে। কেননা ছেলেকে নজরদারিতে না রাখলে ভবিষ্যতে আপনারই ক্ষতি।

সমাজের করণীয়ঃ
এই বয়সের ছেলেরা সবচেয়ে বেশী যে সাপোর্ট বর্তমানে পাচ্ছে সেটা হচ্ছে সমাজ। সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে এইসব ছেলেরা দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের কিশোর সমাজকে সঠিক পথে টিকিয়ে রাখতে হলে সমাজের বিশেষ ভূমিকা পালন করা দরকার।

ক) সহজ পতিতাবৃত্তি বন্ধঃ
সমাজের আনাচে কানাচে সহজলভ্য যে পতিতাবৃত্তি চলে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যাতে করে কোনো কিশোর হাত বাড়ালেই নষ্ট জায়গার খোঁজ না পায়।

খ) কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণঃ
রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে সমাজে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংস্টার সৃষ্টি করে এক শ্রেণীর স্বার্থবাদী মানুষ। তাদের প্রশ্রয়ে এইসব উঠতি বয়সের ছেলেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে যখন তারা পরিবার থেকে বাঁধাহীন হয়ে যায়। এবং সেই সাথে সমাজের বড়ভাইয়ের আশ্রয় পায়। তখন তারা সহজেই যেকোনো পাপে জড়িয়ে পড়ে। এই জৈবিক পাপ যে কত ভয়ংকর তারা সেই সময় কখনোই টের পায় না। তাই সমাজ থেকে কিশোর গ্যাংস্টার সৃষ্টি বন্ধ করতে হবে।

গ) মুরুব্বীদের শাসনঃ
গত দশ পনেরো বছর ধরে আমাদের সমাজে মুরুব্বীদের শাসন উঠে গেছে। যদিও এর অনেক গুলো কারণ রয়েছে। কিন্তু এটা একটি সমাজে খুবই প্রয়োজন। আগে এক সময় রাস্তাঘাটে ছেলেরা যেমন তেমন ভাবে পোশাক পড়তে বা চুলের ফ্যাশন করে কাটিং দিতো পারতো না। সমাজে ইভটিজিং ছিলো না। কিন্তু এখন রাজনৈতিক পেশিশক্তির কারণে সমাজে রাজনৈতিক নেতার দাপটে সমাজের মুরুব্বীদের ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে সামাজিক শাসনের যে শিকল ছিলো তা ছিঁড়ে গেছে। এই শাসন শৃঙ্খলা ধ্বংস হওয়ার কারণে সমাজে উঠতি বয়সের ছেলেরা বিভিন্ন অপকর্মের পাশাপাশি অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট সুযোগ এবং সুবিধা নিচ্ছে। এইসব খবর অনেকক্ষেত্রে তাদের পরিবারও জানে না।

ঘ) সৃজনশীলতার বিকাশঃ
আমাদের দেশে একটি সময় ছিলো যখন ছেলেরা দল বেধে বিভিন্ন সামাজিক সংঘটনে কাজ করত। বিশেষ করে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ক্লাব ছিলো। ক্লাবের উদ্যোগে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ হতো। যা গত দশ পনেরো বছরে স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এইসব সুষ্ঠু সৃজনশীল চর্চা একটি সমাজের ছেলেমেয়েদেরকে সুন্দর পথে চলতে সাহায্য করে। তারা যখন এই জাতীয় বিভিন্ন ভালো কাজে নিমগ্ন থাকে তখন তারা খারাপ পরিবেশ এবং নষ্ট সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে পারে। তাই যদি সুন্দর এক‌টি কিশোর সমাজ চাইলে আমাদের অবশ্যই খেলাধুলাসহ ইসলামী সংস্কৃতির সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে।

মুক্তির পথঃ
ক) ধর্মীয় অনুশাসনঃ
বয়ঃসন্ধিকালীন এইসব ছেলেদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন। সমাজ এবং পরিবারে যদি সঠিক ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা করা হয় তাহলে আমরা খুব সহজেই এই খারাপ পরিস্থিতি থেকে কিশোর সমাজকে উদ্ধার করতে পারি। যদি ছোট থেকেই ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় তবে তাদের মধ্যে অশ্লীলতা নিয়ে ধর্মীয় ভীতি কাজ করবে। আর যে পরিবারে ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় সেই পরিবারের ছেলেরা সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। আল্লাহর সত্যিকারের ভয় থাকার ফলে তারা দুনিয়াবী পাপ থেকে সবসময় দূরে থাকার চেষ্টা করে। যার ভিতর আল্লাহর ভয় কাজ করে তাকে আল্লাহ নিজেই সাহায্য করে। সুতরাং প্রতিটি পরিবারের উচিত ছেলেদের সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া।

খ) সঠিক সময়ে বিয়েঃ
আমাদের সমাজে এক‌টি ভুল রীতি চালু আছে। তা হচ্ছে ছেলেদের বয়স হয়ে গেলেও সঠিক সময়ে বিয়ে না করানো। একটি ছেলে বালেগ হয় চৌদ্দ পনেরো বছরে। এই বসয় থেকেই ছেলেদের ভিতরে তীব্র জৈবিক চাহিদা কাজ করে। এই তীব্রতা কোনো বাঁধা বা কথা মানে না। এই জৈবিক জোয়ারে ছেলেরা প্রায় পথহারা হয়ে যায়। তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে বা পাপ থেকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই সঠিক সময়ে বিয়ে দিতে হবে। আমাদের দেশে ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করতে পারে না। অথবা বোনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ছেলেদের বিয়ে করতে দেওয়া হয় না। এই দীর্ঘ একটি সময় ছেলেরা কীভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবে পাপ না করে? এই পাপের দায়িত্ব প্রতিটি মা বাবাকে নিতে হবে। আগের দিনে ছেলেরা বিয়ে করেও পড়াশোনা করতো। এখন পড়াশোনা শেষ করার পরও আরো দু চার বছর পর চাকরি, এরপর আরো চার বছর পর বিয়ের চিন্তা করে পরিবার। যা মোটেই সঠিক নয়। ছেলেদের আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত হতে জোর দিতে হবে। সেই সাথে পরিবারকেও সাহায্য করতে হবে ছেলেদের সঠিক পথে আসার।

অনেক সময় দেখা যায় ছেলেরা একেবারে খারাপ হয়ে গেলে তারপরে বিয়ে করায়। কিন্তু ততদিনে সব শেষ হয়ে যায়। এইসব ছেলেরা যে বিয়ে করার পরও সঠিক পথে এসেছে তার কোনো প্রমাণ নেই। তাই আমাদের উচিত সঠিক সময়ে ছেলেদের বিয়ে দিয়ে তাদেরকে খারাপ পথ থেকে ফিরে আসতে সাহায্য করা।

সর্বশেষ কথাঃ
বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে একটি ছেলে যে কী পরিমাণ কষ্টে থাকে তা ঐ বয়সী একটি ছেলে ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করতে পারবে না। এই ক্ষুদ্র বয়সে হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়া সে সহজে মেনে নিতে পারে না। এর কারণ পরিবার এবং সমাজ তাকে মানসিক ভাবে বড় না করে শারীরিক ভাবে বড় ভেবে ফেলে আচরণ করতে থাকে। যার কারণে সে বুঝে উঠতে পারে না আসলেই সে ছোট না কি বড়।

সেই সাথে নিজের শারীরিক কৌতূহল থেকে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা নিতে সে পা বাড়ায় খারাপ পথে। একান্ত গোপনে এমন সব কিছু করে যা তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এই ধ্বংস হতে পারে শারীরিক হতে পারে নৈতিক, হতে পারে ধর্মীয়। তাই এদের সাহায্য করতে আমাদের প্রতিটি পরিবার এবং সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সচেতন হই সুস্থ থাকি

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, বছরের শুরুর দিন থেকে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৫২৮ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত আট জন মারা গিয়েছে(বেসরকারি হিসেবে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে)। ফলে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ, আতঙ্ক তৈরী হচ্ছে। অথচ সামান্য কিছু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলে এর থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে যা করবেনঃ
১. ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশকী রাতে/অন্ধকারে কামড়ায় না। এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাত্রে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে। তাই এ সময় শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। শিশুদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরাতে হবে।
২. দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
৩. দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।
৪. স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. মশার আস্তানা ধ্বংশ করতে হবে
এডিস মশা পরিষ্কার বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই টব, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে বিশেষ কিছু সতর্কতাঃ
১. ডেঙ্গুর লক্ষণঃ
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়েজ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এরসাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

২. জ্বর হলেই কী চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, “এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়।” জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ।তিনি বলছেন, ”ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকেতাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।” [উল্লেখ্য, দেশের সব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা গেলে কয়েকটা টেস্ট করিয়ে চিন্তামুক্ত থাকুন]

৩. বিশ্রামে থাকতে হবে
সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ”জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।”

৪. যেসব খাবার খাবেন
প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

৫. যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ”ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।”চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্যঅ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

৬.প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা।তিনি বলেন, ”প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।”সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

৭. ডেঙ্গু হলেই কী হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে – ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’।প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির।তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না।অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।’সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।
[ উল্লেখ্য, দেশের সব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সুতরাং লক্ষণ দেখা গেলে টেস্ট করিয়ে চিন্তামুক্ত থাকি]

বি. দ্রঃ
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। আর এখন যেহেতু বর্ষাকাল বাসার ছাদে/অন্য কোথাও পানি জমে আছে কিনা লক্ষ রাখুন(আমি নিজেও ছাদের টব চেক করেছি)। সামান্য অসচেতনায় পানি জমিয়ে রেখে মশা উৎপাদন করে সিটি কর্পোরেশন/সরকারের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে লাভ নেই। আমরা নিজেরা সচেতন হই, সুস্থ্য থাকি।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা, বিডি নিউজ২৪

Probable Causes of Blood Clotting Driven by SARS-CoV-2

Coronavirus Disease 2019 (COVID-19) has transmitted almost all over the world. COVID-19 is caused by Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2 (SARS-CoV-2), which transfers from an infected person to a susceptible person via direct contact (e.g., hand-shaking, hugging) or indirect contact through touching materials or objects that are contaminated by an infected person (e.g., doorknob, handrail, paper tissue). It can also spread via airborne route (i.e. through aerosols created by expiratory activities). After entering the respiratory tract of human body, SARS-CoV-2 bioparticles may cause the most common symptoms of fever, cough, and fatigue. They may also cause sore throat, headache, chill, runny nose, loss of taste or smell, skin rash, muscle pain, nausea and vomiting, loss of appetite, diarrhea, dizziness, abdominal pain, and discoloration of fingers or toes. The severe symptoms of COVID-19 are shortness of breath or difficulty in breathing, chest pain, and loss of speech or movement. Recently, blood clotting has emerged as a new risk of COVID-19. Indeed, skin rash and discoloration of fingers or toes are the visible signs of blood clotting. The reduction of oxygen level in blood is another indication of blood clotting, as the oxygen supply to the tissues and organs of human body will be greatly affected if blood clots occur. The following are the probable causes of blood clotting.

1. SARS-CoV-2 particles can increase the viscosity of blood because of their own physical characteristics. The outer surface of SARS-CoV-2 having protein spikes may cause friction with other ingredients of blood (e.g., red cells, white cells, and platelets) and among themselves. They can also cause friction on the surface of the innermost layer (tunica intima) of blood vessels. It means the blood flow in the blood vessels will be hindered due to the increased resistance against flow. Such impaired blood flow may contribute to cause blood clotting.

2. SARS-CoV-2 particles may increase the viscosity of blood by increasing the concentration of the bioparticles in blood. The viscosity of whole blood is directly related to the viscosity of its plasma (the higher the viscosity of plasma, the greater will be the viscosity of whole blood) and the concentration (volume fraction) of the bioparticles present in blood (the larger the concentration of the bioparticles, the greater will be the viscosity of whole blood). This means the effective viscosity of whole blood will increase with the increasing volume fraction of the bioparticles existing in blood. It implies that the whole blood shall be thicker when the increased load of virus particles increases the volume concentration of the bioparticles in blood. The extremely increased viscosity could lead to blood clotting in human body.

3. SARS-CoV-2 particles could interlock with each other because of their characteristic outer layer having protein spikes, leading to formation of virus cluster. This physical process may also involve other blood particles (e.g., blood cells). In addition, the stickiness of the envelope of SARS-CoV-2 due to its spike protein (S-protein) and envelope protein (E-protein) could help forming the clusters of virus particles and blood cells. It implies that SARS-CoV-2 may collectively form obstacles across the blood flow direction, thus contributing to blood clotting.

4. SARS-CoV-2 particles may attach to the inner lining (tunica intima) of blood vessels, taking the benefit of their sticky outer layer, thus narrowing the vessel space along the direction of the blood flow (i.e., the cross-sectional area of blood vessels across the blood flow direction decreases). It is also possible that SARS-CoV-2 particles assemble in several layers with the foremost layer attaching to the tunica intima of blood vessels. Such array of virus particles will also decrease the cross-sectional area of the blood vessel across the blood flow direction. Consequently, the blood flow will be significantly obstructed. Furthermore, the endothelial cells of tunica intima may not help regulate the pressure for blood flow when they are lined with SARS-CoV-2 particles. The production of enzymes (e.g., nitric oxide) that help inhibit blood clotting may also be impeded when the endothelial cells are attacked by SARS-CoV-2 particles. These probable consequences eventually may cause blood clotting in extreme condition.

5. The physical structure of tunica intima reveals that SARS-CoV-2 particles could easily be attached to the endothelial cell-to-cell links. These links are very thin compared to the other parts of tunica intima. Hence, the inner lining can easily be ruptured by SARS-CoV-2 particles at those thin links and the underlying internal elastic membrane can be exposed. This damage may trigger blood clotting inside the blood vessels. The breaching of tunica intima shall result in rushing of additional platelets and clotting factors (e.g., prothrombin, fibrinogen) to the damage sites and they will start the process for the formation of blood clots.

6. SARS-CoV-2-induced cytokine storm may be another reason of blood clotting in the blood vessels. Coronaviruses can reach different locations of human body including the blood vessels although they first penetrate the lungs. When the endothelial cells in tunica intima are injured by SARS-CoV-2, they send “SOS” to the immune cells, which rush to the damage sites. The immune cells crowd on the damage sites. The activated immune cells secrete small proteins called cytokines, which prevent the pathogens (e.g., bacteria, viruses) from spreading in the body, contributing to blood coagulation (thickening) with increased viscosity. However, excessive cytokines may lead to uncontrollable blood coagulation. In such condition, anti-coagulants (thinner) present in the whole blood are not quite enough to inhibit blood clotting.

7. SARS-CoV-2 particles would decrease the velocity of whole blood being in the blood vessel. This is due to the additional mass of viruses or owing to the thickening of blood in the presence of virus particles. Since blood is a non-Newtonian flow, its viscosity increases at a lower velocity. Also, the low flow state of blood enhances the molecular interactions of blood cells among themselves and with plasma proteins. Consequently, blood cells (particularly red cells) can agglomerate to form clusters of cells, and thus further increase the viscosity of blood. At a very high viscosity caused by high degree of molecular interactions, blood may stop flowing if the driving pressure remains below the yield stress that initiate flow. Moreover, platelets can get closer at a higher viscosity and the cluster of platelets, acting along with plasma proteins, can entrap red cells to form blood clotting.

N95 Respirator Masks: Are they Sufficient for Protection against COVID-19?

COVID-19 (Coronavirus Disease 2019), evolving from China in December 2019, has spread almost all over the world. This disease is caused by SARS-CoV-2 (Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2), which transfers from one person to another through respiratory droplets and aerosols created by expiratory activities. The transmission of coronaviruses occurs when the respiratory droplets and aerosols emitted from an infected person reach the nose, mouth, or eyes of another person [1,2]. Coronaviruses can transfer directly through human-to-human contact (e.g., handshaking, hugging), indirectly through touching materials or objects that carry infection (e.g., doorknob, handrail, paper tissue), and via airborne route [3]. The transmission of coronaviruses can be prevented using highly efficient face masks. N95 respirator masks are being used as “high-efficiency masks” in the current pandemic situation. But are they sufficient for protection against coronaviruses?

As per the guideline of WHO, health-care professionals must wear masks when caring for patients with airborne infections, or when executing bronchoscopies or similar tests for their own protection; in such cases, “high-efficiency masks” are recommended [4]. In battling against SARS-CoV-2, health-care staff are using N95 respirator masks. But N95 respirator masks may not certainly provide adequate protection against coronaviruses, which are significantly smaller than 300nm (0.3µm) inert particles used in the acceptance test of this type of masks [5]. The diametrical size of viruses varies in the range of 20–300 nm (0.02–0.3 µm). SARS-CoV-1 ranges from 75 nm (0.075 µm) to 160 nm (0.160 µm) in diameter [6] whereas SARS-CoV-2 varies from 65 nm (0.065 µm) to 125 nm (0.125 µm) [7]. Thus, the penetration of coronaviruses through N95 respirator masks could be more than 5% due to their very small size. The research results of Bałazy et al. [5] showed that N95 respirator masks will be adequate against the particles ≥ 300 nm in diameter; but they may not give proper protection with 95% threshold value for the nano-size virus particles; in their study, the penetration of small virus particles less than 80 nm was 2.25–3.25% at a lower inhalation rate of 30 L/min whereas it was 4.25–5.75% at a higher inhalation rate of 85 L/min. Furthermore, the wearer may not get the desired level of protection unless the respirator is fitted well with the face without any leakage [8]. All these mean that the 95% protection level of N95 masks is not guaranteed for the health-care professionals giving treatment to COVID-19 patients.

In fine, N95 respirator masks are not 95% effective in preventing virus particles during inhalation. The nano-size coronavirus could penetrate N95 respirator masks by more than 5%. A 5% penetration may not be very harmful in the case of inert particles. Conversely, a very little penetration of coronaviruses would be enough to cause substantial damage. This is because sometimes a single virus particle can cause infection [6]. Therefore, relying solely on N95 respirator masks strategically will not be sufficient to prevent coronaviruses from entering the respiratory tract. A better option could be to use it as an element in the practice of multi-level protection; for example, a face shield on top of a google for eye protection and an N95 respirator mask alone or covered by a surgical mask for nose and mouth protection. Alternatively, full-facepiece air-purifying respirators (APRs) and powered air-purifying respirators (PAPRs) can be used by the health-care personnel for protection against COVID-19 [9,10]. APRs and PAPRs simultaneously cover eyes, nose, and mouth. They are reusable and can be used more than once following the guidelines for cleaning, sanitizing, and/or disinfecting [11,12]. Both APRs and PAPRs are used with disposable filters and most common filters are N95 and P100. But N95 filters will not give more than 95% protection as discussed earlier. High-level respiratory protection is expected to achieve by P100 filters. A P100 filter is effective against all particulate aerosols and 99.97% efficient against 0.3µm particles [13]. It means that the penetration of 0.3µm particles through a P100 filter should not be more than 0.03%. Therefore, APRs and PAPRs with P100 filters would likely give better protection than N95 respirator masks against COVID-19. The assigned protection factor is 50 and 1000 for full-facepiece APRs and PAPRs, respectively, whereas it is only 10 for N95 respirator masks [13-15].

List of References:

[1] Mount Sinai Hospital. FAQ: Methods of Disease Transmission. Department of Microbiology, Mount Sinai Hospital: Toronto, Ontario, Canada. Retrieved on March 31, 2020. Available online: https://eportal.mountsinai.ca/Microbiology/faq/transmission.shtml.
[2] World Health Organization (WHO). Pass the Message: Five Steps to Kicking out Coronavirus. WHO: Geneva, Switzerland; March 23, 2020. Retrieved on March 24, 2020. Available online: https://www.who.int/news-room/detail/23-03-2020-pass-the-message-five-steps-to-kicking-out-coronavirus.
[3] Asadi, S.; Bouvier, N.; Wexler, A.S.; Ristenpart, W.D. The coronavirus pandemic and aerosols: Does COVID-19 transmit via expiratory particles? Aerosol Science and Technology 2020, 54(6), 635-638.
[4] World Health Organization (WHO). Prevention of Hospital-Acquired Infections: A Practical Guide; Second Edition, WHO/CDS/CSR/EPH/2002.12; Ducel, G., Fabry, J., Nicolle, L., Eds.; WHO: Geneva, Switzerland, 2002. Retrieved on March 26, 2020. Available online: https://www.who.int/csr/resources/publications/whocdscsreph200212.pdf.
[5] Bałazy, N.; Toivola, M.; Adhikari, A.; Sivasubramani, S.K.; Reponen, T.; Grinshpun, S.A. Do N95 respirators provide 95% protection level against airborne viruses, and how adequate are surgical masks? American Journal of Infection Control 2006, 34(2), 51-57.
[6] Morawska, L. Droplet fate in indoor environments, or can we prevent the spread of infection. Indoor Air 2006, 16(5), 335-347.
[7] Shereen, M.A.; Khan, S.; Kazmi, A.; Bashir, N.; Siddique, R. COVID-19 infection: Origin, transmission, and characteristics of human coronaviruses. Journal of Advanced Research 2020, 24, 91-98.
[8] Coffey, C.C; Lawrence, R.B.; Campbell, D.L.; Zhuang, Z.; Calvert, C.A.; Jensen, P.A. Fitting characteristics of eighteen N95 filtering-facepiece respirators. Journal of Occupational and Environmental Hygiene 2004, 1(4), 262-271.
[9] FDA (Food and Drug Administration). N95 Respirators and Surgical Masks (Face Masks). U.S. Food and Drug Administration: Maryland, USA. Retrieved on March 28, 2020. Available online: https://www.fda.gov/medical-devices/personal-protective-equipment-infection-control/n95-respirators-and-surgical-masks-face-masks#s2.
[10] CDC (Centre for Disease Control and Prevention). Interim Infection Prevention and Control Recommendations for Patients with Suspected or Confirmed Coronavirus Disease 2019 (COVID-19) in Healthcare Settings. CDC: Atlanta, Georgia, USA. Retrieved on May 13, 2020. Available online: https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/hcp/infection-control-recommendations.html?CDC_AA_refVal=https%3A%2F%2Fwww.cdc.gov%2Fcoronavirus%2F2019-ncov%2Finfection-control%2Fcontrol-recommendations.html.
[11] 3M (Minnesota Mining and Manufacturing) Canada. How to Inspect, Clean and Store 3M™ Reusable Respirators. 3M: London, Canada: Retrieved on May 14, 2020. Available online: file:///F:/COVID19%20Paper%201/Literature/How-to-Inspect-Clean-and-Store-3M-Reusable-Respirators.pdf
[12] 3M (Minnesota Mining and Manufacturing) United States. Guidelines for Cleaning and Disinfecting the 3M™ Powered Air Purifying Respirator (PAPR) TR-300 Assembly. 3M: Minneapolis USA; June 17, 2016. Retrieved on May 14, 2020. Available online: https://www.3m.com/3M/en_US/worker-health-safety-us/all-stories/full-story-detail/?storyid=e706502a-0c64-4783-9f00-6248893619a1.
[13] The National Academies of Science, Engineering and Medicine. Reusable Elastomeric Respirators in Health Care. Clever, L.H., Rogers, B.M.E., Yost, O.C., Liverman, C.T., Eds.; The National Academies Press: Washington D.C., USA, 2019.
[14] Rengasamy, S.; Walbert, G.; Newcomb, W.; Coffey, C.; Wassell, J.T.; Szalajda. J. Protection factor for N95 filtering facepiece respirators exposed to laboratory aerosols containing different concentrations of nanoparticles. The Annals of Occupational Hygiene 2015, 59(3), 373–381.
[15] Vo, E.; Zhuang, Z.; Horvatin, M.; 2, Liu, Y.; He, X.; Rengasamy, S. Respirator performance against nanoparticles under simulated workplace activities. The Annals of Occupational Hygiene 2015, 59(8), 1012–1021.

Md. Safiuddin
Professor
George Brown College, Casa Loma Campus
146 Kendal Avenue, C Building, Room C303
Toronto, Ontario, Canada M5T 2T9
Adjunct Professor, Department of Civil Engineering
Ryerson University, Toronto, Ontario, Canada M5B 2K3
College Website: https://www.georgebrown.ca/facultybios/Md.-Safiuddin.aspx
Google Scholar: https://scholar.google.ca/citations?user=WboBlwQAAAAJ&hl=en
Research Gate: https://www.researchgate.net/profile/Md_Safiuddin

Do Surgical Masks Provide Adequate Protection against COVID-19?

COVID-19 (Coronavirus Disease 2019), a highly contagious disease, has caused a pandemic for the whole world. SARS-CoV-2 (Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2) is the main culprit of this disease and it is transferring from human to human with respiratory secretions, which are generated by expiratory activities (e.g., breathing, speaking, laughing, coughing, and sneezing). The transmission of COVID-19 occurs when the virus-bearing respiratory secretions expelled from an infected individual reach the eyes, nose, or mouth of a susceptible individual [1,2]. It has been reported that SARS-CoV-2 can transfer directly through person-to-person contact such as handshaking and hugging, indirectly through contact with fomites (objects or materials that carry infection) such as paper tissue and doorknob, and also via airborne route without any physical contact [3]. The transmission of COVID-19 can be lessened using face masks. Surgical masks are being used by many people in the current pandemic situation. However, do they provide adequate protection against COVID-19?

According to the World Health Organization (WHO), for patient protection, surgical masks are sufficient for health-care staff to wear when they work in the operating room, perforate body cavities, and give care for immuno-compromised patients; WHO also states that patients with airborne infections must wear surgical masks when they are outside the isolation room [4]. In the case of COVID-19, the research findings of Leung et al. [5] suggest that surgical masks can reduce the onward transmission of coronaviruses through respiratory secretions from symptomatic individuals. It implies that surgical masks can control the spreading of COVID-19 from an infected person as they create a physical barrier between the mouth and nose and the surrounding environment. However, it should be kept in mind that they are not designed to block very small airborne particles [6]. Therefore, they may not be effective to stop the penetration of airborne coronaviruses. An experimental study showed that, for surgical masks, the penetration of small virus particles less than 80 nm in diameter can be more than 10% at a lower inhalation rate of 30 L/min whereas it can be above 20% at a higher inhalation rate of 85 L/min [7]. Moreover, surgical masks could allow the virus particles to enter the respiratory system because they loose fit with the face [6]. All these suggest that surgical masks may not give adequate protection for health-care professionals when they are looking after COVID-19 patients. Indeed, surgical masks are not intended to protect the wearer from the environment rather they are designed to protect the environment from the wearer [7].

In fine, surgical masks are not effective in preventing virus particles during inhalation. The nano-size coronavirus could easily penetrate surgical masks. Therefore, relying on surgical masks strategically will not be enough to prevent coronaviruses from entering the respiratory tract. It can be used for symptomatic COVID-19 patients to lessen the spread of viruses through respiratory secretions during exhalation but not for controlling the inward transmission of SARS-CoV-2.

List of References

[1] Mount Sinai Hospital. FAQ: Methods of Disease Transmission. Department of Microbiology, Mount Sinai Hospital: Toronto, Ontario, Canada. Retrieved on March 31, 2020. Available online: https://eportal.mountsinai.ca/Microbiology/faq/transmission.shtml.
[2] World Health Organization (WHO). Pass the Message: Five Steps to Kicking out Coronavirus. WHO: Geneva, Switzerland; March 23, 2020. Retrieved on March 24, 2020. Available online: https://www.who.int/news-room/detail/23-03-2020-pass-the-message-five-steps-to-kicking-out-coronavirus.
[3] Asadi, S.; Bouvier, N.; Wexler, A.S.; Ristenpart, W.D. The coronavirus pandemic and aerosols: Does COVID-19 transmit via expiratory particles? Aerosol Science and Technology 2020, 54(6), 635-638.
[4] World Health Organization (WHO). Prevention of Hospital-Acquired Infections: A Practical Guide; Second Edition, WHO/CDS/CSR/EPH/2002.12; Ducel, G., Fabry, J., Nicolle, L., Eds.; WHO: Geneva, Switzerland, 2002. Retrieved on March 26, 2020. Available online: https://www.who.int/csr/resources/publications/whocdscsreph200212.pdf.
[5] Leung , N.H.L.; Chu, D.K.W.; Shiu, E.Y.C.; Chan, K.-H.; McDevitt, J.J.; Hau, B.J.P.; Yen , H.-L.; Li, Y.; Ip, D.K.M.; Peiris, J.S.M.; Seto, W.-H.; Leung, G.M.; Milton, D.K.; Cowling , B.J. Respiratory virus shedding in exhaled breath and efficacy of face masks. Nature Medicine 2020, 26, 676-680.
[6] FDA (Food and Drug Administration). N95 Respirators and Surgical Masks (Face Masks). U.S. Food and Drug Administration: Maryland, USA. Retrieved on March 28, 2020. Available online: https://www.fda.gov/medical-devices/personal-protective-equipment-infection-control/n95-respirators-and-surgical-masks-face-masks#s2.
[7] Bałazy, N.; Toivola, M.; Adhikari, A.; Sivasubramani, S.K.; Reponen, T.; Grinshpun, S.A. Do N95 respirators provide 95% protection level against airborne viruses, and how adequate are surgical masks? American Journal of Infection Control 2006, 34(2), 51-57.

Md. Safiuddin, Ph.D., P.Eng.
Professor
George Brown College, Casa Loma Campus
146 Kendal Avenue, C Building, Room C303
Toronto, Ontario, Canada M5T 2T9
Adjunct Professor, Department of Civil Engineering
Ryerson University, Toronto, Ontario, Canada M5B 2K3
College Website: https://www.georgebrown.ca/facultybios/Md.-Safiuddin.aspx
Google Scholar: https://scholar.google.ca/citations?user=WboBlwQAAAAJ&hl=en
Research Gate: https://www.researchgate.net/profile/Md_Safiuddin

যোগাযোগ বৈকল্য

হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলেন আপনার ৭ বছর বয়সী সন্তান আপনার কোন কথা ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এতদিন সন্তানের অমনোযোগীতাকে দোষারোপ করে আসলেও আজকে আপনি হঠাৎই কেমন যেন বিচলিত হয়ে উঠলেন সন্তান কে নিয়ে। সন্তান কথা বলতে চায় না। বলতে গেলেও স্পষ্ট উচ্চারণ করে না। অাধ ভাঙ্গা টাইপের কথা বলে। অন্যকারো সাথে কথা বলতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনার সন্তান নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সন্তানকে যদি ইন্ট্রোভার্ট ভেবে থাকেন এবং বয়স বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে ভাবছেন। আপনি হয়তো অনেক বড় ভুল করে ফেলছেন। হয়তো আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত।

এবার সহজ কথায় আসি, যোগাযোগ বৈকল্য (communication disorder) আসলে কি? এটি আমাদের দেশে বেশ নতুন একটি কনসেপ্ট। প্রতিটি মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে শেয়ার করতে চায়, নিজের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণ করতে চায়, সমাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায়। কিন্তু মানুষ যখন কোন কারণে মৌখিক, অমৌখিক/ গ্রাফিকস চিত্রের মাধ্যমে কোন তথ্য প্রেরণ, গ্রহণ এবং অনুধাবনে সমস্যা হয় যার ফলে অন্যের সাথে যোগাযোগে অক্ষম হয়ে পড়ে তাকে বলে যোগাযোগ বৈকল্য। যোগাযোগ বৈকল্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন: ভাষিক বৈকল্য, বাচিক শব্দ বৈকল্য, শৈশবে তোতলানো বৈকল্য, উপলব্ধি বৈকল্য ইত্যাদি।

যোগাযোগ বৈকল্যের প্রধান কারনের মধ্যে পড়ে শ্রবণ – বাকযন্ত্রের সমস্যা, মস্তিষ্কের বিলম্বিত বিকাশ, স্নায়ু ইন্দ্রীয় বৈকল্য, মস্তিষ্ক প্রদাহ ইত্যাদি।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত:
১. একেবারেই কথা বলে না। কথা বলার সময় উচ্চারণে অনেক সমস্যা হয়। একই কথার বারবার পুনরাবৃত্তি করে।

২. কথা শুনতে সমস্যা হয়। সহজ কথা ও বুঝতে পারে না। কথা বলার সময় বাক্যের সঠিক ক্রম মনে রাখতে পারে না।

৩. নির্দেশনা বুঝতে অনেক সমস্যা হয়। সঠিক নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে পারে না।

৪. আই কনট্যাক্ট করতে চায় না। নিজের চুল নিয়ে বা আঙুল নিয়ে খেলা করে কোন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায়।

আপনার সন্তানের মধ্যে যদি লক্ষণগুলো দেখেন। তাহলে হয়তো আপনার সন্তান যোগাযোগ বৈকল্য আক্রান্ত হতে পারে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৪০ মিলিয়ন মানুষ যোগাযোগ বৈকল্যে আক্রান্ত। প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিকভাবে শনাক্তকরণ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার জন্য চাইল্ড সাইকোলজিস্ট বা ভাষিক- বাচন (Speech- Language) বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে পারেন। তাতে হয়তো আপনার শিশুর যোগাযোগ বৈকল্য থেকে কিছুটা হলেও প্রতিকার মিলতে পারে।

—শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউট,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Probable Climate/Weather Factors Influencing the Spread of COVID-19

Based on scientific reasons, the following climate/weather factors are perhaps related to COVID-19 spread.
1. Air moisture: the spread could be lower with higher humidity,
2. Air temperature: the spread could be lower with higher temperature,
3. Wind speed: the spread would be higher with higher wind speed,
4. Sunlight: the spread could be lower with longer duration and greater solar heat of sunlight,
5. Solar light UV: the spread would be lower with higher intensity of UV radiation,
6. Rainfall: the spread could be lower with longer duration and greater intensity of rainfall,
7. Snowfall: the spread could be lower with longer duration and higher intensity of snowfall.

মানুষের শরীরই করোনার বাড়ি

করোনা ভাইরাস ঠেকাতে আমরা অনেকেই অনেক কিছু করছি- সচেতনতার জন্য লিফলেট, মাস্ক, সাবান এবং কি লকডাউন মোকাবেলার জন্য দরিদ্র অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ! আপাত দৃষ্টিতে এই কাজগুলো খুব ভাল কাজ। এবং এসব করে আমাদের আত্ম তুষ্টিরও অভাব নাই।

কিন্তু এই ভাইরাস ঠেকাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিছু না করা!

হ্যাঁ ভাই। আপনি কিছু না করে শুধু মাত্র নিজেকে একা করে ফেলুন অন্যদের থেকে সরিয়ে রাখুন। হোক তা ঘরে বা ঘরের বাহিরে আপনি শুধু আলাদা হয়ে যান! ..
বিশ্বাস করুন এটিই হবে এই ভাইরাস ঠেকাতে সবচেয়ে বড় কাজ। এবং আপনার নিজের ও অন্যের কল্যাণের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারন করোনা ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা শুধু মাত্র মানুষই বহন করতে পারে, মানে এই ভাইরাস শুধু মাত্র মানুষের শরীরেই বসবাস করতে পারে।

তাহলে আপনি নিজেই ভাবুন। আপনার নিজের ও অন্যের উপকার যদি করতে হয় তাহলে কি করতে হবে? সবচেয়ে বেশি উপকার হবে যদি কিছু না করে একা হয়ে যান। এই যুদ্ধটাই এমন। তা নইলে আগামী বিশেষজ্ঞদের মতে এটি সারা পৃথিবীর মানুষকে নিজেদের বসবাসের জন্য দখল করে নেবে। এর মধ্যে ঝরে পড়বে দশ শতাংশ প্রাণ! মানে প্রায় ছয় কোটি মানুষ!

প্লিজ ঘরে থাকুন। একা থাকার সুযোগে বেশি বেশি এবাদত করুন। কোরান পাঠ, জিকির, ও নামাজের মাধ্যমে স্রষ্টার সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ লাভ করুন। আল্লাহ সকলের মঙ্গল করুন। আমীন…

রোগে হয় আক্রান্ত– ভয়ে হয় রুগীর মৃত্যু

কথায় আছে, “আহার নিদ্রা ভয়, যতো বাড়ায় ততই হয়!”
আহার হলো, খাওয়া, ভোজন বা খাদ্য। যা জীবের জীবনধারণে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য যা দরকার, তা-ই। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে যদি প্রতিদিন প্রতি বেলার সাথে এক ছটাক করে বেশি খায়, তাহলে প্রতিদিন তাঁর স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে তিন ছটাক খাবার বেশি প্রয়োজন হয়। এভাবে আজ তিন ছটাক বেশি, কাল চার ছটাক বেশি, পরশু পাঁচ ছটাক করে যদি বাড়তে থাকে; তাহলে ওই ব্যক্তির খোরাক তো দিনদিন বাড়তেই থাকবে। তা-ই নয় কি? হ্যাঁ, হিসাব কষে দেখা যায় অবশ্যই আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। তাই কথায় বলে “আহার” যতো বাড়াতে চায়, ততই বাড়ে! কিন্তু কমে না।

নিদ্রা: নিদ্রা বা ঘুম হলো একরকম দেহের ক্লান্তি দূর করার মহৌষধ! যা অলসতার চাবিকাঠিও বলা চলে। নিদ্রা বা ঘুমকে যতো আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া যায়, ততই ব্যক্তির ঘাড়ে চেপে বসে। নিদ্রা বা ঘুম, এতোটাই অলস যে জীবন বাঁচানোর জন্য খাদ্যকেও দূরে ঠেলে দেয়। সে শুধু ঘুমাতেই চায়। তাই ‘নিদ্রা, বা ‘ঘুম’ যতো বাড়ায় ততই বাড়ে। কিন্তু কমে না।

ভয়: ভয় বা ডর, এ হলো জীবের জন্য একরকম মরণঘাতী ভয়ানক রোগ সংক্রমণ। মানুষের মনের এই ভয় জলাতঙ্ক, ডেঙ্গু, ক্যান্সার, টিবি, যক্ষা, বার্ডফ্লু, আর বর্তমান নভেল করোনা ভাইরাসকেও হার মানায়।

অনেকেই প্রশ্ন রাখতে পারেন, ‘তা কীভাবে?’ তার উত্তর দিতে হলে আমাকে অবশ্যই ভয় নিয়ে নিজের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরতে হচ্ছে। বাস্তব কথা হলো, আমরা অনেকেই জানি কুকুরের কামড়ে নাকি জলাতঙ্ক রোগ হয়! আর জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা না করলে রুগীর মৃত্যু হয়। তা আমি নিজেও জানি এবং শুনেছিও। কিন্তু এই রোগ আমার কখনো হয়নি, আর কখনো এই রোগে ভুগিওনি!
এতে অনেকেই বলতে পারেন, ‘আপনাকে কখনো কুকুরে কি কামড় দিয়েছিল?’ বলবো হ্যাঁ, দিয়েছিল! কিন্তু আমি কুকুরের কামড়ে ভয় পাইনি। তাই আমার জলাতঙ্ক রোগও হয়নি। এই কথা শুনে হয়তো অনেকেই ঘাবড়ে যাচ্ছেন! কিন্তু আমি যা বলছি, তা সত্যি কথাই বলছি!

শুনুন তাহলে– একদিন হঠাৎ আমাকে একটা কুকুরে নিজের অজান্তেই ডান পায়ে কামড় বসিয়ে দিলে! সাথে সাথে কামড়ের জায়গা থেকে রক্ত বেরুতে লাগলো! তা দেখে সামনে থাকা লোকজন বলেছিল, ‘তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের কাছে যান! নাহয়, আপনার সমস্যা হতে পারে!’ আমি কারোর কথা মাথায় নিলাম না। কামড়ের জায়গায় পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান থেকে একটু চুন নিয়ে ঘষে দিলাম। বাসায় গিয়েও কিছু বললাম না, নিজে নিজেই চুপচাপ থেকে গেলাম। এভাবে দুই-তিন দিন পর দেখা গেল, পায়ে কুকুরের কামড়ের জায়গাটি শুকাতে লাগলো। এতে আমি নিশ্চিত হলাম যে, আমার কিছুই হয়নি। আর যদি ভয় পেয়ে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতাম! তাতে কী হতো? ডাক্তার বাবাজী আমার নাভীর চতুর্দিকে চৌদ্দটি ইঞ্জেকশন পুস করতে। এরপর রোজকার খাবার দাবারেও আরোপ হতো নানাবিধ বিধিনিষেধ। তা আর হয়নি, ভয় না পাবার কারণে। তাহলে বুঝতেই পারছে যে, কুকুরের কামড় খেয়ে রক্ষা পেলাম শুধু ভয় না পেয়ে।

এছাড়াও কিছুদিন আগে আমার মেয়ে ফোন করে আমাকে জানিয়েছিল, ওঁর ছোট ছেলেটাকে কুকুরে কামড় দিয়েছে। আমি তা শুনে আমার মেয়েকে ভয় না পাবার পরামর্শ দিলাম। এমনকি কুকুরে কামড় দিয়েছে বলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে নিষেধ করে বললাম! আরও বললাম, এ নিয়ে নিজেদের মনের ভেতর কোনপ্রকার ভয় না রেখে ধৈর্য ধরে অন্তত তিন-চারটা দিন অপেক্ষা করো! দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার কথামতো আমার মেয়ে তা-ই করলো। শেষতক সেই ঘটনা গত হলো, আজ প্রায় তিনমাসেরও বেশি সময়। মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ আশীর্বাদে আমার ছোট নাতির কিছুই হয়নি। আর যদি আমি আমার মেয়েকে ভয় না পাবার পরামর্শ না দিতাম, মেয়ে নাতিকে নিয়ে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতো। ডাক্তার নাতিকে অন্তত একমাসের জন্য চারটে ইঞ্জেকশন দিতো। তারপর সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে গেলেও আমার মেয়ের মনে জলাতঙ্ক রোগের ভয় থেকেই যেতো। কিন্তু না, সেই ভয় আর এখন আমার মেয়ের মনের ভেতরে নেই! আমার নাতি এখন আগের মতনই সুস্থ আছে। তাহলে বুঝতেই তো পারছেন যে, ভয়ে মানুষকে কতদূর নিয়ে ঠেকায়? নিশ্চিত মৃত্যু পর্যন্ত নিয়েও ঠেকায়। তবে আমার মতো কেউ এমন সাহস দেখিয়ে ভয়কে উপেক্ষা করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না কিন্তু। হয়তো আমার কিছু হয়নি ঠিক, অন্য কারোর যে কিছু হবে না; তা কিন্তু গ্যারান্টি নেই। তাই সবাই মনে ভয় না রেখে ডাক্তারের পরামর্শমত রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধও সেবন করতে হবে।

এবার আসি মহামারি ডেঙ্গু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায়। গতবছর আমাদের দেশের খোদ রাজধানী ঢাকা-সহ প্রায় বিভাগীয় জেলা শহরগুলোতে ডেঙ্গুজ্বর একরকম মহামারি আকার ধারণ করেছিল। ওইসময় আমার নিজেরও কিছুদিন প্রচণ্ড জ্বর জ্বর অনুভূত হয়েছিল। কিন্তু ওই জ্বরের কথা আমি আমার নিজের সহধর্মিণীর কাছেও কখনো বলিনি। তখন ওইসময় যদি জ্বরের কথা সহধর্মিণীর কাছে বলতাম, তাহলে অবশ্যই আমাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হতো। আর যদি ওইসময় ওই জ্বর নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতাম; তাহ‌লে অবশ্যই আমাকে হাসপাতালে থাকা ডেঙ্গু বিভাগে ভর্তি হতে হতো। কিন্তু তা আর হয়নি! এতোও রক্ষা পেয়েছি শুধ ভয় না পেয়ে। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া এরকম আরও অনেক ভয়ের ঘটনার বর্ণনা উপস্থাপন করা যায়, কিন্তু তা না করে এবার আসল কথায় আসি।

আসল কথা হলো বর্তমানে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নভেল কোরোনা ভাইরাস। এই নভেল করোনা ভাইরাস দেখা দিয়েছে গণচীন থেকে। যখন গণচীনের উহানে করোনা ভাইরাসের পাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন আমাদের দেশের অনেকেই ভেবেছিল এবার গণচীনকে হয়তো শয়তানে ধরেছে। এখন দেখা গণচীনের কথা পত্রপত্রিকায় বেশি শোনা যায় না, শোনা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আক্রান্তের কথা। এখন এই করোনা ভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বই আতঙ্কিত শঙ্কিত। এই রোগটাও কিন্তু ডেঙ্গু রোগের মতনই জ্বর নিয়েই মানব দেহে দেখা দেয়! জানা যায়, এখন পর্যন্ত এই মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন বা ঔষধ আবিস্কার হয়নি এবং এই রোগ সংক্রমণেরর নির্ধারিত করণীয় কী; তাও সুনির্দিষ্টভাবে কোনও বিশেষজ্ঞ সঠিক মত দিতে পারেনি।

কেউ বলছে এটা করো। কেউ বলছে ওটা করতে হবে। কেউ বলছে এটা ছোঁয়াছুঁয়ি রোগ। একের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে অন্যজন আক্রান্ত হয়। তাই কেউ কারোর সাথে করমর্দন বা হ্যাণ্ডশেক করতে পারবে না। কেউ কারোর সাথে বুকে বুক মেলাতে পারবে না। কেউ কাউকে চুমু দিতে পারবে না। রাস্তায় বেশি ঘোরাফেরা করতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়েও বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। আবার কিছু ভণ্ড তেলেসমাতি সাধু অসাধুরাও নানারকম বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছে নিয়মিত গোমূত্র সেবন করতে। কেউ বলছে শরীরে গোবর মাখতে। কেউ বলছে আবে জমজম কুয়োর পানি সেবন করতে। কেউ বলছে পলিথিনের জামাপ্যান্ট পরে থাকতে। বাইরের আলো-বাতাস, ধূলো বালি যাতে শরীরে না লাগে!কেউ আবার বলছে ঘরে বাইরে না যেতে।

যে যা-ই বলুক-না-কেন, আসল কাজের কিন্তু বেজে যাচ্ছে বারোটা। কাজের কাজ কিন্তু কিছুই হচ্ছে না, বরং এই নভেল করোনা ভাইরাসের জন্মভূমি গণচীন থেকে বেড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দুনিয়াব্যাপী। প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে হাজারে-হাজার। আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষলক্ষ মানুষ। এরমধ্যে ডাক্তার কবিরাজদেরও আদেশ উপদেশ আসছে জোরালোভাবে। এতে সাধারণ মানুষও নভেল করোনা ভাইরাসে ভয়ে হয়ে যাচ্ছে দিশাহীন, অস্থির, আতঙ্ক। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত। সারাবিশ্বের সকল দেশের ব্যবসা বানিজ্য হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এর মূল কারণই হচ্ছে ভয়। মানে, কখন যেন কী হয়! নভেল করোনা ভাইরাসে কী হয় তা আমার জানা নেই। তবে জানা আছে রোগের চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক হলো মানুষের মনের ভয়!

আমার মতে এই করোনা ভাইরাস বা রোগটি যত না মরণঘাতী, তারচেয়ে বেশি মরণঘাতী হলো আমাদের মনের ভয়! আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, এই রোগ মানব দেহে ঢুকে যতটুকু ক্ষতি না করে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে মানুষের মনের ভয়ে। বিশ্ব বিশেষজ্ঞরাও বেশি বেশি করে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তাই বলছি, করোনা ভাইরাস যেমন-তেমন, মানুষ ভয়ে কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করছে সবচেয়ে বেশি।

আমার পরামর্শ:
পরামর্শ হলো, ‘ভয়’! মানে নিজের মনের ভয়কে জয় করতে হবে। পাশাপাশি বিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শও গ্রহণ করতে হবে। করোনা ভাইরাস আসুক বা না আসুক। ধরুক বা না ধরুক রোগে। আমাকে থাকতে হবে নির্ভয়ে। আমি যদি ভয়ে কাতর হয়ে পড়ি, তাহলে শুধু করোনা ভাইরাসই নয়, আমাকে নানারকম রোগেও কাবু করে ছাড়বে। মনের ভয় না যাওয়া পর্যন্ত আমাকে কোনও বিশেষজ্ঞের ভালো নামী-দামী ঔষধেও ধরবে না। আর আমিও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাবো না। বরং দিনদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বো। তাই আসুন, আমরা আগে ভয়কে জয় করতে শিখি। তারপর নিজেদের মনের সাহস দিয়ে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করি।

ধূমপানের কারণে আমার মৃত্যু হলে সরকার দায়ী থাকবে

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকগুলো সিগারেট কোম্পানি আছে। যা Tobacco company নামে পরিচিত। সেসব কোম্পানিগুলোর তৈরি অনেক রকমের সিগারেট বাজারে আছে এবং প্রত্যেকটি সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ বা ‘ধূমপানের কারণে মৃত্যু হয়’ বা ‘পরোক্ষ ধূমপান মৃত্যু ঘটায়’ ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যি, ধূমপান এক বদ নেশা। যা আমি নিজেও জানি। আবার বুঝিও ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ-ও বুঝি ধূমপান আবার নেশার জগতে শিরোমণি। কারণ, ধূমপানের মাধ্যমেই নেশার জগতে মানুষের পা রাখা শুরু হয়। তাই ধূমপানকে অনেকেই নেশার জগতের নাটের গুরুও বলে। এর একটা কারণও আছে। কারণ হলো প্রাথমিক শিক্ষা যাকে বলে। যে কোনো মানুষ নেশার জগতে পা রাখার আগেই ধূমপান থেকেই নেশা করার শিক্ষাটা শুরু হয়।

তাই দেখা যায়, বিশ্বে যতপ্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য আছে, তার মধ্যে সিগারেট হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় নেশা জাত দ্রব্য। আর যেসব নেশাখোর আছে, প্রত্যেকেই ধূমপান থেকে শুরু করেছিল নেশার জগতে পা রাখা। নেশাখোররা প্রথমে বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা অথবা যে-কোনো তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে শিখে ছিল গাঁজা সেবন করা। এরপর গাঁজার মহাগুরু হয়ে ধরেছিল হিরোইন, মদ, আফিম, ফেন্সিডিল, ইয়াবা-সহ নানাধরণের নেশা। শুরু হয়ে গেল নেশাখোরের সাথে মাদক জাত দ্রব্যের সাথে সখ্য ও বন্ধুত্ব গড়া। এরপর থেকে শুরু হয় নেশার জগতে পা রাখা। আর নেশাগ্রস্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরা।

আমিও একজন নেশাখোর। তবে সিগারেট খোর। সিগারেট ছাড়া অন্য কোন নেশা জাতীয় দ্রব্যের সাথে এখনো আমার পরিচয় ঘটেনি। বন্ধুত্ব গড়েছি শুধুমাত্র সিগারেটের সাথেই। এই মরণ নেশা তামাকজাত দ্রব্য সিগারেটের সাথে আমার পরিচয় ঘটে ছোটবেলা থেকে। যখন আমি হাঁটি হাঁটি পা পা করে বড় হতে শুরু করেছি, তখন থেকে। দেখেছি মানুষকে ধূমপান করতে। কাউকে দেখেছি হুঁকা বা হুক্কার কল্কিতে তামাক ভরে টানতে। কাউকে টানতে দেখেছি বিড়ি। কারোর হাতে দেখেছি চুরুট। কাউকে দেখেছি সিগারেট টানতে। দেখতে দেখতে একসময় নিজেও একজন মস্ত বড়ো ধূমপায়ী হয়ে উঠলাম। আমি ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠি আমার ঠাকুমার ব্যবহার করা হুঁকা বা হুক্কা টেনে।

তবে আমি চুরিচামারি করে হুক্কা টেনে ধূমপান করা শিখিনি। হুক্কা টানতে বাধ্য হয়েছি একজন গ্রাম্য কবিরাজের পরামর্শে। গ্রাম্য কবিরাজও হুক্কা টেনে ধূমপান করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন বাধ্য হয়ে। কবিরাজের এরকম বাধ্যবাধকতা ছিল আমার পেটের পীড়া নিয়ে। সেসময় আমি সারাদিন যা খেতাম, কিছুক্ষণ পর সবই বমি হয়ে বের হয়ে যেতো। এই অবস্থা দেখে আমার মা পাশের গ্রামে থাকা এক কবিরাজের শরণাপন্ন হলেন। মা গ্রাম্য কবিরাজের কাছে আমার সমস্যা সব খুলে বললেন। কবিরাজ তাঁর কেরামতি চিকিৎসা শুরু করলেন। ঔষধ দিলেন।

নিয়মিত ঔষধ সেবন করেও যখন পেটের বদহজম দূর হচ্ছিল না। তখন গ্রাম্য কবিরাজ পড়ে গেলেন দুশ্চিন্তায়! কবিরাজের সাথে আমার মা-বাবা-সহ সংসারের সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। উপায়ান্তর না দেখে কবিরাজ হুক্কা টেনে ধূমপান করার পরামর্শ দিলেন। হুক্কা টেনে ধূমপান করতে হবে যখন যা কিছু যা-কিছু খাওয়া-দাওয়া তখন। কবিরাজের পরামর্শ হলো, খাওয়ার পরপরই হুক্কা টেনে ধূমপান করতে হবে। গ্রাম্য কবিরাজের পরামর্শে ঠাকুমার হুক্কা থেকে ধূমপান করা শুরু। কিন্তু আমার মা জননী কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না। আমি ছিলাম ঠাকুমার প্রিয় আদরের নাতি। তাই আমার ঠাকুমার জোরাজুরিতে মা আর রাজি না হয়ে পারলেন না। মা-ও রাজি হয়ে গেলেন।

এরপর থেকে শুধু খাওয়া দাওয়াই নয়, খাওয়া-দাওয়ার আগে-পরেও আমার হুক্কা টানা চলতোই। সেই থেকেই আজ আমি নামকরা একজন ধূমপায়ী ব্যক্তি। প্রতিদিন অন্তত ছোট প্যাকেটের ৫ থেকে ৬ প্যাকেট সিগারেট না হলে আর আমার চলে না। ভোরের ঘুমভাঙা থেকে শুরু করে রাতদুপুর পর্যন্ত খানিক পরপর চলতেই থাকে আমার সিগারেট টানা। ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময়ে যখন গ্রাম ছেড়ে স্বপরিবারে শহরে আসি। শহরে এসে প্রায় দুইবছর লেখাপড়া বন্ধ রাখি। ১৯৭৪ সালে আবার স্কুলে ভর্তি হই। স্কুলে যাবার সময় আমার সাথে ‘কাইয়ুম বিড়ি’ থাকতো। সেই বিড়ি স্কুলের বাথরুমের উপরে থাকা ভেন্টিলেটর নামের ছোট একটা খোপে লুকিয়ে রাখতাম। টিফিনের সময় কিছু খেয়ে স্কুলের পেছনে গিয়ে গোপনে একটা বিড়ি টানতাম। সেই টানা আজ পর্যন্ত চলছেই। বর্তমানে আমার বয়স ৫৬ বছর গত হতে চলছে। বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে ধূমপানও।

দৈনন্দিন জীবন চলার মাঝে অনেক ধূমপান বিরোধী ব্যক্তি আমাকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে বলে। বলে আমার ভালোর জন্যই। কিন্তু আমি কিছুতেই ধুমপান থেকে বিরত থাকতে পারি না। মুখে বলি হ্যাঁ, এই ছেড়ে দিচ্ছি! কিছুক্ষণ পর হ্যাঁ ভুলে গিয়ে বা হ্যাঁ’কে তুচ্ছ করে আবার টানতে থাকি স্বাদের ধূমপান নামের সিগারেট। বুঝতে পেরেছি আমি এখন ধূমপানে বা সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়েছি। তবে ৬ থেকে ৭ বছর বয়স থেকে ধূমপান শুরু করে অদ্য পর্যন্ত আমি একটু কাশিও দেই না। সিগারেটের কারণে বা ধূমপানের কারণে আমার তেমন কোনও শারিরীক সমস্যাও দেখা দেয়নি। আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ সবল এক ব্যক্তি। তারপরও সময় সময় এই ধূমপানের কারণে অনেক মানুষের অনেকরকম কথা শুনতে হয়। শুনতে হয় ঘরের গিন্নির বকুনি। শুনতে হয় ডাক্তারের সাজেশনও। কিন্তু এতকিছুর পরও আমি আমার এই বদ নেশা ধূমপান ছাড়তে পারছি না এবং ধূমপান না ছাড়ার পক্ষেই থাকি।

তা কেন থাকি? থাকি ধুমপানের মধ্যে একটা ‘আভিজাত্য’ আছে বলে। পৃথিবীর অনেক ক্ষমতাবান অভিনেতা অভিনেত্রীদের ছবিতে তাদের হাতে কিংবা ঠোঁটে চুরুট বা সিগারেট দেখি। আমি মনে করি এটা শুধু আমাকে দেখানোর জন্য অভিনয় করা নয়, এটা তাদের অভিনয়ের বাইরেও যেন একটা আভিজাত্য। একটা সময় ছিল  গ্রাম শহরের মানুষের বৈঠকখানায় হুঁকা বা হুক্কা ছিল। সেসময় হুক্কা শুধু বিচার সালিশেই বৈঠকখানায়ই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল অনেকের বাড়িতেও। এটা ছিল তখনকার সময়ের একরকম আভিজাত্যের প্রতীক। রাজা জমিদারদের বৈঠকখানায়ও লম্বা নল বা পাইপের সাহায্যে তাঁরা হুঁকা বা হুক্কা টানতো। কথিত আছে, ‘এক চুলুম তামাকের বিনিময়ে নিজের এক কাঠা জমিও তামাক সমাদরকারীকে লিখে দিয়েছিলেন’। সেই পাইপওয়ালা হুক্কা তো এখন নেই বললেই চলে। যদিও থাকে তো ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিজে। যেখানে সিনেমা নাটক তৈরি হয়। তবে আগেকার দিনের ধনী ব্যক্তিদের বাড়ির পুরনো কোঠায় সেই যুগের দুই একটা হুঁকা বা হুক্কা এখনো থাকতে পারে বলে মনে হয়।

এছাড়াও হুক্কা শহর ছেড়ে গ্রামের পুরনো গৃহস্থদের ঘরেও থাকতে পারে। তা থাকুক আর না থাকুক, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। মাথা ঘামাচ্ছি এই যুগের সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা রয়েছে, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ বা পরোক্ষ ধূমপান মৃত্যু ঘটায় এই নিয়ে। আচ্ছা, তাই যদি হয় তাহলে রাষ্ট্র কেন এইসব সিগারেট কোম্পানিদের ব্যবসা করতে লাইসেন্স দিলো? যেহেতু এটা বিষের সমতুল্য সেহেতু এটাকে কেন বৈধ ব্যবসা হিসেবে সরকার অনুমোদন দিলো? তাহলে ধূমপানের কারণে মৃত্যু হয় এই কথাটা কতটুকু সত্য প্রমাণিত হচ্ছে? মদ পানে মাতাল হয়, গঞ্জিকা সেবনে পাগল হয়, ইয়াবা সেবনে নেশা হয়। আবার অনেকের জীবনও ধ্বংস হয়ে যায়, মারাও যায়। তাই সেসব মাদক জাত দ্রব্য সরকার নিষিদ্ধ করেছে এবং সেসব জীবন হরণকারী মাদক জাত দ্রব্যের ব্যবসাও নিষিদ্ধ করেছে।

সিগারেট যদি সেসব মাদক জাত দ্রব্যের সমতুল্য হয়, তাহলে সিগারেট বিড়ি তৈরি ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ-সহ এসব দ্রব্যাদি নিষিদ্ধ করছে না কেন? শুধু প্যাকেটের গায়ে লিখে দিলেই কী এর মরণ থাবা থেকে জাতি রেহাই পাবে? পাবে না। ধূমপানের কারণে যদি মানুষের মৃত্যুই হয়, তাহলে অন্যান্য মাদক জাত দ্রব্যাদির মতো সিগারেট কোম্পানিগুলোও বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করি। তা কী এদেশের সরকার কখনো করবে? মনে হয় না। এতেই বোঝা যায় ধূমপানের কারণে মানুষের মৃত্যু হয় না। তাই আমিও ধূমপান করা ছেড়ে দিচ্ছি না। দেখি শেষতক আমার কী হয়! কিছুই হবে না বলে বিশ্বাসও করি।

কারণ,আমি দেখে আসছি ধূমপানের কারণে মৃত্যু হয় না। পরোক্ষভাবে কারোর ক্ষতি হয় না। যদি এমনই হতো, তাহলে গ্রাম শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লার দোকানে দোকানে সিগারেট বিড়ি বিক্রি হতো না। সরকারও এসব মাদক জাত দ্রব্যাদি সিগারেট বিড়ি ওপেন বিক্রি হতে দিতো না। যদিও বিক্রি হতো তা মদ গাঁজা আফিম, হিরোইন, ইয়াবার মতো গোপনে গোপনে। কিন্তু না, এই সিগারেট বিড়ির নেশাখোররা রাস্তাঘাটে, লঞ্চ-স্টিমারে, ট্রেনে লোকালয় থেকেই কিনে মনের আনন্দে টানছে। খোলা আকাশের চিনে দিব্বি টেনেই যাচ্ছে। আর সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সহ ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীরা মৃত্যু মৃত্যু বলে চিল্লাচিল্লি করে বলছে, ‘ধূমপান থেকে বিরত থাকুন! ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!’ আরেক দিকে সিগারেট বিড়ি কোম্পানিগুলোও প্যাকেটের গায়ে লিখে দিচ্ছে, ‘ধূমপানে মৃত্যু ঘটায়, ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়, পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

আসলে মনে হয় ধূমপানের কারণে মানুষের কোনও ক্ষতিই হয় না। যদি হতো, তাহলে আমারও হতো। আর যদি কোনও সময় এই ধূমপানের কারণে আমার কোনও ক্ষতি হয় বা মৃত্যু হয়, তাহলে আমি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সহ সরকারকেই দায়ী করবো। সরকার কেন এই Tobacco company গুলো বন্ধ না করে লোক দেখানে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লিখে দিচ্ছে, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?’ তাই ধূমপানের কারণে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে সরকার।

‘আম্মা, আমার জ্বর আসছে’

পৃথিবীর যেখানেই তুমি থাকো, জ্বর এলে তোমার ঠিক একই রকম অনুভূতি হবে। যে অনুভূতি তোমার বেশ পুরনো। যে অনুভূতি তোমার খুবই পরিচিত। চুলোর উপরে ফুটতে থাকা ভাতের পাতিলের ঢাকনা কাঁপতে কাঁপতে তার ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া বাষ্পের মত মনে হতে থাকবে তোমার প্রতিটি শ্বাস নিঃশ্বাস। যে খাবারই মুখে নেবে তুমি মনে হবে লবনটা খানিক বেশি হয়ে গেছে বোধহয়, কিংবা লবন দিতেই ভুলে গেছে সারাদিন সংসার গুছানো আম্মাটা।

চোখ মেলে যাই দেখবে তুমি তার উপর ছড়িয়ে থাকবে মিহিন একটা হলদে রঙের আভা। পুরোটা ঘর, জানালার ওপারের আকাশ আর সমস্ত গাছগাছালি ছেয়ে থাকবে সেই মিহিন হলুদের আলো। বেলকনির গ্রীল ছুঁয়ে আসা বাতাস কিংবা মাথার উপর ঘুরতে থাকা একঘেয়ে পাখার বাতাসটাও মনে হবে ফ্রীজের বরফ ভেঙে ভেঙে তোমার মুখের উপর অসহনীয় হয়ে ঝড়ে পড়ছে।

আর অতীতের সকল জ্বরের দিনগুলো একে একে তোমার মনে পড়তে থাকবে। মনে পড়তে থাকবে মাগরীবের পর একদিন সবাই সবক মুখস্ত করছিল আর তুমি এক পাশে একটা তোষকের উপর শুয়েছিলে। তোমার জ্বরাক্রান্ত গরম চোখের পানিতে গাল ভাসিয়ে তুমি সেই হেফজখানার সন্ধ্যায় ভাবছিলে মূলত তোমার আম্মার কথা। মনে পড়বে তোমার এক জ্বরের রাতে তোমার মামা তোমার জন্য সন্দেশ নিয়ে এসেছিলো একটা বাদামী রঙের ঠোঙ্গায় করে। মনে পড়বে জ্বরে ভরা এক বর্ষার মধ্যরাতে তোমার বড়কাকা; যাকে তুমি খুব ভয় করতে তার কাঁধেই মাথা রেখে নেতিয়ে পড়ে ছিলে তুমি। আর উঠানের পাশে আসা বর্ষার পানিতে বড়কাকা তোমাকে টর্চ জ্বেলে দেখাচ্ছিল মাছ কী করে ঘুমায়।

এভাবেই তোমার মনে পড়তে থাকবে আরও অনেককিছু। এগুলো ভাবতে ভাবতেই তুমি হঠাৎ খুব বিরক্ত হয়ে উঠবে তোমার নিকটবর্তী কোন শব্দের যন্ত্রণায়। কারন আশে পাশের খুব ছোটছোট শব্দ গুলোও তোমার কানে এসে অহরহ বারি খেয়ে যেতে থাকবে। কেউ কাউকে ডাকার শব্দ, থালাবাসন রাখার শব্দ, কিংবা রাস্তায় চলাচল করা রিক্সার টুংটাং বেল কিংবা প্রতিবেশীদের হাসিহাসির আওয়াজগুলোও খুব সূক্ষ্ম সূচের মত তোমার কানের পর্দায় এসে বিঁধতে থাকবে। এই সচরাচর আর অতি সাধারণ আওয়াজগুলোও তোমাকে বড্ড যন্ত্রণা দেবে। কারন এসব কোন আওয়াজের সাথেই তুমি প্রতিদিনকার মত আজ আর মিশে যেতে পারছো না। এলোমেলো বাসি বিছানাটা তোমাকে কেমন যেন কারাগারের মতই আটকে রেখেছে। এই কারাগারে কোন তালা নেই তবুও কেন যেন তুমি বেরিয়ে পড়তে পারছো না। মুক্ত এই কারাগারের জীবনটা তালাবদ্ধ কারাগারের চেয়েও কঠিন মনে হতে থাকবে। সময়টাকে মনে হতে থাকবে কেবলই করুণ একটা মহাকাল। বিছানার পাশের রুটির প্যাকেট, ফলের বাটি আর দুধের গ্লাসটা তোমাকে আরও যেন বিষণ্ণ করে তুলবে। প্যারাসিটামলের পাতাটাকে মনে হবে বিষণ্ণতা পেরোনোর ভাঙাচোরা কিন্তু প্রয়োজনীয় একটা মই।

তখন জ্বরের সময়। তখন কিছুই আর ভাল লাগবে না তোমার। নিত্যদিনের পরিচিত পুরো পৃথিবীটাকেই কেবল প্রতিপক্ষ মনে হতে থাকবে। তখন ভালো লাগবে শুধু তোমার গরম কপালে প্রিয় জনের ঠান্ডা একটা হাত। ঘোরলাগা জ্বরের হলুদ পৃথিবীতে শুধু তোমারই জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া একটা মুখ। যেই হাতটা তোমার আম্মার। যেই মুখটা তোমার আব্বার। তোমার বোনের, তোমার ভায়ের কিংবা আরও কোন প্রিয় জনের…

আপনার ঘরেই আছে ডেঙ্গুর প্রতিকার

আপনার ঘরেই আছে ডেঙ্গুর প্রতিকার

ডেঙ্গু বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আক্রান্ত কয়েক হাজার, মৃত্যুর সংখ্যা এখনো ৫০ ছাড়ায়নি। তারপরেও কি আতংক? দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন, এমনও নজির আছে। ডেঙ্গুর কারণে অকাল মৃত্যু হতে পারে, এই কারণেই কি এতো আতঙ্ক? ভেবে দেখেছেন? ফরমালিন, ভেজাল তেল, বায়ুদূষণ, ধুমপান, ফাস্টফুড, স্থুলতার জন্য প্রতিবছর কত লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়?

এমন না যে মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু রোগ হবে বা ডেঙ্গু হলেই মৃত্যু। এমন না যে ডেঙ্গুর কোন চিকিৎসাই নাই এবং প্রতিরোধের কোন উপায় নাই। গুজব বা আতঙ্ক ছড়ানো, পরিস্থিতির অবনতিই ঘটায়। কোন উপকারে আসেনা। ডেঙ্গু মহামারী কে পরাজিত করার কিছু সহজ ও কার্যকর প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রতিরোধঃ

ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। বাড়ির বাইরে মশা নিধন সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের উপরে নির্ভর করে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে মশা, আপনার ঘরে প্রবেশ করবেনা বা কামড়াবে না। মশার হাত থেকে বাঁচতে আমরা প্রতিরাতেই কয়েল, এরাসল, মশারী ব্যবহার করি। তবে অনেক ভেষজ, মশলার গন্ধ মশাসহ অনেক কীটপতঙ্গ সহ্য করতে পারেনা, ফলে পালিয়ে যায়। এদের Mosquito Repellent বলে। যেমনঃ

রসুনের নির্যাসঃ কাঁচা রসুনের গন্ধ মশা খুব অপছন্দ করে। রসুনের নির্যাস পানিতে গুলিয়ে ঘরের ভিতর স্প্রে করুন বা হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিন। দেখবেন মশার উপদ্রব প্রায় চলে গেছে। যে ঘরে সন্ধ্যার পর মশা ভনভন করতো, সেখানে মশা প্রায় প্রবেশই করবেনা। সন্ধ্যার সময় মশা সাধারণত ঘরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার ঠিক আগে কাঁচা রসুনের নির্যাস স্প্রে করে দিন। বিশেষত সোফা, টেবিল, খাটের উপরে-নিচে, আলনায় কাপড়ের ফাঁকে। মনে হতে পারে এটা করলে রসুনের গন্ধে ঘরে থাকা যাবেনা, আসলে এভাবে স্প্রে করলে বা ছিটিয়ে দিলেও রসুনের গন্ধ আপনি পাবেন না, কিন্তু মশা ঠিকই পালাবে। আমি নিজে এটা করে আশাতীত ফল পেয়েছি।

গ্রিনটিঃ ভেজা গ্রিনটির পাতি বা টিব্যাগ ঘরের মধ্যে রেখে দিলেও সে গন্ধে মশা আসেনা। তবে চিনি দেয়া পানিতে ডুবালে আর কাজ হবেনা। আমি এখনও প্রতিদিন কিছুটা গ্রিনটির পাতা পিরিচে নিয়ে সামান্য পানিতে ভিজিয়ে দেই। পাতাগুলো সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে এমন না। একটা পিরিচে ১/৪ চামচ বা একটা টিব্যাগ ছিঁড়ে গ্রিন টি নিয়ে তাতে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি। পানি পেয়ে কিছুক্ষণ পরে পাতাগুলো ফুলে কয়েকগুণ বড় হয়ে যাবে। এরপর রেখে দিন। অবাক কান্ড, ঘরে মশা প্রায় আসবেই না। প্রতিদিন বিকালে বা সন্ধ্যায় এটা করবেন। প্রতিদিন কিছুটা নতুন পাতা যোগ করবেন। তাহলে কার্যকারীতাটা বজায় থাকবে।

এছাড়াও নিমপাতা, নিমের তেল, দারুচিনি, ইউক্যালিপটাস পাতা, তুলসী পাতা মশা তাড়ায়। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে গ্রিন-টি সবচেয়ে কার্যকর, তারপরে রসুন। এগুলো আপনার রান্নাঘরেই পাবেন।

ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

নিমঃ পেপে পাতা ডেঙ্গুর মহৌষধ এটা সবাই জানে। এছাড়াও আরও অনেক ভেষজ ডেঙ্গু রোগে অত্যন্ত কার্যকর। রক্তের প্লাটিলেট ও শ্বেতরক্তকণিকা কমে যাওয়া ডেঙ্গু সবচেয়ে মারাত্মক লক্ষণ। নিম রক্তে প্লাটিলেট ও শ্বেতরক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। এছাড়া রক্ত পরিষ্কার, শরীর ও রক্ত থেকে দূষিত/বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিমের আছে বহুমুখী এন্টিবায়োটিক গুন। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত অসংখ্য রোগের জন্যও নিম উপকারী।

চিরতাঃ চিরতা বাংলাদেশে খুব পরিচিত, প্রচলিত এবং সহজলভ্য একটা ভেষজ। চিরতা রক্ত পরিষ্কার করে, অনেক ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস জনিত রোগে কার্যকর। চিরতা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায়, ক্ষুধামান্দ্য ও জ্বরের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।

উপকারী খাবারঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান। পেঁপে পাতার মত পেপে এবং পেপে বীজ ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডালিম/আনার/বেদানা, ডাবের পানি, মেথি, হলুদ+দুধ, ব্রকোলি (যদিও বিদেশী সবজী), পালংশাক (যদিও শীতের সবজী)

বর্জনীয় খাবারঃ তৈলাক্ত খাবার, অধিক মশলাযুক্ত খাবার, অত্যাধিক ক্যাফেইন যুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

ডাক্তার কদম আলীর ভুল চিকিৎসার গল্প

একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের দোকানের একজন কম্পাউন্ডার। নাম তাঁর কদম আলী। লেখাপড়া মোটামুটি। কিন্তু বড় ধরনের কোনও ডিগ্রি তাঁর ছিল না। তবুও তাঁর ঔষধের দিকেই ছিল বেশি খেয়াল। তাই উঠতি বয়স থেকেই নিজের এলাকায় থাকা একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের দোকানে বলেকয়ে চাকরি নেয়। তাঁর কাজ হলো প্রেসক্রিপশন দেখে রুগীকে ঔষধ বুঝিয়ে দেওয়া। কদম আলী ঔষধের দোকানে চাকরি নেওয়ার পর থেকে খুব সুনামের সাথেই কাজ করে যাচ্ছে। কদম আলীর আশা, একদিন সেও একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হবে। দিবে ঔষধের দোকান। বসবে কোনও এক চেম্বারে। করবে অনেক টাকা রোজগার।

তাই তাঁর নজর থাকে ডাক্তারের দিকে। ডাক্তার রুগী দেখে, রুগীর কথা শুনে, কোন রোগের জন্য কোন শিশির ঔষধ লিখে; তা কদম আলী খেয়াল করে মুখস্থ করে রাখে। সময়সময় প্রেসক্রিপশন হাতে পেয়ে রুগীকে জিজ্ঞেস করে, আপনার রোগটা কী? রুগী যদি বলে মাথাব্যথা, তা কদম আলী মনে করে রাখে মাথাব্যথা ঔষধ এটা! এভাবে পাঁচ থেকে ছয় বছর কদম আলী খুব মনোযোগের সাথে রোগ নিরাময়ের ঔষধ এবং করনীয় সবকিছু মুখস্থ করে ফেলেছে। এখন কদম আলীকে ডাক্তারের বেশি কিছু বুঝিয়ে দিতে হয় না। কদম আলী ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখে ফটা-ফট ঔষধ বানিয়ে রুগীকে বুঝিয়ে দিতে পারে।

একদিন এক রুগী পেটব্যথায় আক্রান্ত হয়ে এই হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে আসে। ডাক্তার রুগী দেখে প্রেসক্রিপশনে লিখে ছিল, ৩ নম্বর শিশি থেকে ৫ ফোঁটা, আর ৪ নম্বর শিশি থেকে ৫ ফোঁটা, ৫ গ্রাম পাউডারের সাথে মিশিয়ে, (৬+৬) ১২টি পুরিয়া বানিয়ে রুগীকে দিতে হবে। রুগী ৪ ঘণ্টা পরপর ১ পুরিয়া করে সেবন করবে। একদিন পর আবার রুগীকে ডাক্তারের কাছে আসতে হবে। রুগীর অবস্থা দেখে ডাক্তার পরবর্তী ব্যবস্থা নিবে। প্রয়োজনে নতুন ঔষধ দিবে। কদম আলী প্রেসক্রিপশনের লেখা অনুযায়ী ৩ নম্বর শিশি থেকে আর ৪ নম্বর শিশি থেকে ৫ ফোঁটা করে বিশেষ পাউডারের সাথে মিশিয়ে, ১২ পুরিয়া বানিয়ে রুগীকে বুঝিয়ে দিলো। রুগী ঔষধ নিয়ে বাড়ি চলে গেলো। রুগী বাড়ি গিয়ে ডাক্তারের দেওয়া ঔষধের পুরিয়া ৪ ঘণ্টা পরপর সেবন করে চলছেন। ঔষধ সেবনের পর রুগী মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠলেন। আগের মতন আর তেমন পেটব্যথা রুগীর নেই। তবু রুগীর মনের ভয় সরছে না। কারণ, ডাক্তার বলেছে একদিন পর আবার ডাক্তারের কাছে যেতে। ডাক্তার যদি বলে, আপনি এখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ, তাহলেই রুগীর মন থেকে রোগ বিষয়ে সন্দেহ দূর হবে। এই ভেবে রুগী আবার ডাক্তারের দোকানে আসলেন।

ডাক্তার সেদিন দোকানে নেই। ডাক্তার গেছেন ঔষধের জন্য শহরে। দোকানে আছে কম্পাউন্ডার কদম আলী। কদম আলী রুগীকে দেখে হাসতে হাসতে বললেন,
–কী খবর ভাইজান, কেমন আছেন, পেটব্যথা সেরেছে?
–সেরেছে কম্পাউন্ডার সাহেব। তো ডাক্তার সাহেব কোথায়?
–কেন? ডাক্তার সাগেবকে কী দরকার? ডাক্তার সাহেব শহরে গেছে ঔষধের জন্য। যা বলার আমাকে বলতে পারেন। কোনও সমস্যা নেই!
–না মানে, ঐযে ডাক্তার সাহেব বলেছিল আবার আসতে!
–আবার আসতে বলেছে এই কারণে যে, যদি আপনার পেটব্যথা না সারে, তাই। এখন আপনার কি পেটব্যথা আছে? যদি থাকে তো আমিই ঔষধ দিয়ে দিতে পারবো।
–আমি এখনো পুরোপুরিভাবে সুস্থ হইনি। মাঝেমধ্যে চিনচিন করে ব্যথা করে। আপনি যদি পারেন তো আমাকে ঔষধ দিয়ে দিন।

রুগীর কথা শুনে কম্পাউন্ডার কদম আলী খুশিতে আটখানা। কদম আলীর মুখে সাফল্যের মুচকি হাসি। মনে মনে বলতে লাগলো, এতো বছর ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখে ঔষধ বানাতে বানাতে কি কিছুই শিখিনি? ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখেছে ৩ নম্বর শিশি থেকে ৫ ফোঁটা ঔষধের সাথে ৫ গ্রাম পাউডার মিশিয়ে ৬ পুরিয়া, ৪ নম্বর শিশি থেকে ৫ ফোঁটা ঔষধের সাথে ৫ গ্রাম পাউডার মিশিয়ে ৬পুরিয়া বানাইয়া দিতে। তা তো আমার বেশ মনে আছে! এই রুগীর তো আগের রোগই, “পেটব্যথা”। নতুন তো আর কোনও রোগ নয়। আগের নিয়মে ঔষধ বানিয়ে দিলেই তো হবে। এই ভেবে কম্পাউন্ডার কদম আলী ঔষধের আলমারির থেকে ৩ নম্বর শিশি আর ৪ নম্বর ঔষধের শিশি বের করলো। শিশি বের করে দেখে ঔষধের শিশিতে ঔষধ নেই। ৩ নম্বর শিশি আর ৪ নম্বর শিশি খালি। কম্পাউন্ডার কদম আলী ভাবতে লাগলো, এখন কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে কম্পাউন্ডার কদম আলীর মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি এসে গেল।। বুদ্ধি হলো, (৪+৩=৭) চার-এ তিনে=সাত নম্বর শিশি। আবার (৫+৫=১০) ফোঁটা ঔষধ। আর (৫+৫=১০) গ্রাম বিশেষ পাউডার। ব্যস হয়ে গেল রুগীর রোগ নিরাময়ের ঔষধ। “এতো বছরে কি কিছুই শিখতে পারিনি? ডাক্তারা একটু বেশিই বুঝে থাকে। দুইরকম শিশির ঔষধের দরকার কী ছিল?” মনে মনে ভাবলেন কদম আলী।

এই ভেবে কদম আলী আলমারি থেকে ৭ নম্বর শিশি বের করলো। ১০ গ্রাম আন্দাজ পাউডারের সাথে ৭ নম্বর শিশি থেকে ১০ ফোঁটা ঔষধ মিশিয়ে ১২পুরিয়া বানিয়ে রুগীর হাতে দিয়ে বললো, “আগে যেভাবে সেবন করেছেন, ঠিক সেভাবেই সেবন করবেন। আশা করি আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে আসতে হবে না। ইনশাল্লাহ্ একশো তে একশো সুস্থ হয়ে যাবেন। রুগী খুশি হয়ে কম্পাউন্ডার কদম আলীর হাতে ঔষধের মূল্য বাবদ ১০টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেল। কদম আলী দুইহাত তুলে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ, তুমি আমার মনের আশা পূরণ করেছো। আমি এখন নিজেই ডাক্তারি করতে পারবো। তুমি দয়াময় আমার সহায় থেকো।

রুগীর বাড়ি ডাক্তারখানা থেকে অল্প একটু দূরে। রুগী বাড়ি গিয়ে প্রথমে ১ পুরিয়া ঔষধ সেবন করলো। ৪ ঘণ্টা পরে আবার ১পুরিয়া ঔষধ সেবন করলো। এই দুই পুরিয়া ঔষধ সেবন করার পাঁচ মিনিট পরই শুরু হয়ে গেল রুগীর পেটব্যথা, বমি আর পাতলা পায়খানা। রুগী বদনা নিয়ে ল্যাট্রিনে যায় আর আসে। রুগী তাঁর হাতের বদনা মাটিতে রাখার সময় পাচ্ছে না। পেটের ব্যথায় রুগীর ডাক চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে গেল। রুগীকে সবাই জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? রুগী সবার কাছে সব বৃত্তান্ত খুলে বললো। রুগীর কথা শুনে গ্রামের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ডাক্তারের দোকানের উদ্দেশে রওনা হলো। তাদের সাথে যোগ হলো আরও অনেক মানুষ। মুহূর্তে শখানেক লোক ডাক্তারের দোকানের সামনে জড়ো হয়ে গেল। । শখানেক লোকের আগমন দেখে কম্পাউন্ডার কদম আলীর একটু খুশি খুশি ভাব হতে লাগলো। কদম আলী মনে মনে ভাবতে লাগলো, রুগী ১পুরিয়া ঔষধ সেবনের পরই তাঁর পেটব্যথা সেরে গেছে। এই খবর মনে হয় গ্রামে ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে লোকগুলো আমাকে একনজর দেখতে এসেছে। দোকানে এসে সবাই যখন বলতে লাগলো, কদম আলী কোথায়? কম্পাউন্ডার কদম আলী খুশির ঠেলায় হাত উঁচিয়ে বলতে লাগলো, আমি কদম আলী। আমি কদম আলী বলতে দেরি, আর উত্তমমধ্যম পড়তে দেরি হলো না। কদম আলী তো মাগো, বাবাগো, মাগো, বাবাগো বলতে বলতে অস্থির।

এমন সময় ডাক্তার শহর থেকে ঔষধ নিয়ে কেবল বাজারে প্রবেশ করলো। ডাক্তারের দোকানের সামনে শখানেক মানুষের ভিড় দেখে ডাক্তার দৌড়ে দোকানের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? এখন সবাই ডাক্তারকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠল। কয়েকজন ডাক্তারকেই উত্তমমধ্যম দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল। ডাক্তার হাত জোড় করে সবাইকে বললেন, আমি শহর থেকে ঔষধ নিয়ে কেবল আসলাম। কী হয়েছে, আর কী ঘটেছে, আমি কিছুই জানি না। দয়া করে আমাকে বুঝিয়ে বলুন। ডাক্তারের কথা শুনে সবাই শান্ত হয়ে বললেন, আপনার কম্পাউন্ডার কদম আলীকে জিজ্ঞেস করুন? কদম আলী মানুষের মাইর গুতা খেয়ে দোকানের মেজেতে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার কদম আলীকে টেনে উঠিয়ে বসালেন। জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে, আর ঘটনা-ই-বা কী?”

কদম আলী কাঁদা কাঁদা স্বরে বলতে লাগলেন, “গত পরশুদিন পেটব্যথার রুগীটাকে আপনি ৩ নম্বর আর ৪ নম্বর শিশি থেকে ৫ ফোঁটা ৫ ফোঁটা করে ঔষধ পাউডারের সাথে মিশিয়ে ১২ পুরিয়া বানাইয়া দিতে বলেননি? আমি তো সেভাবেই দিয়েছি। রুগীকে বললেন একদিন পর আবার আসতে। আজ আপনি শহরে যাবার কিছুক্ষণ পর রুগী দোকানে এসে বললো, আমি পুরোপুরিভাবে সুস্থ হইনি। আমার পেটে এখনো চিনচিন করে ব্যথা করে। আমাকে ঔষধ দিন। আমি রুগীর কথা শুনে ঔষধের আলমারি থেকে ৩ নম্বর শিশি আর ৪ নম্বর শিশি বের করি। বের করে দেখি, ৩ নম্বর শিশিতে ঔষধ নেই, ৪ নম্বর শিশিতেও ঔষধ নেই। আমি বুদ্ধি করে ৭ নম্বর শিশি বের করি। তারপর ৭ নম্বর শিশি থেকে ১০ ফোঁটা ১০ গ্রাম আন্দাজ পাউডারের সাথে মিশিয়ে ১২পুরিয়া ঔষধ বানাইয়া রুগীর হাতে দেই। ৩ নম্বর শিশিতে আর ৪ নম্বর শিশিতে ঔষধ নেই তাতে কী হয়েছে? ৩ আর ৪-এ তো ৭ই হয়! ৫ ফোঁটা ৫ ফোঁটা মিলে তো ১০ ফোঁটাই হয়!

এতো বছর আপনার চাকরি করে কী কিছুই শিখি নাই? আপনি রুগীকে দিয়েছেন দুইরকম শিশির ঔষধ। আমি দুইরকম দেইনি। ঔষধ বেশি সেবন করা ঠিক না! তাই একটা শিশি থেকেই রুগীর রোগমুক্তির ঔষধ বানাইয়া দিয়েছি। তা কি আমি অপরাধ করেছি? আর ফরমুলাটা তো আপনারই, ৩ নম্বর আর ৪ নম্বর শিশি। আমি শুধু যোগ বিয়োগ করে ঔষধ বানিয়েছি। রুগীকে বলেছি, আগের নিয়মেই সেবন করতে। ৪ ঘণ্টা পরপর ১পুরিয়া করে। তা কি ভুল কিছু করছি? এখন গ্রামের মানুষ এসে আমাকে উত্তমমধ্যম শুরু করে দিয়েছে বলেই, হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। এর মধ্যেই ডাক্তার সাহেবও দিয়ে দিল দুই থাপ্পড়!

কদম আলীর কথা শুনে ডাক্তার এখন হায় হায় করতে লাগলো। ডাক্তার মনে মনে বলতে লাগলো, সর্বনাশ! ৭ নম্বর শিশির ঔষধ হলো, কোনও রুগী বিষপান করলে অথবা কাউকে সাপে দংশন করলে, সেই রুগীর শরীর থেকে বিষ পানি করে বের করার ঔষধ। আর সেই ঔষধ দিয়েছে পেটব্যথার রুগীকে? রুগী তো ৭-৮ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারে। হায়! হায়! এখন উপায়?

এই বলেই ডাক্তার সবাইকে বলতে লাগলো, ভাইসব তাড়াতাড়ি আমাকে রুগীর বাড়ি নিয়ে চলেন। আমার কম্পাউন্ডার সর্বনাশের করে ফেলেছে! রুগীকে যেই ঔষধ দিয়েছে, রুগী ৭/৮ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করতে পারে নিশ্চিত। তাড়াতাড়ি না যেতে পারলে রুগীর অবস্থা হবে সূচনীয়। রুগী পাতলা পায়খানার সাথে বমি করতে করতে পানিশূন্যতা হয়ে মারা যাবে। তাড়াতাড়ি আমার ঔষধের বাক্সটা হাতে নিন, আমাকে রুগীর বাড়ি নিয়ে চলেন। এই বলেই ডাক্তার তাঁর ঔষধের বাক্স নিয়ে রুগীর বাড়ির দিকে দৌড়াতে লাগলো। বাড়িতে গিয়ে রুগীকে ৭ নম্বর ঔষধের পাওয়ার ধ্বংস করার বিপরীত ঔষধ খাইয়ে দিলো। এরপর রুগীর পাতলা পায়খানা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। দুই তিন ডোজ সেবন করানো পর রুগী আগেরমত সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে।

দোকানে এসে অভিজ্ঞ কম্পাউন্ডার কদম আলীকে বলল, “তুমি কদম আলী তাড়াতাড়ি আমার দোকান ত্যাগ করে বাড়ি চলে যাও। বাড়ি গিয়ে হালচাষ করো। নাহয় কারোর বাড়িতে দিনমজুরি কাজ করো। তোমার মতো কিছু মানুষ অল্পকিছুদিন কোনও ডাক্তারের দোকানে বা ডাক্তারের চেম্বারে কাজ করে নিজেরাই ডাক্তার হয়ে যাও। তোমরা মনে করো যে, ডাক্তার রুগী দেখে কলমের খোঁচা দিয়ে শুধুশুধু টাকা নিয়ে নেয়। একজন মানুষ অনেক সাধনার পর ডাক্তার হয়। একজন ডাক্তার মানে দেশ ও দশের সেবক। আর তোমরা কিছু বেশি শিক্ষিত মানুষ মনে করে থাক, ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখেই ডাক্তার হওয়া যায়। ডাক্তার হওয়া বা ডাক্তারি করা এতো সহজ নয়! ডাক্তারি করতে হলে চিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান থাকতে হয়। তোমার মতো অনভিজ্ঞ ভুয়া ডাক্তারদের কারণে আজ জাগায় জাগায় ভুল চিকিৎসার অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। অনেকসময় পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ হয়, সিজার করার সময় গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু, নাহয় নবজাতকের মৃত্যু। মেডিকেলে সেন্টার বা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রুগীর মৃত্যু, লাশ নিয়ে মিছিল। এরপর তদন্তে বেরিয়ে আসে ভুয়া চিকিৎসক আর ভুয়া সার্টিফিকেট। ওরাও তোমার মতন ডাক্তার কদম আলী। যা কয়েক ঘণ্টা আগে তুমিও একজন রুগীকে মেরে ফেলার কাজ করে ফেলেছো। ভাগ্য ভালো যে আমি শহর থেকে সময়মত এখানে এসেছি। তা না হলে আর কয়েক ঘণ্টা পরই রুগী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতো। রুগীর মৃত্যু হলে তুমিও জেলে যেতে, তোমার সাথে আমাকেও জেল হাজতে যেতে হতো। আল্লাহ্ আমার সহায় আছে বলেই তা আর হয়নি। তুমি এখন বাড়ি চলে যাও!”

পোস্টে সংযুক্ত ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।