ট্যাগ আর্কাইভঃ বিশ্ব কবিতা দিবস

আজ বিশ্ব কবিতা দিবস

কবিতা ও প্রত্যয়

শত শতাব্দীর স্মৃতির মত প্রাণের কোঠরে আঁকড়ে রাখি জীবন বাক্য
হৃদয়গ্রাহী শব্দের নৈবদ্য, যৌবনের আধিক্য স্মর লুকিয়ে রাখি-
অজস্র কবিতার ভেতর; অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে আঁকি প্রত্যক্ষ স্বপন
শব্দের পাশে শব্দ স্থাপন করে গড়ে তুলি একান্ত সাম্রাজ্য… নিভৃত জীবন।
দিন -রাত এক করে ডুবে থাকি যেই অতল গহ্বরে
বসন্তের দাবী ছেড়ে বিগত জীবন কেটে গেছে কবিতার ঘোরে …..
জানতে পারতে যদি-
কোন এক নির্লিপ্ত প্রহরে পৃথিবীর পাঁজরে প্রবিষ্ট হতে হতে
তোমাদের অগোচরে বয়ে চলছে পৃথিবীর সবচেয়ে তীব্র খরস্রোতা নদী!
অথচ, আমি কোন জাত কবি নই; যদিও
চেতনার মর্মরে একটি অধরা সত্ত্বা ক্রমাগত খচ খচ করে চলে
কখনো বর্ণ মালার আদলে- কখনো পল্লবিত ছন্দের তালে, কখনো বা নীরব অশ্রু জলে…
আমার কবিতারা পড়ে থাকে মলাট বাধা ডায়েরীর পাতায়
পড়ে থাকে বেনামী ফুলের মত নৈশব্দের প্রান্তরে…
এই কবিতারাই একদিন জেগে উঠবে… দুরন্ত হয়ে ছুটবে
এই কবিতারাই একদিন পৌঁছে যাবে বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণে, টি এস সি’র চত্বরে
পৌঁছে যাবে একুশের প্রভাত ফেরীর দীর্ঘ স্রোতে, আবৃত্তির মঞ্চে
শ্লোগান হয়ে মিশে যাবে তারুণ্যের কণ্ঠে, জড়ো প্রপাতে…
পৌঁছে যাবে লাঙ্গলে -জোয়ালে; কৃষকের হাতে ঘামের জোয়ারে
অভাগা জীবনের ক্রন্দন থামাতে একদিন এরাই হবে স্পন্দন;
শিশুর ঘুম, কিশোরের রুমঝুম… এই কবিতারাই হবে যৌবনের অগ্নিহার!
প্রেমের সঙ্গোপনে, খুনসুটি আলাপনে
রাগে- অনুরাগ , মান -অভিমানে কবিতাই ভাঙবে সমস্ত জড়তা;
জ্ঞানে বিজ্ঞানে সত্যের অবগাহনে –
ধর্মান্ধতা কাটিয়ে এই কবিতারাই রুখে দেবে সমস্ত সাম্প্রদায়িকতা।

বিশ্ব কবিতা দিবস আজ (World Poetry Day Today)

poetry

আজ “বিশ্ব কবিতা দিবস”। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ মার্চকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, “এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলোকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে।”

পূর্বে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথম দিকে কখনও কখনও ৫ অক্টোবর এই উৎসব পালিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ অক্টোবর এই দিবস পালনের প্রথা শুরু হয়। অনেক দেশে আজও অক্টোবর মাসের কোনো দিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস পালন করা হয়।এই দিবসের বিকল্প হিসেবে অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসের কোনো দিন কবিতা দিবস পালনেরও প্রথা বিদ্যমান।

কবিতা কী? কবিতার গুরুত্ব কটোটুকু আজকের এই সমাজে? – এসব নিয়ে বিতর্ক হয়তো করা যায়। কিন্তু কবিতা যে হৃদয়ের সুকুমারবৃত্তিকে লালন করে তাতে সন্দেহ নেই। কবিতা অনেকক্ষেত্রেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বড় হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে।
বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠক্রমে সমকালীন কবিতাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা মনে করে, কবিতা হলো কিছু মানুষের অপ্রয়োজনীয় সৃষ্টি কিংবা মিথ্যা ভাষ্য মাত্র। তবে কবিতাকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করি কিংবা কবিতা আমাদের চেতনাকে কতটা জাগ্রত করে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কবিতা দিবস
কবিতা দিবস

কবিতায় সমসাময়িক বিষয় ওঠে আসবে এটা স্বাভাবিক। কবি এস টি কোলরিজের মতে—‘কোনো কবিই বড় কবি হতে পারেননি সত্যসন্ধ দার্শনিক হওয়া ছাড়া।’

আজকের দিনে, আমাদের কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ –এর “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি” কবিতার অংশবিশেষ তোলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ

জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।“


তথ্যসূত্রঃ বাংলা উইকিপিডিয়া