সোহেল আহমেদ পরান এর সকল পোস্ট

মা দিবসঃ ইতিহাস – ইতিবৃত্ত

মা দিবস ( Mother’s Day) হল একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে এবং মাতৃত্ব, মাতৃক ঋণপত্র, এবং সমাজে মায়েদের প্রভাবের জন্য উদযাপন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদযাপন করা হয়।
বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উত্সব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদযাপন। কিন্তু, আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও, কিছু দেশসমূহে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে।
ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি “হলমার্ক হলিডে” অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করেন।

ইতিহাসঃ
———
একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।
প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত।
মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে।
জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত “মাদার্স ডে প্রক্লামেশন” বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণাঃ
——–
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) এবং “মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার” আর “মা দিবস” এইসব শব্দবন্ধের বহুল প্রচার করেন।
মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসাবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তাঁর দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। আর বাণিজ্যিকভাবে, “মা দিবস” বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান-প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে “মা দিবস”-এ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়।

আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠানঃ
———————————–
বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অনান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়।
কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উত্সর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত।
অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উত্সব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে।

বিভিন্ন ধর্মে মাঃ
—————
ইসলাম ধর্মে ‍মা-
আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। একটি হাদীসে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)।

হিন্দু ধর্মে ‍মা-
সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”

ক্যাথলিক ধর্মে, দিনটি বিশেষভাবে ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত।

বিভিন্ন দেশে মা দিবসঃ
——————–
আফ্রিকীয় দেশসমূহঃ
বহু আফ্রিকীয় দেশ ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন করে, যদিও আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে মায়েদের সম্মানে এমন অনেক অনুষ্ঠান এবং উত্সব আছে যা আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠার বহু যুগ আগে থেকেই চলে আসছে।

বলিভিয়াঃ
বলিভিয়ায় ২৭শে মে মা দিবস পালিত হয়। অধুনা কোচাবাম্বা শহরে ১৮১২ সালের ২৭শে মে সংঘটিত করনিলার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসবে এই দিনটিকে মা দিবসরূপে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয় ৮ই নভেম্বর, ১৯২৭ সালে। এই যুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত অনেক মহিলাকে স্পেনীয় সৈন্যবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে।

চীনঃ
চীনের মা দিবস ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কার্নেশন সেখানে জনপ্রিয়তম উপহার এবং সবথেকে বেশি বিক্রিত ফুল। ১৯৯৭ সালে দরিদ্র মায়েদের সাহায্য করার জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মায়েদের কথা মানুষকে মনে করানোর জন্য, এই দিনটিকে চালু করা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র, পিপিল’স ডেইলি’র একটি নিবন্ধে ব্যাপারটির বিষয়ে লেখা হয় যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও, চীনের মানুষ বিনা দ্বিধায় এই দিনটিকে গ্রহণ করেছে কারণ এটি একদমই এই দেশের রীতি মাফিক – মানে গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা”।

গ্রিসঃ
গ্রীসে, যিশু কে মন্দিরে পেশ করার ইস্টার্ন অর্থডক্স ফিস্ট ডের সঙ্গেই পালন করা হয় মা দিবস। যেহেতু থিওটকস ( ঈশ্বরের মাতা) যিনি এই ফিস্টের (ভোজ) বিশিষ্ট চরিত্র এবং তিনিই যিশু কে জেরুসালেমের মন্দিরে এনেছিলেন, তাই জন্য এই পরবটি মায়েদের সঙ্গে সংযুক্ত।
ইরানঃ
২০ জুমাদা আল-থানি, মহম্মদ (সঃ) -এর কন্যা ফাতিমা(রাঃ)র জন্মবার্ষিকীর দিন ইরানে পালন করা হয় মা দিবস।

জাপানঃ
প্রাথমিক ভাবে শোয়া যুগ -এ রানী কজুন -এর (রাজা আকিহিতো’র মা) জন্মদিনটিকেই মা দিবস হিসাবে পালন করা হত জাপান। এখন এটি একটি জনপ্রিয় দিন। বিশেষত কার্নেশন আর গোলাপ উপহার হিসবে দেওয়া হয় এই দিন।

নেপালঃ
বৈশাখ(এপ্রিল) মাসে হয় “মাতা তীর্থে অনুসি ” বা “একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা”। এই উত্সবটি পালিত হয় অমাবস্যার সময় যার জন্য এটির নাম “মাতা তীর্থে অনুসি “। “মাতা” মানে মা, “তীর্থ” মানে তীর্থযাত্রা। উত্সবটিতে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেওয়া ও সম্মান জানানো হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকার পূর্বদিকে অবস্থিত মাতা তীর্থে যাওয়া এই উত্সবের একটি অঙ্গ।
এই তীর্থযাত্রাটি ঘিরে একটি কিংবদন্তি আছে। প্রাচীন কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মা দেবকী ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে বাড়ি ফিরতে ভীষণ দেরী করেন.ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়ের অবর্তমানে খুবিই দুঃখিত হয়ে ওঠেন। উনি তখন মা কে খুঁজতে বেরিয়ে অনেক জায়গায় খোঁজেন কিন্তু খুঁজে পান না। শেষে যখন তিনি “মাতা তীর্থ কুন্ড”- তে পৌঁছন তখন তিনি মা কে দেখতে পান পুকুরে স্নানরত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত হয়ে ওঠেন মা কে খুঁজে পেয়ে এবং মা কে তিনি মায়ের অবর্তমানকালীন সব দুঃখের কথা বলেন। মা দেবকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বলেন “আহা! তাহলে এই স্থানটিকে আজ থেকে প্রত্যেক সন্তানের তাদের ছেড়ে আসা মায়েদের সঙ্গে মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক”। সেই থেকে এই জায়গাটি মৃত মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত প্রাপ্তির এক দ্রষ্টব্য ও পবিত্র তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। এও কিংবদন্তি আছে যে এক পুন্যার্থী পুকুরের জলে নিজের মায়ের প্রতিকৃতি দেখে প্রায় জলে পরে মারাই যাছিলেন। এখনও সেখনে পুকুর ধারটিতে লোহার বেঁড়া দেওয়া আছে। পুজার্চনার পরে পুন্যার্থীরা সেখনে নৃত্য, গানের মাধ্যমে নিজেদের মনোরঞ্জন করে। কিংবদন্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখার অবকাশ নেই যেহেতু এগুলো প্রাচীন পুঁথির অনুযায়ী লোকমুখে চলে আসা সব ঘটনা সব।

থাইল্যান্ডঃ
থাইল্যান্ডে মা দিবস পালিত হয় থাইল্যান্ডের রানীর জন্মদিনে।

রোমানিয়াঃ
রোমানিয়া-তে দুধরনের আলাদা ছুটির দিন আছে: মা দিবস আর মহিলা দিবস।
ইউনাইটেড কিংডম এবং আয়ারল্যান্ডঃ
ইউনাইটেড কিংডম ও আয়ারল্যান্ড-এ , ইস্টের সানডে(২৭শে মার্চ, ২০০৯)-র ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার মাদারিং সানডে পালিত হয়.খুব সম্ভবত ষোড়শ শতকের বছরে একবার নিজের মাদার চার্চ বা প্রধান গির্জায় যাওয়ার খ্রিস্টীয় রেওয়াজ থেকেই এর উত্পত্তি. এর মূল তাত্পর্য হল যে মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হবেন.অনেক ঐতিহাসিক -এর মতে যুবতী শিক্ষানবিশ-দের এবং অন্য যুবতীদের তাদের মালিকরা কাজ থেকে অব্যহতি দিত তাদের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য। ধর্মনিরিপেক্ষিকরণের ফলে এখন এই দিনটি মূলত মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর দিন যদিও বহু গির্জা এটিকে এখনও সেই ঐত্তিহাসিক ভাবে দেখতেই পছন্দ করে যেখানে থাকে যিশু খ্রিস্ট -এর মা মেরি ও “মাদার চার্চ”-এর মত ঐতিহ্যবাহী রীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
মাদারিং সানডে সর্বাগ্রে পড়তে পারে ১লা মার্চ(যে বছরগুলিতে ইস্টের পরে ২২শে মার্চ) ও তারপর পড়তে পারে ৪ঠা এপ্রিল(যখন ইস্টের ২৫শে এপ্রিল পরে)।

ভিয়েতনামঃ
ভিয়েতনামে মা দিবসকে বলা হয় লে ভূ-লান এবং চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী সপ্তম মাসের পঞ্চদশ (পনেরো) দিনে এটি পালিত হয়। যাদের মায়েরা জীবিত তারা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানায় আর যাদের মায়েরা পরলোক গমন করেছেন তারা প্রার্থনা করে মৃত মায়েদের আত্মার শান্তি কামনা করে।

মা দিবসের বাণিজ্যিকিকরণঃ
————————-
সরকারী মা দিবস পালনের ন’ বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে পরে যে আনা জার্ভিস নিজেই এই তাত্পর্য পাল্টে যাওয়া দিনটির ঘোর বিরোধী হয়ে যান এবং নিজের সমস্ত সম্পত্তি ও জীবন দিনটির এইরকম অবমাননার প্রতিবাদে ব্যয় করেন।
মা দিবসের বানিজ্যিকরণ ও দিনটিকে বানিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রতিবাদে আনা তার সময়ে বহু সমালোচনা করেন। তিনি সমালোচনা করেন হাতে লেখা চিঠি না দিয়ে কার্ড কেনার নতুন প্রথাকে যেটিকে তিনি আলসেমি হিসাবে গন্য করতেন। ১৯৪৮ সালে আনাকে গ্রেপ্তার করা হয় মা দিবসের বানিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করা কালীন এবং অবশেষে বলেন যে তিনি “ভাবেন যে এই দিনটির সূচনা না করলেই ভালো হত কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনের বাইরে…
মা দিবস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্যিকভাবে সবথেকে সফলতম পরব. ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে রেস্টুরেন্টে ডিনার করার অন্যতম জনপ্রিয় দিন হল মা দিবস।

সূত্রঃ বাংলা উইকপিডিয়া

একগুচ্ছ পরানের কথা (০০১~০০৫)

পরানের কথা ০০১
~~~~~~~~~~~~~~
ভালো মানুষ সহজ মানুষ
বোকার সনদ পায়
ধূর্ত-কুটিল ভালো’র মাথায়
কাঁঠাল ভেঙ্গে খায়।

পরানের কথা ০০২
~~~~~~~~~~~~~~~~
মূল্যবোধের মূল্যতো নাই
স্বার্থসিদ্ধিই বড়
মানবতা রুদ্ধ করে
কিসের বড়াই করো?

পরানের কথা ০০৩
~~~~~~~~~~~~~~
প্রশ্ন শুধু ফাঁস হয়ে যায়
দাস হয়ে যায় পড়া,
সনদ জোটে বড়ো বড়ো
জ্ঞানই কেবল ধরা।

পরানের কথা ০০৪
~~~~~~~~~~~~~~~
খাদ্যে ভেজাল, কী আর করা
ঔষধে সাড়াবো
ঔষধেও যে ভেজাল ম্যালা
হাত কোথায় বাড়াবো!!

পরানের কথা ০০৫
~~~~~~~~~~~~~~
তেলবাজেরা ভালো ছিলো
আছে এবং থাকবে
পাশাপাশি নিরীহদের
অশান্তিতে রাখবে।

আমার উঠোন এবং অন্ধ আমি

রোজ তুমি আমার উঠোন ঘুরে যাও
আলগোছে
নিভৃতে ।
যাবার বেলায় পায়ের ছাপটি মুছে যাও উত্তরাধুনিক চারুতে
তোমার গায়ের সুরভি তবু ঠিক ঝুলে থাকে
আত্মাকর্ষণে
বাড়িময়
তোমার চলে যাওয়ার পথে শাদাছড়ি দ্যাখায় আমাকে তা।
ইতস্তত ওঠে দাঁড়াতেই চৌকাঠে আচমকা ধাক্কায় বসে পড়ি ফের
অন্ধ আমি
বসে থাকি ঠায়
আগামিকালে অন্ধদৃষ্টি স্থির হয়ে থাকে কেবল।

ভুল জলধি মোহনা// THE SHORE MISTAKEN

নিজস্ব কোনো নদী ছিলো না আমার কখনো
সুবর্ণগাঁয়ের জলধিপাড় ধরে
বিফল সূর্যাস্তে অন্তলীন আমার অনেক উর্বশী-বিকেল
আমি পাইনি জলের ছোঁয়া
সফেদ জলের মিঠে আদর
আপ্রাণ পরম কাঙ্ক্ষিত ডুবসাঁতার গেছে রয়ে বৃত্তের বাইরে
জল জল হাহাকার করে খররোদে হৃদয় কাঠ
অ্যাম্ফিত্রিতি সাক্ষী- মিথ্যে এ নয় একচুল।

কালান্তরে ক্রমাগত ছোটে চলা আমি
যাইনি হারিয়ে ঊষর মনভূমে
জলধি মোহনায় আজ আমি বিজয়ের শিল্পিত ভোরে
আঁজলা ভরে ঠোঁট ছোঁয়াই অমৃতোপম জলে
আজন্ম তৃষিত পান করি মুহূর্তে পুরোটা

ভেতরটা জ্বলে যায় নির্দয়
বেদম দগ্ধ হৃদয় আমার
নিঃশব্দ হাহাকারে অঙ্গার হয়
ভুল জলধি মোহনায় ভেঙ্গে পড়ি আমি।

ত্রস্ত ফিরে চলি আমি
পেছনে জ্বলজ জলধির বহ্নি দীর্ঘশ্বাস!

THE SHORE MISTAKEN
==================
I had no river of my own ever
Passed my numerous celestial evening in vain
At ruthless run on the brim of ocean of the golden suburb
Failed to get a mere touch of water
Adore of sweet and sublime aqua…

My boundless desire for dive deep in the water
Aqua-caress
Remain out of the border-mark of the reach-circle.

“Water, Water”- immense wailing
Heart turns dry cracked piece of wood
Amphredite witnessed
No clue of fabrication.

In the midst of time-space,
My breathless run does not decay
I do never lost my amour in waste-mind
I am today- this golden dawn
Standing at the brink of long-desired ocean,
Take water handful, sip the ambrosial ahh
Drank the full – as ad-vitam thirsty me.

Ah it inflames inside
Burns my entire heart
Tacit lamentation turns heart a cinder
My heart breaks down at the wrong shore.

Feared I rush back
Keeping behind the sigh of flaming mistaken ocean.

এই সময়

এই সময়টা ভাণের
রঙকরা কাগুজে ফুল
ভাবখানা খুব ঘ্রাণের।

এই সময়টা মিথ্যার
সাজানো গোছানো কপট
দিনের শেষে জিত তার।

এই সময়টা ঈর্ষার
পরের ভাতে বালি ঢেলে
পায় যে খেতাব ‘বীর স্যার’।

এই সময়টা লোভের
আমার আমার আরো আরো
ধারে না ধার ক্ষোভের।

এই সময়টা পাপের
ন্যায়ের ডিঙি ডুবন্ত হায়
‘সত্য’ ঠেকে শাপের।

আমি কেবল মানুষ চিনি না


মুখোশের নগরিতে স্বরূপে শ্রাবণ
সহজেই যায় চেনা
মেঘ
বিষ্টি
বাতাসের রসায়ন
রূপান্তরিত ক্ষ্যাপা বজ্রাঘাত
খানাখন্দ
খুঁটিসাক্ষি ডুবে যাওয়া ম্যানহোল
থানকুনি পাতায় বিন্দু জল
সব
সবই।

আমি কেবল মানুষ চিনি না
বড়ো দুর্বোধ্য ঠেকে থেকে থেকে
ক্রমশ।

অভিমানী মুখ ফুলানো আকাশ,
আচমকা ক্ষেপে যাওয়া অত্যাচারিত পাহাড়,
হেলাফেলায় সময়বাতি ক্রুধান্বিত বঙ্গপোসাগর,
কিংবা আধুনিকতায় জর্জরিত ক্রন্দসী হাওর
সব চিনি আমি
সবই।

আমি কেবল মানুষ চিনি না
বড়ো দুর্বোধ্য ঠেকে থেকে থেকে
ক্রমশ।

আমার পাওয়ারগ্লাস ফিকে হয়ে আসে
নূতন প্রগেসিভ পাওয়ারও আসে না কোনো কাজে
অন্ধের মতো হাতড়ে বেড়াই দিনদুপুরে।

আমি কোনো মানুষ চিনতে পারি না।
আমি কেবল মানুষ চিনতে পারি না।।

[২০১৭০৬১৯/০৭১৫]

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসঃ প্রাসঙ্গিকতা ও প্রত্যাশা

Ismail Abdulhi is a pastoralist in Ta Kuti village (Niger State) and beneficiary of Nigeria’s Fadama II project. (Photo: Arne Hoel)

পরিবার ও পরিবার দিবসঃ আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৯৩ সালে গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী ১৫ মে কে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষও ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘগ এবং পরবর্তীতে ১৯৯৫ সাল থেকে সমগ্র বিশ্বে প্রতি বছর এ দিনটি আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পারিবারিক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ়ীকরণ ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূলত এ দিবস পালনের প্রয়াস নেয়া হয়। ছোটবেলায় পরিবারের সংজ্ঞা শেখা আছে সবারই। মা-বাবা,ভাই-বোন, দাদা-দাদী – সবাইকে নিয়েই গঠন হয় পরিবারের।

সমাজের মৌলিক ভিত্তি হলো পরিবার। একটি পরিবার একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই মানুষ পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ নির্দেশনা। জীবন আসলে গড়ে ওঠে এখান থেকেই। মানুষের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠও বলা হয় পরিবারকে। পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও দৃঢ় বন্ধনের মাধ্যমে পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ সমাজের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে থাকে। পরিবার তাই মানুষের জন্য স্বপ্নডাঙ্গা। মানুষের জীবনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

International Day of Families: Theme 2017- “Families, Education and well-being”.

বিশেষজ্ঞদের চোখে পরিবারঃ সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে পরিবার ও এর ভুমিকা বিধৃত করেছেন। ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের প্রমাণ বহন করে।

তবে সমাজ ভেদে, সংস্কৃতিভেদে পরিবারের গঠন, কাঠামো, কার্যক্রম ও সার্বিক ভূমিকা ভিন্ন হয়ে থাকে। সময়ের সাথে, সভ্যতার বিকাশের সাথে আর টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে সমাজে ও রাষ্ট্রে পরিবাবের ভূমিকা যেমণ পরিবর্তিত হচ্ছে; সাথেসাথে পারিবারিক কাঠামো আর মূল্যবোধেও আসছে ভিন্নতা।

যৌথ পরিবার ভাঙ্গার কারণঃ অনেক কারণেই যৌথ পরিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও ক্রমেই কমে কমে বিলুপ্তির পথে এখন। অর্থনৈতিক কারণ এদের মধ্যে অন্যতম। সমাজবিজ্ঞানী ফলসমের মতে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার বৃদ্ধির কারণ প্রধানত:

* অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নতি;
*স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা;
* অলাভজনক শিশুশ্রম এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার;
* ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ।

পরিবারের গুরুত্বঃ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষের জীবনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারের অনেক মৌলিক কাজ রয়েছে ।

যেমণঃ

* জৈবিক;
*মনস্তাত্ত্বিক;
*অর্থনৈতিক,;
* শিক্ষাদান;
* শিশুর সামাজিকীকরণ;
* সংস্কৃতির সংরক্ষণ;
*মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ;
* সমমর্যাদার নিশ্চয়তা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমঅধিকার
*সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবন মান উন্নয়ন।

আজকের শিশু ভবিষ্যতের আগামীর দক্ষ নাগরিক। এই শিশুকে উপযোগী করে গড়ে তোলে পরিবার । শিশুর মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে। পরিবারের ধরন, প্রথা-রীতিনীতি এ সবের ওপর ভিত্তি করে শিশুর জীবন-আচরণ গড়ে ওঠে। তাই চারিত্রিক সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা এবং সর্বোপরি সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুণাবলী আসলে পরিবারেই গ্রথিত হয়।

বাস্তবতাঃ

পরিবার – আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেমন? এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, আমাদের দেশেও পরিবারের কাঠামো আগের মতো নেই। সময়, জীবন, জীবিকা, মানসিকতা ও মূল্যবোধের দ্বান্দ্বিক কারণে আমাদের পরিবারগুলো ভেঙ্গে একক পরিবারে রূপ নিচ্ছে। মা-বাবা, ভাই বোন, দাদা দাদি – সবাই মিলে যে সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ ছিলো তা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা, স্বার্থের দোলাচলে আমরা অনেকেই ভুলে যাই- পরিবারের আপনজনদের কথা। এমনকি বাবা-মায়ের খোঁজও নেয়া হয় না। আমাদের সমাজেও তাই দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা যাচ্ছে বেড়ে।

এমনকি ছোট পরিবারেও সহনশীলতা আর পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় অশান্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। এর প্রভাব সরাসরি সংশ্লিষ্ট সদস্যদের ওপর পড়ছে; পাশাপাশি সেই পরিবারের শিশুরা বেড়ে উঠছে বিরূপ পরিবেশে। সুস্থ মানসিক ও মানবিক বোধ গঠন হচ্ছে বাধাগ্রস্থ।

যৌতুককে কেন্দ্র করেও অশান্তি লেগে থাকে অনেক পরিবারে।

পারিবারিক অশান্তির কারণে ঘটছে না না ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পরিবারে সৌহার্দের অভাবে, সন্তানের হাতে বাবা-মায়ের খুন, বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু বা ‘বৃদ্ধ বাবা-মাকে’ অবহেলার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পারিবারিক অশান্তির জন্য মানুষের মানসিক ও মানবিক বোধের অবক্ষয় হচ্ছে।

সুন্দর পরিবারের জন্য করণীয়ঃ

পারিবারিক সুখ-শান্তি যাতে বিনষ্ট হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবাইকে। ঘর বা পরিবার এক পবিত্র আশ্রয়। সব পাখি দিন শেষে যেমন তার নীড়ে ফিরে আসে মানুষও সারাদিনের কর্মব্যস্ততার শেষে ঘরে ফিরে আসে। তবে ঘরে অবশ্যই শান্তি থাকতে হবে। হতে হবে সুইট-হোম। পরিবারের মধ্যে ভালোবাসায় ভরপুর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। আগে নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে হবে, তারপর দেশকে ভালোবাসতে হবে। কারণ নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে না পারলে নিজের দেশকে ভালোবাসা সম্ভব হবে না। পরিবার শক্তিশালী হলে সমাজ এগিয়ে যাবে আরে দেশ হবে শক্তিশালী।

পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। দুজনের ভূমিকা ও অধিকার হতে হবে সমান্ ও সম্প্রীতির। অন্যসব সদস্যেরও থাকতে হবে সমান অধিকার। মর্যাদা হবে যথাযোগ্য। সবার আবেগের মূল্যায়ন করতে হবে যৌক্তিকভাবে সময়ের নিরিখে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ পরিবারের কাঠামোকে করতে পারে মজবুত।

শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে সবার খোঁজ নেয়া উচিত। পরিবারের সবার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। মিথস্ক্রিয়া সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক। মাঝেমধ্যে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া- ফ্যামিলি ডে আউট – অনেক ফলদায়ক হতে পারে।

পরিবারের জেষ্ঠ্য সদস্যদের সম্মানের চোখে দেখা একান্ত প্রয়োজন। এতোটুকু কথা বা খোঁজ নেয়া অনেক সুন্দর মানবিক প্রভাব ফেলতে পারে তাঁদের মনে।

আত্মীয়-স্বজনকে সমান চোখে দেখা জরুরি। নিজের ভাই-বোন, মা-বাবাকে অনেকে প্রাধিকার দেয়। পক্ষান্তরে, স্বামী বা স্ত্রীর আত্মীয়কে ভিন্ন চোখে দেখা অনেক পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।

শেষকথাঃ

এটা ঠিক যে, শুধু দিবস পালন করে পরিবারকে সুখী বা শান্তিময় করা সম্ভব নয়। তদুপরি, আমাদের দেশে পরিবার দিবসের পরিচিতিও নেই সেভাবে। তবে একটি সুন্দর পরিবার, সুখী পরিবারের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। যার যার স্থান থেকে। কারণ সমাজ বিনির্মাণে আর রাষ্ট্র পরিচালনায় যে সুন্দর মনের যোগ্য ও দক্ষ মানুষ দরকার – সে মানুষ গড়ে ওঠে পরিবারে। পরিবার সে অর্থে একটি রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম ইউনিট।

সেই পরিবারের ভালবাসা ও মমতার বন্ধনে বেঁচে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে পরিবর্তন হবে অনেক কিছুর; পরিবারেরও। সেটিই স্বাভাবিক । এরই মাঝে, সবার সচেতন কন্ট্রিবিউশিনের মধ্যদিয়ে পরিবার হয়ে ওঠতে পারে সুখের আধার। কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়। শান্তির নীড়।

__

Photo credit: UN website

মা দিবসঃ ইতিহাস- ইতিবৃত্ত

মা দিবস ( Mother’s Day) হল একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে এবং মাতৃত্ব, মাতৃক ঋণপত্র, এবং সমাজে মায়েদের প্রভাবের জন্য উদযাপন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদযাপন করা হয়। বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উত্সব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদযাপন। কিন্তু, আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও, কিছু দেশসমূহে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে। ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি “হলমার্ক হলিডে” অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করেন।

ইতিহাসঃ
একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত। প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে।
প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে। জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত “মাদার্স ডে প্রক্লামেশন” বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণাঃ
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) এবং “মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার” আর “মা দিবস” এইসব শব্দবন্ধের বহুল প্রচার করেন। মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসাবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তাঁর দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। আর বাণিজ্যিকভাবে, “মা দিবস” বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান-প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে “মা দিবস”-এ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়।

আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠানঃ
বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অনান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়। কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উত্সর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত। অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উত্সব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে।

বিভিন্ন ধর্মে মাঃ
ইসলাম ধর্মে ‍মা– আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। একটি হাদীসে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)।
হিন্দু ধর্মে ‍মা– সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”
ক্যাথলিক ধর্মে, দিনটি বিশেষভাবে ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত।

বিভিন্ন দেশে মা দিবসঃ

আফ্রিকীয় দেশসমূহঃ বহু আফ্রিকীয় দেশ ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন করে, যদিও আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে মায়েদের সম্মানে এমন অনেক অনুষ্ঠান এবং উত্সব আছে যা আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠার বহু যুগ আগে থেকেই চলে আসছে।

বলিভিয়াঃ বলিভিয়ায় ২৭শে মে মা দিবস পালিত হয়। অধুনা কোচাবাম্বা শহরে ১৮১২ সালের ২৭শে মে সংঘটিত করনিলার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসবে এই দিনটিকে মা দিবসরূপে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয় ৮ই নভেম্বর, ১৯২৭ সালে। এই যুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত অনেক মহিলাকে স্পেনীয় সৈন্যবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে।

চীনঃ চীনের মা দিবস ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কার্নেশন সেখানে জনপ্রিয়তম উপহার এবং সবথেকে বেশি বিক্রিত ফুল। ১৯৯৭ সালে দরিদ্র মায়েদের সাহায্য করার জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মায়েদের কথা মানুষকে মনে করানোর জন্য, এই দিনটিকে চালু করা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র, পিপিল’স ডেইলি’র একটি নিবন্ধে ব্যাপারটির বিষয়ে লেখা হয় যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও, চীনের মানুষ বিনা দ্বিধায় এই দিনটিকে গ্রহণ করেছে কারণ এটি একদমই এই দেশের রীতি মাফিক – মানে গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা”।

গ্রিসঃ গ্রীসে, যিশু কে মন্দিরে পেশ করার ইস্টার্ন অর্থডক্স ফিস্ট ডের সঙ্গেই পালন করা হয় মা দিবস। যেহেতু থিওটকস ( ঈশ্বরের মাতা) যিনি এই ফিস্টের (ভোজ) বিশিষ্ট চরিত্র এবং তিনিই যিশু কে জেরুসালেমের মন্দিরে এনেছিলেন, তাই জন্য এই পরবটি মায়েদের সঙ্গে সংযুক্ত।

ইরানঃ ২০ জুমাদা আল-থানি, মহম্মদ (সঃ) -এর কন্যা ফাতিমা(রাঃ)র জন্মবার্ষিকীর দিন ইরানে পালন করা হয় মা দিবস।

জাপানঃ প্রাথমিক ভাবে শোয়া যুগ -এ রানী কজুন -এর (রাজা আকিহিতো’র মা) জন্মদিনটিকেই মা দিবস হিসাবে পালন করা হত জাপান। এখন এটি একটি জনপ্রিয় দিন। বিশেষত কার্নেশন আর গোলাপ উপহার হিসবে দেওয়া হয় এই দিন।

নেপালঃ বৈশাখ(এপ্রিল) মাসে হয় “মাতা তীর্থে অনুসি ” বা “একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা”। এই উত্সবটি পালিত হয় অমাবস্যার সময় যার জন্য এটির নাম “মাতা তীর্থে অনুসি “। “মাতা” মানে মা, “তীর্থ” মানে তীর্থযাত্রা। উত্সবটিতে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেওয়া ও সম্মান জানানো হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকার পূর্বদিকে অবস্থিত মাতা তীর্থে যাওয়া এই উত্সবের একটি অঙ্গ। এই তীর্থযাত্রাটি ঘিরে একটি কিংবদন্তি আছে। প্রাচীন কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মা দেবকী ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে বাড়ি ফিরতে ভীষণ দেরী করেন.ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়ের অবর্তমানে খুবিই দুঃখিত হয়ে ওঠেন। উনি তখন মা কে খুঁজতে বেরিয়ে অনেক জায়গায় খোঁজেন কিন্তু খুঁজে পান না। শেষে যখন তিনি “মাতা তীর্থ কুন্ড”- তে পৌঁছন তখন তিনি মা কে দেখতে পান পুকুরে স্নানরত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত হয়ে ওঠেন মা কে খুঁজে পেয়ে এবং মা কে তিনি মায়ের অবর্তমানকালীন সব দুঃখের কথা বলেন। মা দেবকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বলেন “আহা! তাহলে এই স্থানটিকে আজ থেকে প্রত্যেক সন্তানের তাদের ছেড়ে আসা মায়েদের সঙ্গে মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক”। সেই থেকে এই জায়গাটি মৃত মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত প্রাপ্তির এক দ্রষ্টব্য ও পবিত্র তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। এও কিংবদন্তি আছে যে এক পুন্যার্থী পুকুরের জলে নিজের মায়ের প্রতিকৃতি দেখে প্রায় জলে পরে মারাই যাছিলেন। এখনও সেখনে পুকুর ধারটিতে লোহার বেঁড়া দেওয়া আছে। পুজার্চনার পরে পুন্যার্থীরা সেখনে নৃত্য, গানের মাধ্যমে নিজেদের মনোরঞ্জন করে। কিংবদন্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখার অবকাশ নেই যেহেতু এগুলো প্রাচীন পুঁথির অনুযায়ী লোকমুখে চলে আসা সব ঘটনা সব।

থাইল্যান্ডঃ থাইল্যান্ডে মা দিবস পালিত হয় থাইল্যান্ডের রানীর জন্মদিনে।

রোমানিয়াঃ রোমানিয়া-তে দুধরনের আলাদা ছুটির দিন আছে: মা দিবস আর মহিলা দিবস।

ইউনাইটেড কিংডম এবং আয়ারল্যান্ডঃ ইউনাইটেড কিংডম ও আয়ারল্যান্ড-এ , ইস্টের সানডে(২৭শে মার্চ, ২০০৯)-র ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার মাদারিং সানডে পালিত হয়.খুব সম্ভবত ষোড়শ শতকের বছরে একবার নিজের মাদার চার্চ বা প্রধান গির্জায় যাওয়ার খ্রিস্টীয় রেওয়াজ থেকেই এর উত্পত্তি. এর মূল তাত্পর্য হল যে মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হবেন.অনেক ঐতিহাসিক -এর মতে যুবতী শিক্ষানবিশ-দের এবং অন্য যুবতীদের তাদের মালিকরা কাজ থেকে অব্যহতি দিত তাদের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য। ধর্মনিরিপেক্ষিকরণের ফলে এখন এই দিনটি মূলত মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর দিন যদিও বহু গির্জা এটিকে এখনও সেই ঐত্তিহাসিক ভাবে দেখতেই পছন্দ করে যেখানে থাকে যিশু খ্রিস্ট -এর মা মেরি ও “মাদার চার্চ”-এর মত ঐতিহ্যবাহী রীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। মাদারিং সানডে সর্বাগ্রে পড়তে পারে ১লা মার্চ(যে বছরগুলিতে ইস্টের পরে ২২শে মার্চ) ও তারপর পড়তে পারে ৪ঠা এপ্রিল(যখন ইস্টের ২৫শে এপ্রিল পরে)।

ভিয়েতনামঃ ভিয়েতনামে মা দিবসকে বলা হয় লে ভূ-লান এবং চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী সপ্তম মাসের পঞ্চদশ (পনেরো) দিনে এটি পালিত হয়। যাদের মায়েরা জীবিত তারা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানায় আর যাদের মায়েরা পরলোক গমন করেছেন তারা প্রার্থনা করে মৃত মায়েদের আত্মার শান্তি কামনা করে।

মা দিবসের বাণিজ্যিকিকরণঃ
সরকারী মা দিবস পালনের ন’ বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে পরে যে আনা জার্ভিস নিজেই এই তাত্পর্য পাল্টে যাওয়া দিনটির ঘোর বিরোধী হয়ে যান এবং নিজের সমস্ত সম্পত্তি ও জীবন দিনটির এইরকম অবমাননার প্রতিবাদে ব্যয় করেন। মা দিবসের বানিজ্যিকরণ ও দিনটিকে বানিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রতিবাদে আনা তার সময়ে বহু সমালোচনা করেন। তিনি সমালোচনা করেন হাতে লেখা চিঠি না দিয়ে কার্ড কেনার নতুন প্রথাকে যেটিকে তিনি আলসেমি হিসাবে গন্য করতেন। ১৯৪৮ সালে আনাকে গ্রেপ্তার করা হয় মা দিবসের বানিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করা কালীন এবং অবশেষে বলেন যে তিনি “ভাবেন যে এই দিনটির সূচনা না করলেই ভালো হত কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনের বাইরে… মা দিবস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্যিকভাবে সবথেকে সফলতম পরব. ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে রেস্টুরেন্টে ডিনার করার অন্যতম জনপ্রিয় দিন হল মা দিবস।

মাকে ভালোবাসা দিনে আবদ্ধ নয়ঃ
ফ্রেমে বন্দি একটি দিনে মাকে ভালোবাসা
তা নয় জেনো, মা যে আমার নিত্য কাঁদাহাসা
মা যে অনেক দূরে
সুদূর অচিনপুরে
অনুক্ষণ তাও মাকে যে পাই, মা-ই সকল আশা।
~~~
সূত্রঃ বাংলা উইকপিডিয়া

বিশ্ব কবিতা দিবস আজ (World Poetry Day Today)

poetry

আজ “বিশ্ব কবিতা দিবস”। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ মার্চকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, “এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলোকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে।”

পূর্বে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথম দিকে কখনও কখনও ৫ অক্টোবর এই উৎসব পালিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ অক্টোবর এই দিবস পালনের প্রথা শুরু হয়। অনেক দেশে আজও অক্টোবর মাসের কোনো দিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস পালন করা হয়।এই দিবসের বিকল্প হিসেবে অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসের কোনো দিন কবিতা দিবস পালনেরও প্রথা বিদ্যমান।

কবিতা কী? কবিতার গুরুত্ব কটোটুকু আজকের এই সমাজে? – এসব নিয়ে বিতর্ক হয়তো করা যায়। কিন্তু কবিতা যে হৃদয়ের সুকুমারবৃত্তিকে লালন করে তাতে সন্দেহ নেই। কবিতা অনেকক্ষেত্রেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বড় হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে।
বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠক্রমে সমকালীন কবিতাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা মনে করে, কবিতা হলো কিছু মানুষের অপ্রয়োজনীয় সৃষ্টি কিংবা মিথ্যা ভাষ্য মাত্র। তবে কবিতাকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করি কিংবা কবিতা আমাদের চেতনাকে কতটা জাগ্রত করে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কবিতা দিবস
কবিতা দিবস

কবিতায় সমসাময়িক বিষয় ওঠে আসবে এটা স্বাভাবিক। কবি এস টি কোলরিজের মতে—‘কোনো কবিই বড় কবি হতে পারেননি সত্যসন্ধ দার্শনিক হওয়া ছাড়া।’

আজকের দিনে, আমাদের কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ –এর “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি” কবিতার অংশবিশেষ তোলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ

জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।“


তথ্যসূত্রঃ বাংলা উইকিপিডিয়া

~~~জননী-জায়া-কন্যা-বোনের জন্য ভালোবাসা~~

WOOOOOOOOO

***নারী****

নারী কভু মা কিবা বোন
প্রেয়সী হয় কারো,
জীবন চলার পথে নারী
ছায়া নিবিড় গাঢ়।

হোক সে চাকমা মনিপুরী
হাজং কিংবা গারো,
সে যে মানুষ, দেশের মেয়ে
‘না, না’ করতে পারো!

নারীর আছে বিদ্যাবুদ্ধি
আছে অধিকারও
বঞ্চিত সে না হয় যেনো
খেয়াল রেখো তারও।

নারীর প্রতি সহিংসতা
অপমানটা ছাড়ো,
হৃদ্য ভালোবাসায় দুয়ে
সমান তালে বাড়ো।

***মানুষ****

নারী কেবল ভোগ-সামগ্রী
সে কি মানুষ মোটে না?
কেনো তবে তার কপালে
প্রাপ্যটুকু জোটে না?

নারী কেবল মানুষ তো নয়
মায়ের চরণ স্বর্গ সে,
তবু কেনো নারীর তরে
নিগ্রহ – তা বর্গ সে?

নারী কভু আদরের বোন
কভু প্রাণের সখা সে
কেনো অযাচিত থাবা!
আদর পাখি চখা সে।

নারী হলো শান্তি-ছায়া
জীবন যুঝে রোজই সে,
তবু কেনো জীবনবাজি
হয় যে লোভের ভোজই সে!

নারী তো আজ সমান তালে
মেধা এবং মননে,
ঘরে সে মমতাময়ী
যোগ্যও সে রণনে।

নারীর ভালোবাসার ঋণে
সবারই তো দায় আছে,
সেই সে নারীর অপমানে
কারোরই সায় আছে?

নারীর কেনো পথেঘাটে
থাকেই তবু নিগ্রহ?
ভুল পথের সেই পুরুষ অংশ
মানুষ তোরা শীঘ্র হ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: সর্বস্তরের নারী ও আমাদের সমাজ

WOOOOOOOOO

নারী এবং বাস্তবতাঃ
নারী ও পুরুষ মানব জাতির দুটি রূপ। সৃষ্টিকর্তা এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর মানুষ, গাছপালা, পশু পাখি, ধূলিকণা, সাগর নদী, পাহাড় পর্বত সব। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। পৃথিবীর চালিকাশক্তির প্রধান ভূমিকায় রেখেছেন মানুষকে মহিয়ান সৃষ্টিকর্তা। মানুষ পৃথিবীতে এসেছে নর এবং নারী হয়ে। ‘আদম’ এবং ‘ঈভ’ মানবজাতির আদি পিতা ও মাতা। সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবী চলছে নর তথা পুরুষ ও নারীর যৌথ প্রচেষ্টায়। একা নারী কিংবা একা পুরুষ বড় কিছু করতে পারেনি কখনো। আর তাই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় বলেছেনঃ

“কোন কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।”
“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষকে সমান মর্যাদা সম্পন্ন করেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সমাজে নারী অনেকক্ষেত্রেই বৈষম্যের নির্মম শিকার। নির্যাতন আর অত্যাচারে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে অনেক নারীর জীবন। এটা হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। কারণ, সৃষ্টির কাঠামোতে পুরুষ আর নারীকে সমান দক্ষতায় আঁকা হলেও পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয়নি। এ সমাজে পুরুষরা স্বঘোষিত মানুষ হয়। কিন্তু নারী যেনো সবসময় মানুষ নয়- তার যেনো রয়েছে অন্য এক অস্তিত্ব। শুধু ভোগ করার সময় তাকে আদর করে মানুষ বলে ডাকা হয়। কিন্তু অধিকারের প্রশ্ন আর মর্যাদার প্রশ্নে পুরুষ নারীকে তার সমকক্ষ হিসেবে স্বীকার করতে দ্বিধা করে। অনেকসময় শারীরিক, মানসিক ও বস্তুগত বৈষম্যের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য দেয়াল তুলে তাকে বুঝিয়ে দিতেও কুণ্ঠা করে না যে নারী একটি দ্বিতীয় শ্রেণির ভোগ্যপণ্য বা প্রাণীবাচক অস্তিত্ব। তাই, কিছু ব্যতিক্রম সহজভাবে মেনে নিয়েই বলতে হচ্ছে – নারীর সত্যিকার অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাদের আরো অনেকপথ হাঁটতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসঃ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ৮ মার্চ পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আন্তর্জাতিক নারী দিবস- আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে লম্বা ইতিহাস আছে। প্রথমে ৮ই মার্চ ‘বিশ্ব শ্রমজীবি নারী দিবস’ হিসেবে পালিত হতো। দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যই ‘শ্রমজীবি নারী দিবস’ হিসেবে দিনটি পালন করা হতো। জাতীয়ভাবে নারী দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ১৯০৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী, যুক্তরাস্ট্রে। পরের বছর কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ‘নারী দিবস’ উদযাপনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ঐ সম্মেলনে জার্মান সমাজবিদ লুইস জিৎস আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের প্রস্তাব করেন, তাঁকে সমর্থন জানান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন।

পরের বছর ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, জার্মানী, সুইজারল্যান্ডের এক মিলিয়নের অধিক জনগন প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের পক্ষে মত দেয়। সেটা ছিলো ১৮ই মার্চ। এই দাবী ধীরে ধীরে নারীর সমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। নারীকে ‘নারী’কে নারী হিসেবে নয়, ‘মানুষ’ হিসেবে সম্মান দেয়ার দাবী ছিলো তাদের। আমেরিকায় ২৮শে ফেব্রুয়ারিতেই ‘নারী দিবস’ জাতীয়ভাবে পালিত হতো। কিন্তু রাশিয়ায় ১৯১৩ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন আয়োজনের উদ্যোক্তারা লক্ষ্য করলেন যে, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে যে দিনটি ২৮শে ফেব্রুয়ারি হিসেবে চিহ্নিত, তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ৮ই মার্চ হিসেবে চিহ্নিত আছে। সেই থেকেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী ৮ই মার্চ বিশ্ব নারীদিবস পালিত হয়ে আসছে। অনেক পরে, ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সকল সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, ৮ই মার্চ দিবসটিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য। স্ব স্ব দেশের ঐতিহাসিক, জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রথার আলোকে নারীর অধিকার ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ দিনটিকে পালনের জন্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস জনপ্রিয়তা লাভ করে আজকের পর্যায়ে আসে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৭ প্রতিপাদ্যঃ

‘‘নারী-পুরুষের সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে নতুন মাত্রা’’
The theme for International Women’s Day 2017 is
“‘Women in the Changing World of Work: Planet 50-50 by 2030’, asking for #BeBoldForChange”.

এগিয়ে যাবার গল্প
এগিয়ে যাবার গল্প


নারী প্রগতিঃ পরিসংখ্যান যা বলেঃ

সমাজ যখন নারী প্রগতি, নারী আন্দোলন আর নারী নির্যাতন বন্ধের শ্লোগানে তুঙ্গে, তখনও সর্বস্তরের নারীদের নিয়ে বিচার করলে তারা কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে- তা চিন্তার বিষয়। “অমুকের ঘর ভেঙ্গে গেছে, অমুক মায়ের মর্যাদা পেতে চায়, কিশোরী ধর্ষিতা, কাজের মেয়ে নির্যাতন ইত্যাদি খবরের হেডলাইন প্রতিদিনের সংবাদপত্রে একজন হৃদয়বান ব্যক্তি দেখতে না চাইলেও নিউজগুলো ঠিক আসে। নারীর অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু নির্যাতন কি কমেছে? না। নির্যাতনের টেকনিক পাল্টেছে আর বেড়েছে নির্মমতা ।

মহিলা পরিষদের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে- গতবছর (২০১৫) জানুয়ারি মাসে দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৮৪ জন নারী। এঁদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন ৫৫ জন আর গণ- ধর্ষিত হন ৯ জন । ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ৭ টি। শ্লীলতাহানি হয়েছে চার নারীর।– এ পরিসংখ্যান পত্রিকা প্রকাশিত তথ্য থেকে নিয়েছে মহিলা পরিষদ। প্রকৃত ঘটনা নিশ্চয়ই অনেক বেশি। নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনাই পরিবার পর্যায়েই চাপা পড়ে থাকে।
এছাড়া, দৈনিক সমকাল-এ গত ১ জানুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, “২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৬৫৪ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৩৯টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯৯ জনকে। মহিলা পরিষদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে এ খবর দেয়া হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন দাবি করেছে গত এক বছরে ১৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩১ নারীকে।

মহিলা পরিষদ জানায়, গত বছরে এসিডদগ্ধে মৃত্যু ৪, অপহরণ ১১৮, নারী ও শিশু পাচার ৩০, নারী ও শিশু হত্যা ৮৯৮, যৌতুকের জন্য নির্যাতন ৪৩১, উত্ত্যক্তের শিকার ৪৬৫, বিভিন্ন নির্যাতনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৩৪১ ও ৯৩ জন বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রিপোর্টমতে গত বছর হত্যাকাণ্ডের শিকার ৫ হাজার ৬১ জন। এর মধ্যে যৌন নির্যাতনে হত্যা ২৭, যৌতুকের কারণে হত্যা ৩০, এসিড নিক্ষেপে ১, পারিবারিক সহিংসতায় ৬৮৫, রাজনৈতিক হত্যা ১০১ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যা ৮৬ জন। এ ছাড়া যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার ১৬ ও ৯টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।”

আছে কষ্টের বাস্তবতা
আছে কষ্টের বাস্তবতা

উল্লেখিত দুটি পরিসংখ্যানে সংখ্যাগত কিছু হেরফের আছে – এ কথা ঠিক। কিন্তু শুধু সংখ্যা গণনায় না গিয়ে সাধারণভাবে এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, দেশজুড়ে নারীরা নিগৃহীত হচ্ছে অস্বাভাবিকহারে। যে নারীকে জাতীয় কবি ‘বিজয়ী- লক্ষ্মী’ বলে গেছেন, সে নারী আজ যেনো সমাজে আপদ!


নারী বা পুরুষঃ মানদণ্ড হোক পারস্পারিক সম্মান ও বোধে উজ্জীবিতঃ

কেনো ঘটে এসব? নারীর উপর কেনো চলে এতো অত্যাচার? সমাজের কি কিছুই করার নেই? বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে কি দায় সাড়া যায়? কিংবা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে কতোটা অর্জন হচ্ছে তা ভাবতে হবে
পুরুষের প্রতিপক্ষ হয়ে নয়; মানুষ হিসেবে নারীর আছে পূর্ণ অধিকার সবকিছুতে। নারী ও পুরুষ তাই পরস্পরের সহযোগী হয়ে নিজেদের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মানবতার উন্নয়নেও বৃহৎ পরিসরে ভূমিকা রাখতে পারে।
নারীর প্রতি মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। নারীর প্রতি বিকৃত মানসিকতাকে নৈতিক অবক্ষয়ই বলা যায়। আর এমন নৈতিক অবক্ষয়ের পরিণতি হবে খুব নেতিবাচক। মানবতার উন্নয়ন রবে সুদূর পরাহত।

তাই চাই এ মানসিকতার পরিবর্তন। আর তা লোক দেখানো কিছু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে সম্ভব নয় মোটেও। শুধু আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, র্যা লি আর বক্তৃতা করে খুব যে ফল আসবে তা নয়। সমাজকে, দেশকে যারা কিছু দিতে চান, এ কাজে এগিয়ে আসতে পারেন তাঁরা।

যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে বিদ্বেষের বীজটি ঢুকে গেছে, তাদেরকে সুস্থ চিন্তায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। সফল না হলে আইনের হাতে দিতে হবে ছেড়ে। তবে সে আইনকে হতে হবে সত্যিকার অর্থে আইন।
আমাদের ভাবতে হবে আগত দিনের কথা। আমাদের নতুন প্রজন্ম, যারা আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ কর্ণধার, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে তাদের মানসিকতা মানবিক করে গড়ে তোলার সার্বিক প্রয়াস নিতে হবে। তারা যেনো পুরুষ হয়ে নারীকে মানুষ ভাবতে শেখে এবং নারী হয়ে পুরুষকে নিছক প্রতিপক্ষ বা শত্রু না ভাবে। সমচিন্তা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।
বলিষ্ঠভাবে বলতে হবে- নারীরা এ সমাজের আপদ নয়, যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের পাত্র নয়; নারী হলো পুরুষের বন্ধু, ‘বিজয়ী লক্ষ্মী’। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। পৃথিবী আমাদের। নারী ও পুরুষের মানবিক বোধকে মূল্য দিয়ে একে সুন্দর করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

একগুচ্ছ পরানের কথা (০০১~০১০)

poraner kotha

পরানের কথা ০০১

ভালো মানুষ সহজ মানুষ
বোকার সনদ পায়
ধূর্ত-কুটিল ভালো’র মাথায়
কাঁঠাল ভেঙ্গে খায়।

পরানের কথা ০০২

মূল্যবোধের মূল্যতো নাই
স্বার্থসিদ্ধিই বড়
মানবতা রুদ্ধ করে
কিসের বড়াই করো?

পরানের কথা ০০৩

প্রশ্ন শুধু ফাঁস হয়ে যায়
দাস হয়ে যায় পড়া,
সনদ জোটে বড়ো বড়ো
জ্ঞানই কেবল ধরা।

পরানের কথা ০০৪

খাদ্যে ভেজাল, কী আর করা
ঔষধে সাড়াবো
ঔষধেও যে ভেজাল ম্যালা
হাত কোথায় বাড়াবো!!

পরানের কথা ০০৫

তেলবাজেরা ভালো ছিলো
আছে এবং থাকবে
পাশাপাশি নিরীহদের
অশান্তিতে রাখবে।

পরানের কথা ০০৬

বেগ পেয়েছে জীবন অনেক
আবেগ মূল্যহারা
স্বার্থ-টানে সবাই ছোটে
সবেগ পাগলপারা ।

পরানের কথা ০০৭

যানজটে যে স্থবির নগর
ঢাকাবাসী নাকাল
প্রতিশ্রুতির তুবড়ি ছুটে
ফলটা শুধু মাকাল।

পরানের কথা ০০৮

মাঝরাতে কতো কথা
টকশোয়ের চাঙ্কে
শেষমেশ সার-অসার সবি
চলে যায় জাঙ্কে।

পরানের কথা ০০৯

ঢাকতে গিয়ে একটি মিথ্যে
দশটি মিথ্যে লাগে
সত্য কভু দেয় না ধোঁকা
সত্যে হৃদয় জাগে।

পরানের কথা ০১০

মৃত্যুশয্যায় বুড়িগঙ্গা
সকরুণ তার কান্না
দূষণের যে মাত্রা বাড়ে
কেউ শুনতে তা পান না।
~

ভালোবাসার নিপুণ স্থপতি

পরিযায়ী পাখি
পরিযায়ী পাখি

কোনো পরিযায়ী পাখি নই আমি
বৃহস্পতিতে এলাম
শনিতে ফুড়ুৎ ।

আমি তোমার বারোমাসের আহ্নিকে আছি
উড়েউড়ে
ঘুরেঘুরে
আদরে
অবহেলায়।

তোমার বুকের বাম অলিন্দে
এক টুকরো অনাবাদী জা’গা দিও শুধু
খড়কুটোর সুখাগুনেনীড়
তোমার জন্য আমার অঙ্গীকার
আমি কোনো পরিযায়ী পাখি নই
দিবারাতের প্রহর-অণুতে ভালোবাসার নিপুণ স্থপতি আমি ।
~~~
টীকাঃ
ভালোবাসি শব্দনীড়। থাকো বেঁচে। থেকো ছুঁয়েছুঁয়ে।