প্রচন্ড বৃষ্টি। আপাদমস্তক রেইনকোটে আবৃত শিহাব। বাইক নিয়ে একটা মার্কেটের সামনে আরো কয়েকজন বাইক রাইডারদের সাথে ভিজছে। বাধ্য হয়েই সবাইকে ভিজতে হচ্ছে। মার্কেটের ভিতরে এত পরিমান মানুষ, আর কেউ ঢুকতে পারছে না। বাতাসের বেগও অনেক, তাই সামনে না এগিয়ে বৃষ্টি কমার অপেক্ষায় খোলা আকাশের নিচে ভিজতে থাকে শিহাব।
একটা সিগারেট টানতে পারলে ভালো লাগতো। ভাবতেই বড্ড ‘ধুমপানের তেষ্টা’ জাগলেও নীরব থাকে সে। মফস্বল সাংবাদিকদের কখনো কখনো নীরব থাকতে হয়।
দ্রুত বেগে একটা সিএনজি অটোরিকশা রাস্তার জমা জল ছিটিয়ে শিহাবকে পাশ কাটায়। ভিজিয়ে দেয় শিহাবকে। কিছু ছিটা চোখে পড়ে, জ্বলে উঠে বাম পাশের চোখ। আপনাতেই অশ্রাব্য একটা গালি এসে যায়। কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দে পরিণত হবার আগেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সে।
মফস্বল সাংবাদিকেরা একটু মন খুলে, ইচ্ছামত কাউকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দিতে পারে না। প্রকাশ্যে তো নয়ই। সবসময় একটা নিয়ন্ত্রণের ভিতরে থাকতে হয় তাদেরকে।
শিহাব যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, রাস্তার ঠিক ওপাশেই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সেদিকে চোখ যায় শিহাবের। কেন জানি কাশেমের কথা মনে পড়ে। এই অফিসের পিওন। তবে পিওন হলেও খুব ক্ষমতাশালী। মূলত অফিসটির সার্বিক কার্যক্রম সে-ই আসলে নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েকটা বাড়ির মালিক এবং নামে বেনামে ওর আরও অনেক সম্পত্তির কথা শুনেছে শিহাব।
কাশেমের এই অবৈধ প্রভাবের জন্য এই এলাকা এবং পাশের এলাকার মফস্বল সাংবাদিকদের কি কোনো ভূমিকা নেই? এরা প্রায় প্রতিদিন কিংবা যখন ইচ্ছা হলো অথবা কেউ কেউ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনে কাশেমের সাথে ‘চা পান’ করতে আসে। চলে বন্ধুত্বপূর্ণ গল্পগুজব, চায়ের সাথে সিগারেট আর যাবার সময় খাম। এই তিন এর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটা ‘সাইক্লিক অর্ডার’। তা থেকে মফস্বল সাংবাদিকেরা কেনো জানি আর সহজে বের-ই হতে পারেন না।
জমির শ্রেণি পরিবর্তন সহ নানারকম অবৈধ কাজে আসে প্রচুর অবৈধ টাকা। এই টাকা দিয়েই সিস্টেমের ভিতরে থেকে কাশেমরা নিজেদের জন্য এক আলাদা রাজত্ব তৈরী করে। সবাইকে ম্যানেজ করেই অবশ্য। মফস্বলে আবার সবাই কেনো জানি দ্রুত ম্যানেজ ও হতে পছন্দ করেন।
তবে কি কোনো সাংবাদিক এই কাশেমদের বিরুদ্ধে লেখেন না? সিস্টেমের এই অনিয়ম তুলে ধরেন না তাদের প্রতিবেদনে?
এরকম প্রশ্নে একটু বিব্রত হয় শিহাব। নিজের ভিতরের শিহাব আর মফস্বল সাংবাদিক শিহাবের ভিতরে চলে ক্ষণিকের টানাপোড়েন। শেষে ভিতরের শিহাবই উত্তর দেয় মফস্বল সাংবাদিকের পক্ষ হয়ে,
– হ্যা, নিউজ হয়তো। কেউ কেউ করে। এরা হলো যারা বছর ধরে প্রতিমাসে কাশেমের থেকে খাম নেয়। এভাবে জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত লাগাতার খাম গ্রহন শেষে, কোনো কারণে যদি নভেম্বর মাসে কাঙ্খিত খাম দেয়া বন্ধ করে কাশেম..
ঠিক এর পরের দিনই পত্রিকায় বক্স করে বিশাল নিউজ! শিরোনাম?
” সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে সর্বময় ক্ষমতাধর কে এই কাশেম??”
বাইনচোত!! কে এই কাশেম?
এখন কাশেমকে আর চেনো না? মুফতে চা-সিগারেট খাওয়া আর মাসে মাসে খাম নেবার সময়তো কাশেমই ছিলো ধ্যান-জ্ঞান। এখন আর চেনো না?
ভিতরের শিহাবের গালিতে কিছুটা ম্রিয়মান হলেও নিজেকে সামলে নেয় মফস্বল সাংবাদিক শিহাব। কারণ ভিতরের দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক শিহাবেরই জিত হবে। সবসময় ভিতরের মানুষটার কথামতো চলে মফস্বল সাংবাদিকতা করা যায়না।
#মামুনের_অণুগল্প_৫৫৩