ট্যাগ আর্কাইভঃ রোমেল আজিজের কবিতা

তুমি চলে যাওয়ার পর

তুমি চলে যাওয়ার পর,
আমি দিন দিন একটা
জীবন্ত বৃক্ষে পরিণত হয়েছি ।
.
পাহাড়ি বৃষ্টি, বসন্তের বাতাস
কিংবা ভোরের কুসুম আলো,
একাকী কিছুই ভালো লাগে না আর ।
শতাব্দীর পর শতাব্দী জেগে থাকা
প্রাচীন নিঃসঙ্গ তারাগুলোর মতোই,
নিজেকে একাকী মনে হয় ।
.
সময়ের সাথে সাথে বৃক্ষ-
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়,
বৃদ্ধ বৃক্ষ অফুরান ছায়া দিয়ে যায়
কাউকে দেয় নিরাপদ আশ্রয়,
তবুও কিছু ডাল শূণ্যই থেকে যায়
হারানো পাখি ফেরার আশায়;
একাকী অপেক্ষায়, যায় কেটে সময়
প্রাচীন বৃক্ষ আরো প্রাচীনতর হয়…

মেঘনাদ বধের পর

জেগে থাকলে যে রাবন,
ঘুমিয়ে থাকলেও সেই রাবনই।
.
রাম – লক্ষণ – হনুমান
আগুন লাগায় লঙ্কায়,
নিজ ক্রোধেই পুড়ে হায়
নিজেদেরই দেবালয়।
.
যুক্তিবিদ্যার সূত্র ঢেলে
বাঘ-বেড়াল এক করা যায়,
কিন্তুু সীতারাই বন্দী থাকে
সমুদ্র কন্যার দেশে।
সীতারাই হারায় শেষে
অনাস্থার লেলিহান শিখে…
.
মেঘনাদ বধ হয়
কিন্তুু হয় না বধ মন
তাইতো রামেরাই থাকে বেঁচে,
সীতাদেরই পোড়ায় অনল। 
.
দুইয়ে দুইয়ে চার হাত
হয়না যে আর এক সাথ,
তাই হয়তোবা দেবালয়
বিশ্বাসের অনলে পুড়ে,
আর অবিশ্বাসের অনলে হৃদয়।

নিরঞ্জনের না বলা কথা ২৯

মেঘফুল নেই বলেই
বৃষ্টিতে আপ্লুত হই আমরা,
জলের কোন রঙ নেই বলে
কান্নায় কখনো রংধনু হয় না।

ঝড় ও জলের অদৃশ্য সমীকরণ
বীজগাণিতিক কোন নিয়ম মানে না,
তাই হয়তোবা বিপাশার উপেক্ষা
কখনো নিরঞ্জনের অপেক্ষার মাঝে
কোন দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় না।

শীতের শেষ, কালবৈশাখীর দিন
আসি আসি করছে তখন,
এমন এক কুয়াশাচ্ছন্ন হিমেল সকালে
নিরঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলাম-
“ঝড়কে বেঁধে শুধু জল দিয়ে কি
বৃক্ষ বাঁচে রে নিরঞ্জন?”

তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে
ম্লান চেহারায় শুধু বললো,
“বৃক্ষেরা আছে বলেই না
স্বার্থপরের সংখ্যা বেশি নেই।”