ট্যাগ আর্কাইভঃ রোমেল আজিজ এর কবিতা

অনুশোচনা

আততায়ীর তপ্ত বুলেট
মেহেদী রাঙ্গা না হলেও,
রঙ যে হারায় লোহিতে।

কামারের হাপড়ের মত
আচমকা থামে হৃদকম্পন।
অশ্রুসজল চোখে ভাসে
চক, ড্রাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ড;
পুকুর ভর্তি স্বচ্ছ জল।
চিনচিনে তীব্র ব্যাথা
মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়,
সময় হয়েছে তোর।

এইতো সেদিনও তুই ছিলি
হাসিমুখে থাকা নোংরা মিথ্যুক,
আজকেও কী তুই তা ছিলি না!

শুভ্র পোষাক গায়ে জড়ালে তো
মনের কদর্যতা যায় না ঢাকা।
লাল সাদা কণিকা গুলোরও
এবার সময় হয়েছে বিশ্রামের;
পুকুর ভর্তি স্বচ্ছ জল
চক, ড্রাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ড,
ব্ল্যাকবোর্ড, চক, ড্রাস্টার…..

বিষণ্নতায় আক্রান্ত সময়

জীবন একটা বিষণ্ণ ফুটবল,
কখনো সট্রাইকারে মুখে
গোল পাওয়ার হাসি ;
কখনোবা ডিফেন্ডারের লাথি !
কখনোবা আবার জড়ায়ে বুকে
গোলকিপারের মতো
পিঠে ফের কষায় লাথি।

ঘুরে সময়, গড়ায় জীবন
কমে না অহংকারীর আস্ফালন ।
এরই মাঝে কেটে যায়
কিছু নিরহংকারীর দিন,
অফসাইডের নিয়ম গলে –
রোদ -বৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে
ফুটো হওয়া ফুটবলের মতোই
ধুঁকে ধুঁকে গড়ায়ে।

স্বাধীন দেশে শকুনের রাজত্বে

সভ্যতার বোতলে বন্দী
অসহায় বলগা হরিণ,
মুক্ত আকাশে উড়ে
শকুনের দল সীমাহীন।
.
ঢেকে যায় চরাচর
চেতনা তো অসীম,
তারা কিছু পায় না
যারা করে স্বাধীন।
.
ময়ূর পুচ্ছ্ব যদি থাকে
কিসের আবার দুর্দিন,
কাক ময়ূর একাকার
দেশটাতো স্বাধীন।
.
শকুনের হাতে উড়ে
লাল সবুজ বাঁধাহীন,
চেয়ে রয় নির্বাক
শহীদ জননী ভাষাহীন।
.
এদেশ তো ভুলে গ্যাছে
প্রাণ দিল যারা প্রতিদানহীন,
তালে তেলে সয়লাব
দেশটাতো স্বাধীন !

এখন এখানে

এই নির্জন চরাচরে রাত দশটা মানে,
এখানে এখন নিঝুম গভীর রাত।

দূরের ট্রেনের হুইসেল
জোনাক জ্বলা খোলা মাঠ,
আলো আঁধারে শূণ্য পথ ঘাট
ছুটে চলা মেঘফুল,ক্লান্ত কাশবন
হারায় অতীতের প্রমিত নিঃসঙ্গতায়।

ঝরে চুন সুরকি,
উড়ে নীরবতা
অশ্রু অধর গড়ায়।
এখানে দেখে না কেউ,
এখানে দেখার কেউ নেই,
এখানে ভুল স্বপ্নে কেটে যায়
অবিরত হাজার জীবন অসহায়…

তুমি চলে যাওয়ার পর

তুমি চলে যাওয়ার পর,
আমি দিন দিন একটা
জীবন্ত বৃক্ষে পরিণত হয়েছি ।
.
পাহাড়ি বৃষ্টি, বসন্তের বাতাস
কিংবা ভোরের কুসুম আলো,
একাকী কিছুই ভালো লাগে না আর ।
শতাব্দীর পর শতাব্দী জেগে থাকা
প্রাচীন নিঃসঙ্গ তারাগুলোর মতোই,
নিজেকে একাকী মনে হয় ।
.
সময়ের সাথে সাথে বৃক্ষ-
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়,
বৃদ্ধ বৃক্ষ অফুরান ছায়া দিয়ে যায়
কাউকে দেয় নিরাপদ আশ্রয়,
তবুও কিছু ডাল শূণ্যই থেকে যায়
হারানো পাখি ফেরার আশায়;
একাকী অপেক্ষায়, যায় কেটে সময়
প্রাচীন বৃক্ষ আরো প্রাচীনতর হয়…

নিষিদ্ধ ঘাসফুল

ধূসর নগরের হাজার ব্যস্ততার ভিড়ে
ফুটেছে দুটি ঘাসফুল
রাস্তার দ্বিভাজকের উপরে।

যেন ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত নবজাতকের
ঠোঁটে লেগে থাকা হাসি ফুটেছে,
বন্য ওই দুটি ঘাসফুলে।

এই ফুল পাবে না কখনো শোভা
কোন প্রেমিকার খোঁপায়,
যেভাবে পায় না আদর পরিত্যক্ত শিশু,
পায় না কোলে একটু স্থান
অভিশপ্ত এক হৃদয়হীনা মায়ের।

অগাস্ট ১৩, ২০১৪

এক অচেনা রাতের গল্প

কাফনে মোড়া লাশের মিছিল
চলছে এগিয়ে,
অস্পষ্ট এই রাতের আঁধারে।
যেন দেবদূতেরা সব
এসেছে নেমে
মিথ্যায় ভরা এ শহরে …
.
এ এক অচেনা রাত
এক অপার্থিব বর্ষা ঝরা রাত,
যে রাতের পরে রাত নামে
আসেনা আর প্রভাত !
.
যে রাতে ফুল হাসে না
দু’চোখ জাগে একাকী নির্ঘুম,
যে রাতে স্মৃতিরা আসে নূপুর পায়ে,
কানে বাজে অবেলায়
শুধুই, রুমঝুম রুমঝুম …

পশু না পুরুষ ?

অন্ধকারে সমুদ্রের গর্জনকে
এখন আর অপার্থিব মনে হয় না ;
আদিম সমাজের তিমির রাত গুলো
এ পৃথিবীতে আবার আসছে ফিরে !

ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে উল্টা পথে,
পুরুষ আর পশুর ব্যবধান
ক্রমশই যাচ্ছে কমে।
জীবনবোধ চাপা পড়েছে আজ
কলুষতার জাঁতাকলে।
চারিদিকে শুধু জয়গান হতাশার
শুধু অজস্র ভাঙনের সুর।

কিছু পুরুষ এখন আর মানুষ না,
পশুর চেয়েও অধম ;
তাই নারী আজ নারী না,
কামনার বস্তু স্বরূপ রয়ে গিয়েছে
পুরুষরূপী কিছু পশুর চোখে !

সময়ের অন্তরালে

দূরে নিঃশব্দে
হয় পতন বৃদ্ধ বৃক্ষের,
নিজের ছড়ানো শেকড়গুলো
ছেড়ে দেয় মাটির বন্ধন।
পড়ে রয় মৃত বৃক্ষ
করুণা নয় অবহেলায়!
.
একদিন ছিল সব,
ছোট ছোট ছেলে মেয়ে
থাকতো নিরাপদ আশ্রয়ে,
তাঁর কাছে একদিন।
চতুর লোক কতনা
দিয়ে যেত ধোঁকা,
নিরীহ মুসাফিরের বেশে।
.
তবুও তো ছিল সব,
উচ্ছ্বল সময় আর
কতগুলো হাসিমুখ।
সময় গড়ায়, সবই হারায়
দেয় ছুঁড়ে ফেলে,
একসময় উত্তরসুরি
বৃদ্ধ বৃক্ষ আজ অকর্মণ্য বলে।
.
হাজারো বৃক্ষের এখন
হয় এভাবে পতন,
আপন সুতো ছিঁড়ে
নিঃশব্দে, সময়ের অন্তরালে।

শব্দ তিনটা মিথ্যে ছিল না

আমি জলকে বলছিলাম –
‘জানিস মাত্র তিনটা শব্দ বলার জন্য
আমার মৃত্যু দন্ড হয়েছিল ‘।
.
মাটি তখন আড়ি পেতে শুনছিল,
আমাদের কথোপকথন।
.
অবাধ্য মাটি চুপ করে থাকতে না পেরে
এক সময় ফস করে বলে ফেলল –
শব্দ তিনটা কী ছিল?
চরম বিরক্ত আমি মাটিকে,
ধমকাতে গিয়েও থমকে গেলাম।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে,
মাটি আর জলকে শুধু বললাম —
শব্দ তিনটি মিথ্যে ছিল না।

লোভ

পাখির ব্যাথা বুঝে না বলেই
তীরন্দাজ অনুশোচনায় ভুগে না।
সব সিঁড়িই উপরের দিকে নেয় না
শেষটায় যে ছাদের কার্নিশ;
লোভে পড়ে টপকাতে গেলে
নিশ্চিত পতন।

কতটুকু এগুবো
তা না ভাবলেও,
জানতে হয়
থামবো কখন…

—————-
#লোভ
২৮ ০২ ২০২০
আজিমপুর, ঢাকা।

শেষ সংবাদ

প্রত্যাগত না হয়েও প্রতিদিন
আমাদের খুন হতে হয়,
বিবর্ণ দেয়ালে প্রিয় বর্ণমালায়
লেখা হয় ব্যার্থ প্রতিবাদ।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে
অস্পষ্ট হয়ে যায় সব,
তনুদের অভিশাপে কিছুই
যায় আসে না কারো।
অস্থিরতায় কাটে সময়
ভোর হতেই না জানি
কে হয়ে যায় আবারও
শেষ সংবাদ…!

—————
১৪.০১.২০২০
শেওড়াপাড়া, ঢাকা।

গাণিতিক জীবন

জীবনটাও যে বড্ড জটিল
অনেকটা সরল অংকের মতোই।

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়
বন্ধনী পার হওয়ার আগেই
যে থাকে রেখা বন্ধনীর বাঁধা।

কোন মতে তা না হয়
পার হওয়া গেল,
কিন্তু এরপর–
এরপর শুরু গোলকধাঁধা ;
গুণ আগে না ভাগ আগে
তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই
বেজে উঠে প্রথম ঘন্টা শেষের ধ্বনি;
এখনো যে বাকি সুদকষা, জ্যামিতি,
পাটিগণিত আর পরিমিতি!

সরলটা না হয় পরেই মিলাবো;
কর্জের সুদ আর বাকির হিসাব
আসল মেলাতেই মাথার হাত,
সুদ তা তো এক সমুদ্র দূর
আহারে জীবন —
ভাবতে গিয়েই
আরেক ঘন্টা পার-
ঢং ঢং ঢং

ধুর ছাই আর সময় তো নাই
এখনো যে বাকি জ্যামিতি
পাটিগণিত আর পরিমিতি!

“ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি
দুই সমকোণের সমান ”
শুধু এটা প্রমাণ করতে পারলেই
তোদের সবই হবে আমার ;
সময় বাকি মাত্র মিনিট পনেরো —

সাত মিনিট তের সেকেন্ডেই
প্রমাণ করে দিলাম
পয়া অপয়ার মাঝে শুধু
মিনিট ব্যাবধান;
শুধু সময় মতো
টুকতে পারলেই হলো।

রাজার নীতি নিয়ে মাথায়
আমাকে কে আর পায় ;
সরল জীবনের ভুল গুলো
এখন যে সুদাসলে
উসুলের সময়—

—————————
শেওড়াপাড়া, ঢাকা

২৯/০৭/২০১৯

নদী ও আমি

রাতের শেষ প্রহর;
অস্পষ্ট আলোয়
চুলে ঢাকা তোমার মুখ,
তুমি গভীর ঘুমে বিভোর।

মধ্যরাতে যখন পড়ছিলাম
টেবিল ল্যাম্পের আলোয়,
তখন ডেকেছিলে কাছে
কিন্তু তাকাইনি আমি, দেইনি সাড়া
তোমার কাঙ্খিত আহবানে।

জানি তুমি এক খরস্রোতা নদী
যেখানে সাঁতরিয়েছি আমি হাজারবার,
জানি আমি এ নদীর গভীরতা ;
কত নিস্তরঙ্গ ঢেউ আসে
সময় – অসময়ে।

আজ আর তোমাকে
পাড়ি দিতে চাই না আমি,
নির্ভীক নাবিকের মতন ;
বালিহাঁস হয়ে ভাসতে চাই
তোমার মোহনায়।

অমলিন দিনগুলো

তুমি আমার অধর ছুঁয়ে দেখ
রক্তের শিহরণ।
শরতের সাদা মেঘ,
ঐ দূরের শুভ্র কাশফুল
ডাকছে তোমায়।

বিকেলের পরাজিত সূর্য,
নীলাভ আকাশ লাল করে ফেলবে।
তখন হয়তো তোমার
সময় হবে না রংধনু দেখার;
সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে দিবে নিজেকে।

সময় তোমাকে দিবে
অনেক কিছুই,
কিন্তু নিয়ে যাবে
কিছু বন্ধুকে,
দূর থেকে আরও দূরে।

হঠাৎ কোন একদিন
অস্বচ্ছ চোখ নিয়ে,
মনে পড়বে তোমার আমাকে।
কিন্তু তখন ব্যস্ত সময়
দিবেনা ফিরতে আর তোমায়,
হারিয়ে যাওয়া সেই
অমলিন দিন গুলোতে…