রোমেল আজিজ এর সকল পোস্ট

রোমেল আজিজ সম্পর্কে

শখের বশে কবিতা লেখা শুরু, কিন্তু নিজেকে কবি বলে পরিচয় দেন না। প্রচুর বই পড়েন, বই পড়া পছন্দ করেন, শুধুমাত্র কবিতার বই নয় যেকোন বই। আর মাঝে মধ্যে টুকিটাক লেখালেখি। বর্তমানে শখের বশেই সম্পাদনার সাথে যুক্ত আছেন "দ্বিপ্রহর" কবিতা ও গল্প সংকলন এবং "দ্বিপ্রহর" ম্যাগাজিনের সাথে। প্রিয় কবি জীবননান্দ দাশ, এছাড়া রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, হেলাল হাফিজ, শামসুর রাহমান, সুনীল, আবুল হাসানের কবিতাও প্রিয়। প্রিয় উপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পড়ালেখা ছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, পছন্দ করেন একা একা বেড়াতে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ঘুম আর অপ্রিয় জিনিস ধর্মীয় তর্ক....

ঘুম – ৩

ঘুম মানেইতো বিবর্ণ অসাড়তা
ঘুম মানেইতো মৃত্যুর নীরবতা,
ঘুম মানেইতো কাছে থেকেও বহুদূর
ঘুম মানেইতো শব্দহীন মহা সমুদ্দুর।

ঘুম মানেইতো জেগে থাকা তুমি
ঘুম মানেই, অর্থহীন পাগলামী।

শেষ বিকেলে অনুসৃতা

এক দিন হয়তোবা ঝড়
জল হয়ে পাল্টে দিবে
অচিন নদীর মোহনা,
হয়তোবা একদিন ঝরে যাব আমি
শূণ্য পড়ে রবে আমার ঠিকানা ।

একদিন হয়তোবা থাকবে মেঘে ঢেকে
শেষ দেখা তোকে বর্ষপূর্তির দিনটা,
অনুসৃতা, হয়তোবা একদিন
ফিরে আসবে আবার;
তোর সাথে কাটানো আমার –
সেই শেষ বিকেলটা…

অসমাপিকা রাগে রাগান্বিত অনুসৃতা

জানিস অনুসৃতা,
তোর রাগ গুলো অসমাপিকা ক্রিয়া
মনে হয় আমার কাছে।

তোর রাগান্বিত জ্বলজ্বলে দু’চোখের
টলমলে জলের ভাষা যে আমি বুঝি।
তাই ভাবতে বেশ ভালই লাগে –
যাক কেউ একজনতো আছে
আমার উপর রাগ করার।

কেন বুঝেও থাকিস চুপ করে?
কেন বুঝিস না তুই,
অসমাপিকা রাগে আক্রান্ত কেউ
থেকে যায় অপেক্ষায়,
দিন শেষে তোর স্পর্শ পেতে।

অনুসৃতা বিহীন হেমন্তের দিন

এক দিন হেমন্তের কুয়াশায়
ঢেকে যাবে ধূসর আদিগন্ত,
শুকনো পাতাগুলো হয়তো তখন
ঝরে পড়বে সমুদ্রের নীল জলে।

গৌধূলী শেষে প্রতি দিনের মত
রাখাল বালক ফিরবে বাড়ি,
ক্লান্ত দেহ টেনে ;
সূর্যটা যাবে ডুবে নিঃশব্দে
চোখের পলকের মতন,
অধর বেয়ে নামবে লবনাক্ত স্রোত
বর্ষায় বাঁধ ভাঙা নদী হয়ে তখন।

আনন্দ গুলো যাবে তলিয়ে
হতাশার অতল গহীনে,
যদি সেই দিনে না থাকে
অনুসৃতার হাত এই হাতে।

অনুসৃতা যখন রাবণের দেশে বন্দী

এমনই কোন এক পূর্ণিমার মধ্যরাতে
যাব আমি একদিন,
সমুদ্রের কল্লোলের মাঝে ঘুমন্ত
রাবণের দেশে।

দশরথের ভীরু পুত্রের
অলীক গল্পের মত করে নয়,
নয় বিভীষণকে বন্ধু করে
কাপুরুষের মত।
যাব আমি ঝড় হয়ে
মেঘনাদের মতন,
সর্পিল ঢেউ গুলো চূর্ণ করে
নারকেলের দেশে-
ছিনিয়ে আনতে তোমায়,
অনুসৃতা।

কিছু বৃষ্টির জল আর রোদের আলোয় অনুসৃতা

আজ রোদের আলোয়
ভিজে পুড়ে গিয়েছি আমি।
তুমি হয়তো তখন
জানালায় দাঁড়িয়ে একা,
বৃষ্টি দেখছিলে অনুসৃতা।

সূর্য তার রাতের ক্রোধ
ছুঁড়ে দিয়ে শান্ত হয় বিকেলে।
কিন্তু আকাশ!! আকাশ,
বৃষ্টি দিয়ে মুছে দেয় সব
ক্রোধ, অভিমান আর নীচতা।
বৃষ্টিকে গ্রহণ না করে,
মনে পুষে রেখেছ বিষণ্নতা।
বৃষ্টি না পেয়ে তাই
আমি রোদে ভিজেছি,
বিষণ্নতা দূর করার আশায়।

বৃষ্টি ভালবাসি তাই
কাছে পাই না তা;
আর তুমি!!!
তুমি বৃষ্টির দেশে থেকে
বৃষ্টিকে কর
শুধুই অবহেলা ….

কুহেলিকায় মত্ত অনুসৃতারা

মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর নেই সময়
আর আমার অনুসৃতা,
শহরের কোলাহল দূরে ফেলে
দুজনে ঘাসবনে বসারও
সময় নেই আজ আমাদের।

ছিন্ন মুকুলের মতন ঝরে পড়ারও
নেই সময় আজ কারো,
ভুলে ভরা পৃথিবীতে
ভুল হাতে হাত রেখে,
কেটে যাচ্ছে জৈবিক তাড়নায়
হাজার মানুষের অলস সময়গুলো।

তবুও ভুল গুলো ভুল থেকে যায়,
আর অনুসৃতারা খুঁজে নেয়
নিরাপদ আশ্রয়ের নামে এক
কুহেলিকাময় অপূর্ণ জীবন।

অসীম খুন ও একজন অনুসৃতা

তুমি কেন আমায় করলে খুন?
কেন বাঁচাতে দিলে না,
আরও দশটা মিনিট?
দিলে না পূরন করতে আমার
অন্তিম ইচ্ছে?

আবারো জন্মাতে যে হবে আমায়
পূরন করতে হবে সব অপূর্ণতা।
ভাবতেই তো লাগছে ভীষণ ভয়…..
আবার সেই একঘেয়ে জীবন….
অ আ শেখা,
সাইকেল চালানো, সাঁতার
শিখতে হবে যে
আরও কত কী??
জানতে যে হবে আবারো
হাজারো বিরক্তিকর প্রশ্নের
ক্লান্তিকর সব উত্তর!

বৃষ্টিতে ভিজে আবারও
ভুগতে যে হবে জ্বরে।
খেতে হবে কত অজস্র প্রহার,
বড় আর বন্ধুদের হাতের।
আবারো ভাঙা হাত ঝুলিয়ে স্লিংয়ে
হাঁটতে হবে পথে পথে,
সইতে যে হবে কত
বিদ্রুপ আর উপহাস!
কাটাতে হবে আবার
সময় গুলো হতাশাতে।

এরপর আবারো আমায়
মরতে হবে তোমার হাতে।
তবুও জন্ম নিব যতবার;
ভালবাসবো তোমায়, এই আমি আবার;
বারেবার তোমার হাতে-
খুন হওয়ার জন্যে,
অনুসৃতা।

অনুসৃতা ও শূণ্য হাতের গল্প

index

অনুসৃতাকে বাড়ানো হাতটা
শূণ্য রয়ে গেছে আজো।
সময়ের ধূলোর নীচে
অস্পষ্ট হয়ে গেছে কবেই,
সেই হাতের রেখার মানচিত্র।

অনুসৃতা তুমি জান কি,
লেখা থাকেনা কিছুই
কখনো হাতের রেখায়।
তাই সময় ধূলোর আস্ফালন
ব্যার্থ পড়ে রয়,
অতীতের কোন ডাস্টবিনে।

চোখের জলের ভাষা,
বুঝতে কি পার তুমি?
যদি না বুঝ,
তবে যেও কোন একদিন
নির্জন পাহাড়ের দেশে,
একা একা এক শরতে
খোঁপায় বেঁধে শিউলীমালা।

ভুলে যেওনা তুমি কখনো,
নিষিদ্ধ তো আমার না —
তোমার অশ্রু অনুসৃতা।

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪

অনুসৃতাদের কর্পোরেট ভালবাসা

তুমি কেন তুমি হলে অনুসৃতা;
কেন তুমি করলে খুন,
সবুজ বৃন্তে ফোটা
লাল গোলাপটা?

ভুল সময়ে ভুল হাতে
পড়ে যদি ফুল,
জানবে কীভাবে বল,
আজ সকালে বন্দী টবে ফোটা
লাল গোলাপটা;
মৃত্যু হবে তার, আর কিছু সময় পর
কর্পোরেট ভালবাসার বদান্যতায়।

মনে রেখ তুমি অনুসৃতা
একটা নতুন জীবন,
একটা সদ্য ফোটা ফুলের মতন।
না পার দিতে ভালবাসা–
তবুও দিও না ছুড়ে ফুল
ভেঙে কোন নিষ্পাপ মন।

অনুসৃতার নীল পদ্ম

আজ দেয়ালে ঝুলানো
নীল পদ্ম হাতে তোমার,
সেই ছবিটার কথা
মনে পড়ে গেল, অনুসৃতা।

ছবি সময়কে বেঁধে রাখে ফ্রেমে।
দিন যায়, বছর যায়
ধূলো জমে সময়ে।
শেষ বিকেলে দরজার ফাঁক দিয়ে
উঁকি দেওয়া রোদের মত,
এসে পড়ে কত স্মৃতি
আর হারিয়ে যাওয়া সময়।

অনুসৃতা, মনে আছে কি তোমার
সেই নীল পদ্মটার কথা?
বিলের মাঝখানে তুলতে গিয়ে
ডুবতে বসেছিল তখন
আমাদের ছোট নৌকাটা।

যদি নাইবা পড়ে মনে,
তবে আজ থেকে
তোমার জন্য নিষিদ্ধ,
পৃথিবীর সব নীল পদ্ম।

অনুসৃতার অশ্রু

অনুসৃতা, কান্নার রং কেমন হয়,
তা কি তুমি জান?

কাঠগোলাপের পাতা থেকে
ঝরে পড়া বৃষ্টির জল,
কিংবা পাহাড় চুঁইয়ে নেমে আসা
মেঘের জলের রং
দেখেছ কি তুমি কখনো?

যদি নাইবা দেখ, তবে তো তোমার
কান্না করার নেই অধিকার,
আজ থেকে ঐ দু ‘চোখের অশ্রু
হবে তোমার অপরাধ।

প্রহর গুনি আমি

অতঃপর তোদের মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনি,
শেষ অগ্রহায়ণের ঝরে যাওয়া পাতার মতো নয়
পাথর চাপায় ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
ঘাসের মতো একটু একটু করে 
তোদের ম্লান হয়ে যাওয়া মুখ গুলো
দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনি আমি,
প্রহর গুনি আমি তোদের করুণ মৃত্যুর।

প্রহর গুনি তোদের পতনের
প্রহর গুনি তোদের মৃত্যুর,
না, না,
প্রহর গুনি আমি
তোদের অহংকারের মৃত্যুর,
তোদের অহংকারের পতনের…