ট্যাগ আর্কাইভঃ সমসাময়িক

ভেবে দেখেছো কিঃ ১

সবসময় ক্ষমতার সাথে থাকা, ক্ষমতাবানদের সাথে থাকা- মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মানুষ সবসময় তাকে নিরাপদে রাখতে চায়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে জীবনের মুল লক্ষ্য মনে করে। নীতি নৈতিকতা বাহুল্য মনে হয়। এজন্য ক্ষমতাবানদের মধ্যে দুর্নীতিবাজদের দলটা ভারী। সৎ মানুষের সংখ্যা কম।

কঠোর আইন দন্তবিহীন হলেও, প্রকৃতির আইন কিন্তু দন্তবিহীন না। প্রকৃতির প্রতিশোধ ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ। এই প্রতিশোধ দুর্নীতি না থামাতে পারলেও, দুর্নীতিবাজদের ঠিকই থামিয়ে দিবে।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন এবং সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন, ‘আমিই বাদশাহ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়?

অতপর সমস্ত জমিনগুলোকে ভাঁজ করবেন। অতপর সেগুলোকে বাম হাতে নিয়ে বলবেন, আমিই মহারাজ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? (মুসলিম)

সুতরাং সামান্য মশা ও পিপড়ার কামড় সহ্য করার ক্ষমতা যাদের নেই। তাদের অহংকার করা মানায় না, ক্ষমতার দাপট দেখানো মানায় না।

করোনাকালীন সময়ে সামান্য এক ভাইরাসের দাপটে ঠাণ্ডাজ্বরে যারা অস্থির হয়ে ওঠে, সেই মানুষ অন্যায়ভাবে অর্থ সম্পদ উপার্জন করার পূর্বে, অন্যের উপর জুলুম করার পূর্বে একবার ভেবে নেয়া উচিত এই অর্থ আর ক্ষমতা সত্যিকারের প্রয়োজনে একেবারে মূল্যহীন।

ভেবে দেখেছো কি, কতটা নশ্বর এই উপার্জিত সম্পদ, কতটা অসহায় ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হওয়া মানুষগুলি।

ভেবে দেখেছো কিঃ ২

বাংলাদেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল মারা গেছেন। দৈনিক যুগান্তর, যমুনা টেলিভিশন এবং যমুনা ফিউচার পার্ক এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন।

গত ১৪ জুন ২০২০ নুরুল ইসলামের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওইদিনই তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা ভাইরাসে তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে ১০ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা চলছিল। তিনি ৩৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন বলে জানা গেছে।

দেশবরেণ্য শিল্পপতি, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশের কবি-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী ও নারী নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সব সময় দেশের মানুষের কথা ভাবতেন। দেশের শিল্প উন্নয়নে তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে, বিশেষ করে তার মেধা, দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা ছিলেন। শত পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেখানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি দেশের অর্থনীতির একজন নক্ষত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন স্বপ্নদ্রষ্টা শিল্পোদ্যোক্তাকে হারিয়েছে

তাকে নিয়ে ফরাবী হাফিজ, সংবাদ পাঠক, চ্যানেল ২৪ –
এর একটি লেখা বেশ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে। কিছুটা সংক্ষেপে নিচে উদ্ধৃত করলাম। ফেসবুকের এক স্ট্যাটাস থেকে পাওয়া লিখাটি। (লেখাটি আমার নয়)


……….
বাঁচার অনেক আকুতি ছিল যমুনা গ্রুপের
চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের!!

শেষ সময়ে উনি স্টিভ জবসের মতো যেই ডাক্তারকে দেখতেন তাকেই বলতেন,”আমার সব সম্পদ দিয়ে দিবো। শুধুমাত্র আমার কষ্টটা একটু কমিয়ে দাও! আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না।”

তিনি যখন এ্যাপোলোর আইসিইউতে, হস-পিটাল ম্যানেজমেন্ট এর কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে পুরো হসপিটালেই একজন রোগী।

হবারই কথা! আফসোস করছিলাম আর কথা বলছিলাম এক ডাক্তারের সাথে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এয়ার এম্বুল্যান্সে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০/১২ জন ডাক্তার আনা হলো। কিছুতে কিছুই হলো না।
কি কঠিন মৃত্যু!

মৃত্যুর সময়ে একজন কাছের মানুষের হাতের স্পর্শও পান নি! কারো সাথে বিদায় শব্দটি বলতে পারেন নি! পরিবার প্রিয়জন কেউই পাশে ছিলো না, থাকার সুযোগও নেই। ভিষণ নিঃস্তব্দ সেই রুমটায় আমি গতকাল গিয়েছিলাম। ভুতুড়ে পরিবেশ, আধো আলো। চারপাশে সবাই অর্ধমৃত মানুষ! আহারে… সম্পুর্ণ সুস্থ লোকটি হঠাৎ এক অজানা ভাইরাস করোনার আঘাতে ২৫ দিনের মধ্যে নাই হয়ে গেলো।

ভেবে দেখেছো কি, কার জন্য কিসের জন্য এতো প্রতিযোগিতা ও পরিশ্রম?