ট্যাগ আর্কাইভঃ সাইয়িদ রফিকুল হকের কবিতা

কবিতার মানে

কবিতার মানে
সাইয়িদ রফিকুল হক

তোমরা সবাই কবিতাকে আজ ভাবছো খুবই সস্তা!
দিনেরাতে তাই আজেবাজে লিখে নিমিষে ভরছো বস্তা।
কবিতার কথা মনভাবনায় ভাবতে হয় যে ধ্যানে,
সাধক-প্রাণের ভাবুক-মনই বোঝে কবিতার মানে।
কবিতা নয়কো বিলাসী কারও খেয়ালখুশির বন্যা,
কবিতারা হলো হৃদভাবনার কৃষ্ট শব্দের কন্যা।
উৎকর্ষতা যখন কারও মনের গভীরে আসে,
হৃদয়খাতায় দেখবে তখন কবিতা তোমার ভাসে।
হৃদয়বেদনা খুব ভালোবেসে রক্তআখরে লেখো,
হৃদয়ের কাছে প্রতিদিন তুমি কবিতা-লেখাই শেখো।

ছন্দ তোমার মনের ভিতরে আজও বাঁধেনি বাসা,
কেমন করিয়া বন্ধু হে তুমি কবিতা লিখবে খাসা?
সবার আগে যে ছন্দসাগরে ডুব দিবে তুমি শুধু,
তারই সঙ্গে পান করবে হে ভাবসাধনার মধু।
দেখবে তখন কেমন হাসিয়া কবিতা তোমার আসে,
ছন্দজ্ঞানের হৃদ-ভালোবাসা কবিতা ফোটাবে খাসে।
কবিতাস্বর্গে ঢুকতে চাইলে কবিতা বুঝবে আগে,
মগজে তখন কবিতা আসবে রঙিন ফুলের রাগে।
ভালোবাসি আজ কবিতাবন্ধু, কবিতা বাসায় ভালো,
পৃথিবীটা আরো সুন্দর হবে, কবিরা জ্বালাবে আলো।

সাইয়িদ রফিকুল হক
১৮/০৮/২০২১

সুখপাখিটা

ভগ্নছাদের কার্ণিশ বেয়ে কেমন করে যেন নেমে এলো দুঃখগুলো
জানলাগুলো বন্ধ করে রেখেছিলাম অনেক আগে থেকে
তবুও সুখপাখিটা পালিয়ে গেল দরজা খুলে!

ভালোবাসি না কাউকে আর কখনো ভুল করে
ভালোবাসার এখন কঠিন অসুখ, অনেক ব্যাধি প্রেমরাজ্যে
তবুও মন কেমন-কেমন করে হৃদয়ব্যাধির পরিত্যাজ্যে!

সুখপাখিটা ধরতে গিয়ে ফিরে এলাম কঠিন শাসানি খেয়ে
সবার নাকি ধরতে মানা সুখপাখিটার পুচ্ছ
ডাস্টবিনে পড়ে আছে অনেক সাধের রজনীগন্ধা একগুচ্ছ!

সুখপাখিটা কোথায় থাকে? কেউ বলে না তার ঠিকানা
অন্ধগুলোর সাবানমাখা তেলচকচকে চেহারায় সুখের ঝর্নাধারা
সুন্দর চোখের মানুষগুলো এখন দেখি সমাজের চোখে অন্ধকানা!

সাইয়িদ রফিকুল হক
০৪/১১/২০১৯

হে যুবক, তুমি আত্মহত্যা কোরো না

null

আজ তুমি আত্মহত্যা কোরো না হে যুবক,
আগামীকাল পৃথিবী ভেসে যাবে চতুর্দশীর পূর্ণিমায়!
জোছনাঝরা রাতটুকু দেখবে না একবার তুমি?
তোমার চোখে বুঝি এখন ঘুম নামতে চাইছে!
তবে তুমি শুয়ে পড় কোকিল-ডাকা দিনের কথা ভেবে,
তোমার বুক ভরে উঠুক বকুল ফুলের পবিত্র সুবাসে।

তুমি আত্মহননের দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে
আমার সঙ্গে চাঁদ-জোছনার শোভা দেখবে ফাঁকা মাঠে বসে,
তুমি যদি আরও কাছ থেকে জোছনা দেখতে চাও—
তবে তোমাকে ভালোবেসে নিয়ে যাবো নিশিদের বাড়ির ছাদে!
তবুও তুমি আত্মহত্যা কোরো নাকো, হে বুদ্ধিমান যুবক।
তোমার যদি কষ্ট খুব বেশি হয়ে থাকে তবে তার থেকে
আশি ভাগ কষ্ট এখনই আমাকে দিয়ে দাও,
পারলে তোমার সবটুকু কষ্ট আমার বুকে চাপিয়ে দাও,
আমি পাথরবক্ষে পৃথিবীর সব কষ্ট ধারণ করবো হাসিমুখে,
তবুও তুমি আত্মহত্যা কোরো নাকো, হে বুদ্ধিমান যুবক।

এখনও বসন্ত আসতে অনেক বাকি, শীতের আগমন সবে,
ঘুম থেকে জেগে কুয়াশাঢাকা সকাল দেখবে না তুমি?
শিশিরভেজা ঘাসগুলো তোমার পায়ের স্পর্শ যে
পেতে চাইবে প্রতিদিন নরম রোদেভাজা সকালে!
তাদের আমি কী বলে বুঝাবো? তুমি আমাকে বলে দাও,
শীতের প্রায় অবসানে আবার আসবে পাতা-ঝরার দিন!
আবার আসবে খুব রঙিন হয়ে পৃথিবীর আলো ঝলমলে বসন্ত,
তবুও কি তুমি মরতে চাও এই সোনাঝরা পৃথিবীতে?
আর তুমি আত্মহত্যার কথা ভেবো না হে যুবক,
কেউ ভালোবাসুক-না-বাসুক, এই পৃথিবী তোমাকে ভালোবাসে।

বুকের ভিতরে দিনে-দিনে খুব কষ্ট জমেছে তোমার,
তাই কী হয়েছে বন্ধু? তুমি ভেঙে ফেল কষ্টের বিশাল পাহাড়,
কেউ তোমার ভালোবাসার স্বপ্নচুরি করেছে? তাই কী হয়েছে বন্ধু?
তুমি দুনিয়ার সব স্বপ্নচোরের সঙ্গ ত্যাগ করে এসো আমার সঙ্গে,
আমরা দুজন পাহাড়তলীর সবুজ ঘাসে বসে শুনবো ঝর্নার গান,
পাখির মনমাতানো কলতানে মুগ্ধ হয়ে ডুবে যাবো নতুন স্বপ্নে,
আর পৃথিবীতে আবার কত জোছনা ঝরবে ভালোবেসে হাসিমুখে,
এমন স্বর্গ ছেড়ে মিথ্যাঅভিমানে তুমি কোথায় যাবে বন্ধু?
আজ তুমি আত্মহত্যা কোরো না হে অভিমানী যুবক,
এই পৃথিবীর কেউ তোমাকে ভালোবাসুক-না-বাসুক
পৃথিবী কিন্তু তোমাকে পরম মমতায় আগের মতো ভালোবাসে।
তুমি ফিরে আসো যুবক ভালোবাসার বেঁচে থাকার চিরসবুজ স্বপ্নে,
তুমি কেন মরবে তোমার কষ্টের কারণ পাপীদের পথের কাঁটা হয়ে?
তারচেয়ে বন্ধু, এসো হাসিমুখে ভেসে যাই দুজনে নীলজোছনায়,
আগামীকাল হেসে উঠবে আমাদের পৃথিবী চতুর্দশীর পূর্ণিমায়!

সাইয়িদ রফিকুল হক
৩১/০১/২০১৯