হে যুবক, তুমি আত্মহত্যা কোরো না

null

আজ তুমি আত্মহত্যা কোরো না হে যুবক,
আগামীকাল পৃথিবী ভেসে যাবে চতুর্দশীর পূর্ণিমায়!
জোছনাঝরা রাতটুকু দেখবে না একবার তুমি?
তোমার চোখে বুঝি এখন ঘুম নামতে চাইছে!
তবে তুমি শুয়ে পড় কোকিল-ডাকা দিনের কথা ভেবে,
তোমার বুক ভরে উঠুক বকুল ফুলের পবিত্র সুবাসে।

তুমি আত্মহননের দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে
আমার সঙ্গে চাঁদ-জোছনার শোভা দেখবে ফাঁকা মাঠে বসে,
তুমি যদি আরও কাছ থেকে জোছনা দেখতে চাও—
তবে তোমাকে ভালোবেসে নিয়ে যাবো নিশিদের বাড়ির ছাদে!
তবুও তুমি আত্মহত্যা কোরো নাকো, হে বুদ্ধিমান যুবক।
তোমার যদি কষ্ট খুব বেশি হয়ে থাকে তবে তার থেকে
আশি ভাগ কষ্ট এখনই আমাকে দিয়ে দাও,
পারলে তোমার সবটুকু কষ্ট আমার বুকে চাপিয়ে দাও,
আমি পাথরবক্ষে পৃথিবীর সব কষ্ট ধারণ করবো হাসিমুখে,
তবুও তুমি আত্মহত্যা কোরো নাকো, হে বুদ্ধিমান যুবক।

এখনও বসন্ত আসতে অনেক বাকি, শীতের আগমন সবে,
ঘুম থেকে জেগে কুয়াশাঢাকা সকাল দেখবে না তুমি?
শিশিরভেজা ঘাসগুলো তোমার পায়ের স্পর্শ যে
পেতে চাইবে প্রতিদিন নরম রোদেভাজা সকালে!
তাদের আমি কী বলে বুঝাবো? তুমি আমাকে বলে দাও,
শীতের প্রায় অবসানে আবার আসবে পাতা-ঝরার দিন!
আবার আসবে খুব রঙিন হয়ে পৃথিবীর আলো ঝলমলে বসন্ত,
তবুও কি তুমি মরতে চাও এই সোনাঝরা পৃথিবীতে?
আর তুমি আত্মহত্যার কথা ভেবো না হে যুবক,
কেউ ভালোবাসুক-না-বাসুক, এই পৃথিবী তোমাকে ভালোবাসে।

বুকের ভিতরে দিনে-দিনে খুব কষ্ট জমেছে তোমার,
তাই কী হয়েছে বন্ধু? তুমি ভেঙে ফেল কষ্টের বিশাল পাহাড়,
কেউ তোমার ভালোবাসার স্বপ্নচুরি করেছে? তাই কী হয়েছে বন্ধু?
তুমি দুনিয়ার সব স্বপ্নচোরের সঙ্গ ত্যাগ করে এসো আমার সঙ্গে,
আমরা দুজন পাহাড়তলীর সবুজ ঘাসে বসে শুনবো ঝর্নার গান,
পাখির মনমাতানো কলতানে মুগ্ধ হয়ে ডুবে যাবো নতুন স্বপ্নে,
আর পৃথিবীতে আবার কত জোছনা ঝরবে ভালোবেসে হাসিমুখে,
এমন স্বর্গ ছেড়ে মিথ্যাঅভিমানে তুমি কোথায় যাবে বন্ধু?
আজ তুমি আত্মহত্যা কোরো না হে অভিমানী যুবক,
এই পৃথিবীর কেউ তোমাকে ভালোবাসুক-না-বাসুক
পৃথিবী কিন্তু তোমাকে পরম মমতায় আগের মতো ভালোবাসে।
তুমি ফিরে আসো যুবক ভালোবাসার বেঁচে থাকার চিরসবুজ স্বপ্নে,
তুমি কেন মরবে তোমার কষ্টের কারণ পাপীদের পথের কাঁটা হয়ে?
তারচেয়ে বন্ধু, এসো হাসিমুখে ভেসে যাই দুজনে নীলজোছনায়,
আগামীকাল হেসে উঠবে আমাদের পৃথিবী চতুর্দশীর পূর্ণিমায়!

সাইয়িদ রফিকুল হক
৩১/০১/২০১৯

সাইয়িদ রফিকুল হক সম্পর্কে

সাইয়িদ রফিকুল হক ( Syeed Rafiqul Haque) তিনি একজন সাহিত্যসেবী, গ্রন্থপ্রেমিক ও রাজনীতি-সচেতন মানুষ। বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাংলাসাহিত্য তাঁর কাছে সবসময় প্রিয়, এবং এই তিনটি তাঁর কাছে চিরদিন পবিত্র শব্দ। তিনি বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তি। তাঁর লেখালেখিতেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার ছাপ সুস্পষ্ট। আর তিনি সবসময় ঘৃণা করেন রাজাকার, ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীচক্রকে। ধর্মবিশ্বাসে তিনি ত্বরীকতপন্থী সুন্নীমুসলমান। আর জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি একজন পুরাপুরি আস্তিক। তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। একজন খাঁটি বাঙালি ও বাংলাদেশী। সাহিত্যচর্চা: তিনি নামে-বেনামে ও ছদ্মনামে লেখালেখি করছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। মূলত তিনি কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক। তিনি স্কুলজীবন থেকে আপনমনে সাহিত্যচর্চা করছেন। তখন লেখাপ্রকাশের তেমন-একটা সুযোগ না থাকায় তিনি তাঁর লেখাসমূহ প্রকাশ করতে পারেননি। বর্তমানে ‘শব্দনীড় ব্লগ’সহ বিভিন্ন ব্লগে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁর লেখার মূল বিষয়: মানুষ, মানবতা আর দেশ-জাতি-সমকাল। আত্মপ্রচারবিমুখ এক কবি তিনি। স্কুলজীবন থেকে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করে অদ্যাবধি কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ইত্যাদি রচনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। পনেরো বছর বয়সে কবিতা লেখার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তিনি লিখেছেন অনেক। কিন্তু প্রকাশ করেছেন খুব কম। ইতঃপূর্বে কয়েকটি সাহিত্যপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর লেখাসমূহ আধুনিক-ব্লগগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে। এজন্য তিনি ব্লগগুলোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তিনি বাস্তববাদী লেখক। আর তাঁর লেখায় কোনো কৃত্রিমতা নাই। তাঁর প্রায় সমস্ত লেখাই দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত। তাঁর লেখার বিষয়: কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ইত্যাদি। তিনি ‘মানবজীবনের গল্প’ রচনায় যথেষ্ট পারদর্শী। এ পর্যন্ত তাঁর রচিত গল্পের সংখ্যা ৩২টি। আর উপন্যাসের সংখ্যা ১৮টি। ছড়াসাহিত্যেও তিনি সমভাবে পারদর্শী। শিক্ষা: প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ নাই। তাঁর কাছে সার্টিফিকেট-সর্বস্ব সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কঠোর সাধনায় অর্জিত প্রকৃত জ্ঞানের মূল্য অনেক বেশি। তিনি নিজেকে সবসময় একজন স্বশিক্ষিত মনে করেন। তবে প্রচলিত প্রথার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক উচ্চতর গবেষণাকর্মে নিয়োজিত। জন্মস্থান: বাংলাদেশ। তাঁর জীবনের লক্ষ্য: লেখালেখির মাধ্যমে আমৃত্যু দেশ, মানুষ আর মানবতার পক্ষে কাজ করা।

8 thoughts on “হে যুবক, তুমি আত্মহত্যা কোরো না

  1. আজ তুমি আত্মহত্যা কোরো না হে অভিমানী যুবক,
    এই পৃথিবীর কেউ তোমাকে ভালোবাসুক-না-বাসুক
    পৃথিবী কিন্তু তোমাকে পরম মমতায় আগের মতো ভালোবাসে।

    অসাধারণ তিন পংক্তিমালা। ভীষণ হৃদয় ছোঁয়া। অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. কবিতা পড়েছেন, অসংখ্য ধন্যবাদ।

      সুন্দর বলেছেন কৃতজ্ঞ।

      শুভেচ্ছা আর শুভকামনা দি।

      আরhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  2. পরিপাটি কবিতা উপহার দিয়েছেন সাইয়িদ রফিকুল হক। প্রচ্ছদ কি আপনার প্রকাশিত কোন কাব্য গ্রন্থের ? https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. অশেষ ধন্যবাদ কবিবন্ধু।

      প্রচ্ছদ নিজে করেছি। বইমেলার পরে এই নামে হুবহু এই প্রচ্ছদে একটি কবিতার বই প্রকাশের ইচ্ছা আছে।

      শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

      আরhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  3. কবিতাটি অসম্ভব সুন্দর নিঃসন্দেহে। আমার মতো অধম পাঠকের বিশ্লেষণ মানানসই হবেনা এখানে। “তারচেয়ে বন্ধু, এসো হাসিমুখে ভেসে যাই দুজনে নীলজোছনায়, আগামীকাল হেসে উঠবে আমাদের পৃথিবী চতুর্দশীর পূর্ণিমায়!”

    স্বগোক্তি করলাম। অভিনন্দন মি. সাইয়িদ রফিকুল হক। শুভ সন্ধ্যা।

  4. এক কথায় আপনার অনন্যসাধারণ বোধের লিখন এবং সচেতনতামুলক। অনেক অনেক ভালোবাসা ও দোয়া রইলো। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।