ট্যাগ আর্কাইভঃ Dauder kobita

জন্মদিন

জন্মদিন ।। দাউদুল ইসলাম

মাঘ মাসে আমার জন্মদিন আসে। সে দিন সারাদিন মন হিসাব কষে। দোষে-প্রদোষে ভাসে। কিসের বশে মগ্ন জীবন। কিসে কেটেছে সোনালি দিন? কোন দহনে পুড়েছে যৌবন,
কোন কারণে গিয়েছি শূন্যবাসে, কোন শ্রমণে হেঁটেছি দীর্ঘ পথ, কোন প্রাণে লেগেছে গহন।
সে দিন কাঁদি নির্জনে বসে, অসীম হতাশে, উদাসী মন। বাউলা পবনে বাঁধি সুর, বাঁধি নিভৃতের ক্রন্দন, বাঁধার সময় বাঁধতে পারি নাই যারে, চিনি নাই পর- চিনি নাই আপন।
যে মোহনায় জমে শঙ্খনিনাদ, যে সাধনায় কান্দে বেহুলা- উন্মাদ লখিন্দর, যে কুঞ্জবনে শিশির নামে- অশ্রুত স্বর; আমি পারি নাই থামাতে সেই আহাজারি, ভেঙ্গে গেছে অন্তর অভ্যন্তর!…

জানিনা কতটা এসেছি, আর কতটা পথ আছে বাকী। আগামী জন্মদিনে পৌঁছুবে কি জীবন?
না থাক!… আজ বরং সেই হিসেব টা তুলে রাখি।

ছায়ার গর্ভে সমাধিত সব

ছায়া এক অবিচ্ছেদ্য স্বত্তা
জীবনের সাথে সাথে ছায়ারা বেড়ে চলে
জীবন ঘুমালে ছায়ারাও ঘুমায়, আসলে
ছায়ারা বেঁচে থাকে আলো নির্ভরতায়;
তা না হলে ভীত ঢর ফোকের মত
অন্ধকারে নিজেকে গায়েব করে রাখত না।
জলে ও ছায়া পড়ে
যত স্বচ্ছ জল তত স্বচ্ছ ছায়া
অথচ, টলমল জল তরঙ্গ তা ভেঙ্গে যায়
নীরব এক শোকের মধ্যে,নির্মম রহস্যবোধের সঙ্গে
ভেঙ্গে যায় আপন ছায়াছবি;
তখনো অঙ্গে আলোক রশ্মির তেজ্বক্রিয়া, ফিন ফিনে
বাতাসে উড়ে যায় আবেগের দুর্মর ঘোড়া
ছায়ারা এর কিছুই জানে না; নির্জীব জল তরঙ্গে
ভেসে আসে উন্মত্ত শামুকের ফেনিল সঙ্গম!
অনতি দূরে বৃক্ষের ছায়ার লুটিয়ে পড়া জীবন
যেখানে আপন ছায়ার কোন অস্তিত্ব নাই ।
বিপন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, উসকো খুসকো চুল, অশ্রুর ধারা
ছায়ার গর্ভে সমাধিত সব!
দ্বিতীয় কোন দর্পণ নাই যেখানে দেখব নিজের স্বরূপ।

দা উ দু ল ই স লা ম।

পিঁপড়ের সারি…

দৈনন্দিনতা শেষে
প্রতিদিন শোধ করি ঋণ।…
যতন করে তুলে রাখি সঞ্চয়,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জন।
ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে নিই সুন্দরের প্রত্যাশায়
আশায় আশায় বাঁধি বুক-

খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ!
দ্রোহে- বিদ্রোহের মিছিল চুকে গেলে দাঁড়াই সম্মুখে।
বাস্তবতার নিরিখে।
… আর প্রতিবার হেরে যাই; শুদ্ধ- অশুদ্ধতার তর্কে!

মনে থাকে প্রতিশ্রুতি!
শৃঙ্খল মুক্তির লড়াইয়ে শক্তি শূন্য তির্যক নয়ন।
বিদগ্ধ বুকে লেপটে থাকে আড়াই যুগের ছাই মাখা ইতিহাস!…
অনুগত মনে অঘোষিত অনুরণন, অকাল ঝড়ের তাণ্ডব!
নিপুণ হাতে বুনি আপন সর্বনাশ! আত্মাহুতির উৎসব!!…

দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে পিঁপড়ের সারি…
এরাই আমার কলিজা ছিঁড়ে খাবে!…

দা উ দু ল ই স লা ম

ক ল র ব

সাড়া দাও । এই ঝেঁকে বসা শীতে। যদিও নীল চাউনিতে আম্বর রাগ। যদিও ওষ্ঠের কাঁপুনিতে কবিতারা গদ্য ময়…। মেঘ জমেছে সপ্তর্ষির বৃত্তে। কতকাল পর ভিজতে চাইছি… নদীর ত্রিমোহনায় , গুপ্ত স্রোতে। রুদ্ধ স্বরে বেহাগের সুর বাজছে চন্দ্রা অভিসারে, তপ্ত কণ্ঠে বুনেছে শ্লোক- রাতের ডাহুক। কুয়াশার চাদরে বুনেছি অর্গল, সুখ- অসুখ…
যদি তন্দ্রাচ্ছলে খসে যায় উত্তাপ, যদি বেড়ে যায় শীতের প্রকোপ, যদি সত্য বেরিয়ে পড়ে মাতাল প্রলাপে, তবে আমাকে চেপে রেখো দুর্ভেদ্য আড়ালে। অন্যথা-হতে পারে সর্বনাশ! যদি কুয়াশারা জেনে যায় আমাদের অনন্ত যাপন, গোপন ইতিহাস!…
ফুটবে শব্দ কিরণ শিশিরের ক্রিস্টাল সৌষ্ঠবে। জ্বলবে শৌর্যের অণু- বিন্দু জলে, সূর্যমুখী ফুলে, পল্লবে, পরাগে। রণ স্পন্দনে জাগবে অজস্র প্রজাপতি, আমাদের সন্তানের দাবী নিয়ে- পতঙ্গ বিপ্লবে!চেনা কলরবে জমবে আসর অচেনা জৌলুসে! চোখের বাঁকে স্বপ্নের ছায়া, বুকে অমর্ত্যের মায়া রেখে- কোন কায়ায় খুঁজবো আমরা তাদের অস্বীকার করার দুঃসাহস!…

দা উ দু ল ই স লা ম

বর্ণহীন

যা বর্ণনা করা যায় –
তা কষ্ট নয়।
কষ্ট অবর্ণনীয়
প্রস্তরময়, কণ্টকময়
অবিরাম মেতে থাকে নৃশংসতায়
ধৃষ্ট প্রথায়… ধ্বংস মুখর নির্বাণে,
অকপট বাতায়নে উঁকি মারে বিদ্যুৎ মাখা মেঘ
যে আবেগ পুষে রাখে বাগানের একাকী ফুলটির মন;
বর্ণে
অথবা শব্দের সাধ্য কি কষ্টকে ধারণ করে!…
অব্যক্ত অভিমানে
নিত্য অভাবে
আধভুখা সন্তানের ক্লেদ মাখা নয়ন!
স্রোত নয়, স্রোতের মতন
জলসিঁড়ি।
অশ্রুশূন্য নয়নে
মরুময় ধু ধু… গৌণ অরণ্য ছায়া,
ঘূর্ণীচক্রে ঘুরে ঘুরে মরে যাওয়া স্বপ্ন, মায়া…
আর
করুণাময় শিশিরে লীন সমস্ত চাওয়া- পাওয়া!
যা বর্ণনা অসম্ভব, না বর্ণে- না অন্তরায়
কষ্ট তো- পরাবাস্তব!অপ্রতিরোধ্য সন্তরণ…
প্রাণের অষ্টেপৃষ্ঠে জেগে উঠা হেমলকের বন!
কি অমাবস্যা
কি পূর্ণিমা-
গনগনে আগুন ঘিরে রাখে দুর্ভেদ্য অন্ধকার
তবু, কণ্টকময় পথে চলতে থাকা সাধের জীবন!

দাউদুল ইসলাম
২৭.১২.১৭