অর্থনীতি – পর্ব -০২

প্রথম পর্বের পরে…………..
একজনের হাত থেকে অন্য জনের হাতে হস্তান্তর, অর্থাৎ গতিশীলতা। প্রতিটি হস্তান্তর যত দ্রুত হতে থাকবে তত বেশি সংখ্যক লোক ঐ একই সম্পদ থেকে লাভবান হতে থাকবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ধরুণ একটা এক টাকার নোট। এই নোটটা যার হাতেই পোড়ল, সে যথা সম্ভব শীঘ্র সেটা খরচ করে ফেলল। সে খরচ যেমন করেই হোক, কোনো কিছু কিনেই হোক বা দান করেই হোক বা কাউকে ধার দিয়েই হোক বা কোনো ব্যবসাতে বিনিয়োগ করেই হোক। ঐ নোটটা যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দশজন লোকের হাত বদলায় তবে ঐ এক দিনে নোটটা দশজন লোককে লাভবান করবে। আর যদি একশ’ জনের হাত বদলায় তবে একশ’ জনকে লাভবান করবে। কারণ প্রতিবার হাত বদলাবার সময় দু’জনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই লাভবান হতেই হবে। ঐ সীমিত সম্পদটা অর্থাৎ ঐ এক টাকার নোটটা যত দ্রুত গতিতে হাত বদলাবে, যত দ্রুত গতিতে সমাজের মধ্যে চালিত হবে তত বেশি সংখ্যক লোককে লাভবান করবে; তত বেশি সংখ্যক লোক অর্থনৈতিক উন্নতি করবে এবং পরিণতিতে সমস্ত সমাজকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করবে, সম্পদশালী করবে।

ঐ গতিশীলতার জন্য যে কোনো পরিধির সীমিত সম্পদ সমাজে নিজে থেকেই সুষ্ঠুভাবে বণ্টন হয়ে যাবে কোথাও পুঞ্জীভূত হতে পারবে না এবং হবার দরকারও নেই। সম্পদের এই গতিশীলতার জন্য নিজে থেকেই সুষম-সুষ্ঠু বণ্টন হয়ে যাবার কারণে একে রাষ্ট্রায়াত্ব করার কোনো প্রয়োজন নেই, ব্যক্তির মালিকানাকে নিষেধ করারও কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যক্তি মালিকানা নিষিদ্ধ করার কুফল সাংঘাতিক, যে কুফলের জন্য রাশিয়া আজও খাদ্যে-পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নি এবং আজও আমেরিকা থেকে লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করতে হয়। যা হোক, উদাহরণস্বরূপ যে এক টাকার নোটের কথা বললাম, সেই নোটটা যদি সমস্ত দিনে কোনো হস্তান্তর না হয়ে কোনো লোকের পকেটে বা কোনো ব্যাংকে পড়ে থাকে তবে ওটার আসল মূল্য এক টুকরো বাজে ছেঁড়া কাগজের সমান। কারণ সারাদিনে সেটা সমাজের মানুষের কোনো উপকার করতে পারল না, কারো অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারল না। আবার বলছি আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানের অর্থনীতির বুনিয়াদ-ভিত্তি হলো সম্পদের দ্রুত থেকে দ্রুততর গতিশীলতা (Fast and still faster circulation of wealth)।
ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলনীতি হচ্ছে সুদ ভিত্তিক পুঁজিবাদ, পরিণাম হচ্ছে নিষ্ঠুর, অমানবিক অর্থনৈতিক অবিচার, একদিকে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ, তাদের সীমাহীন ভোগ বিলাস; অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের কঠিন দারিদ্র্য, অর্ধাহার-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলনীতি হচ্ছে সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার হরণ করে সম্পদ বণ্টন। এ বণ্টন শুধু মৌলিক প্রয়োজনের এবং তা-ও ঐ মানুষের শ্রম ও উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে। পরিণাম হচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, ও ক্ষুদ্র বাসস্থানের বিনিময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের আত্মাহীন যন্ত্রে পরিণত হওয়া ও মুষ্টিমেয় নেতৃবৃন্দের ভোগ-বিলাস ও প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করে ঐ বঞ্চিত কৃষক শ্রমিক জনসাধারণের নেতৃত্ব করা। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। ঐ দুই ব্যবস্থাই মানুষের-গায়রুল্লাহর সৃষ্টি এবং দুটোরই পরিণাম বৃহত্তর জনসাধারণের উপর নিষ্ঠুর অবিচার, বঞ্চনা। শেষ দীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূলনীতি হচ্ছে সমস্ত সম্পদকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করে দেওয়া এবং অর্থনীতিকে স্বাধীন-মুক্ত করে দেওয়া। প্রত্যেক মানুষের সম্পদ সম্পত্তির মালিকানা স্বীকার করা, প্রত্যেকের অর্থনৈতিক উদ্যোগ-প্রচেষ্টাকে শুধু স্বীকৃতি দেওয়া নয় উৎসাহিত করা (সুরা আল-বাকারা ২৭৫)। একদিকে অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রচেষ্টা অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকে আল্লাহ উৎসাহিত করছেন অন্যদিকে ক্রমাগত বলে চলেছেন খরচ করো, ব্যয় করো। উদ্দেশ্য সেই গতিশীল সম্পদের নীতি। পরিণাম সমাজের সর্বস্তরে সম্পদের সুষ্ঠু-সুষম বণ্টন, দারিদ্র্যের ইতি।

(শেষ)

2 thoughts on “অর্থনীতি – পর্ব -০২

  1. অর্থনীতির পরিভাষা বেশ চমৎকার এবং গোছানো ভাবে পরিবেশিত হয়েছে।
    শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ মি. সালজার রহমান সাবু।

  2. সহজ সরল ভাষায় ইসলামী অর্থনীতির অ আ ক খ বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন বলে আমার মনে হয়েছে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।