এ বিষয়টি বুঝতে পণ্ডিত হবার দরকার নেই যে, রাষ্ট্র অরাজক হলে অশান্তি পোহাতে হয় জনগণকে। তাই সবার আগে রাষ্ট্রকে ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করতে হয়, তবেই জনগণ শান্তিপূর্ণ সমাজ পায়। কোনো আদর্শ যদি এমন হয় যে, তাতে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালক নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই, তাহলে ঐ আদর্শ আর যাই হোক সমাজে শান্তি আনার জন্য যথেষ্ট নয়। ঐ আদর্শ পূর্ণাঙ্গ আদর্শ নয়। এজন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি সমস্ত মতাদর্শই কিন্তু রাষ্ট্রকে নিয়ে কথা বলে, রাষ্ট্রকে একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমের মধ্যে ফেলে সমাজে শান্তি আনয়নের চেষ্টা করে। কোনো মতাদর্শই রাষ্ট্রকে এড়িয়ে সমাজে শান্তি আনার অলীক কল্পনা করে না।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র না হয়ে যখনই ইসলামের প্রসঙ্গ আসে, আমাদের মধ্যে একটি শ্রেণি সেই অযৌক্তিক কল্পনাটিই করে থাকেন। তারা চান ইসলাম মানুষকে শান্তি এনে দিক, সমাজে ন্যায়, সাম্য প্রতিষ্ঠা করুক, কিন্তু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা না বলুক। এই স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক দাবি তারা কীভাবে করেন? আজ যদি কোনো সমাজতন্ত্রীকে নসিহত করা হয়, ভাই, তোমরা আর্তপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছো কর, কেবল একটাই অনুরোধ- রাষ্ট্র নিয়ে, রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বল না, এ বাদে অন্য যে কোনো বিষয়ে বলতে পারো আপত্তি নাই। তাহলে ঐ সমাজতন্ত্রী কি তা মেনে নিবেন? যদি কোনো গণতান্ত্রিক মতাদর্শীকে নসিহত করা হয়, তোমরা সমাজ, পরিবার, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে কথা বলো, শুধু রাষ্ট্র নিয়ে কোনো কথা বলো না, তাহলে কথাটি কেমন শোনাবে?
শিকারীকে বাঘ শিকার করতে হয় বনে গিয়ে। যদি আপনি তাকে বনেই যেতে না দেন, বনে না গিয়ে অন্য যে কোনো স্থান থেকে বাঘ শিকার করে আনতে বলেন সেটা শিকারীর পক্ষে সম্ভব হবে কি? জেলে কি পারবেন জলাধারে না গিয়ে মাছ ধরে আনতে? না। কিন্তু আমরা ওটাই চাচ্ছি ইসলামের বেলায়। তারপর যখন সমাজে খুব ধর্মকর্ম থাকার পরও, লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা থাকার পরও, লক্ষ মানুষের ইজতেমা হবার পরও, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর হজ্ব করতে যাওয়ার পরও এবং রমজান মাসে ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে রোজা পালনের পরও সমাজ অন্যায়, অবিচার, খুনোখুনি, ধর্ষণ, রক্তারক্তি, দুর্নীতি ইত্যাদিতে ভরপুর হয়ে থাকে, তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বলা হয়- এই কি তবে ইসলামের শান্তির নমুনা? কী হাস্যকর মূল্যায়ন!
আমাদের কথা হচ্ছে, তারা যদি সত্যিকার অর্থেই ইসলামের শান্তির নমুনা দেখতে চান তবে বলতে হয়, সে সময় এখনও আসে নি। যে এখনও পরীক্ষাতেই বসল না, তার পাস বা ফেল হবার প্রসঙ্গ আসে কি? তাকে আগে পরীক্ষায় বসতে দিন, জেলেকে জলাধারে যেতে দিন, শিকারীকে বনে যেতে দিন, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার সময় আসবে। আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামকে সর্বপ্রথম একটি জনগোষ্ঠী তাদের সামষ্টিক জীবনে গ্রহণ ও কার্যকর করেছিল। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজজীবন নয় কেবল, ঐ ইসলামকে অধিকার দেওয়া হয়েছিল তাদের জাতীয় জীবন নিয়ে কথা বলার, পরিবর্তন ও সংস্কারসাধন করার। তবেই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে বড় রেনেসাঁটি সংঘটিত হয়েছিল।
যদি আরবরা আল্লাহর রসুলকে শর্ত জুড়ে দিতেন যে, ‘আপনি আমাদের ব্যক্তি ও সমাজজীবন নিয়ে কথা বলুন, কীভাবে ভালো হয়ে চলা যায়, কীভাবে সত্য কথা বলা যায়, কীভাবে হালাল কাজ করা যায়- এসব বলুন, কিন্তু আমাদের জাতীয় জীবন নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। ওটা আমরা যেভাবে রেখেছি সেভাবেই থাকবে। জাতীয় জীবনে আমাদের গোত্রপতিরা যা বলবেন আমরা তাই করব, তবে চিন্তা করবেন না, ব্যক্তিজীবনে আমরা খুব ভালো মুসলিম হব, আপনার আনিত ইসলামের সমস্ত হুকুম আহকাম মেনে চলব।’ এই শর্ত মেনে সেই ইসলাম কি পারত আরবদের দাঙ্গা-হাঙ্গামাপূর্ণ অনিরাপদ সমাজকে পাল্টিয়ে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে?
আলোচনাটি মনপুতঃ হলো মি. সালজার রহমান সাবু। যথেষ্ঠ সহজ ভাবে রচিত হয়েছে নিবন্ধটি। সচেতন অবচেতন যে কোন পাঠকের জন্য আপনার এমতঃ মূল্যায়ণ যথার্থই কাজে আসবে বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি। মানুষের আত্মা জাগরুক হোক। ধন্যবাদ।
শ্রদ্ধা জানবেন শ্রদ্ধেয়। (সচেতন অবচেতন যে কোন পাঠকের জন্য আপনার এমতঃ মূল্যায়ণ যথার্থই কাজে আসবে বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি। মানুষের আত্মা জাগরুক হোক।) আমার এই মন্তব্য টুকু আমি শ্রদ্ধাভরে হৃদয়ে গেথে রাখলাম।
সবার আগে রাষ্ট্রকে ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করতে হয়, তবেই জনগণ শান্তিপূর্ণ সমাজ পায়। কোনো আদর্শ যদি এমন হয় যে, তাতে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালক নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই, তাহলে ঐ আদর্শ আর যাই হোক সমাজে শান্তি আনার জন্য যথেষ্ট নয়।
আপনার কথা ঠিক ভাই। আমরা ভারতীয়রা পড়েছি আরেক গ্যাঁড়াকলে। ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানের প্রধান শর্ত থাকলেও আজকাল এমন সব কাণ্ডকারখানা শুরু হয়েছে তাতে করে মাথা হেঁট করতে হয়। আমরা শুধরাবো কবে !!
প্রথমে আমার শ্রদ্ধা জানবেন ! আসলে ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানের পাতার মধ্যে সিমাবদ্ধ। ইতিহাস তুমি কেঁদো না পরিবর্তন আসে, চিরক্লান্তির ভাবনা তোমাকেই ভালোবাসে।
গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি সমস্ত মতাদর্শই রাষ্ট্রকে নিয়ে কথা বলে, রাষ্ট্রকে একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমের মধ্যে ফেলে সমাজে শান্তি আনয়নের চেষ্টা করে। মানলাম। কোনো মতাদর্শই রাষ্ট্রকে এড়িয়ে সমাজে শান্তি আনার অলীক কল্পনা করে না, এখানেই হতাশ হলাম।
আপনার আলোচনার বিরোধিতা করছি না দাদা। আমি আমার অবস্থান থেকে প্রশ্নটি তুলছি আমার রাষ্ট্রর কাছে। আমার রাষ্ট্র আমাকে উত্তর দেবে না।
সকল মতাদর্শই উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণসাধন, তাই কোনো মতাদর্শই কখনোই রাষ্ট্রকে কখনোই আলাদা করে দেখা যাবে না। দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে হয় মানুষ, একটি থেকে অপরটিকে আলাদা করা মানেই মৃত্যু। তেমনি মতাদর্শই , ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করলেও মানব সভ্যতার মৃত্যু অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের সমাজ হয়ে যায় পশুর সমাজ, যেটা আজ হয়েছে। মানুষের আক্রমণের হাত থেকে মানুষকে পাহারা দিয়ে রাখতে হচ্ছে। পশ্চিমারা ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা করে এই ভোগবাদী পাশবিক সমাজটিই তৈরি করেছে বিশ্বময়। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের জাতিকে রক্ষা করার একটাই পথ, ধর্মের সঠিক শিক্ষাকে জনগণের মাঝে বিস্তার ঘটাতে হবে যেন প্রতিটি মানুষ নৈতিক চরিত্রে ও দেশপ্রেমে পূর্ণ হয়, তারা যেন জাতির স্বার্থে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। তাহলেই আর তাদের দ্বারা কেউ জাতির ক্ষতিসাধন করাতে পারবে না, কোনো অপরাধ করাতে পারবে না, কাউকে জাতির ক্ষতি করতে দেখলে তারা তাকে প্রতিরোধ করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব হবে যখন এই কাজে রাষ্ট্রের অধিবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে।
আগে নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে, দেশের জনগণ হিসাবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের যে কর্তব্য ছিল তা আমরা কতটুকু পূরণ করেছি। আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর হলে রাষ্ট্রে কোনোদিন শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না যতই সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দোষারোপ করি না কেন। আমাদের দায়িত্ব ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
বলতে পারেন রাষ্ট্র হলো মস্তকের ন্যায়।
সমাজকে আজকাল যেভাবে দেখছি তাতো তো মনে হচ্ছে দেশে এবং মানুষের মন থেকে মানবিকতা হারিয়েছে।
এমন সমাজ তো আমরা চাইনি।
সময় পরিবর্তনশীল। জীবন পরিবর্তনশীল। তাই মানুষের জীবনপ্রণালী যদি সময়ের সাথে সাথে প্রয়োজনমাফিক পরিবর্তন না করা হয় তাহলে একসময় সেই জীবনপ্রণালী আর মানুষকে শান্তি দিতে পারে না, মানুষের বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর উপযুক্ত সমাধান দিতে পারে না, ফলে তা মানুষের কাছে আর গৃহীত হয় না। তখন জোর করে সেটা প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়, ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, ভালোবাসা বিদ্বেষে পরিণত হয়।
পৃথিবীতে যত বেশি অশান্তি তা শুধু ধর্মকে কেন্দ্র করেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের ব্যর্থতা ক্ষণিকের জন্য হয়ে থাকে। তাতে অশান্তির সাথে যোগ হয় অভাব, অনটন, অঘটন, অনাচার, অবিচার, অত্যাচার, খুন, ঘুম, হাঙ্গামা। তা একসময় জনরোষের পরিবর্ত হয়। কিন্তু ধর্মের দোহাই যেখানে থাকে, সেখানে সকল সৎকর্মই বিফল হয়ে যায়।
এটা আমার একান্ত অনুভূতি থেকে প্রকাশ করেছি মাত্র। ভুলও হতে পারে। তাতে সংশোধনীয় অবশ্যক।
আপনার সময়োপযোগী পোস্ট প্রশংসার দাবি রাখে। ধন্যবাদ আপনাকে।
বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা স্পষ্ট দেখতে পারি যে বর্তমানে ধর্ম নাম্বার ওয়ান ইস্যু। বিশ্ব রাজনীতি ও সামজিক প্রেক্ষাপট উভয় দিক থেকে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাহলে এখন কী করবেন? ধর্মকে বাদ দিয়ে দিবেন? পারবেন না। মানুষের মনে ধর্ম বিশ্বাসের দাপট অনেক। ইতিহাস থেকে পর্যালোচনা করলে দেখি যুগে যুগে ধর্মের নিয়ম-কানুন, অনুশাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে পরিচালিত করা হয়েছে।
মানুষের অসাধারণ চিন্তাশক্তি রয়েছে, রয়েছে সুন্দরত অবয়ব। মানুষের হৃদয় রয়েছে, সে উপলব্ধি করে। নিরবে, নিভৃতে বিপদে পড়লে মানুষ সেই মহান রাষ্ট্র সেই মহান প্রভু কে স্মরণ করে। তাই ধর্মকে বাদও দেয়া যাবে না অবজ্ঞাও করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতি সবার মাঝেই বিদ্যমান। এর ফলেই যখনই তারা কোন অবজ্ঞার দৃষ্টান্ত দেখে বা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে তখন তারা আগ্নেয়গিরির অগ্নুতপাতের মতো ফেটে পড়ে। ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাদের ঈমানকে হাইজ্যাক করে জাতি বিনাশী কর্মকান্ডে লিপ্ত করে।
তাহলে বর্তমান এই ধর্ম সংকট থেকে মুক্তির উপায় কী? আমরা হেযবুত তওহীদ আপনাদের সামনে মুক্তির উপায় তুলে ধরছি। পূর্বেও বলে এসেছি ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করার কোনো রাস্তা নেই। তাহলে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে, ঈমানী চেতনাকে জাতির কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে কাজে লাগতে হবে।আল্লাহ যে ধর্ম শেষ রসুলের মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন সেই প্রকৃত ধর্ম মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। বর্তমানে আমারা যে ধর্মগুলি দেখছি সেগুলো বহুপূর্বেই বিকৃত হয়ে গিয়েছে।
ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে ধর্মীয় রীতি পালনের পরও সমাজ যদি অন্যায়, অবিচার, খুনোখুনি, ধর্ষণ, রক্তারক্তি, দুর্নীতিতে ভরপুর হয়ে থাকে, তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বলতেই হয়- এটা ইসলামের শান্তি অথবা ধর্মীয় অনুশাসনের নমুনা নয়।
বর্তমানে আমারা যে ধর্মগুলি দেখছি সেগুলো বহুপূর্বেই বিকৃত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে যে ইসলাম রয়েছে সে ইসলাম আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। এ ইসলামের অনুসারীরা আজ হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত। এদের একেকজনের একেক আদর্শ। এদের একদল গান শুনাকে হারাম মনে করে, আরেকদল ছবি তোলাকে হারাম মনে করে, নারীদের অংশগ্রহণকে বাঁকা চোখে দেখে। কিন্তু আল্লাহ এগুলোর কোনটিকেই হারাম করেননি, হারাম করেছেন অশ্লীলতাকে। নারীদের ব্যাপারে এদের দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ। ইসলামের ব্যাপারে পরিস্কার আকিদা না থাকার ফলে এদের দিয়ে রাষ্ট্র চলবে না। সেই প্রকৃত ইসলাম আজ কোথাও নেই যে ইসলাম মানুষের সুকুমার বৃত্তিকে স্বীকৃতি দেয়, যে ইসলাম মানুষের শিল্প সাহিত্যের স্বীকৃতি দেয়, যে ইসলামকে যুক্তিবোধকে উদ্বুদ্ধ করে, নারী ও পুরুষের সকলকাজে সমানভবে অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়, উৎসাহিত করে, যে ইসলাম মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। আল্লাহ তাঁর অশেষ কৃপায় আমাদের সামনে সেই ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন। আমরা সেই প্রকৃত রূপ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমের মধ্যে সমাজে শান্তি আনয়নের চেষ্টা করে। কোনো মতাদর্শই রাষ্ট্রকে এড়িয়ে সমাজে শান্তি আনার অলীক কল্পনা করতে পারবে না। এখনেই সত্যতা।
জী .. এখনেই সত্যতা। আপনাকে ধন্যবাদ।
ধর্মোন্মাদনা হচ্ছে ধর্মের চরমতম অপব্যবহার। ধর্ম মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতে পরিণত করে, আর ধর্মোন্মাদনা মানুষকে সৃষ্টির নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত করে। মানুষ উন্মাদ হয়ে যায়, অপর কোনো মানবগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাশবিক নৃশংসতায় তারা মেতে ওঠে। আমাদের সমাজে প্রায়ই যে কোনো একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে, ফেসবুকে কোনো একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়ে, কারো উপর নাস্তিক, কাফের, মুরতাদ ইত্যাদি ফতোয়ার বাণ নিক্ষেপ করে, ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ এনে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের মধ্যে ক্ষোভের দাবানল সৃষ্টি করা হয়। ধর্মান্ধ মানুষ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে চিৎকার করতে থাকে, তারা মেতে ওঠে ধ্বংসলীলায়। তাদের সম্মিলিত যুক্তিহীন দানবিক নিষ্ঠুরতার বলি হয় দুর্বল প্রতিপক্ষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
সকল সচেতন নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাই, এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে, ধর্মকে নির্যাতনের কলে পরিণত করার বিরুদ্ধে আপনারা আওয়াজ তুলুন। যদি আপনারা নীরব থাকেন তাহলে এই লেবাসধারী অপশক্তি সবাইকে গ্রাস করে ফেলবে, কেউ রক্ষা পাবে না। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে বহু সহিংতার সৃষ্টি করা হয়েছে, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনা দেশকে একটি অমোঘ পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি তখন ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী আমাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা তো কোনো ব্যক্তিস্বার্থে দাঁড়াই নি, দেশ ও জাতির কল্যাণ বিবেচনা করে আমরা জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংগ্রামে আপনারা আমাদের পাথে দাঁড়ান। মনে রাখবেন, ধর্মীয় সহিংসতার সূত্র ধরেই আজকে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো অস্ত্র বিক্রির বাজার বসিয়েছে, একটার পর একটা দেশ ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আমাদের এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিও সাম্রাজ্যবাদীদের নিশানার বাইরে নয়। দেশের মানুষকে সেই মহাসংকট থেকে বাঁচাতে যে এই সত্যনিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক আন্দোলনটি কাজ করে যাচ্ছে তার পথ যেন কোনো ফতোয়াবাজ, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রুদ্ধ করতে না পারে সেজন্য দেশ ও মানুষের স্বার্থে, সত্যের স্বার্থে সবাই গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন।