তারিখঃ ঢাকা। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ ইং।
প্রিয় বাবা,
এটাই হয়তো তোমার কাছে আমার শেষ চিঠি
এ চিঠি তোমার হাতে পৌঁছুবে কিনা আমি জানি না
আমি হয়ত একটু পরেই মারা যেতে পারি বাবা!
গতকাল রাতে যে সুন্দর স্বপ্নটি দেখেছিলাম
আজ সকালে কাজে আসার আগে তোমাকে বলেছিলাম
কিন্তু তা আর সম্ভব হল না!
আজ সকালে আমাদের কারখানায় এক দুর্ঘটনা ঘটেছে!
তারপর!
তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম!
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চারিদিকে মানুষের বেঁচে থাকার আর্তনাদ! হাহাকার!! চীৎকার!!!
আমাদের অফিসের বিল্ডিংটা আজ ভেঙ্গে পড়েছে!
আমি দোতালায় কাজ করছিলাম কিন্তু এখন কোথায় আছি বুঝতে পারছি না বাবা!
বাবা!
আমার মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে!
আমার মাথার উপরে একটা সেলাই মেশিন খুব শক্তভাবে আটকে আছে!
আর সেলাই মেশিনের উপরে ভেঙ্গে পড়েছে ছাদ।
মনে হচ্ছে সেলাই মেশিনের সুচের কিছুটা অংশ মাথায়!
মাথায় ঢুকে গিয়েছে!
বাবা!
আমার মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে
আমার গলা, বুক, শার্ট সব রক্তে ভিজে গেছে
আমি একটুও নড়তে পারছি না বাবা!!!
বাবা!
আমার শার্টের পকেটে এক টুকরা কাগজ ছিল আর কলম
আমি এখন সেই কাগজে তোমার কাছে চিঠি লিখছি
কিন্তু বাবা!
এই কাগজটাতে আমার মাথা থেকে রক্ত পড়ে কিছুটা ভিজে গিয়েছে
আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে বাবা!
দূরে কোথাও অনেক মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে
মনে হয় উনারা উদ্ধার কর্মী
ওরা কি আমাকে খুজে পাবে?
আমিতো জোরে ডাকতে পারছি না বাবা!
আমিতো চিৎকার করে বলতে পারছি না, “আমি এখানে আটকা পড়ে আছি! তোমরা এদিকে এসো!! আমাকে বাঁচাও!!!”
বাবা!
সোনালীর পেটে আমার সন্তান এসেছে সেই সু সংবাদটা তোমাকে দেয়াই হয় নি
ও গতকাল রাতেই আমাকে বলেছিলো
সোনালীর প্রতি যত্ন নিও বাবা!
মাকে কাঁদতে নিষেধ করো বাবা!
মাকে আর নতুন শাড়ি কিনে দেয়া হলো না!
আমি তোমাকে আর ঔষধ কিনে দিতে পারব না বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দিও!
আর পারছি না বাবা!
আমি মনে হয় মারা যাচ্ছি!
কত মানুষ মারা গেছে শুনেছি, দেখেছি কিন্তু কোনও দিন বুঝিনি মৃত্যু কি!
মৃত্যু মানে কি বাবা? আমি কোথায় যাচ্ছি বাবা!
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে বাবা!
বাবা! বাবা!
বাবা!!!!………
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাললা………
কবিতার আকারে স্মৃতি কথা অসাধারণ লাগলেও মনটা আর্দ্র হয়ে উঠলো মি. ইলহাম। আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু জীবন এতো জটিল সমীকরণের কেনো এটাই প্রশ্ন জাগে। কিন্তু উত্তর আসে না।
"আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু জীবন এতো জটিল সমীকরণের কেনো এটাই প্রশ্ন জাগে। কিন্তু উত্তর আসে না।"
আমারও মনে এই প্রশ্ন জাগে সূপ্রিয় শ্রদ্ধাষ্পদেষু!
* নির্মম নিয়তির সাথে যুদ্ধ করে শ্রমজীবী মানুষগুলো এই পৃথিবীতে আমাদের বসবাসের উপযোগী করে দিচ্ছে নিরন্তর। কিন্তু আমরা তাদের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করতে পারছি!!!
ভালো থাকুক সব শ্রমজীবী মানুষ।
প্রকৃত সত্য বলেছেন প্রিয় কবি ও লেখক দিলওয়ার ভাই
বাবা অথবা মা এর কাছে সন্তানের স্বপ্ন বলি কষ্টগাঁথা শেয়ারিং বলি; আমার মেয়ে আজ বেশ বড় হয়েছে; ওর একপ্রেশেনও আমার চেনা; আমার কাছে ভীষণ অদ্ভুত লাগে। আপনার লেখাটি আমার মনে গেঁথে রইলো দাদা।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রিয় লেখক!
বড়ই নির্মম,,,
সত্য বটে!!!
আজ প্রথম আপনার কবিতা পড়লাম। লেখার স্টাইল আমার পছন্দ হয়েছে। নতুন লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকবো।
কবি আপনি হয়তো জানেন না, এই কবিতায় ভুলে কিছু জল মিশিয়ে দিয়েছেন। পড়তে গিয়ে ভিজে গেলাম; ভিজিয়ে দিল।
কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় কবি মিড ডে ডেজারড!
খুব ভালো লাগলো লেখাটা
কত সন্তান মনে মনে মনচিঠি লিখেছে তার বাবার কাছে, মায়ের কাছে, ভাইয়ের কাছে, সন্তানের কাছে, স্ত্রীর কাছে জীবনের শেষ মুহূর্তে ধ্বসে পড়া বিল্ডিং এর ভেতরে থেকে।
মন ছুঁয়ে গেলো
ভালো থাকুন সব সময়।
ধন্যবাদ আন্তরিক মন্তব্যের জন্য।
আপনার মন্তব্যেও আপনার কবিতার স্টাইলের ছোঁয়া পেলাম!