গল্পকার ও শ্রোতা
– মারাঠি থেকে অনুবাদ।
ভূমিকা : গল্প- সখুবাঈ। যেভাবে ঘরে মজুত খাবার শেষ হয়ে গেলে অদিবাসী পরিবার খাবারের পরিবর্তে কন্যাসন্তানদের অন্য লোকেদের বাড়ি পাঠানো হয় তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে। খুব অল্প বয়সে সখুবাঈকেও পাঠানো হয়েছিল অন্যের শিশু দেখাশোনা করার জন্য। তিনি তখন এতোই ছোট যে শিশুটিকে তিনি দেখাশোনা করেন তাকে কোলে তোলার ক্ষমতা ছিলো না। তিনি কেবল দোলনায় দোলাতে পারতেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সখুবাঈয়ের জীবনের ঘটে গেছে নানা ঘটনা। সেইসব ঘটনা থেকে তিনি যোদ্ধার মতোই বেরিয়ে এসেছিলেন। কখনও তিনি ভয় পেয়েছেন তাকে আক্রমণ করা হবে, কখনও ভয় পেয়েছেন তাকে ডাইনী আখ্যা দেওয়া হবে। সমাজ তাকে বহিষ্কার করবে। তা সত্ত্বেও তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন আদিবাসী মেয়েদের মুক্তির জন্য। সাখুবাঈয়ের জীবন এমন এক ইতিহাসের অঙ্গ যা পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।
সাখুবাঈ গভিট দাহনু তালুকের বন্দঘর মেঘপাড়া অঞ্চলের এক আদিবাসী রমনী। তিনি ভূমিহীন শ্রমিক, প্রান্তীয় চাষীদের মধ্যে কর্মরত গণসংস্থা কষ্টকারী সংঘটনের সঙ্গে কাজ করেছেন। সখুবাঈ গ্রামের লোকেদের একজোট করে সংঘটন গড়ে তুলেছেন। তার জীবন ছিলো সংগ্রামের তাই ক্রমশ তিনি হয়ে উঠেছিলেন দৃঢ়চেতা রমনী। অদিবাসী অঞ্চলে মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া মুশকিল। জেলা পরিষদ স্কুলগুলো মোটামুটি কাজ করে না। তাছাড়া বেঁচে থাকার প্রয়োজনে গ্রামের লোকেরা গ্রামের বাইরে কাটায় বছরের ন’মাস। আর চাষ করার জন্য ফিরে আসে তিনমাস। মীনা তোঢাড়ের বাবা কালুরাম তোঢাড়ে তৈরী করেছিলেন ভূমিসেনা। এবং মীনা তৈরী করেছেন একটি আশ্রম স্কুল। সেখানেই বড় হয়েছেন সাখুবাঈ। পড়াশোনা করেছেন। চাষাবাদ করেন এবং সখুবাঈ অবসর সময়ে লিখে রাখতেন কিছু লোকগাঁথা। সেখান থেকেই একটি গল্পের অনুবাদ দেওয়া হলো।
______________________________
গল্পকার ও শ্রোতা
অনেক বছর আগে, এক গ্রামে দুই বন্ধু বসবাস করতো। একজন ছিলো গল্পকার এবং অন্যজন শ্রোতা। একদিন তারা অনেক দূরের জঙ্গলে গেলো এবং সেখানে বসে তারা একের পর এক গল্প শুরু করলো। এদিকে যে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, ওদের আর নজর নেই। দিন শেষ হয়ে একসময় রাতও পার হয়ে গেলো। সঙ্গে আনা খাবার পচে যাচ্ছে তাদের খেয়াল নেই। তারা এতটাই গল্পের মধ্যে ডুবে ছিলো। একসময় তারা সেই জঙ্গলেই অনাহারে মারা গেলো। দুদিন পরে কিছু পথচারী সেও রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। তারা দুটো মৃতদেহ দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো এরা দুজন কে? এক জন বললো হয়তো কোনো পরদেশী। তখন তারা সেই মৃতদেহ নিজেদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে কবর দিলো।
এদিকে অনেক দিন ধরে গল্পকার আর শ্রোতার কোনো খবর নেই দেখে তাদের স্ত্রীরা খুঁজতে বের হলো। জঙ্গলের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে তারা হাজির হলো এক কবরস্থানে। সেখানকার লোকেদের জিজ্ঞেস করলো – “ও গ্রামের অধিকারী বলো তো, এরা কি আমাদের স্বামী?” গ্রাম অধিকারী বলল – “আমরা এদের মৃত অবস্থায় পাই। পাশে না খাওয়া খাবার। তাদের আমরা এক সঙ্গে মাটির তলায় কবর দিই।” তখন স্ত্রীদের কথায় কবর খুঁড়ে হাড়গুলো বের করা হলো। তখন স্ত্রীরা আবার জানতে চাইলো – “ও গ্রাম অধিকারী, এদের মধ্যে কে গল্পকার আর কে শ্রোতা?” কেউ উত্তর দিতে পারলো না।
স্ত্রীরা তখন অধিকারীর কথামত হাড়গুলো একটা থলিতে ভরে কাছাকাছি একটা পুকুরে নিয়ে গেলো। হাড়গুলোকে জলে ডুবিয়ে দিলো। যিনি শ্রোতা তিনি এমনভাবে গল্পগুলো আত্মস্ত করেছিল যে তার হাড় গুলো ভারী হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেগুলো ডুবে গেলো। অন্যদিকে গল্প বলতে বলতে গল্পকারের শরীর প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল। ফলে তার হাড়গুলো ভেসে রইলো।
অধিকারী বললেন – “তোমাদের স্বামীর হাড়গুলো এবার বাড়ি নিয়ে যাও। এখন তোমরা জানো কোন গুলো গল্পকার এর হাড় আর কোন গুলো শ্রোতার হাড়। হালকা এবং ভারী। সৃষ্টিকর্তা এবং গ্রহীতা। গল্পকার এবং শ্রোতা।”
_______________
অনুবাদ- রিয়া চক্রবর্তী।
মারাঠি দের নিয়ে গল্প আর সিনেমাই দেখেছি। সম্যক কোন অনুবাদ অথবা কিছু পড়া হয় নি। সখুবাঈ এর ব্যক্তি জীবন আর তাঁর গল্পের অনুবাদ সত্যিই অসাধারণ।
ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু। সাখুবাঈ এর আর একটি শব্দনীড় এ আসবে।
ভিন্ন ধরনের গল্প, বেশ ভাল লাগল দিদিভাই। পরবর্তীর অপেক্ষায়।
ধন্যবাদ খালিদ দা। পরবর্তী এবং শেষ ভাগ প্রকাশিত হয়ে গেছে।
গল্পটি ছোট কিন্তু শেখার বিষয় আছে।
মনে হয় কবি সফি দা।
পরাবাস্তব কাহিনি খুব ভালো লাগে।
এমন সাবলীল অনুবাদে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই! গল্পের চেয়ে গল্পটার অসাধারণ অনুবাদ আমার কাছে বেশি দামি হয়ে ওঠেছে।
অথবা অনুবাদ দক্ষতার কারণে গল্পটা অনন্য হয়ে ওঠেছে। অসাধারণ!
অনুপ্রাণিত হলাম মিড দা।
গল্পকার আর শ্রোতা দারুণ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে গল্পে সত্যিইতো তাই গল্পকার তার সকল চিন্তা শক্তি ব্যায় করে গল্প লিখে নিজেই হালকা হয়ে যান।মারাঠি একটি কঠিন (অজানাদের কাছে) ভাষার এমন সহজ সরল অনুবাদ।ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকেও মমি দা।
সুন্দর একটা সংগ্রামী জীবনের গল্প পড়লাম। এমন আরও চাই শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সাথে শুভকামনাও থাকলো ।
ঝুলিতে দুটো ছিলো। দুটোই শেষ নিতাই দা।
যিনি শ্রোতা তিনি এমনভাবে গল্পগুলো আত্মস্ত করেছিল যে তার হাড় গুলো ভারী হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেগুলো ডুবে গেলো। অন্যদিকে গল্প বলতে বলতে গল্পকারের শরীর প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল। ফলে তার হাড়গুলো ভেসে রইলো।
* কবি দি, মুগ্ধ করলে…


ধন্যবাদ কবি দা।