গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান তৃতীয় পর্ব-বাউলগান

গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান
তৃতীয় পর্ব-বাউলগান
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও বাউলগান রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সাধারণ মানুষের ভাষা, জীবনবোধ, বিনোদন, সাহিত্য, পেশা – এ সব নিয়েই গড়ে ওঠে ‘লোকসংস্কৃতি’৷ এই সংস্কৃতির মধ্যে থাকে সহজিয়া সুর৷ কোনো কৃত্রিমতা থাকে না এটা সহজাত, সহজিয়া আর স্বাভাবিক বহতা নদীর মতো৷ পোশাকি সংস্কৃতির বিপরীতে এক শক্তিশালী সোঁদা মাটির গন্ধ ভরা স্বকীয় সংস্কৃতি৷ এর কোনো বিনাশ নাই৷ আছে আধুনিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার উদারতার ইতিহাস৷ তাছাড়া এই সংস্কৃতির ভাষাও লোকজ৷ যাকে বলা হয় লোকভাষা৷ সাধারণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মুখে, কথায়, ভাষার ব্যবহারে, লেখায় এর প্রকাশ৷
গ্রামীণ জীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্য, জীবনবোধের প্রকাশ৷ তাঁদের পোশাক, খাবার, প্রার্থনা, পূজা-পার্বণ, ফসল, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বাসস্থান, বাহন, জীবন সংগ্রাম, দ্বন্দ্ব, বিরহ – এ সবই লোকসংস্কৃতিকে রূপ দেয়৷ লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে তার সামগ্রিক প্রকাশ ঘটে৷ লোকগানে, কবিতায়, সাহিত্যে, উৎসবে, খেলাধুলাতেও প্রকাশ পায় লোকসংস্কৃতি৷

আছে প্রবাদ-প্রবচন, খনার বচন, লোককথা৷ এরমধ্যে আছে প্রকৃতির কথা, ঋতুর কথা, ভালো-মন্দের কথা, জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় দিকের কথা৷ এ সবের সঙ্গে আছে বিজ্ঞানের সম্পর্ক, আছে যুক্তির সম্পর্কও৷ লোকসংস্কৃতির অনেক উপাদানের রূপ-প্রকৃতির বিচার করে একে চারটি প্রধান ধারায় ভাগ করা হয়: বস্তুগত, মানসজাত, অনুষ্ঠানমূলক ও প্রদর্শনমূলক৷

অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনমূলক লোকসংস্কৃতির মধ্যে লোকনাট্য, যাত্রা, নৃত্য ও খেলাধুলা প্রধান৷ বাউল, গম্ভীরা, জারি গানের সঙ্গে নাচ, সারি গানের সঙ্গে সারি নাচ, লাঠি খেলার সঙ্গে লাঠি নাচ, খেমটা গানের সঙ্গে খেমটা নাচ এবং ঘাটু গানের সঙ্গে ঘাটু নাচ ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ হোলির গীত, গাজীর গীত, মাগনের গীত, বিবাহের গীত, হুদমার গীত প্রভৃতি লোকসংস্কৃতির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ৷

হস্তশিল্প লোকসংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ভুবন৷ এ সব হস্তশিল্পে মানুষের মেধা, নৈপুণ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়৷ যেমন নকশিকাঁথায় পায় শিল্পী মনের প্রকাশ৷ বেতশিল্প, বাঁশশিল্প, কাঠশিল্প, চামড়াশিল্প, বুননশিল্প সমৃদ্ধ করেছে লোকসংস্কৃতিকে৷ মসলিনের যুগ পেরিয়ে আজকের জামদানি লোকশিল্পেরই অবদান৷

গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান
তৃতীয় পর্ব-বাউলগান

বাউল গান লোক গীতি কবিতা-৩
(কথা ও সুর- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী)

চেনা পৃথিবীর অচেনা বাউল আমি আজকের আসরে,
মধুর সুরে গান গেয়ে যাই আমি একতারা হাতে ধরে।

তোমরা আমায় চেনো না,
চেনো না আমার ঠিকানা।
চিনতে পেরে আসবে কাছে আছে সবার জানা।

আমি যে এক পথের বাউল চলি আমি রাঙাপথ ধরে ।
চেনা পৃথিবীর অচেনা বাউল আমি আজকের আসরে।
………..

একতারায় সুর আমি বেঁধে যাই,
সকলের কাছে আমি পয়সা পাই,
কেউ আমারে চেনে না অচেনা বাউল আমি ভাই।

ওরে ও…………. ভোলামন মনরে আমার।

বাঁশির সুর ও একতারার সহযোগে মিলিত সুরের মুর্চ্ছনা।
শ্রোতাগণ হাত তালি দেয়।

(পূ্র্ব বাউল গানের শেষাংশ)

আমি যে অজানা বাউল
কেউ ডেকোনা আমার নাম ধরে।
আমি যে এক পথের বাউল চলি আমি রাঙাপথ ধরে ।
চেনা পৃথিবীর অচেনা বাউল আমি আজকের আসরে।

কেউ কেউ হাতে তার পয়সা দেয়।
গায়ের গেরুয়া পাঞ্জাবীর চতুর্দিকে টাকা আলপিন দিয়ে গেঁথে দেয়।
পরে জোড় হাত করে শ্রোতাজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন–

আগামীকাল এই আসরে কীর্তন পালাগান পরিবেশিত হবে।
সকলের সাদর আমন্ত্রণ রইল।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

8 thoughts on “গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান তৃতীয় পর্ব-বাউলগান

  1. এসব আস্তে আস্তে এদেশ বিদেশ সব দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। রয়ে যাচ্ছে কালের সাক্ষী হয়ে ইতিহাসে।     

    1. দিন চলে যায়। স্মৃতি শুধু রয়ে যায়। দিল্লি মহানগরীর বুকে এসব লোকসংস্কৃতি একেবারেই অচল। পুরানো স্মৃতির কোণে জমে থাকা মধুময় স্মৃতি আমার কলমে পেয়েছে মনের ভাষা। আপনার সহানুভূতি ও সহমর্মিতায় আমি ধন্য।
      সাথে থাকবেন সেইটা আশা করি । জয়গুরু!

  2. চেনা পৃথিবীর অচেনা বাউল আমি আজকের আসরে,
    মধুর সুরে গান গেয়ে যাই আমি একতারা হাতে ধরে।

    গীতিকাব্য পড়লাম কবি। সুর শোনার কোন সুযোগ হবে কিনা জানাবেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  3. সংস্কৃতির ভাষাও লোকজ। যাকে বলা হয় লোকভাষা। সাধারণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মুখে, কথায়, ভাষার ব্যবহারে, লেখায় এর প্রকাশ। ভালো শেয়ারিং কবি। 

  4. আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। চমৎকার শেয়ারিং মি. ভাণ্ডারী। অভিনন্দন জানাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  5. গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান হচ্ছে আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির ইতিহাস। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।