এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – মা লক্ষ্মীর আগমনী – অন্তঃপর্ব

এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – মা লক্ষ্মীর পূজাপাঠ ও ব্রতকথা – অন্তঃপর্ব
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা, পাঁচালি রচনা ও পাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বাংলা নদী মাতৃক দেশ। তবুও দারিদ্র তার সর্বাঙ্গে। গরিব গৃহস্থের গৃহকোণে তবুও পাতা থাকে লক্ষ্মীর আসন। মূর্তি নয়, ঘটে পুজোই অধিক। সামন্ত-ভূস্বামীর লক্ষ্মী আরাধনা মানানসই। কিন্তু দারিদ্র-তাপিত জীবন থেকে মুক্তি এবং ধনী হওয়ার স্বপ্ন গরিবেরই অধিক। তাই বাংলাদেশের পল্লীর কোণে কোণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় নাম রাখা হয় কন্যা সন্তানের, লক্ষ্মী। কন্যা জন্মের পরে বলা হত, লক্ষ্মী এল। সপ্তাহের একটি দিনকে বলা হয় ‘লক্ষ্মীবার’, বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে।

লক্ষ্মীকে পেতে তাই কোজাগরী ব্রত থেকে মণ্ডপ সজ্জায় লক্ষ্মী পুজো বা বিত্তবাসীনির আরাধনা। কোজাগর, কে জাগে? যার নেই সে পাবার আশায় জাগে। যার প্রচুর আছে সে হারাবার ভয়ে জাগে! কিন্তু বিশেষ এই কোজাগরীর দিনে লক্ষ্মী-আগমনী গান তো রাত্রি জাগরণের। সারারাত জেগে থাকলে ঘুম পাবে, তাই প্রাচীন কালে এমন রাতে পাশা খেলার ব্যবস্থা ছিল।

লক্ষ্মী চঞ্চলা। তবে ক্রোধী দেবী নন। তাই যে কোনও গৃহস্থই লক্ষ্মীর ঝাঁপি করে লক্ষ্মীর পিঁড়ি পাতেন গৃহকোণে। স্থানাভাবে একটি মাত্র ঘরের কুলুঙ্গিতে। উপাচার তো সামান্যই। প্রতি বৃহস্পতিবারে (লক্ষ্মীবার শব্দটি ব্যবহৃত) সামান্য ফুল-বাতাসা আর ধোয়া পিঁড়িতে চাল পিটুলির আলপনা। সেটাই একটু বড় আকারের এই কোজাগরীর রাতে। সেই পুজোটায় অবশ্যই পুরোহিত চাই। ফর্দয় ফিরিস্তি প্রায় ৬৩ রকমের দ্রব্যাদির। তাতে সিঁদুর থেকে দর্পণ থেকে মধুপর্কের বাটি থেকে, পানের মসলা অবধি আরও অসংখ্য জিনিস।

শাস্ত্রে মাতা লক্ষ্মীকে সর্বঐশ্বর্যদায়িনী, সুখপ্রদা, ধনপ্রদায়িনী নামে উল্লেখিত করা হয়েছে । মাতা লক্ষ্মীর আরাধনার একটি কারণ ধন সম্পদ প্রাপ্তি । যেখান হতে মাতা লক্ষ্মী প্রস্থান করেন, সেখানে দুঃখ, রোগ, শোকের বন্যা বয়ে যায় । মাতা লক্ষ্মী চঞ্চলা, কিন্তু সমস্ত সংসারের গৃহকর্ত্রীরাই গুরুবার ও পূর্ণিমা তিথিতে পূজা করে মাকে ধরে রাখেন- এবং মায়ের কৃপায় সংসারের গৃহকর্ত্রীরাই “গৃহলক্ষ্মী” রূপে সংসারের উন্নতি বৃদ্ধি করেন । মা লক্ষ্মী ঐশ্বর্য, সম্পদের পূর্ণ বিকাশ ঘটান, এই জন্য দেবী প্রস্ফুটিত কমলে প্রস্ফুটিত পদ্ম ধারণ করে থাকেন । প্রস্ফুটিত পদ্ম পূর্ণ বিকাশের প্রতীক।
লক্ষ্মীপূজা করলে হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা।

মা লক্ষ্মীর ১০৮ নাম। এই নাম উচ্চারণে দারিদ্রতা নিবারণ হয়।
……………………………
১) প্রকৃতি ,২) বিক্রুতি , ৩) বিদ্যা , ৪) সর্বভূতহিতপ্রদা, ৫) শ্রদ্ধা , ৬) বিভূতি, ৭) সুরভি, ৮) পরমাত্মিকা , ৯) জয়প্রদা , ১০) পদ্মালয়া , ১১) পদ্মা , ১২) শুচী, ১৩) স্বাহা, ১৪) স্বাধা, ১৫) সুধা , ১৬) ধন্যা , ১৭) হিরন্ময়ী, ১৮) লক্ষ্মী , ১৯) নিত্যাপুষ্টা, ২০) বিভা, ২১) অদিত্যা, ২২) দিত্যা, ২৩) দীপা, ২৪) বসুধা, ২৫) ক্ষীরোদা, ২৬) কমলাসম্ভবা, ২৭) কান্তা, ২৮) কামাক্ষী, ২৯) ক্ষীরোদসম্ভবা , ৩০) অনুগ্রহাপ্রদা, ৩১) ঐশ্বর্য্যা , ৩২) অনঘা, ৩৩) হরিবল্লভী, ৩৪) অশোকা , ৩৫) অমৃতা, ৩৬) দীপ্তা, ৩৭) লোকাশোকবিনাশিনী, ৩৮) ধর্মনিলয়া, ৩৯) করুণা, ৪০) লোকমাতা, ৪১) পদ্মপ্রিয়া, ৪২) পদ্মহস্তা, ৪৩) পদ্মাক্ষী , ৪৪) পদ্মসুন্দরী, ৪৫) পদ্মভবা, ৪৬) পদ্মমুখী, ৪৭) পদ্মনাভপ্রিয়া, ৪৮) রমা, ৪৯) পদ্মমালাধরা , ৫০) দেবী, ৫১) পদ্মিনী, ৫২) পদ্মগন্ধিণী , ৫৩) পুণ্যগন্ধা, ৫৪) সুপ্রসন্না, ৫৫) শশীমুখী , ৫৬) প্রভা, ৫৭) চন্দ্রবদনা, ৫৮) চন্দ্রা , ৫৯) চন্দ্রাসহোদরী , ৬০) চতুর্ভুজা , ৬১) চন্দ্ররূপা , ৬২) ইন্দিরা, ৬৩) ইন্দুশীতলা, ৬৪) আহ্লাদিণী, ৬৫) নারায়নী , ৬৬) বৈকুন্ঠেশ্বরি ৬৭) হরিদ্রা ৬৮) সত্যা , ৬৯) বিমলা, ৭০) বিশ্বজননী, ৭১) তুষ্টি, ৭২) দারিদ্রনাশিণী, ৭৩) ধনদা , ৭৪) শান্তা, ৭৫) শুক্লামাল্যাম্বরা , ৭৬) শ্রী, ৭৭) ভাস্করী , ৭৮) বিল্বনিলয়া , ৭৯) হরিপ্রিয়া , ৮০) যশস্বীনি , ৮১) বসুন্ধরা , ৮২) উদারঙ্গা, ৮৩) হরিণী , ৮৪) মালিনী, ৮৫) গজগামিনী , ৮৬) সিদ্ধি , ৮৭) স্ত্রৈন্যাসৌম্যা , ৮৮) শুভপ্রদা, ৮৯) বিষ্ণুপ্রিয়া , ৯০) বরদা , ৯১) বসুপ্রদা, ৯২) শুভা , ৯৩)চঞ্চলা , ৯৪) সমুদ্রতনয়া , ৯৫) জয়া , ৯৬) মঙ্গলাদেবী, ৯৭) বিষ্ণুবক্ষাস্থলাসিক্তা , ৯৮) বিষ্ণুপত্নী, ৯৯) প্রসন্নাক্ষী , ১০০) নারায়নসমাশ্রিতা , ১০১) দারিদ্রধ্বংসিণী, ১০২) কমলা, ১০৩) সর্বপ্রদায়িনী, ১০৪) পেঁচকবাহিণী, ১০৫) মহালক্ষ্মী, ১০৬) ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবাত্মিকা , ১০৭) ত্রিকালজ্ঞানসম্পূর্ণা, ১০৮) ভুবনমোহিনী।

প্রাতঃকালে মা লক্ষ্মীর নিম্নলিখিত নাম উচ্চারনে
দারিদ্রতা নিবারণ হয়ঃ-

লক্ষ্মীঃ শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী ।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী ।।

ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মাতা সত্যাগতা শুভা ।।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা ।।

অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা ।
রুক্মিনী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা ।

এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – লক্ষ্মীদেবীর পূজাপাঠ ও ব্রতকথা
অন্তঃপর্ব – মা লক্ষ্মীর পাঁচালি কবিতা-২

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা আজি বসুধায়,
ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা শুক্ল পূর্ণিমায়।
ধান্য দূর্বা ফুলমালা ঘটে আম্রশাখা,
তদুপরি নববস্ত্র কচি ডাব রাখা।

নমো নম লক্ষ্মীমাতা প্রণমি তোমারে,
জনম জনম মাগো থাক মোর ঘরে।
তব কৃপা হলে সবে হয় ধনবান,
অর্থ যশ ধন রত্ন সব তব দান।

সুপ্রসন্না হও মাগো তুমি যার প্রতি,
সুখ শান্তি নিরবধি ধর্মে হয় মতি।
সুখ প্রদায়িনী তুমি তব করুণায়,
ধনহীন লভে ধন সদা সুখ পায়।

সন্ধ্যায় পাঁচালি পাঠ বিহিত বিধান,
কাব্য রচে কবিবর শ্রীমান লক্ষ্মণ।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – মা লক্ষ্মীর আগমনী – অন্তঃপর্ব

  1. সুপ্রসন্না হও মাগো তুমি যার প্রতি, সুখ শান্তি নিরবধি ধর্মে হয় মতি।
    সুখ প্রদায়িনী তুমি তব করুণায়, ধনহীন লভে ধন সদা সুখ পায়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. এসো মা লক্ষ্মী………………..

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। একরাশ স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।
      সাথেই থাকুন। জয়গুরু!

  2. শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর স্তোত্র

    লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।

    স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।

    বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।

    ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।

    জয় গুরু জয় গুরু।।  

    1. প্রাতরুত্থায় লক্ষ্মী স্তোত্রম য পঠেত নরঃ।
      তদা তস্য সুখায় ভবতি তত্র ন সংশয়ঃ।।

      এসো মা লক্ষ্মী………………..

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। একরাশ স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।
      সাথেই থাকুন। জয়গুরু!

  3. শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি সুগন্ধি ধূপ জ্বেলে আসন পেতেছি। প্রদীপ জ্বেলে নিলাম তোমায় বরণ করে আমার এ ঘরে থাকো আলো করে। এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে আমার এ ঘরে থাকো আলো করে।

    এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে। কী অসাধারণ একটি টাইটেল। অভিনন্দন প্রিয় কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. আলপনা এঁকে আমি সাজিয়ে দিলাম পট,
      আমের পল্লব দিলাম জল ভরা ঘট।
      পানসুপারি সিঁদুর দিলাম দুহাত ভরে,
                     জনম জনম থাকো আমারই ঘরে।
      এসো মা লক্ষ্মী………………..

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। একরাশ স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।
      সাথেই থাকুন। জয়গুরু!

  4. অসাধারণ পোস্ট কবি দা। আপনি দেখছি একটি পোস্টের জন্য অনেক পরিশ্রম করেন। 

    1. এসো মা লক্ষ্মী………………..

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। একরাশ স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।
      সাথেই থাকুন। জয়গুরু!

  5. সুখ প্রদায়িনী তুমি তব করুণায়, ধনহীন লভে ধন সদা সুখ পায়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. এসো মা লক্ষ্মী………………..

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয় কবিবর। একরাশ স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।
      সাথেই থাকুন। জয়গুরু!

  6. প্রস্ফুটিত পদ্ম পূর্ণ বিকাশের প্রতীক।
    লক্ষ্মীপূজা করলে হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. এসো মা লক্ষ্মী………………..

      সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি। একরাশ স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।
      সাথেই থাকুন। জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।