নক্ষত্রে গোধূলি-৬২/২৫০

৮২।
এর মধ্যে আসাদ সাহেব চলে গেছে। তার জায়গায় প্রবীণ নামে নেপালি এক ছেলে এসেছে। প্রবীণ আসাতে নুরুল ইসলাম নিচের রুমে চলে গেছে। এখন তার রুম মেট প্রবীণ। অল্প বয়সের ছেলে। লেখাপড়ার নাম করে এদেশে এসেছে কিন্তু কলেজে নাম লিখিয়ে রেখে কাজ করে যাচ্ছে দুই বছর ধরে। মাসে একবার যেয়ে কলেজে হাজিরা দিয়ে আসে। রাশেদ সাহেবের সাথে বেশ আলাপ জমে উঠেছে। কখনো মন খারাপ দেখলেই এগিয়ে আসে, হিন্দিতে কথা বলে।
-ভাইয়া আপনি প্রায় আমার বাবার বয়সের, আপনি এই বয়সে এখানে কেন এসেছেন তা আমি বুঝি। আমার বাবার ব্যবসা যখন খারাপ যাচ্ছিল তখন সেও এখানে এসেছিলো, কয়েক বছর থেকে গেছে। তখন নেপালিদের এখানে আসতে ভিসার প্রয়োজন হোত না। যাই হোক এখন কাঠমুন্ডুতে কাঠের আড়ত করেছে,
স মিল সহ ভালই চলছে। আপনি বেশি চিন্তা করবেন না, চিন্তা করলে শুধু মন খারাপ থাকবে, কাজে মন বসাতে পারবেন না। আর কোন লাভ হবে না। তার চেয়ে হাসি খুশি থাকেন, মন ভালো রাখেন, সুস্থ ভাবে কাজ করেন। আমি আপনাকে বলে দিব কিভাবে কাজ সহজে করতে হয়। আমিও কিচেনে কাজ করেছি প্রথম দিকে। কিচেনে কাজ কষ্টের কাজ, সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি সামনের কাজ করেন। মাঝে মাঝে সামনে আসবেন, আমি আপনাকে সামনের কাজের কিছু ধারনা দিয়ে দিব শিখে নিবেন। জব সেন্টারে গিয়ে বলবেন আমি সামনের কাজ করি, দুই এক মাস করেছি। ওখানে থাকার সমস্যা তাই অন্য কাজ খুঁজছি। এদেশে মিথ্যা না বললে চলে না, সবাই মিথ্যা পছন্দ করে কারণ মিথ্যা চকচকে হয়। আর সত্য মিথ্যার মত চকচকে হয়না তাই কেও পছন্দ করে না। আপনি যত সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারবেন তত আকর্ষণীয় হবেন। এক সপ্তাহ আমার কাছে দেখেন, তারপর নেক্সট অফ ডেতে লন্ডন গিয়ে জব সেন্টারে সামনের কাজ খুঁজেন ভাল হবে। আপনাকে দেখেই বুঝেছি আপনি এই ধরনের কাজে অভ্যস্ত নন। আপনি কোন বড় ধরনের কাজ করতেন। আপনার চশমা দেখেই বুঝেছি সাধারণ লোকেরা এতো দামি চশমা ব্যাবহার করে না। সেদিন সেফ আর ওসমান আপনার ব্যাপারে আলাপ করছিলো। বলছিলো এই লোকের চশমার দাম বাংলাদেশে দশ হাজার টাকা হবে, এই লোক নিজের পরিচয় গোপন করছে। আমি তখন বারে কাজ করছিলাম ওরা মনে করেছিল আমি বাংলা বুঝি না কিন্তু আমি বংলা বলতে না পারলেও বুঝি। আসলে আমি গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কাজ করছি। কোথাও কিন্তু আপনার মত কাওকে পাইনি। আপনার কথাবার্তা আচার ব্যাবহার সবই অন্যদের চেয়ে আলাদা, সত্যি করে বলেনতো আপনি কি করতেন ওখানে?

-তা শুনে আর কি করবে ভাই। আচ্ছা দেখি তুমি আমাকে কিছু শিখিয়ে দাও, আমি তোমার কথা মতই করব আমার বন্ধুও তাই বলেছে। আমি কোন কূল কিনারা পাচ্ছিলাম না তাই কিছু করতে পারছি না। তুমি যখন বলছ একটা পথ পাবো বলে মনে হচ্ছে। নেক্সট উইকে লন্ডন যাব। আচ্ছা মনে কর কাজ পেলাম, তারপর কি করবো? মানে, এখান থেকে ছুটবো কি ভাবে?
-সেজন্যে ভাববেন না, সেটা আমি বলে দিব কি করতে হবে। আপনি আগে কাজ নিয়ে আসেন তখন দেখব।
-নাও একটু তামাক নাও।
-বানিয়ে দেন আমিতো পারিনা।
সত্যি সত্যি এর পরদিন থেকেই প্রবীণের কাছে তালিম নেয়া শুরু করলেন রাশেদ সাহেব। কয়েক দিনের মধ্যে বেশ যত্ন করেই প্রবীণ তাকে খুঁটিনাটি সহ মোটামুটি একটা তালিম দিয়ে দিল। সাথে বলে দিল-
-যা শিখিয়ে দিলাম আপনি যদি মনে রাখতে পারেন কেও বুঝতে পারবে না যে আপনি কখনো সামনে কাজ করেননি। শুধু মনে সাহস রাখবেন অসুবিধে নেই। আপনি ইংলিশ জানেন আপনার ইংলিশ ভালোই আমি লক্ষ করেছি, আর কি? বেতনের জন্যে ভাববেন না এখানে যা পাচ্ছেন ওখানেও তাই পাবেন।

5 thoughts on “নক্ষত্রে গোধূলি-৬২/২৫০

  1. নতুন বছরের ভালোবাসা কবি ভাই। খালিদ উমর ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।