ইলিশতত্ব

কার্তিক মাস। ইলিশের মৌসুম শেষ হইয়া আসিয়াছে। এইবার জ্বালে খুব ইলিশ পড়িয়াছিলো। তথাপি জ্বেলে পাড়ার অসিত, বাসেত, মঙ্গল, কুদ্দুসের ঘরের অভাবে সুখ হাসিয়া উঠে নাই।

ইলিশ মৌসুম শেষ হইবার পূর্বেই তাহারা মহাজন করিম মোল্লা ও সিধু পোদ্দারের নিকট হইতে আগাম মৌসুমের জন্য দাদন লইয়াছে। দাদন না লইয়া কি করিবে! চলতি মৌসুমের দাদনের টাকা লাভসমেত পরিশোধ করিবার পরে তাহাদের ঘরে অন্নের সংস্থান নাই। এই দাদনচক্রে আটকা পড়িলে বাহির হইবার পথ নাই, মৃত্যু পর্যন্ত ডাঙ্গায় তোলা ইলিশের মতন তড়পানি সার।

কার্তিক মাসের মধ্যভাগে অবিরাম বর্ষণ। সাগরে চার নাম্বার বিপদ সংকেত। বর্ষণে আর ঝড়ের হাওয়ায় পদ্মা উত্তাল। এই অবসরে হরেনের ঘরের দাওয়ায় অসিত, বাসেত, দুগগা, কুদ্দুস, মোখলেস, নরেন আড্ডারত। তাহারা একই নৌকায় ইলিশ শিকার করে। আকস্মাত অসিত বায়না ধরিয়া বসে-
: বাসেত কাহা, চলো ক’টা মাছ মারি লইয়ে আসি..
: কি রে অসিত! পাগল হইয়েছিস! এই উথালপাথাল পদ্মায় মাছ মারিবো কিবায়!
: ক্যানে! সমিস্যা কি!!
: একে সিগনিল, তাইর মইদ্যে মাছ তো গাঙের নিচে চইলে গেছে..
: চলো কাহা, মন কইছে মাছ আজ পাবোই, ঘরের মানুষগুলানরে আইজ পরাণভরি ইলিশ খাওবো, বুইঝলে!
: হ রে অসিত, এবার এত্তো ইলিশ ধইরলাম, বাড়ির গ্যাদা ছাওয়াল-পাওয়ালগো খাওয়াতি পাইরলাম না। কি কপাল নিয়া যে জন্মাইলাম!

কপালের চিন্তায় মেঘময় আকাশের সকল বিষন্নতা যেন তাহাদের মুখ চাপিয়া ধরে, আড্ডা জুড়িয়া নিখাদ নীরবতা নামিয়া আসে।

২.
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পদ্মার প্রমত্ত ঢেউয়ে হারাণের নৌকা দুলিতেছে। জাল ফেলা হইয়াছে। বৃদ্ধ হারাণ বৃষ্টিকে আড়াল করিয়া বিড়ি ধরায়, লম্বা একটা সুখটান দিয়া অট্টহাসিতে ফাটিয়া পড়ে–
: হোহোহোহোহো! ভাইবে দেইখলাম আমরাও ইলিশ মাছ। মহাজনের দাদনের জাল আমাগের টাইনে টাইনে তুলে…

বাসেত হাসিয়া বলে-
: তা যা কইয়েছো কাহা! তুমি দেইখছি পণ্ডিত হইয়ে গেছো–

হারাণ উন্মাদের মতন হাসিতে হাসিতে চিৎকার করিয়া কহে-
: পণ্ডিতির দেইখিছিস কি! আমি জানিনা ভাইবেছিস! দুইন্যাতে জাত হইলো দুইটা- মহাজন আর হরিজন, ইলিশ আর ইলিশ শিকারী.. আর কুনু জাত নাই, পাত নাই, ধম্ম নাই…

হারাণের কথায় নৌকায় হাসির হুল্লোড় পরিয়া যায়। তাহারা লক্ষ্য করেনা হারাণের ইলিশ তত্বের কথা শুনিয়া পদ্মার প্রমত্ত ঢেউগুলি লজ্জায়-ক্রোধে- আক্রোশে এক একটা নতুন ঢেউয়ের নিচে ডুবিয়া যায়, মুখ লুকায়।

(খসড়া)

20 thoughts on “ইলিশতত্ব

  1. লিখায় এক ধরণের বিষণ্ণতা থাকলেও অণুগল্পটির মূল উপজীব্য বিষয় যুগ যুগ ধরে চলে আসা আমাদেরই সমাজ চিত্রের খণ্ডাংশ মনে করি। অনন্য ধারার লিখন। অসাধারণ।

    1. অনেক ধন্যবাদ মুরুব্বী আজাদ ভাই। :)

    1. ধন্যবাদ মামুনুর রশিদ ভাই। :)

    1. ধন্যবাদ একজন নিশাদ ভাই। :)

  2. সুন্দর লেখা। গতি আছে। শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।
    শুভেচ্ছা।

  3. ভালো লেগেছে । কিন্তু লেখায় এখন সাধু ভাষার প্রয়োগ – কিঞ্চিৎ ভাবনার অবকাশ করিয়া দিলো https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_wink.gif:)

    1. কি করবো। লিখতে গিয়ে এই যাচ্ছেতাই অবস্থা কবি নাজমুন নাহার। :)

  4. খসড়াই যদি এই অবস্থা হয়, ফাইনাল না জানি আরও কত অসাধারণ হবে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. ধন্যবাদ কবি রিয়া রিয়া। :)

  5. অসাধারণ আবু সাঈদ আহমেদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. ধন্যবাদ কবি সৌমিত্র ভাই। :)

  6. মুগ্ধতা জানালাম হরবোলা আবু সাঈদ ভাই।

    1. ধন্যবাদ কবি সুমন ভাই। :)

    1. ধন্যবাদ কবি শাকিলা তুবা। :)

  7. আপনার লেখা সব সময়ই অন্যরকম এক ভালোলাগা নিয়ে পড়ি। 

     

    আজকের লেখাটার কোথায় জানি একটুকরো বিষণ্ণতা লুকোনো ছিলো 

    অনেক ভালোলাগা। 

     

    ভালো থাকুন সব সময়। 

     

    1. তাতো কিছুটা ছিলোই যাযাবর জীবন ভাই। :) প্রকাশনায় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।