দু পেগ হুইস্কি খেয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “হুইস্কি খেয়েছিলাম বিলেতে, আহা কি স্বাদ! দু চুমুক দিতেই আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে… ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে..।” সুকুমার রায় ফোঁড়ন কাটলেন- “কবিগুরু, আপনি এখনও ঢলছেন।” আমেরিকান বিয়ারের ক্যান খুলে চুমুক দেবার আগে দৃপ্তকণ্ঠে সুকান্ত বললেন, “কমরেড, চিয়ার্স। বিয়ারের সাথে পূঁজিবাদ মেশাবেন না।” মধুসূদন নীরবতা ভেঙ্গে নাটকের ঢংয়ে বললেন- “লা ম্যুর ফ্রান্স, লা ম্যুর ফ্রান্স.. ওয়াইনতো নয় যেন আগুনেরই গোলা রে.. আগুনেরই গোলা।’ কেষ্টা বলল- “কত্তা, শেষ লাইনটা মমতাজ ম্যাডামের গান, কপিরাইট আইনে আটঁকি যাবেন যে!” এদিকে মীরা বাঈ ঠুমরির সুরে গেয়ে চলেছেন- বন্ধু যখন বউ লইয়া/আমার বাড়ির সামনে দিয়া/রঙ্গ কইরা হাইটা যায়/বুকটা ফাইট্টা যায়… বুকটা ফাইট্টা যায়..”
শরতচন্দ্র মদের গেলাস নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। ছোট চুমুক দিচ্ছেন। বিষন্ন, চোখ ছলছল। কাজী নজরুল ঘাড়ে হাত রাখতেই নিজেকে সামলাতে পারলেন না, হুরহুর করে কেঁদে দিলেন-
: দাদা, আমি এখানে কেরু এন্ড কোংয়ের ভদকা গিলছি, গলা দিয়ে নামছে না..
: কেন? কি হয়েছে?
: আমার দেবদাসটা না জানি কোথায় চোলাই গিলচে, তারপিন তেল খাচ্চে। হয়তো মদ খেতে না পেয়ে তৃষ্ণায় ছটফটাচ্চে..।
শরতবাবু কান্না চাঁপার ব্যার্থ চেষ্টা করে কাজী নজরুলকে জড়িয়ে ধরলেন। নজরুল পিঠে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে লাগলেন। কেষ্টা ফিসফিসিয়ে বলল, “কত্তা, রংধনু হলে জাপটে ধরুন, না হলে ছেড়ে দিন। একন দেয়ালেরও চোক আচে যে, কোতায় কোন ষিষি ক্যামেরা কে জানে!”
বঙ্কিম বাবু একে সাহিত্যিক, তার’পরে আইনের লোক সরকারি আমলা। তিনি ভীষণ চটেছেন- ডিজে নাই তার নাম আবার পার্টি! সি বিচে যেন শিখিনি- কোনটা টপলেস আর কোনটা বিকিনি! অবনীন্দ্রনাথ এক গ্লাস ব্লাডি মেরি তার হাতে দিয়ে কানে কানে জানালেন-
:আংখেইল, ডিজে পার্ঠি হবে- ব্যাবস্থা করেছি। আইঠেম সং পারফর্ম কৌরবে ম্যাডাম পার্বটি, আই মিন পারু… হু লালা হুলালা…
: ওয়াও! ওয়েলডান মাই ফ্রেন্ড। মাইন্ড ইঠ- উই আর নট আংখেইল এন্ড ভাইপৌ ঠুডেই। ইন গ্লোবাল ভিলেইজ উই আর চুনিলাল।
: আংখেইল, সরি ড্যুড, ডৌন্ট ওউরি বি হ্যাপ্পি… ঠেক ড্রিংক্স বি হ্যাপ্পি.. ইয়ো… ইয়ো।”
কেষ্টা অবনীন্দ্রকে থামিয়ে বলল- “আস্তে কত্তা, আস্তে। কি যা তা কচ্চেন! হুশ করি কন। হ্যাপীকে নিয়ে ইউটুবে এশকেনডিল চইলচে যে! আপনার গুপন এশকেনডিল ফাঁস হলি ঠাকুর বাড়ির মান-সম্মান থাকবি!”
বুফে ডিনার শেষ। মীরা বাঈ পেমেন্ট নিয়ে চলে গেছেন। শুরু হল পার্বতী ম্যাডামের উদ্দাম গান-
“সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে ফুলেডোরে বাঁধা ঝুলনা
ইয়ো বেইব চিকনি চামেলীর দোপাট্টা খুলোনা খুলোনা খুলোনা
মুন্নি বদনাম হুয়ি ঠাকুর তেরি লিয়ে…”
ডিজে পার্টির উন্মাদনার তালে নাঁচে-গানে ভেসে গেল সবাই। আলখেল্লা পরে নাঁচতে সমস্যা হচ্ছিল বলে রবীন্দ্রনাথ শর্টসের সাথে টিশার্ট পরে নিলেন। সুবিধার জন্য লম্বা দাড়ি রাবার ব্যান্ড দিয়ে পনিটেল করলেন। শরতচন্দ্র ধুতির নিচে স্কিন টাইট জিন্স পরে এসেছিলেন- নিজের দু:খ ভুলে সবাইকে মজা দিতে ড্যান্স ফ্লোরে স্ট্রিপারদের মত নাচের তালে তালে ধুতি খুললেন। মধুসূদন নাচতে গিয়ে এর ওর গায়ে ঢলে পরছেন। কাজী নজরুল তেজী মানুষ- নাঁচের নামে তালে তালে এমনভাবে হাত পা ছুড়ছেন যে তার পাঁচফুটের মধ্যে কেউ যেতে পারছে না। বঙ্কিম বাবু আর অবন ঠাকুর পার্বতীকে কেন্দ্র করে নাঁচছে, তাকে ছুঁতে চাইছে। কিন্তু পার্বতী নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মত পিছলে যাচ্ছে।
রাত গভীর হয়েছে। কেউ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই- সব বেহেড মাতাল, নেঁচে যাচ্ছে। হঠাত কেষ্টা লাঠি নিয়ে মাঝখানে ঝাপিয়ে পরে সবাইকে মারতে শুরু করল, হুংকার দিয়ে বলতে লাগল- “এই পারু গান থামাবি না। ইতরের দল, রবীন্দ্রনাথের বার্থডের লেট নাইট পার্টি করো! শালা ভন্ডমীর জায়গা পাওনা! মুখোশ পরে মেকাপ নিয়ে এক একজন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মধুসূদন হয়ে গেছ। শুয়োরের বাচ্চা শুয়োর! সবকটার মাথা ফাঁটাবো- এই পারু, তুই গান চালিয়ে যা।” ঘটনার পরের দিন টিভি চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজে জানা গেল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস উপলক্ষ্যে ঘরোয়াভাবে আয়োজিত ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠান চলাকালে চাকরের লাঠির আঘাতে দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয়, প্রখ্যাত এবং প্রতিশ্রুতিশীল কবি, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী গুরুতর আহত হয়েছেন, চাকরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নিজের প্রয়াণ দিবসে এ সংবাদ শুনে মেঘের আড়াল হতে “যা কিছু ঘটে তবেই রটে কেষ্টা বেটাই চোর” বলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেসে উঠেছিলেন কি না জানা যায় নাই।
——-
২২ শ্রাবণ, ১৪২২, ০৬ অগাষ্ট, ২০১৫
অসাধারণ।
দু পেগ হুইস্কি খেয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “হুইস্কি খেয়েছিলাম বিলেতে, আহা কি স্বাদ! দু চুমুক দিতেই আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে… ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে..।”