গভীর আয়েশে মুঠোয় চায়ের বাটি

কথায় কথায় মনে হয় খুব চেনা
কোথায় দেখেছি আরামবাগের ধারে
মেদুর বিকেল ডেকে নেয় বহুদূর
উড়ন্ত কাল কেটে গেল পারাপারে।

আমিও ব্যস্ত দক্ষিণা বাতাসে উড়ি
ফুসরৎ নেই বাসস্টপে বসে থাকার
মোছা হয় নি কপালের কাল দাগ
ধরতে পারি নি সময়ের সব চাকার।

ঘুরতেই আছি ঘুরাঘুরি হলো সার
চাঁদ-ডোবা কাল এসেছে অন্ধকারে
কোথায় লুকাল বীর্য ভ্রান্তি মন
বধির সময় তারে আর ডাকে নারে।

এইখানে ছিল বাবুয়ের বাসা
তড়িৎ চেষ্টার অপরাজেয় মন
ফল্গুধারার অবিরাম ধারাপাত
শালে ঘেরা গ্রাম সুদূরের শালবন।

শুধু তার লাগি গড়েছি ফুলের বাগান
চৈতন্যে দিয়েছি প্রাণের ডাক
মাটি আঁকড়েছি প্রকৃত মহাজন
মাস্তুল ফেলে পেরুতে চেয়েছি বাঁক।

সে মাটির ঘর ললাটে মাটির দাগ
উঠানের কোনে ছুরি হাতে এক ঘাতক
নুন পান্তার অভাব ছিল না কভু
নামলো আঁধার আমিই কি সেই পাতক।

ঘরের চারপাশ নারিকেল সারি সারি
খোলা ঠোঁটে শুনি সবদিন পাখিকথা
বুবাই ঘাসে কালো ছাগলের দড়ি
কখনো থমকে গর্ভের নীরবতা।

বস্তু পৃথিবী সে দিকে তাকাই বালি
গিজগিজ করে চিৎকারে আর ভিড়ে
মেলার মাঠে নাগরদোলায় চড়ে
মনে হয়েছিল পৌঁছানো যাবে তীরে।

সিক্ত বুকে ঝরত কখনো পালক
মনে গেঁথে যেত পালকের রঙিন
গাছের ফাঁকে জ্যোৎস্না ঝরানো রাতে
ঠোঁটে ঠোঁটে চেপে কাটাব সূর্য দিন।

সূর্য দিনে হেঁটেছি অনেক পথ
শুদ্ধ পাথরে ঝাপটা মেরেছে জল
কীর্তনিয়া নদীর ভেঙ্গেছে পাড়
নদীর স্রোতে ভেসেছে শহুরে মল।

শহুরে বাতাস কিনেছি নুনের দামে
দিন রাত পিটে বানিয়েছি মসৃণ
দুদিন পরেই লোহার বদলা জং
এভাবে বেড়েছে চিঠিকথা আর ঋণ।

ঋণ ভার তবু পাথরে ঠুকেছি মাথা
পৃথিবীর মতো আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা
পৃথিবীটা গোল প্রমাণিত হলো আজ
উঠবে পর্দা, জটিল সে সব ধাঁ ধাঁ।

মনে পরে সেই পাহাড়ের কথকতা
পাতালে নেমেছে ঝর্ণার ছায়াসুর
স্নান দৃশ্যের অপূর্বতার মায়ায়
রৌদ্রজ্জ্বলে ভেঙ্গে গেছে ঘুমঘোর।

কিংবা ধরো সুপারি গাছের মিছিল
ধরেছে সুখের কিংবা দুঃখের আগল
ক্রীড়া মগ্ন বালকের পায়ের ধুলা
ভূমণ্ডলে এক আমিই পাগল।

মায়া ক্লান্ত বুকে হাঁপর ওঠে
ধরে আছি হাতে অর্ধ ভুক্ত ফল
বুকের পাঁজরে পোকারা বেঁধেছে বাসা
জীবনের ঘাটে বাঁদুরের চলাচল।

নেভে নি এখনো জীবনে পোড়ানো চিতা
সত্যরে খুঁজি অশ্রু খুঁড়ে খুঁড়ে
আমার কি ছিল পৃথিবীর প্রয়োজন
আমি কি পেয়েছি পাংসে জীবন জুড়ে।

আজো আছি আমি অন্ধ প্রাণের খুঁজে
অশ্রুর ঘরে সবুজেরে তবু মানি
জীবন কখনো যমুনার চেয়ে নীল
বাঁশির আড়ালে শুনেছি যে তার বাণী।

এখনো যত্নে আকাশের তারা ওঠে
গভীর আয়েশে মুঠোয় চায়ের বাটি
শ্মশানের পথ এখনো অনেক দূরে
পেরুনো যাবেই অঙ্গীকারের মাটি।

সুরঙ্গের পরে আলো ঝলমলে দিন
যে দিন গিয়েছে মিথ্যা ছিল না কোন
এক পশলা বৃষ্টি পরেতে দেখি
আকাশের কোনে উছলানো রঙধনু।

যত্নে না হউক তবু তো কেটেছে কাল
বহু রাধিকার বুকেতে তুলেছে ঢেউ
চাইলেই তো যায় না পৃথিবী পাওয়া
বাঘের খাবার কেড়ে নিয়ে যায় ফেউ।

2 thoughts on “গভীর আয়েশে মুঠোয় চায়ের বাটি

  1. যত্নে না হউক তবু তো কেটেছে কাল এটাই বড় কথা।
    দীর্ঘ লিখাটির জন্য ধন্যবাদ প্রিয় মকসুদ ভাই। শুভ সকাল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।