শৈশব স্মৃতি রাজাকার

হঠাৎ মনে পড়ল; শৈশবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। আমাদের অস্ত্র ছিল বাঁশের গুলতি। দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে পাকি জারজদের স্মৃতি মনে জ্বলজ্বল করছে। পাকিরা পালিয়েছে দেশে রয়ে গেছে তাদের দুষ্কর্মের সাথী।

এখানে সেখানে রাজাকারের বাচ্চা গুলো ধরা পড়ছে, মানুষ ইচ্ছেমতো চড়, কিল, থাপ্পর দিচ্ছে। রাজাকার কি জিনিস আমরা জানিনা, দেখিনি কোনদিন। প্রায়ই দেখতাম মেছো বাঘ কিংবা খাটাশ পাড়ায় দেখা দিয়েছে, মানুষ দলবেঁধে বাঘ খাটাশ পিটিয়ে মেরে ফেলত। আমরা খুব ছোট; রাজাকার ধরার উত্তেজনা আমাদের ছুঁয়ে যেত কিন্তু আমাদের রাজাকারের কাছাকাছি ভিড়তে দেয়া হতো না। আমরা ভাবতাম রাজাকাররা হয়তো বাঘ খাটাশের চেয়েও ভয়ঙ্কর পশু।

একবার এক বন্য শুয়োর মানুষের তাড়া খেয়ে সভ্য পাড়ায় এসে ঢুকে পড়ল শুয়োর দেখে আঁতকে উঠল সবাই তবুও অসহায় প্রাণীর যাতে কোনো বিপদ না হয় সবাই মিলে পাকড়াও করে পুনরায় বনে পাঠিয়ে দেওয়া হল।

কয়েকদিন পরেই আমাদের পাড়ায় এক রাজাকার ধরা পরল এবার আমাদের ঠেকায় কে যেভাবেই হউক এই পশুকে দেখতে হবে। আমরা গুলতি যুদ্ধ থামিয়ে রাজাকার দেখতে গেলাম। রাজাকার দেখে খুব আশাহত হলাম; তাকে কোন ভয়ংকর প্রাণী মনে হল না; দেখতে ঠিক মানুষের মত। যে-ই রাজাকার দেখতে আসছে চড় দিচ্ছে, লাথি দিচ্ছে, থুথু দিচ্ছে। পাড়ার মস্তান লুঙ্গি উল্টিয়ে রাজাকারের গায়ে পেশাব করছে তবু তাকে কেউ ধমক দিচ্ছে না। শুয়োর ঘৃণিত প্রাণী তার নাম নিলেই ওযু নষ্ট হয়ে যায় তবু বিপদে পড়া শুয়োরকে এই মানুষেরাই নিরাপদে বনে পৌঁছে দিয়ে ছিল। একে খাটাশের মত মেরে ফেলছে না কিন্তু ঘৃণা উগড়ে দিচ্ছে। রাজাকাররা শুয়োরের চেয়েও ঘৃণিত এই প্রথম জানলাম…

1 thought on “শৈশব স্মৃতি রাজাকার

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।